শুক্রবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৫

জাতিসংঘ বাহিনী চায় ফিলিস্তিন

তছনছ করা আসবাব, পোশাক ও খেলনার মাঝে দাঁড়িয়ে কিছু একটা দেখছে ফিলিস্তিনি শিশুটি। গতকাল পশ্চিম তীরের নাবলুস শহরের কাছে একটি গ্রামে অভিযান চালানোর সময় ইসরায়েলি বাহিনী ওই বাড়িতে তল্লাশি চালায় l ছবি: এএফপি
ছনছ করা আসবাব, পোশাক ও খেলনার মাঝে দাঁড়িয়ে কিছু একটা দেখছে ফিলিস্তিনি শিশুটি। গতকাল পশ্চিম তীরের নাবলুস শহরের কাছে একটি গ্রামে অভিযান চালানোর সময় ইসরায়েলি বাহিনী ওই বাড়িতে তল্লাশি চালায় l ছবি: এএফপি

ইসরায়েল অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে ‘জাতিসংঘ থেকে সুরক্ষা বাহিনী’ মোতায়েন চায় ফিলিস্তিন। জাতিসংঘে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের দূত রিয়াদ মনসুর গত বুধবার এ কথা জানিয়েছেন।
ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন আরও দুই ফিলিস্তিনি। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে দেশটির শহরাঞ্চলে সেনা মোতায়েন ও পূর্ব জেরুজালেমে আরব-অধ্যুষিত এলাকায় সড়ক অবরোধ আরোপের পর নতুন করে এ হত্যাকাণ্ড ঘটল। খবর আল-জাজিরার।
ফিলিস্তিনি দূত রিয়াদ মনসুর বলেন, ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘর্ষ বন্ধে জাতিসংঘে একটি খসড়া প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে। ওই প্রস্তাবের সঙ্গে জাতিসংঘ থেকে সুরক্ষা বাহিনী মোতায়েনের বিষয়টি বিবেচনার প্রস্তাব সংযুক্ত থাকবে। ফিলিস্তিনি দূত বলেন, ইসরায়েল অধিকৃত এলাকাগুলো এখন ‘অত্যন্ত বিস্ফোরণোন্মুখ’ অবস্থায় রয়েছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে অবশ্যই ফিলিস্তিনিদের ‘সুরক্ষা দেওয়ার’ পথ খুঁজে বের করতে হবে। তিনি বলেন, ‘অধিকৃত জেরুজালেমের ওল্ড সিটি এবং পবিত্র আল-আকসা মসজিদ চত্বর এলাকার চলমান পরিস্থিতি আমাদের জনগণের সুরক্ষার দাবিকে ন্যায্যতা দেয়।’
রিয়াদ মনসুর বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস, পর্যবেক্ষক পাঠানো বা আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েন ওই এলাকায় স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার নিশ্চয়তা হতে পারে, যার মাধ্যমে ফিলিস্তিনিরাও সুরক্ষা পাবে।’
এদিকে আরব দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের গতকাল জাতিসংঘে বৈঠকে বসার কথা। ওই বৈঠক থেকে চলমান সহিংসতা নিয়ে আলোচনার জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক ডাকার আহ্বান জানানো হবে। রিয়াদ মনসুর বলেন, আরব দেশগুলোর বৈঠকে একটি খসড়া প্রস্তাবের মাধ্যমে উত্তেজনাপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার এবং পবিত্র আল-আকসা মসজিদ চত্বরে সুরক্ষা বাহিনী মোতায়েনের আহ্বান জানানো হতে পারে।
রিয়াদ মনসুররিয়াদ মনসুরদুই ফিলিস্তিনি নিহত: জেরুজালেমের দামেস্ক গেটের প্রবেশমুখে বুধবার বিকেলে এক তরুণ ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যা করে ইসরায়েলি পুলিশ। ২০ বছর বয়সী ওই তরুণ হেবরনের বাসিন্দা। ইসরায়েলি পুলিশ দাবি করে, নিরাপত্তার খাতিরে ওই তরুণের কাছে গেলে তরুণটি তাদের ছুরিকাঘাতের চেষ্টা করে। যদিও এ ঘটনায় ইসরায়েলি হতাহত হওয়ার কোনো খবর মেলেনি।
এর চার ঘণ্টা পর পশ্চিম জেরুজালেমে ২৩ বছর বয়সী আরেক ফিলিস্তিনি ইসরায়েলের পুলিশের গুলিতে নিহত হন। তাঁকে হত্যার ব্যাখ্যায় ইসরায়েলি পুলিশ বলে, ওই ফিলিস্তিনি এক ইসরায়েলি নারীকে ছুরিকাঘাতে আহত করার পর বাসে উঠে পালিয়ে যেতে চেষ্টা করেন। এ সময় গুলি করে ঘটনাস্থলেই তাঁকে হত্যা করা হয়।
সংগ্রামে সমর্থন আব্বাসের: সহিংসতা শুরুর পর ফিলিস্তিনিদের উদ্দেশে প্রথমবারের মতো ভাষণ দিয়েছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে মাহমুদ আব্বাস বলেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘শান্তিপূর্ণ ও জনপ্রিয়’ সংগ্রামে সমর্থন রয়েছে তাঁর।
এদিকে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই ভাষণে মাহমুদ আব্বাস ইসরায়েলিদের কর্মকাণ্ডে ধর্মীয় সহিংসতা বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এমনকি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শিশুদের হত্যার অভিযোগ তোলেন তিনি। এ ক্ষেত্রে সোমবার ইসরায়েলি পুলিশের হামলার শিকার হওয়া ১৩ বছর বয়সী এক শিশুর উদাহরণ টানেন তিনি। তবে ওই শিশু হাসপাতালে জীবিত আছে বলে দাবি করে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর বলে, ফিলিস্তিনি নেতার বক্তব্য ‘মিথ্যা ও উসকানিমূলক’।
প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে চলা সহিংসতায় এ পর্যন্ত ৩২ জন ফিলিস্তিনি ও সাত ইসরায়েলি নিহত হয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন