বাংলাদেশে তরুণ-যুবকদের মধ্যে জঙ্গিবাদের প্রবণতা রুখতে কোরান হাদিসের ভিত্তিতে একটি ফতোয়া জারির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার ঢাকায় পুলিশের সদর দপ্তরে সারা দেশ থেকে আগত একদল আলেম বা ধর্মীয় নেতার সাথে এক বৈঠকে এই প্রস্তাবটি করেন কিশোরগঞ্জের প্রখ্যাত সোলকিয়ার ইমাম ফরিদউদ্দিন মাসুদ।তিনি বলেন, তারা আশা করছেন মাসখানেকের মধ্যে জঙ্গিবাদ বিরোধী এই ফতোয়া জারি করা সম্ভব যেখানে সারা দেশের লক্ষাধিক আলেমের সই নেয়া হবে।
মওলানা মাসুদ বিবিসি বাংলার শাকিল আনোয়ারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন যেসব তরুণ আজকে জঙ্গীবাদে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে তারা মনে করছে ‘‘মরব আর বেহেস্তে হুর-পরী তার জন্য অপেক্ষা করবে। আমরা তাদের বোঝাতে চাই তোমার এই রাস্তাটা হুর-পরীর নয়। এ রাস্তা জাহান্নমের আগুনের – তোমরা ভুল পথে যাচ্ছো। ’’
তিনি বলছেন বিশেষত আইএস এবং সন্ত্রাসী যারা আয়াত ও হাদিসগুলিকে খন্ডিতভাবে ব্যবহার করছেন, তাদের জন্য মূল আয়াতগুলোর ব্যখ্যা – সেগুলোর প্রেক্ষিত – হাদিস কী প্রেক্ষিতে বলা হয়েছিল- ধর্মীয় নেতারা সেগুলো সম্পর্কে তাদের ব্যাখ্যা দেবেন।
যেসব তরুণ জিহাদী জঙ্গীবাদের দিকে যাচ্ছেন, তাদের সামনেও এসবের সমর্থনে যেহেতু মধ্যপ্রাচ্যের বড় বড় ধর্মীয় নেতাদের দেওয়া অনেক ফতোয়া আছে, তাই প্রশ্ন উঠতে পারে তারা কোন্ ফতোয়াটা ঠিক বলে মানবেন।
মওলানা মাসুদ বলছেন উগ্রপন্থীরা উগ্রবাদী ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য যেসব আয়াত ব্যবহার করছেন সেগুলোর সংখ্যা খুব বেশি নয় – ‘‘বেশি হলে ৫/৬টা। এধরনের হাদিসের সংখ্যাও ঠিক এরকমই।’’
‘‘কাজেই এসব আয়াতের পরিপূর্ণ কথাগুলো যদি আমরা দেখি এবং পরিপূর্ণ ব্যাখ্যাটা হাদিসে যেভাবে আসছে সেটা যদি তুলে ধরি- তাহলে আমার মনে হয় শতকরা ৮০ জনেরই বিভ্রান্তি কেটে যাবে।’’
তিনি বলেন যারা জিদ করে আছে বা ‘কোরানের ভাষায় যাদের হৃদয়ে মরচে পড়ে গেছে’ তাদের হয়ত বা বোঝানো কঠিন হবে।
তবে যেহেতু এই জঙ্গীবাদের পেছনে শুধু ধর্ম নয়, রাজনীতিও কাজ করছে তাই এধরনের উদ্যোগ কতটা কার্যকর হবে এ প্রশ্নের উত্তরে মওলানা মাসুদ বলেন ‘‘বিষয়টা সত্যি হলেও ধর্মটাও তাদের জন্য বড় একটা উপাদান।’’
‘‘ওরা যদি মানুষকে অশান্তি ও খুন করার জন্য ধর্মকে ব্যবহার করতে পারে, আমরাও শান্তি ও নিরাপত্তা এবং সুখ ও সমৃদ্ধির জন্য ধর্মের সঠিক ব্যাখ্যা কেন আমরা দিতে পারব না? ’’ পাল্টা প্রশ্ন রাখেন মওলানা মাসুদ।
বাংলাদেশে বিভিন্ন আলেমরা নানা মত ও পথে বিশ্বাসী। কাজেই তারা হয়ত মনে করতে পারেন এটা একটা সরকারি প্রচেষ্টা। সেক্ষেত্রে সব আলেম যে এই ফতোয়ার ভাষায় একমত হবেন এবং এতে সই করবেন তার গ্যারান্টি কী?
মওলানা ফরিদউদ্দিন মাসুদ বলেন এ ব্যাপারে গ্যারান্টি দেওয়া কঠিন, তবে বাংলাদেশের মানুষ কখনই উগ্রবাদকে সমর্থন করে নি, আর বাংলাদেশের আলেমরাও উগ্রবাদকে মৌলিকভাবে পছন্দ করেন না । রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে যারা বিষয়টাকে দেখে তাদের সংখ্যা খুবই অল্প।
কিন্তু ধর্মীয় নেতাদের ফতোয়া দেওয়ার ক্ষেত্রে যেটা সমস্যা হতে পারে সেটা হল যেসব তরুণ জঙ্গীবাদের দিকে ঝুঁকছে তারা মসজিদে গিয়ে এসব শুনছে না – তারা এসব কথা শুনছেন ইন্টারনেটে ।
কজেই আন্তর্জাতিক যে নেটওয়ার্ক একটা ফতোয়া দিয়ে তার সঙ্গে লড়াই করা কতটা সম্ভব?
মওলানা মাসুদ বলছেন তারা যে ফতোয়া দিতে চান তা তারা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইন্টারনেটের মাধ্যমেও ছড়িয়ে দিতে চান।