বৃহস্পতিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৫

জঙ্গিবাদের রাস্তা জাহান্নমের আগুনের- বললেন মওলানা মাসুদ

 
                     বাংলাদেশের তরুণদের কাছে ধর্মের সঠিক ব্যাখ্যা তুলে ধরতে ফতোয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন একদল আলেম।                
বাংলাদেশে তরুণ-যুবকদের মধ্যে জঙ্গিবাদের প্রবণতা রুখতে কোরান হাদিসের ভিত্তিতে একটি ফতোয়া জারির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার ঢাকায় পুলিশের সদর দপ্তরে সারা দেশ থেকে আগত একদল আলেম বা ধর্মীয় নেতার সাথে এক বৈঠকে এই প্রস্তাবটি করেন কিশোরগঞ্জের প্রখ্যাত সোলকিয়ার ইমাম ফরিদউদ্দিন মাসুদ।
তিনি বলেন, তারা আশা করছেন মাসখানেকের মধ্যে জঙ্গিবাদ বিরোধী এই ফতোয়া জারি করা সম্ভব যেখানে সারা দেশের লক্ষাধিক আলেমের সই নেয়া হবে।
মওলানা মাসুদ বিবিসি বাংলার শাকিল আনোয়ারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন যেসব তরুণ আজকে জঙ্গীবাদে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে তারা মনে করছে ‘‘মরব আর বেহেস্তে হুর-পরী তার জন্য অপেক্ষা করবে। আমরা তাদের বোঝাতে চাই তোমার এই রাস্তাটা হুর-পরীর নয়। এ রাস্তা জাহান্নমের আগুনের – তোমরা ভুল পথে যাচ্ছো। ’’
তিনি বলছেন বিশেষত আইএস এবং সন্ত্রাসী যারা আয়াত ও হাদিসগুলিকে খন্ডিতভাবে ব্যবহার করছেন, তাদের জন্য মূল আয়াতগুলোর ব্যখ্যা – সেগুলোর প্রেক্ষিত – হাদিস কী প্রেক্ষিতে বলা হয়েছিল- ধর্মীয় নেতারা সেগুলো সম্পর্কে তাদের ব্যাখ্যা দেবেন।
যেসব তরুণ জিহাদী জঙ্গীবাদের দিকে যাচ্ছেন, তাদের সামনেও এসবের সমর্থনে যেহেতু মধ্যপ্রাচ্যের বড় বড় ধর্মীয় নেতাদের দেওয়া অনেক ফতোয়া আছে, তাই প্রশ্ন উঠতে পারে তারা কোন্ ফতোয়াটা ঠিক বলে মানবেন।
মওলানা মাসুদ বলছেন উগ্রপন্থীরা উগ্রবাদী ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য যেসব আয়াত ব্যবহার করছেন সেগুলোর সংখ্যা খুব বেশি নয় – ‘‘বেশি হলে ৫/৬টা। এধরনের হাদিসের সংখ্যাও ঠিক এরকমই।’’
‘‘কাজেই এসব আয়াতের পরিপূর্ণ কথাগুলো যদি আমরা দেখি এবং পরিপূর্ণ ব্যাখ্যাটা হাদিসে যেভাবে আসছে সেটা যদি তুলে ধরি- তাহলে আমার মনে হয় শতকরা ৮০ জনেরই বিভ্রান্তি কেটে যাবে।’’
তিনি বলেন যারা জিদ করে আছে বা ‘কোরানের ভাষায় যাদের হৃদয়ে মরচে পড়ে গেছে’ তাদের হয়ত বা বোঝানো কঠিন হবে।
তবে যেহেতু এই জঙ্গীবাদের পেছনে শুধু ধর্ম নয়, রাজনীতিও কাজ করছে তাই এধরনের উদ্যোগ কতটা কার্যকর হবে এ প্রশ্নের উত্তরে মওলানা মাসুদ বলেন ‘‘বিষয়টা সত্যি হলেও ধর্মটাও তাদের জন্য বড় একটা উপাদান।’’
                                     ''বাংলাদেশের আলেমরাও উগ্রবাদকে মৌলিকভাবে পছন্দ করেন না'' মন্তব্য করেছেন সোলাকিয়ার ইমাম।                
‘‘ওরা যদি মানুষকে অশান্তি ও খুন করার জন্য ধর্মকে ব্যবহার করতে পারে, আমরাও শান্তি ও নিরাপত্তা এবং সুখ ও সমৃদ্ধির জন্য ধর্মের সঠিক ব্যাখ্যা কেন আমরা দিতে পারব না? ’’ পাল্টা প্রশ্ন রাখেন মওলানা মাসুদ।
বাংলাদেশে বিভিন্ন আলেমরা নানা মত ও পথে বিশ্বাসী। কাজেই তারা হয়ত মনে করতে পারেন এটা একটা সরকারি প্রচেষ্টা। সেক্ষেত্রে সব আলেম যে এই ফতোয়ার ভাষায় একমত হবেন এবং এতে সই করবেন তার গ্যারান্টি কী?
মওলানা ফরিদউদ্দিন মাসুদ বলেন এ ব্যাপারে গ্যারান্টি দেওয়া কঠিন, তবে বাংলাদেশের মানুষ কখনই উগ্রবাদকে সমর্থন করে নি, আর বাংলাদেশের আলেমরাও উগ্রবাদকে মৌলিকভাবে পছন্দ করেন না । রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে যারা বিষয়টাকে দেখে তাদের সংখ্যা খুবই অল্প।
কিন্তু ধর্মীয় নেতাদের ফতোয়া দেওয়ার ক্ষেত্রে যেটা সমস্যা হতে পারে সেটা হল যেসব তরুণ জঙ্গীবাদের দিকে ঝুঁকছে তারা মসজিদে গিয়ে এসব শুনছে না – তারা এসব কথা শুনছেন ইন্টারনেটে ।
কজেই আন্তর্জাতিক যে নেটওয়ার্ক একটা ফতোয়া দিয়ে তার সঙ্গে লড়াই করা কতটা সম্ভব?
মওলানা মাসুদ বলছেন তারা যে ফতোয়া দিতে চান তা তারা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইন্টারনেটের মাধ্যমেও ছড়িয়ে দিতে চান।

পৌরসভা নির্বাচন: জাতীয় রাজনীতি নাকি স্থানীয় উন্নয়ন?

 

    বাংলাদেশে আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এই স্থানীয় সরকার নির্বাচন।
প্রার্থী এবং ভোটারদের মধ্যেও দলীয় প্রতীকে নির্বাচন নিয়ে নানা মত রয়েছে। একইসাথে প্রশ্ন উঠেছে, স্থানীয় নির্বাচনে ভোটারদের ওপর জাতীয় রাজনীতির প্রভাব কতটা পড়বে?
দীর্ঘ ৭ বছর পর মাঠের রাজনীতিতে বাংলাদেশের প্রধান দুইটি রাজনৈতিক দলের প্রতীকের স্লোগানে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে রাজপথ। নির্বাচনী প্রচারণার এই উত্তাপ এর আগে শুধু জাতীয় সংসদ নির্বাচনেই দেখেছেন ভোটাররা। স্থানীয় নির্বাচনে এটি তাদের জন্য একটি নতুন অভিজ্ঞতা।
মনোনয়ন নিয়ে নানা হিসেব-নিকেশ শেষে দুই দলের মনোনীত প্রার্থীরাও এখন নিজেদের মার্কায় ভোট দেয়ার জন্য ভোটারদের জন্য মিছিল-পথসভা-জনসভা-মাইকিং শুরু করেছেন। যদিও কিছু কিছু এলাকায় নিজ দলেরই অন্য নেতা বা তথাকথিত বিদ্রোহী প্রার্থীদের সাথেও লড়তে হচ্ছে তাদের। কিন্তু দলের মার্কা যে তাদের জন্য একটি বড় সুবিধা, সেনিয়ে অবশ্য দ্বিমত নেই বড় দলের প্রার্থীদের।
"আগে ছিল ধরি মাছ না ছুঁই পানি, কিন্তু এখন যা হয়েছে তাতে প্রার্থীর সাথে দলেরও দায়বদ্ধতা তৈরি হয়েছে। গত ১৫ বছরে এখানে নৌকা আর ধানের শীষের যে পার্থক্য তৈরি হয়েছে তাতে নৌকা আমাকে অনেক এগিয়ে দিয়েছে।" বলেন মুন্সীগঞ্জ সদর পৌরসভার আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ফয়সাল বিপ্লব। দলীয় দায়বদ্ধতার জন্য দলের সিদ্ধান্ত তার পৌরসভার কাজের ক্ষেত্রে কোন সমস্যার তৈরি করবে না বলে মনে করছেন তিনি।
এই প্রতীকের হিসেবটি মাথায় আছে অপর বড় দল বিএনপির মনোনীত প্রার্থী এবং বর্তমান পৌরসভা মেয়র একেএম ইরাদত মানুর মাথায়ও। বিএনপির জন্য দলীয় প্রতীকে এ নির্বাচনটির কিছুটা বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। কারণ, ২০০৮ সালের পর এই প্রথম দলীয় প্রতীকে কোন নির্বাচনে মাঠে নামছে তারা। এর আগে গত সংসদ নির্বাচন বর্জন করায় ধানের শীষের স্লোগান মাঠে শোনা যায়নি দীর্ঘদিন যাবত।
voter                 ভোটারদের অনেকেই দলীয় সমর্থনের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন                
"এই প্রতীক নিয়ে কর্মীদের মধ্যে ভালবাসা আছে, উচ্ছ্বাস আছে। শুধু কর্মী নয়, ভোটারদের মাঝেও উচ্ছ্বাস আছে।" বলেন মি. ইরাদত।
তিনি বলেন, নির্বাচিত হলে দলীয় প্রতীকের কারণে সরকার যদি তার কাজে বাঁধার সৃষ্টি না করে তাহলে তিনি সুষ্ঠুভাবেই কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন।
নির্বাচিত হলে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নিজ দলের ম্যান্ডেট পালনের ক্ষেত্রেও কিছুটা স্বাধীনতা পাবেন বলে মনে করছেন মি. ইরাদত।
যদিও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী অভিযোগ করছেন যে নির্বাচনী প্রচারণায় তার কর্মীরা সরকারী দলের কর্মীদের কাছে নানাভাবে হেনস্থার শিকার হচ্ছেন। তবে এসব অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবী করছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী।
এদিকে বড় দলের এসব প্রার্থীদের প্রচারণায় অনেকটা চাপা পড়ে গেছে ছোট দল বা স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। পৌরসভা নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নামের একটি দল থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন মহিউদ্দিন ব্যাপারী। তিনি বলছেন, রাজনৈতিক প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় তাদের প্রচারণার প্রতি গুরুত্ব আগের চেয়ে কমে গেছে। তার আশংকা, এর ফলে হয়তো তাদের নির্বাচনী কর্মকর্তারা বাঁধার সম্মুক্ষীন হতে পারেন।
"আগের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি ভোটকেন্দ্র দখলের মতো কিছু অবস্থা তারা তৈরি করেছে। এজন্য একটু আশংকা হচ্ছে যেন তারা এই মার্কাটার ওপর কোন আঘাত না আনে। নির্বাচনটা নির্দলীয় হলে আমাদের জন্য ভালো হতো।" বলেন মি. মহিউদ্দিন। মেয়র পদে তিনি তাদের দলীয় প্রতীক হাতপাখা নিয়ে নির্বাচন করছেন।
candidate                 মুন্সীগঞ্জ সদরে বিএনপির প্রার্থী একেএম ইরাদত মানু (বামে) এবং আওয়ামী লীগ প্রার্থী ফয়সাল বিপ্লব (ডানে)                
কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর সরাসরি অংশগ্রহণে স্থানীয় নির্বাচন নির্বাচনী কর্মকর্তাদের জন্য কতটা চ্যালেঞ্জ? দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন নিয়ে বিরোধী দলগুলো এর আগেও অভিযোগ করেছিল যে, নির্বাচনী কর্মকর্তারা দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করছেন না এবং এক্ষেত্রে সরকারদলীয় প্রার্থীর প্রতি তাদের একটি প্রচ্ছন্ন সমর্থন কাজ করে। তবে মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো: সাইফুল হাসান বলছেন, তার ওপর কোন চাপ নেই এবং যেকোন অবস্থা সামাল দেয়ার মতো প্রস্তুতিও তাদের রয়েছে।
প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি-মিছিল-স্লোগান যেভাবেই তাদের নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাক না কেন চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটি যাদের কাছ থেকে আসার কথা সেই ভোটারদের সামনে এখন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে এখন প্রার্থীর জনপ্রিয়তা, এলাকার উন্নয়নের পাশাপাশি এখন আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ হয়েছে আরেকটি বিবেচনা, জাতীয় রাজনীতি। ভোটারদের কাছে কোন বিবেচনাটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ?
"জাতীয় রাজনীতিটা দলীয়, উপযুক্ত হোক বা না হোক যার যার দলেরটা সে সে দেবে। কিন্তু যাকে ভোট দিলে এলাকা উন্নয়ন হবে তাকেই আমি ভোট দেবো" বলেন একজন ভোটার।
কিন্তু কেউ কেউ এরই মধ্যে সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলেছেন। "জনম ভইরা নৌকায় ভোট দিয়া আইছি, এবারো দিমু" বলেন আরেকজন ভোটার।
আরেকজন ভোটারের মন্তব্য, "মনে মনে একটা সিদ্ধান্ত আছে, কিন্তু এখন সেটা প্রকাশ্যে বলাতো সমস্যা।"
poster                 দলীয় প্রতীকে নির্বাচন নিয়ে খুশি নয় ছোট দলগুলো                
পৌরসভা নির্বাচনটি যে রাজনৈতিক দলগুলোর জনপ্রিয়তা নিরূপণের একটি পরীক্ষায় পরিণত হয়েছে তা বেশ স্পষ্ট। মুন্সীগঞ্জের স্থানীয় সাংবাদিক মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল বলছেন, ভোটাররা প্রার্থীর যোগ্যতাই নির্বাচনের মূল বিবেচ্য হবে বললেও জাতীয় রাজনীতি যে নির্বাচনে একটি বড় প্রভাব ফেলবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
তিনি বলেন, "পৌর নির্বাচন হলেও এলাকার বাইরের জেলা এবং নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতাদের আমরা প্রচারণায় অংশ নিতে দেখছি। এমপি ইলেকশনে যেমন হয় তেমনটিই কিন্তু আমরা দেখছি"
রাজনৈতিক দলগুলোর সরাসরি অংশগ্রহণে স্থানীয় নির্বাচনের সুদূরপ্রসারী প্রভাব কি হবে, সেটি বোঝার জন্য হয়তো আরো বেশ সময় লাগবে। কিন্তু এটি নিশ্চিত যে দলীয় প্রতীকে এই নির্বাচনটি হবে সম্পূর্ণ নতুন একটি অভিজ্ঞতা এবং নজর রাখার মতো একটি আয়োজন।

হঠাৎ মেয়েটির ওপর পড়ে গেছি - আর কিছু হয়নি: সৌদি কোটিপতি

 
                                
                 লন্ডনের সার্দান ক্রাউন কোর্ট সৌদি ব্যবসায়ীকে জোর করে ধর্ষণের অভিযোগ থেকে খালাস দিয়েছে।
লন্ডনে ১৮ বছরের এক তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ থেকে রেহাই পেয়েছেন সৌদি এক ধনকুবের। কিন্তু যে যুক্তিতে আদালত তাকে খালাস দিয়েছে, সেটা স্থানীয় গণমাধ্যমে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।
এহসান আব্দুলআজিজ নামে এই ব্যবসায়ী দাবি করেছেন, তিনি তার বাসায় ঘুমন্ত তরুণীটির গায়ের ওপর যখন দুর্ঘটনাবশত পড়ে যান, তখন তার লিঙ্গ হয়ত আন্ডারপ্যান্ট থেকে বের হয়েছিল।
"আমি পড়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু কিছুই ঘটেনি, মেয়েটির সাথে কিছুই হয়নি", মি: আব্দুলআজিজ আদালতে বলেন।
বিবাহিত ও এক সন্তানের পিতা মিঃ আব্দুলআজিজ-এর বিরুদ্ধে লন্ডনের সাদার্ক ক্রাউন কোর্টে অভিযোগ আনা হয়েছিল যে তিনি ওই তরুণীকে ধর্ষণ করেছিলেন।
কিন্তু ৪৬ বছর বয়স্ক এহসান আব্দুলআজিজ এই অভিযোগ অস্বীকার করেন।
আঠারো বছরের ওই তরুণী এবং তার একজন ২৪ বছরের বান্ধবী লন্ডনের এক অভিজাত নৈশ ক্লাবে মিঃ আব্দুলআজিজ-এর সঙ্গে দেখা করেন।
মিঃ আব্দুলআজিজ ২৪ বছরের তরুণীটিকে চিনতেন প্রায় সাত মাস ধরে, ব্রিটেনের দ্য ডেইলি মেইল পত্রিকা বলছে। তিনি তাকে এবং তার বান্ধবীকে অভিজাত নৈশ ক্লাবে আমন্ত্রণ জানান।
সেখানে তিনি দুই তরুণীকে মদ কিনে দেন। এবং এরপর তাদের নিজের গাড়িতে করে বাসায় পৌঁছে দেবেন বলে প্রথমে পশ্চিম লন্ডনে তার বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে নিয়ে যান।
নিজের ফ্ল্যাটেও তিনি দুই নারীকে আরো মদ্য পানীয় খেতে দেন। এবং এই সময়ে তিনি ২৪ বছরের তরুণীকে নিজের শোবার ঘরে নিয়ে যান তার শয্যাসঙ্গিনী হবার জন্য।
আঠারো বছরের তরুণী সেই সময় ওই ব্যবসায়ীর বসবার ঘরে সোফায় ঘুমচ্ছিলেন। খুব ভোরবেলা ব্যবসায়ী তাকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করেন বলে ওই তরুণীটি অভিযোগ করেন, লন্ডনের দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট পত্রিকা বলে।
মিঃ আব্দুলআজিজ ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন তরুণীটিই তাকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করেছিল এবং অন্তরঙ্গ হতে উৎসাহ যুগিয়েছিল।
আদালতে তিনি আরো দাবি করেন যে তরুণীটির টানাটানিতে তিনি তার গায়ের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে যান এবং 'দুর্ঘটনাবশত' শারীরিক যোগাযোগ ঘটে।

শেখ মুজিবুর রহমান কবে গিয়েছিলেন আগরতলায়?

 
   
                 শেখ মুজিবুর রহমান কবে আগরতলায় গিয়েছিলেন আর কেন তা নিয়ে নতুন কিছু তথ্য রয়েছে 'বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে ত্রিপুরা' প্রামাণ্য চলচ্চিত্রে।

বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান কবে গিয়েছিলেন আগরতলায়? কেনই বা তাঁকে সেখানকার জেলে একরাত কাটাতে হয়েছিল?
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় শেখ মুজিবের পক্ষে লড়ার জন্য ইংল্যান্ড থেকে টমাস উইলিয়ামসকে কীভাবে যোগাড় করা হল?
‘রোশনারা ব্রিগেড’ই বা কীভাবে তৈরি হয়েছিল?
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের এই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলির সঙ্গে একটাই নাম জড়িয়ে রয়েছে – তা হল ত্রিপুরা, বা আরও নির্দিষ্টভাবে বললে আগরতলা।
মুক্তিযুদ্ধে ত্রিপুরার ভূমিকা নিয়ে তৈরি হওয়া প্রথম প্রামাণ্য চলচ্চিত্রে এই সব প্রশ্নেরই উত্তর খোঁজা হয়েছে।
ত্রিপুরার রাজ্যপাল তথাগত রায় বুধবার রাতে আগরতলায় ওই চলচ্চিত্রটি উন্মোচন করেন।
                                     'বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে ত্রিপুরা' তথ্যচিত্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন                
কী রয়েছে ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে ত্রিপুরা’ ছবিটিতে?
প্রায় আড়াই বছর ধরে এই তথ্যচিত্রটি বানিয়েছেন চিত্র সাংবাদিক রাজু ভৌমিক। তাঁর কথায়, “বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ত্রিপুরার ভূমিকা এতটাই বড় আর বিস্তৃত যে একঘন্টার ছবিতে তা তুলে ধরা অসম্ভব। আমরা চেষ্টা করেছি কয়েকটা বিষয়ের ওপরে ফোকাস করতে।“
তথ্যচিত্রের জন্য গবেষণা করেছেন আগরতলার সিনিয়ার সাংবাদিক মানস পাল।
“মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ দলিল আমার হাতে আসে – শেখ মুজিবুর রহমান ঠিক কবে আগরতলায় আসেন। তিনি একবারই এখানে এসেছিলেন, যার সাল তারিখ নিয়ে গবেষকদের মধ্যে মতান্তর রয়েছে। বেশিরভাগ মানুষই মনে করেন তিনি ১৯৬৩ সালে এসেছিলেন। আমরা খোয়াইয়ের তৎকালীন সাবডিভিশনাল অফিসার স্মরজিৎ চক্রবর্তীর ডায়েরি পেয়েছি, যেখানে শেখ মুজিবুর রহমানের আগরতলায় আসার তারিখ উল্লেখিত আছে।“
সেই ডায়েরিতে ৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬২ সাল, সোমবার – এই তারিখে ইংরেজিতে যা লেখা রয়েছে তার বাংলা এরকম ‘শেখ মুজিবুর রহমান নামে একজন ব্যক্তি এবং তাঁর সঙ্গে আমীর হুসেন এবং টি চৌধুরী (মনে করা হচ্ছে তারেক চৌধুরী) আসারামবারিতে (খোয়াই আর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্ত) পৌঁছেছেন আজ দুপুর একটায় এবং তাদের ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্টেট বা জেলাশাসকের নির্দেশে তেলিয়ামুড়ায় পাঠানো হয়েছে।'
শেখ মুজিবুর রহমান যে সেই যাত্রায় আগরতলায় যাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর কাছে সমর্থন যোগাড় করতে, সেই খবর পৌঁছেছিল পাকিস্তানি গুপ্তচরদের কাছে।
মি. পাল বলছিলেন, “ত্রিপুরার প্রথম মুখ্যমন্ত্রী শচীন্দ্রলাল সিংহ শেখ মুজিবের আর্জি পৌঁছিয়ে দিয়েছিলেন নেহরুর কাছে। তবে আইএসআই এই খবর জেনে যাওয়ায় তাঁকে পাকিস্তানে ফেরত পাঠানোর জন্য কিছুটা আনুষ্ঠানিকতার প্রয়োজন হয়েছিল। তাঁকে পুশব্যাক করার আগে নিয়মরক্ষার জন্য একরাত আগরতলায় জেলে রাখতে হয়েছিল।“
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা
                 খোয়াইয়ের তৎকালীন সাবডিভিশনাল অফিসার স্মরজিৎ চক্রবর্তীর ডায়েরির পাতা।                
এই মামলার অন্যতম দুই অভিযুক্ত স্টুয়ার্ড মুজিবুর রহমান আর আলি রেজা যে বিলোনিয়া দিয়ে ত্রিপুরায় এসে একজন ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তা কর্ণেল মেননের [যাঁর আসল নাম কে শঙ্করণ নায়ার বলেই মনে করা হয়, যিনি ভারতের বর্হিদেশীয় গুপ্তচর সংস্থা রিসার্চ এন্ড এনালিসিস উইং এর দ্বিতীয় প্রধান হয়েছিলেন] সঙ্গে শালবাগানে দেখা করে ভারতের সাহায্য চেয়েছিলেন, সেটা অনেকেরই জানা তথ্য।
তবে পাকিস্তান সরকার শেখ মুজিবুর রহমানকে ওই মামলায় মিথ্যা অভিযোগে জড়িয়ে দেওয়ার পরে ত্রিপুরার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শচীন্দ্রলাল সিংহ তাঁর হয়ে বড় ব্যারিস্টার খুঁজতে যে আগরতলার প্রথম দৈনিক সংবাদপত্র ‘জাগরণ’ এর মালিক-সম্পাদক জিতেন পালকে কলকাতায় পাঠিয়েছিলেন, সেই প্রায় অজানা তথ্য উঠে এসেছে বুধবার প্রকাশিত চলচ্চিত্রটিতে।
মানস পালের কথায়, “জিতেন পালকে কলকাতায় পাঠানো হয় প্রখ্যাত ব্যারিস্টার ও কমিউনিস্ট নেতা স্নেহাংশু আচার্যের কাছে – যাতে তিনি ঢাকায় গিয়ে শেখ মুজিবের হয়ে মামলা লড়েন। কিন্তু মি. আচার্য রাজি হন নি কারণ তাতে ভারতের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়ে যেত পাকিস্তান। তাই তিনি ইংল্যান্ডে নীরদ সি চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ব্রিটিশ সরকারের সহায়তায় শেখ মুজিবের হয়ে ঢাকায় মামলা লড়তে আসেন টমাস উইলিয়ামস।“
‘রোশনারা ব্রিগেড’ এর কল্পনা
যুদ্ধ চলাকালীন বেশ কিছু গল্প তৈরি করেছিলেন আগরতলার কয়েকজন সিনিয়ার সাংবাদিক।
“রোশনারা বেগম নামে একজন অতি সাহসী নারী যোদ্ধার গল্প বানানো হয়েছিল, যিনি নাকি বুকে মাইন বেঁধে পাকিস্তানি ট্যাঙ্কের সামনে শুয়ে পড়েছিলেন। মাইন ফেটে ওই ট্যাঙ্ক যেমন ধ্বংস হয়েছিল, তেমনই ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল রোশনারা বেগমের দেহ। এইসবটাই আগরতলার কয়েকজন সাংবাদিকের বানানো যাতে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল বাড়ানো যায়, আর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের কাছে এই যুদ্ধে সামিল হওয়া নারী পুরুষের অসীম সাহসের কথা তুলে ধরা যায়, ”ওই তথ্যচিত্রে এক সাক্ষাতকারে জানিয়েছেন লেখক ও গবেষক বিকচ চৌধুরী। তিনি ‘দৈনিক সংবাদ’ কাগজের হয়ে যুদ্ধের খবরাখবর সংগ্রহ করতেন নিয়মিত।
তথ্যচিত্রে রয়েছে ত্রিপুরা রাজ্যের তখনকার জনসংখ্যা – ১৫ লক্ষের প্রায় সমান সংখ্যক শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়াসহ নানা তথ্য।                
তথ্যচিত্রে রয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ শিবিরের কথা অথবা কীভাবে রাজ্যের তখনকার জনসংখ্যা – ১৫ লক্ষের প্রায় সমান সংখ্যক শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়া – এইসব তথ্যও। আরও রয়েছে ত্রিপুরার বিধানসভার বিখ্যাত প্রস্তাব, যেটিতে বাংলাদেশ যুদ্ধকে সমর্থন করা হয়েছিল।
“আমি নিজে যদিও যুদ্ধের ঠিক দশ বছর পরে জন্মিয়েছি ১৯৮১ সালে, তবে আমার বাবা, দাদুরা যুদ্ধের ঠিক আগেই পূর্ব পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন। বাবার কাছে গল্প শুনতাম যুদ্ধের, পাকিস্তানি বাহিনীর অত্যাচারের। সেইসব ছবি, ত্রিপুরায় শরণার্থী শিবির, মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ – এইসবের স্থির চিত্র নিয়ে বছর কয়েক আগে আগরতলায় একটা প্রদর্শনী হয়। সেটা দেখার পর থেকেই প্রামাণ্য তথ্যচিত্র তৈরি করার বিষয়টা মাথায় আসে। তখনই মানসদা আর আমার স্ট্রিপ্ট রাইটার - নাট্যকার সুভাষ দাসের সঙ্গে যোগাযোগ হয়,” বলছিলেন ছবিটির পরিচালক রাজু ভৌমিক।
মি. ভৌমিকের ইচ্ছে রয়েছে আরও যা সব তথ্য যোগাড় হয়েছে, তা দিয়ে পরবর্তীতে আরও দু-তিনটে পর্ব তৈরি করার।