বুধবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৫

মোনালিসার রহস্যময় হাসির পেছনে কোন্‌ নারীর মুখ?

 
                     বিশ্বের সবথেকে বেশি আলোচিত এই ছবিটি আসলেই ইতালীয় সিল্ক ব্যবসায়ীর স্ত্রী লিসা গেরারদিনির কীনা তা নিয়ে চলছে ব্যাপক বিতর্ক           
      
পাঁচশ বছর আগে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির আঁকা পোট্রেট মোনালিসা সম্ভবত বিশ্বের সবেচেয়ে আলোচিত চিত্রকর্ম।
ফ্রান্সের ল্যুভ মিউজিয়ামে এখনও প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ শুধু মোনালিসার রহস্যময় হাসি দেখতে আসেন। কয়েক শ বছর ধরে মানুষ কম-বেশি বিশ্বাস করে আসছে দ্য ভিঞ্চির মোনালিসা ফ্লোরেন্সের তৎকালীন একজন সিল্ক ব্যবসায়ীর স্ত্রী লিসা গেরারদিনির প্রোট্রেট।
তবে ফ্রান্সের একজন গবেষক গত দশ বছর ধরে গবেষণার পর বলছেন, প্রোট্রেটের রহস্যময়ী এই নারী অন্য কেউ ছিলেন। আর এই তত্ত্ব নিয়ে শিল্পী মহলে শুরু হয়েছে তোলপাড়।
দ্য ভিঞ্চি মোনা লিসার পোট্রেটটি নিয়ে কাজ করেছিলেন ১৫০৩ সাল থেকে ১৫১৭ সাল পর্যন্ত। শুরু করেছিলেন ইটালির ফ্লোরেন্সে, তারপর ফ্রান্সে।
কিন্তু ভিঞ্চি আসলে কার পোট্রেট তৈরি করেছিলেন সেই প্রশ্ন মোনালিসার হাসির মতই রহস্য হয়ে আছে। তবে মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত যে ব্যাখ্যা তা হলো পোট্রেটের এই নারী ফ্লোরেন্সের তৎকালীন একজন সিল্ক ব্যাসায়ীর স্ত্রী লিসা গেরারদিনি।
কিন্তু সেই তত্ত্বকে চ্যালেঞ্জ করেছেন প্যারিসের একজন বিজ্ঞানী পাসকাল কোট।
২০০৪ সালে ল্যুভ কর্তৃপক্ষ তাকে বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে এই পোট্রেটের ছবি তোলার সুযোগ করে দেয়। তারপর এত বছর ধরে বিশেষ আলো এবং লেন্সের প্রযুক্তি ব্যবহার করে গবেষণার পর এই বিজ্ঞানী বলছেন, পোট্রেটের নারী লিসা গেরারদিনি নন, অন্য কেউ।
''আমরা এখন যে কোনো পেইন্টিংয়ের ভেতরে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করতে পারি। শিল্পীর প্রতিটি পোজ এখন পেঁয়াজের খোসার মত পরতে পরতে দেখতে পারি। কোনো ছবি নিয়ে প্রথম থেকে পর্যায়ক্রমে শিল্পী কীভাবে এগিয়েছেন বুঝতে পারি।''
পাসকাল কোট বলছেন, তিনি দেখেছেন ক্যানভাসের মোনালিসার পেছনে তিনটি আলাদা আলাদা ইমেজ। তৃতীয় যে ইমেজটি তিনি খুঁজে পাচ্ছেন সেটি অন্য এক নারীর মুখ, তার ঠোঁটে কোনো হাসি নেই। এই বিজ্ঞানী একরকম নিশ্চিত ক্যানভাসে খালি চোখে না দেখতে পাওয়া সেই মুখই লিসা গেরারদিনির।
''দশ বছর আগ পর্যন্ত এটা কল্পনা করাই কঠিন ছিল, এই পোট্রেটের ক্যানভাসে মোট চারটি ধাপ ছিল। সবাই আপনাকে বলবেন, এই পোট্রেটটি একবারেই করা।''
                 ফ্রান্সের ল্যুভ মিউজিয়ামে এখনও প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ শুধু মোনালিসার রহস্যময় হাসি দেখতে আসেন।
এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে লিসা গেরারদিনির প্রোট্রেট কি পরে বদল করেছিলেন দ্য ভিঞ্চি? এখনকার চিত্রটি কি অন্য কোনো নারীর?
পেইন্টিংয়ের ইতিহাসবিদ অ্যান্ড্রু গ্রায়াম ডিক্সন বলছিলেন, পাসকাল কোটের এই তত্ত্ব গত একশ বছরে শিল্প জগতের সবচেয়ে সাড়া জাগানো খবর।
''আমি মনে করি নতুন এই আবিস্কার শিল্প জগতের ইতিহাসের পুকুরে বিশাল এক পাথর ছুঁড়ে মারার মত ঘটনা। মোনালিসা সম্পর্কে আমরা এতদিন ধরে যা বিশ্বাস করতাম, তাতে বড় ধরণের ঘা পড়েছে। আমি অন্তত এখন আর বলবো না যে ছবির ঐ নারী মোনালিসা। বরঞ্চ অন্য কেউ।''
তবে লিওনার্দো নিয়ে যারা গবেষণা করেছেন, তাদের অনেকেই নতুন এই তত্ত্বকে তেমন গুরুত্ব দিতে রাজি নন। অক্সফোর্ড বিশ্ব বিদ্যালয়ের আর্ট হিস্ট্রির অধ্যাপক মার্টিন কেম্প মানতে রাজি নন দ্য ভিঞ্চি, লিসা গেরারদিনির মুখের ওপর দিয়ে পরে অন্য কোন নারীকে এঁকেছিলেন।
''পাসকাল যে সব গবেষণা তথ্য হাজির করেছেন তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগামী বছরগুলোতে এ নিয়ে বহু কথাবার্তা হবে। কিন্তু আমি মনে করি লিওনার্দো ফ্লোরেন্সের তৎকালীন প্রচলিত কায়দায় মোনালিসার পোট্রেট আঁকা শুরু করেন, যেটিতে হয়ত পরে তিনি ভিন্ন মাত্রা দিয়েছিলেন। পাসকাল তার গবেষণায় দেখেছেন ছবিটি আঁকার বিভিন্ন পর্যায়ে লিওনার্দো কী কী ভেবেছেন, কিভাবে এগিয়েছেন, কিন্তু মোনালিসার মূল পোট্রেট ঢাকা পড়ে গেছে, সেটা বিশ্বাসযোগ্য নয়।''
মোনালিসা নিয়ে বিজ্ঞানী পাসকাল কোটের সাড়া জাগানো এই তত্ত্ব নিয়ে ল্যুভ মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ কোনা মন্তব্য করতে রাজি হননি।

দাবির মুখেও শ্যালা নৌরুট বন্ধ করা যাচ্ছে না কেন

 
    
                 তেলবাহী ট্যাংকার ডুবে যাওয়ার পর বন রক্ষায় শ্যালা নদীতে নৌরুট বন্ধ করার দাবি জোরদার হয়।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে সুন্দরবনের মারাত্মক ক্ষতির যেমন আশঙ্কা রয়েছে, তেমনি এই বনের পরিবেশ বিপর্যয়ের জন্য পরিবেশ বিরোধী নানা কর্মকাণ্ডকেও দায়ী করছেন পরিবেশবাদীরা।
গত বছর সুন্দরবনের মধ্যে তেলবাহী ট্যাংকার ডুবে যাওয়ার পর এই বন রক্ষায় শ্যালা নৌরুট বন্ধ করার দাবি ওঠে।
বিবিসি বাংলার আবুল কালাম আজাদ ওই এলাকা ঘুরে দেখতে গিয়েছিলেন কেন ওই দুর্ঘটনার এক বছর পরেও শ্যালা নদীতে নৌ-যান চলাচল এখনও বন্ধ করা যায় নি।
একদিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সুন্দরবনের পশুপাখি জীববৈচিত্র যখন হুমকির মুখে তখন গত বছর সুন্দরবনের মধ্যে শ্যালা নদীতে তেলবাহী ট্যাংকার ডুবির ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছিল জাতিসংঘ এবং পরিবেশবাদীরা।
জোর দাবি উঠেছিল অবিলম্বে সুন্দরবনের ভেতরের শ্যালা নৌরুট সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়ার।
ঐ দুর্ঘটনার পর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিশ্রুতি ছিল এবছর জুনের মধ্যেই শ্যালা নদীতে নৌযান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হবে।
চাদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলছিলেন তারা এই রুট স্থায়ীভাবে বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছেন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং বিআইডাব্লিউটিএ-র কাছে।
                 মংলা থেকে ঘষিয়াখালি পর্যন্ত চ্যানেলটি চালু করতে এই মুহুর্তে সরকারি সাতটি আর বেসরকারি তিনটি- মোট ১০ টি ড্রেজার একসাথে কাজ করছে।                
''নির্দিষ্ট সময়ে তারা মংলা ঘসিয়াখালি চ্যানেলের ড্রেজিংটা শেষ করতে পারে নাই, যার ফলে শ্যালা নদীতে নৌযান চলা পুরোপুরি বন্ধ হয় নাই।''
২০১১ সালে মংলা থেকে ঘষিয়াখালি পর্যন্ত ৩১ কিলোমিটার চ্যানেলটিতে নৌযান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৪ সালে এটির ড্রেজিং-এর কাজ শুরু হয়, যার খনন কাজ এখনো চলছে।
মংলা থেকে ঘষিয়াখালি পর্যন্ত চ্যানেলটি চালু করতে এই মুহুর্তে সরকারি সাতটি আর বেসরকারি তিনটি- মোট ১০ টি ড্রেজার একসাথে কাজ করছে। এই ২২ কিলোমিটার চ্যানেলটি পুরোপুরি চালু হলেই সুন্দরবনের ভেতরে শ্যালা নদীর মধ্যে দিয়ে নৌ চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ করা সম্ভব হবে বলে বলা হচ্ছে।
ড্রেজিংয়ের দায়িত্বে থাকা বিআইডাব্লিউটিএ-র প্রকৌশলী জাবের হোসেন মজুমদার বলছেন কাজটা তারা দ্রুত করা চেষ্টা করছেন কিন্তু সেখানে প্রচুর পরিমাণ পলিমাটির কারণে ড্রেজিং-এর কাজটা করতে তাদের নানা বাধা-বিঘ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে।
''এছাড়াও যে ঘের আছে এবং খাল আছে সেগুলো এখনও আমরা পুরোপুরিভাবে মুক্ত করতে পারি নি- এবং ঘেরগুলো বন্ধ করতে পারি নি- ফলে আমাদের নানা বাধা বিপত্তি হচ্ছে।''
নদী বাঁচানোর আন্দোলনে সম্পৃক্ত মংলা ঘসিয়াখালি চ্যানেল রক্ষা সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক এম এ সবুর রানা বলছেন শুধু ড্রেজিং করে এই চ্যানেল চালু রাখা অসম্ভব।
''মংলা ঘষিয়াখালি চ্যানেল সন্নিহিত খালটি এক শ্রেণীর প্রভাবশালী মৎস্য ব্যবসায়ী আটকে রেখে চিংড়ি চাষ করেছে। কিন্তু সমস্যা হল - আরো যে সংলগ্ন খালগুলো আছে, সেগুলো খনন করা না হলে এই চ্যানেল আবার আগের অবস্থায় ফিরে যাবে।''
দুর্ঘটনার পর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিশ্রুতি ছিল এবছর জুনের মধ্যেই শ্যালা নদীতে নৌযান চলাচল সম্পূর্ন বন্ধ করে দেওয়া হবে।                
বলা হচ্ছে দক্ষিণের এই জনপদের জীবন জীবিকা, মংলা বন্দর এবং সুন্দরবন রক্ষায় এই চ্যানেল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন ফারাক্কা বাঁধের কারণে ভাটি এলাকার বহু বড় বড় নদনদী মরে যাচ্ছে, ড্রেজিং করা খালগুলো পলিমাটি পড়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে।
অর্থনৈতিক কারণে মংলা ঘষিয়াখালি নৌপথ সার্বক্ষণিক সচল রাখার পাশাপাশি পরিবেশ বাঁচাতে দ্রুত সুন্দরবনের মধ্যেকার শ্যালা নদীটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করার দাবি ক্রমেই জোরদার হচ্ছে।

অনলাইনে সাড়া ফেলেছে 'তুমি কোনো মুসলিম নও'

 

    youaintnomuslimbruv                 মেট্রো সংবাদপত্রের প্রথম পাতা    
            
লন্ডনে শনিবার লেইটনস্টোন টিউব স্টেশনে এক ব্যক্তি ছুরি চালিয়ে তিনজনকে আহত করার সময় আরেকজন লোক 'তুমি কোনো মুসলিম নও' বলে তাকে যে ধিক্কার জানিয়েছিলেন - তা এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনও এর প্রশংসা করেছেন।
মুহাইদিন মির নামের সোমালিয়ান-বংশোদ্ভূত ২৯ বছরের ওই যুবক তিন ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাত করার সময় বলছিলেন যে 'সিরিয়ার ঘটনাবলীর প্রতিশোধ নেবার' জন্যই তার ওই আক্রমণ। কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ এসে তাকে টেজারগান দিয়ে নিয়ন্ত্রণে এনে গ্রেফতার করে।
ওই আক্রমণে গুরুতর আহত এক ব্যক্তি এখনো হাসপাতালে।
youaintnomuslimbruv
লেইটনস্টোনের আক্রমণের মোবাইল ফোন ভিডিও
মোবাইল ফোনে ধারণ করা ভিডিওতে শোনা যায়, উপস্থিত লোকজনের একজন চিৎকার করে আক্রমণকারীর উদ্দেশ্যে বলছেন, 'ইউ এইন্'ট নো মুসলিম ব্রাভ' অর্থাৎ 'তুমি কোনো মুসলিম নও ভাই।'
যিনি এ কথা বলেন তার মুখ ভিডিওতে দেখা যায় নি, তার পরিচয়ও এখনো জানা যায় নি। কিন্তু টিভির খবরে প্রচারিত ওই ভিডিওটিতে তার কণ্ঠ ব্যাপক সাড়া ফেলে ব্রিটেনে।
ঘটনার পরদিনই টুইটারে এ উক্তিটি সবচাইতে জনপ্রিয় হ্যাশট্যাগে পরিণত হয়। জনপ্রিয় সান্ধ্য দৈনিক মেট্রো সহ একাধিক জাতীয় সংবাদপত্র প্রথম পাতায় এটিকে নিয়ে খবর প্রচার করে।
youaintnomuslimbruv                           
ব্রিটিশ সমাজের বহু খ্যাতনামা ব্যক্তি ও রাজনীতিবিদরা এটি রিটুইট করেন, এর প্রশংসা করেন।
সবশেষ এতে যোগ দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। তিনি বলেছেন, আমরা এ বিষয়ে বহু বক্তৃতা দিই, কিন্তু ওই লোকটি আমার চাইতে অনেক ভালোভাবে তার বক্তব্যকে এক লাইনে প্রকাশ করেছেন।
টম নামে একজন তার টুইটে লেখেন, "এর চেয়ে বড় সত্য কথা কেউ কোনোদিন বলে নি।'
আলি নামের একজন উক্তিটির সমর্থনে কোরানের একটি আয়াত উদ্ধৃত করে লেখেন, একজন মানুষকে হত্যা করা গোটা মানবজাতিকে হত্যারই সমতুল্য।
youaintnomuslimbruv                           
জাফর আব্বাস নামে একজন টুইট করেন, আজ আমি ব্রিটিশ হিসাবে গর্ববোধ করছি। মো ফারুক নামের একজন বলেন, তিনি লক্ষ লক্ষ লোকের মনের কথাটি বলেছেন।
ম্যাট কেলি নামে একজন লেখেন, এই লোকটি গত দশ বছরের সব কথাকে একটি বাক্য দিয়ে বলে দিয়েছেন।
লেখক সরফরাজ মঞ্জুর টুইট করেন, কেউ কি বলতে পারেন 'ইউএইন্টনোমুসলিমব্রাভ' টি শার্ট কোথায় পাওয়া যাচ্ছে?
মুহাইদিন মির নামের আক্রমণকারীকে গতকাল হত্যাপ্রচেষ্টার অভিযোগে আদালতে তোলা হয়।