দক্ষিণে সুদানে অপহৃত ১৮ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীকে মুক্তি দিয়েছে দেশটির বিদ্রোহীরা। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার তাদের মুক্তি দেয়া হয়। তবে এখনো জাতিসংঘের ১২জন ঠিকাদারকে মুক্তি দেয়া হয়নি। সোমবার নীল নদের তীর থেকে তাদের অপহরণ করা হয়।
মুক্ত হওয়া ১৮ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী সৈন্যকে জাতিসংঘের হেলিকপ্টার করে কাকা থেকে মালাক্কা নিয়ে যাওয়া হয়।
গত সোমবার জাতিসংঘ মিশনের জন্য জ্বালানিবাহী একটি নৌযানে হামলা চালিয়ে বিদ্রোহীরা তাদের অপহরণ করে। অপহরণের পর তাদের মালাকাল থেকে কাকা শহরে নিয়ে যাওয়া হয়।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জাতিসংঘ কর্মকর্তা জানান, ভারি আগ্নেয়াস্ত্রে সজ্জিত প্রায় ১০০ জন বিদ্রোহীর একটি দল জ্বালানিবাহী নৌযানের ওপর হামলা চালায়। শান্তিরক্ষীদের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে তারা জ্বালানি লুট করে এবং তাদের বন্দী করে।
বিদ্রোহীরা ১২ জন বন্দীকে এখনো কাকা শহরে রেখেছে বলে জানান ঐ কর্মকর্তা। ঐ বন্দীরা সবাই দক্ষিণ সুদানের নাগরিক।
জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিখ বাকি বন্দীদের অক্ষত অবস্থায় দ্রুত মুক্তি দেয়ার জন্য বিদ্রোহীদের প্রতি দাবি জানান। শান্তিরক্ষীদের ওপর আক্রমণ যুদ্ধাপরাধ বলে গণ্য করা হবে বলেও তাদের হুঁশিয়ার করে দেয়া হয়।
এদিকে, জাতিসংঘ শান্তি মিশনের প্রধান হার্ভ ল্যাডসাস বৃহস্পতিবার ফোনে বিদ্রোহী নেতা রিক মাচারের সাথে কথা বলে বন্দিদের মুক্তি দিতে অনুরোধ জানান।
২০১৩ সালের ডিসেম্বর থেকে সংঘর্ষ চলতে থাকা দক্ষিণ সুদানে বর্তমানে ১২,৫০০ শান্তিরক্ষী কর্মরত আছেন। সূত্র: এএফপি, ইউএন ও ডয়েস ভেলে।
ঢাকায় একদিনে দুই প্রকাশনা সংস্থায় হামলা চালিয়ে একজনকে হত্যা ও তিনজনকে আহতের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেছেন, জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা দিতে সরকার ‘সম্পূর্ণ ব্যর্থ’ হয়েছে।
চিকিৎসার জন্য লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপি চেয়ারপারসন শনিবার এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন। খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তার দাবি করেছেন তিনি।
দুপুরে লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর কার্যালয়ে হামলায় এর কর্ণধার আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুলসহ তিনজন আহত হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটে নিজের অফিসে খুন হন জাগৃতি প্রকাশনীর মালিক ফয়সাল আরেফিন দীপন।
শুদ্ধস্বর ও জাগৃতি প্রকাশনী থেকে নিহত অভিজিৎ রায়ের বই প্রকাশ করা হয়েছিল। আনসার আল ইসলাম নামে একটি টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে প্রকাশকদের ওপর হামলার দায় স্বীকার করে বলা হয়েছে, ‘ইসলামবিদ্বেষী’ অভিজিতের বই প্রকাশ করার কারণে তাদের উপর হামলা করা হয়েছে।
প্রকাশকদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে দলীয় প্যাডে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন স্বাক্ষরিত খালেদার এই বিবৃতি রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।
এতে খালেদা জিয়া বলেন, “এসব কাপুরুষোচিত হত্যাকাণ্ড ও হামলার ঘটনা। আমি দোষীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।”
নিহত ফয়সল আরেফিন দীপনের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তিনি বলেন, “ফয়সাল আরেফিন দীপন জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের সহসভাপতি ছিলেন এবং শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আর্দশে উজ্জীবিত একজন নিবেদিত সংগঠক ছিলেন।”
সরকারের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে বিএনপি নেত্রী বলেন, “মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা দিতে এ সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। দেশে আইনের শাসনের অনুপস্থিতিতে সমগ্র জাতি আজ এক শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় নিপতিত হয়ে পড়েছে।”
খালেদা জিয়া ছাড়াও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৃথক বিবৃতিতে হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার দাবি করেছেন।
ইজিয়ান সাগরের গ্রিস উপকূলে ডুবন্ত নৌকা থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে তীরে তুলছেন একজন স্বেচ্ছাসেবক। তুরস্ক থেকে সাগর পাড়ি দিয়ে গতকাল গ্রিসের লেসবস দ্বীপের কাছাকাছি পৌঁছে ডুবতে থাকে প্রায় দেড় শ শরণার্থী বহনকারী একটি নৌকা। তবে তাদের সবাইকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে l ছবি: রয়টার্সতুরস্ক থেকে সাগরপথে গ্রিসে যাওয়ার সময় তিনটি নৌকাডুবির ঘটনায় অন্তত ১৭টি শিশুসহ ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। গ্রিক কর্মকর্তারা গতকাল শুক্রবার এসব কথা জানিয়েছেন। গ্রিসের কালিমোনস ও রোডস দ্বীপের কাছে দুটি এবং তুরস্কের উপকূলে একটি নৌকা ডুবে যায়। খবর এএফপির। গ্রিসের বন্দর কর্মকর্তারা বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে নিমজ্জিত দুটি নৌকার ১৩৮ জন যাত্রীকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রেখেছে কোস্টগার্ড। কালিমোনসের কাছাকাছি সাগরে ডুবে যাওয়া নৌকার যাত্রীদের মধ্য থেকে ছয় নারী, ১০ শিশুসহ ১৯ জনের মৃতদেহ গতকাল সকালে উদ্ধার করা হয়। আর রোডস দ্বীপের কাছে একটি নৌকা ডুবে এক নারী ও এক শিশুর মৃত্যু হয়। উদ্ধার করা হয়েছে ছয়জনকে। তিনজনের খোঁজ মেলেনি। এ ছাড়া ইজিয়ান সাগরের অপর পারে তুরস্কের উপকূলে গ্রিসগামী একটি নৌকা ডুবে গতকাল চারটি সিরীয় শিশুর মৃত্যু হয়েছে। নাজুক ওই নৌকাটি খারাপ আবহাওয়ার কারণে ডুবে যায়। লাশগুলো উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড। নৌকাটির আরও ১৯ জন আরোহীকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের পরনে লাইফ জ্যাকেট ছিল। খারাপ আবহাওয়ার কারণে ইজিয়ান সাগরে নৌকাডুবির আশঙ্কা বেড়েছে। মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও এশিয়ার কয়েকটি দেশ থেকে দলে দলে মানুষ গ্রিস উপকূল দিয়ে ইউরোপে প্রবেশ করছে। চলতি বছর এ পর্যন্ত ৫ লাখ ৭০ হাজারের বেশি শরণার্থী ও অভিবাসী ইউরোপে পৌঁছেছে। এতে শরণার্থীদের নিয়ে ওই মহাদেশে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সবচেয়ে বড় সংকট তৈরি হয়েছে। নৌকাডুবির ঘটনায় আবারও শরণার্থীদের মৃত্যুর ঘটনাকে ‘লজ্জাজনক’ আখ্যা দিয়েছেন গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী আলেক্সিস সিপ্রাস। শরণার্থী-সংকট মোকাবিলায় ইউরোপীয় অন্যান্য দেশের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ইজিয়ান সাগরের বিভিন্ন উপকূলে মৃত শিশুদের জন্য লোক দেখানো কান্নাকাটি হচ্ছে। কারণ, মৃত শিশুরা সব সময়ই দুঃখ জাগায়। কিন্তু হাজারো শিশু জীবিত অবস্থায় ইউরোপে আসছে। তাদের পরিণতি কী হবে? তাদের কথা কেউ তো ভাবে না। বিবিসি জানায়, স্পেনের দক্ষিণাঞ্চলে একটি নৌকা ডুবে যাওয়ার পর নিখোঁজ ৩৫ জনের খোঁজে উদ্ধার অভিযান চলছে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত চারজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। ঝুঁকিপূর্ণ নৌকাটি মরক্কো থেকে শরণার্থীদের নিয়ে স্পেনে যাচ্ছিল। অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাইয়ের কারণেই এটি ডুবেছে। তবে ১৫ জন শরণার্থীকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার হিসাবে, ভূমধ্যসাগরে ইউরোপগামী নৌকা ডুবে চলতি বছর এ পর্যন্ত তিন হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। তুরস্কের বোদ্রাম সৈকতে গত ২ সেপ্টেম্বর সিরীয় শিশু আয়লান কুর্দির লাশ ভেসে ওঠার পর সেই ছবি বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে।
মাস খানেক ধরে সিরিয়ায় যুদ্ধবিমান যোগে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। ছবি: রয়টার্স
মাসখানেক ধরে সিরিয়ায় যুদ্ধবিমান যোগে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। হাত-পা ঝেড়ে শক্তির মহড়া দেখাচ্ছে। সাগর থেকে এক হাজার ৫০০ কিলোমিটার দূরত্ব পাড়ি দিয়ে সিরিয়ায় গিয়ে পড়ছে তাদের বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র। এর সঙ্গে ছোট বড় বিভিন্ন ধরনের গোলার দাপট তো আছেই। রাশিয়া বলছে, তারা পরম মিত্র সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের ঘোর শুত্রুদের ঘায়েলে এ হামলা চালাচ্ছে। আর তা মূলত জঙ্গি সংগঠন আইএসকে লক্ষ্য করেই। কিন্তু সরকারবিরোধী প্রধান বিদ্রোহী জোট ফ্রি সিরিয়ান আর্মির প্রতিও তাদের নমনীয়তা দেখা যাচ্ছে। তাঁদের সামরিক সহায়তা দিতে পিছপা নেই। এসব থেকে রাশিয়ার উদ্দেশ্য বোঝা মুশকিল। শেষ পর্যন্ত তাঁরা আসলে কী চায়?
বিবিসির বিশ্লেষণে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্লেষক মাইকেল কফম্যান এ ব্যাপারে তাঁর পর্যালোচনা তুলে ধরেছেন। তিনি সিএনএ করপোরেশন ও কেনান ইনস্টিটিউটের গবেষক। সিরিয়ায় রাশিয়ার বিমান অভিযান নিয়ে তিনি পর্যালোচনা করছেন।
অভিযানের প্রস্তুতি চলছে। ছবিটি সাম্প্রতিক। ছবি: রয়টার্স
কফম্যান মনে করছেন, সিরিয়ার সরকারবিরোধী বাহিনীর ওপর প্রভাব খাটাতে চায় রাশিয়া। তারা হয়তো তাদের নিজেদের হাতে রাখতে চায়। সিরিয়া ইস্যুতে ইরান, এমনকি লেবাননের শিয়াপন্থী সংগঠন হিজবুল্লাহও রাশিয়াকে সহায়তা করতে পারে। মিত্র হিসেবে পরিচিত ইরানের কাছ থেকে বাশারের সরকার বিপুল অঙ্কের আর্থিক সহায়তা পেয়েছে বলে ধারণা করা হয়। গৃহযুদ্ধে দামেস্ককে অস্ত্র সহায়তা দিয়ে থাকতে পারে তেহরান।
কফম্যান বলেন, রাশিয়া প্রায় প্রতিদিন সিরিয়ায় একাধিক বিমান হামলা চালাচ্ছে। এসব হামলায় ভারী ও আধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করছে দেশটি। সিরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা হামলা নিয়ে সতর্ক। তাঁরা বলছে, হামলার লক্ষ্যবস্তু হলো অস্ত্র আর গোলাবারুদের ভান্ডার ও বিভিন্ন স্থাপনার অবকাঠামো।
যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত জোট আল নুসরা ফ্রন্টকে লক্ষ্য করেও হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এভাবে তারা বাশারকে শক্তিশালী করতে চায়। যদিও রাশিয়া বারবার দাবি করছে, তাঁরা আইএস জঙ্গিদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, তাঁদের লক্ষ্য আসাদবিরোধী গোষ্ঠীগুলো।
কফম্যান এটাও বলছেন, বাশারকে বাঁচানো রাশিয়ার লক্ষ্য নয়। রাশিয়া চায় যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বকে নিজেদের শক্তি দেখাতে। সিরিয়া ইস্যু তাদের কাছে এখন তুরুপের তাস। তারা চায়, এই ইস্যুতে পশ্চিমা বিশ্ব যেন তাদের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে বাধ্য হয়।
রাশিয়ার অভিযানে ব্যবহৃত বিমান। ছবিটি সাম্প্রতিক। ছবি: রয়টার্স
পরিস্থিতি বিবেচনা করে দেখা যাচ্ছে, রাশিয়ার সেই উদ্দেশ্য অনেকটা সফল হতে যাচ্ছে। যেমন—গতকাল অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক সংলাপে প্রথমবারের মতো যোগ দেয় ইরান। আলোচনায় অংশ নেয় রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, তুরস্ক, মিসর ও ইরাক। ইউরোপীয় ইউনিয়নও (ইইউ) সেখানে ছিল।
আট ঘণ্টার ওই বৈঠক শেষে বিশ্বনেতারা বলেন, সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ অবসানের বিষয়ে ‘অগ্রগতি’ হয়েছে। তবে বাশারের ভাগ্যে কী ঘটবে, এ নিয়ে সব পক্ষ একমত হতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা বাশারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতে একমত হলেও ইরান ও রাশিয়া এ ব্যাপারে এখনো সম্মত হয়নি। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে আবার সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর বৈঠকে বসার কথা।
সিরিয়ায় চার বছরের বেশি সময় ধরে চলমান গৃহযুদ্ধে আড়াই লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। রাশিয়া ও ইরান সম্প্রতি সিরীয় যুদ্ধে সামরিকভাবে জড়িয়ে পড়েছে। সেখানে মস্কো সরকারি বাহিনীর সমর্থনে বিমান হামলা চালাচ্ছে। সরকারপন্থীদের সমর্থন দিচ্ছে তেহরানও। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, সৌদি আরব ও উপসাগরীয় অন্য দেশগুলো প্রেসিডেন্ট বাশারকে উৎখাত করতে চায়। বিবিসি অবলম্বনে
দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ফয়সাল আরেফিন দীপনের বাবা অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক। ছবি: সাজিদ হোসেন‘যারা দীপনকে (ফয়সাল আরেফিন) হত্যা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। আমি তাদের বিচার চাই না। তারা ভালো থাকুক। তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। জানি, বিচার চেয়ে কোনো প্রতিকার হবে না।’ কথাগুলো বলছিলেন দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ফয়সাল আরেফিন দীপনের বাবা অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক। খানিক আগে নিজেই নিজের ছেলের মরদেহ উদ্ধার করেছেন। এ অবস্থায় বিহ্বল দৃষ্টিতে জাগৃতির কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকের একের পর এক প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। এর মধ্যে কয়েকবার ফোনে কল এলে সেটি ধরে কাউকে কাউকে বললেন, ‘দীপনকে ওরা মেরে ফেলেছে। পুলিশ লাশ হাসপাতালে নিয়ে গেছে।’ কারা এই খুনের সঙ্গে জড়িত?—জানতে চাইলে নিহতের বাবা বললেন, ‘বিষয়টা অত্যন্ত স্পষ্ট। লালমাটিয়ায় যাঁরা হামলা করেছে, তারাই দীপনকে হত্যা করেছে। অভিজিৎ দীপনের বন্ধু ছিল। ওর একটা বইও দীপন বের করেছে।’ একটু পরে খানিকটা ক্ষোভের সঙ্গেই বলে উঠলেন, ‘এখানে যে ধর্ম নিয়ে ক্রিয়া এবং প্রতিক্রিয়া, একপক্ষ ধর্মের পক্ষ নিয়ে দাঁড়িয়েছেন, আরেক পক্ষ ধর্ম নিরপেক্ষতা নিয়ে দাঁড়িয়েছেন। এটা করে জাতিকে চরম বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে গেছেন। জঙ্গিবাদবিরোধী আন্দোলন, মৌলবাদবিরোধী আন্দোলন যত হবে, তত আরও ক্ষয়ক্ষতি বাড়বে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ধর্ম বা ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দিয়ে গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্র নিয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে যদি রাজনীতি করা যায়, তবেই মঙ্গল হবে।’ prothom alo
প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনকে আজিজ সুপার মার্কেট থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। ছবি: সাজিদ হোসেনরাজধানীর লালমাটিয়া ও শাহবাগ এলাকায় দুর্বৃত্তরা আজ শনিবার দিনে-দুপুরে দুটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ে ঢুকে দুই স্বত্বাধিকারী কুপিয়ে জখম করে দরজা আটকে দিয়ে চলে যায়। এতে জাগৃতি প্রকাশনীর মালিক ফয়সাল আরেফিন দীপনের মৃত্যু হয়। আর গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন শুদ্ধস্বরের মালিক আহমেদুর রশীদ টুটুল। তাঁর সঙ্গে হামলায় আহত দুজনও সেখানে চিকিৎসাধীন।
দুপুরের কোনো এক সময় শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটে ফয়সালের কার্যালয়ে ঢুকে দুর্বৃত্তরা তাঁকে কুপিয়ে ভেতরে ফেলে রেখে দরজা বন্ধ করে দিয়ে চলে যায়। নিহতের বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক আবুল কাশেম ফজলুল হক সাংবাদিকদের বলেন, আজ দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ফয়সাল তাঁর সঙ্গেই বাসায় ছিলেন। পরে ছেলে শাহবাগে তাঁর প্রকাশনী প্রতিষ্ঠানে যান। খোঁজ নেওয়ার জন্য তিনি কয়েকবার ছেলেকে ফোন করেন। কিন্তু ছেলে ফোন ধরেননি। বিকেল চারটার দিকে তিনি আজিজ সুপার মার্কেটের তিন তলায় ১৩১ নম্বর রুমের সামনে যান। এটি তাঁর ছেলের কার্যালয়। আজিজ সুপার মার্কেটে ঘটনাস্থলে নিহত ফয়সালের এক বন্ধুর কান্না। ছবি: সাজিদ হোসেননিহতের বাবা আরও বলেন, ওই সময় তিনি কার্যালয়ের দরজা খুলতে গিয়ে বন্ধ পান। এ সময় কাচের দরজা দিয়ে ভেতরে আলো জ্বলতে দেখেন। ছেলে বাইরে গেছে ভেবে তখন তিনি সেখান থেকে চলে যান। পরে ছেলের বউকে ফোন করলে জানতে পারেন, দুর্বৃত্তরা লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর মালিক আহমেদুর রশীদ টুটুলসহ তিনজনকে কুপিয়ে জখম করেছে। এই কথা শুনে তিনি লোকজন নিয়ে বিকেল পাঁচটার দিকে আবার ছেলের কার্যালয়ে গিয়ে দরজা ভেঙে দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁর ছেলে পড়ে আছে। ওই অবস্থায় ফয়সালকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
সন্ধ্যা সাতটার দিকে হাসপাতালের আবাসিক সার্জন রিয়াজ মোর্শেদ প্রকাশক ফয়সালের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
কতিপয় দুর্বৃত্ত বেলা আড়াইটার দিকে লালমাটিয়ার সি ব্লকে পাঁচতলা একটি ভবনের চারতলায় শুদ্ধস্বরের কার্যালয়ে ঢুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহমেদুর রশীদ টুটুল, তারেক রহিম ও রনদীপম বসুকে জখম করে। এরপর দুর্বৃত্তরা কার্যালয়ের বাইরে তালা লাগিয়ে চলে যায়। খবর পেয়ে মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে একটি সূত্র প্রাথমিকভাবে জানায়, তারেক রহিমের বুকের বাম দিকে গুলি লেগেছে। এ ছাড়া তাঁর মাথা ও হাতে ধারালো অস্ত্রের আঘাত করা হয়েছে। আহমেদুরের মাথা ও হাতে এবং রনদীপম বসুর হাতে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে।
আহত তিনজনকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ছবি: সাজিদ হোসেনপুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বিকেল পাঁচটার দিকে ওই বাড়ির সামনে সাংবাদিকদের বলেন, হামলার সময় ওই কার্যালয়ে পাঁচজন ছিলেন। সেখানকার এক কর্মচারীর বরাত দিয়ে বিপ্লব জানান, প্রথম বই কেনার কথা বলে ১৭-১৮ বছর বয়সী এক ছেলে কার্যালয়ে ঢুকে। এর পরপরই আরেকজন ঢুকে। তারা প্রথমে কক্ষে থাকা তিনজনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বলে ‘কোনো কথা বলবি না। কথা বললে মেরে ফেলব।’ এরপর আরও ২/৩ দুর্বৃত্ত ভেতরের রুমে ঢুকে তাঁকে (ওই কর্মচারী) এবং শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর কাছে আসা বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী ওয়াসিকুলকে জিম্মি করে। একপর্যায়ে দুর্বৃত্তরা প্রথম কক্ষে থাকা তিনজনকে এলোপাতাড়ি কোপায় এবং পরে গুলি করে। এরপর দুর্বৃত্তরা বাইরে থেকে দরজায় তালা দিয়ে চলে যায়।
বিপ্লব কুমার আরও বলেন, তিনি মোহাম্মদপুর থানায় ছিলেন। বেলা আড়াইটার একটু পর একটি ফোন আসে। ফোনটি ধরতে না ধরতেই একটি এসএমএসও আসে। সেখানে লেখা ছিল ‘আমাদের বাঁচান’। এ সময় ওয়াসিকুল-এর মোবাইল ফোন থেকে ‘ভাই আমাদের বাঁচান’-এমন এসএমএস আসে। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ফোর্স পাঠানো হয়। পরে পুলিশ তালা ভেঙে তাঁদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
আহত ব্যক্তিদের একজন। ছবি: সাজিদ হোসেন
র্যাব-২ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজান বলেন, কার্যালয়ের দুটি কক্ষে ভাঙচুর করা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় রক্ত পড়ে আছে। ঘটনাস্থলে গুলির একটি খোসা এবং একটি তাজা গুলি পাওয়া গেছে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে একুশের বইমেলা থেকে বের হওয়ার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা ও বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। হামলায় আহত হন তাঁর স্ত্রী রাফিদা আহমেদ। জাগৃতি থেকে অভিজিৎ রায়ের ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ ও ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ নামের দুটি বই প্রকাশিত হয়। আর শুদ্ধস্বর তাঁর লেখা ‘সমকামিতা: একটি বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক অনুসন্ধান’ ও ‘শূন্য থেকে মহাবিশ্ব’ নামে দুটি বই প্রকাশ করে। prothom alo
সময়ের কণ্ঠস্বর : প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপনকে কুপিয়ে হত্যা এবং আরও তিনজন ব্লগার ও প্রকাশকের উপর সহিংস হামলার ঘটনায় নিন্দা প্রকাশ করেছে ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট ডব্লিউ গিবসন।
হাইকমিশনার রবার্ট ডব্লিউ গিবসন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ব্লগারদের উপর আবারও সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় নিন্দা জানাচ্ছি। কোনো অবস্থাতেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে মেনে নেওয়া যায় না। স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য পরিবেশ রক্ষা করতে হবে।’
রাজধানীর শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটে জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। দীপন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও চিন্তক আবুল কাসেম ফজলুল হকের ছেলে।
আজিজের তিনতলায় জাগৃতির কার্যালয়ে শনিবার বিকেলের কোনো এক সময় তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
একই দিন, একই সময় রাজধানীর মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়ায় একটি প্রকাশনীর কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে মারাত্মক জখম করা হয় এক প্রকাশক ও দুই ব্লগারকে।
সারাদেশে রোববার থেকে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা শুরু হবে। চলতি বছর জেএসসি ও জেডিসিতে মোট ২৩ লাখ ২৫ হাজার ৯৩৩ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে।
এরমধ্যে ছাত্রী ১২ লাখ ৪৩ হাজার ২৬৩ জন ও ছাত্র ১০ লাখ ৮২ হাজার ৬৭০ জন। ছাত্রের তুলনায় ছাত্রীর সংখ্যা ১ লাখ ৬০ হাজার ৫৯৩ জন বেশি।
পরীক্ষার প্রথম দিনে জেএসসি’র ‘বাংলা প্রথমপত্র’ ও জেডিসি’র ‘কুরআন মাজীদ ও তাজবিদ’ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষা শুরু হবে সকাল ১০টায়।
চলতি বছর সারাদেশের ২৮ হাজার ৬৩২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এ ২৩ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী ২ হাজার ৬২৭টি কেন্দ্রে পরীক্ষায় বসবে। গত বছরের চেয়ে এবার কেন্দ্রের সংখ্যা ১০২টি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৭০৭টি বৃদ্ধি পেয়েছে।
এবার জেএসসি থেকে ১৯ লাখ ৬৭ হাজার ৪৪৭ জন এবং জেডিসি থেকে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৪৮৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।
বিদেশের ৮টি কেন্দ্রে অর্থাৎ, সৌদি আরবের জেদ্দা ও রিয়াদ, লিবিয়ার ত্রিপলী, কাতারের দোহা, ওমানের সাহাম, আবুধাবী, দুবাই ও বাহরাইনে মোট ৫৮৫ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় বসবে।
এবছর জেএসসি ও জেডিসি’র অনিয়মিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা যথাক্রমে ১ লাখ ১৮ হাজার ২১৪ জন ও ১৪ হাজার ৭৭৯ জন। এক, দুই ও তিন বিষয়ে অকৃতকার্য বিশেষ পরীক্ষার্থী জেএসসি’র ১ লাখ ৯ হাজার ৬২০ জন এবং জেডিসি’র ১১ হাজার ৯৫১ জনও পরীক্ষা দিবে।
গত বছর জেএসসি ও জেডিসিতে মোট ২০ লাখ ৯০ হাজার ৬৯২ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। গত বছরের তুলনায় এবার শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২ লাখ ৩৫ হাজার ২৪১ জন বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০১০ সাল থেকে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। ওই বছর মোট ১৪ লাখ ৯২ হাজার ৮০২ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। তারপর থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রতিবছরই শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে চলতি বছর ২৩ লক্ষাধিকে দাঁড়িয়েছে।
শিক্ষার্থীরা এবার বাংলা দ্বিতীয় এবং ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র ছাড়া সকল বিষয়ে সৃজনশীল প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিবে।
এমসিকিউ ও সৃজনশীল প্রশ্নপত্রে দু’টি বিভাগ থাকলেও দু’টিতে অংশ নিয়ে একত্রে ৩৩ নম্বর পেলেই পাস বলে গণ্য হবে। এমসিকিউ ও সৃজনশীল একই খাতায় পরীক্ষা হবে। এমসিকিউর বৃত্ত ভরাট করতে হবে না, টিক দিলেই চলবে। এছাড়া কোনো পরীক্ষার্থীকেই আলাদাভাবে বৃত্তি পরীক্ষা দিতে হবে না। এ পরীক্ষার মূল্যায়নেই বৃত্তি প্রদান করা হবে।
শ্রবণ ও অন্যান্য প্রতিবন্ধীদের জন্য নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় দেয়া হবে। দৃষ্টি ও সেরিব্রাল প্রতিবন্ধী এবং যাদের হাত নেই, তাদের জন্য শ্রুতি লেখকের সুযোগ থাকবে।
বাংলাদেশে ২০১৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৫ জন ব্লগারকে তাদের লেখালেখির কারণে হত্যা করা হয়েছে। এখন শুধু লেখকই নয়, প্রকাশকেরাও হচ্ছেন হামলার শিকার।
একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটলেও একটি বাদে কোনও মামলারই চোখে পড়ার মতো অগ্রগতি নেই।
শনিবার দুটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের প্রকাশকের উপর হামলার ঘটনায় এই প্রশ্নটিই আবারও সামনে উঠে এসেছে। দুটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকেই নিহত ব্লগার অভিজিৎ রায়ের বই প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান দুটির একটি ‘শুদ্ধস্বর’, যার প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুলসহ তিনজন গুরুতর আহত হন।
একই দিনে রাজধানীর শাহবাগে ‘জাগৃতি’ নামের আরেকটি প্রকাশনা সংস্থার প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
‘শুদ্ধস্বর’ প্রকাশনীর আহত প্রকাশক নিজেও একজন ব্লগার ছিলেন বলে জানা যাচ্ছে।
একের পর এক হামলার ঘটনা আগের মামলার ধীরগতি বা ব্যর্থতার দিকেই আঙ্গুল তুলে দেয়।
ধারাবাহিক এসব হত্যাকাণ্ডে বিচার কার্যক্রম ঠিক কি পর্যায়ে আছে? ঘটনাগুলোই বা কী ছিল? আহমেদ রাজিব হায়দার:
২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যখন যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ বিচার ফাঁসীর দাবীতে উত্তাল শাহবাগের আন্দোলন, তখন ১৫ই ফেব্রুয়ারি এই শাহবাগ আন্দোলনেরই এক কর্মী আহমেদ রাজিব হায়দার দুর্বৃত্তদের চাপাতির আঘাতে নিহত হন।
পরে প্রচার করা হয় 'থাবা বাবা' নামে পরিচিত মি.হায়দার ছিলেন একজন নাস্তিক এবং তিনি ইসলাম ও এই ধর্মের নবী মোহাম্মদ সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ ব্লগ লিখতেন।
এই হত্যাকাণ্ডটিই ছিল ব্লগে লেখালেখির অপরাধে বাংলাদেশে প্রথম কোনও হত্যাকাণ্ড।
এই ঘটনায় সন্দেহের ভিত্তিতে সাতজনকে আটক করে পুলিশ এবং তদন্ত শেষে হত্যাকাণ্ডের এগারো মাস পর আদালতে অভিযোগ-পত্র দায়ের করা হয়।
ঢাকায় পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, 'বর্তমানে আদালতে মামলাটি বিচারাধীন রয়েয়েছে। বিচারিক কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে চলছে। এই মামলার রায় শীঘ্রই পাওয়া যাবে বলে আশা করছি'। অভিজিৎ রায়:
অভিজিৎ রায় একজন মার্কিন প্রবাসী বাংলাদেশী।
তিনি মুক্তমনা নামে একটি ব্লগ সাইটের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন যেখানে বিজ্ঞান বিষয়ক নানা লেখালেখি করা হত।
এবছর ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশে আসেন তিনি এবং ২৬শে ফেব্রুয়ারি স্ত্রীকে নিয়ে বাংলা একাডেমির বইমেলা দেখে ফেরার পথে আক্রমণের মুখে পড়েন।
হামলায় অভিজিৎ প্রাণ হারান। তার স্ত্রী রাফিদা বন্যা আহমেদও মারাত্মক আহত হন।
এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে শফিউর রহমান ফারাবী নামে এক ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ।
ওই ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের একটি প্রতিনিধিদল তদন্তের জন্যে ঢাকায় আসে।
পুলিশ বলছে, সন্দেহভাজন হিসেবে মোট ৮ জন হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওয়াশিকুর রহমান:
অভিজিৎ রায়কে হত্যার এক মাসেরও কম সময়ের মাথায় ৩০শে মার্চ ব্লগার ওয়াশিকুর রহমানকে ঢাকার তেজগাঁও এলাকার একটি সড়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
এসময় হামলাকারীদের দুজনকে ধাওয়া করে ধরে ফেলে প্রত্যক্ষদর্শীরা।
এদের একজন পরে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবাব দেয় বলে জানাচ্ছে পুলিশ।
পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ বা ডিবি মামলাটির তদন্ত করছে।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে মামলায় পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।
অভিযোগপত্রে যাদেরকে আসামী করা হয়েছে তাদের তিনজন কারাগারে আটক রয়েছেন। বাকি দু’জন পলাতক।
মি. রহমানের লেখালেখির অন্যতম একটি বিষয় ছিল ইসলামসহ নানা ধর্মের সমালোচনামূলক প্রসঙ্গ। অনন্ত বিজয় দাস:
ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশকে হত্যা করা হয় গত ১২ই মে, সিলেটে। ঢাকার বাইরে এটাই একমাত্র ব্লগার হত্যাকাণ্ডের ঘটনা।
মি. দাশ বাসা থেকে বের হয়ে একটি ব্যাংকে যাবার পথে হামলার শিকার হন।
তিনি মুক্তমনা নামে একটি ব্লগে লিখতেন এবং সিলেট থেকে প্রকাশিত বিজ্ঞান বিষয়ক একটি পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন।
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সন্দেহের ভিত্তিতে সিলেট থেকে পাঁচজন এবং ঢাকা থেকে দুইজনকে আটক করা হয়।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদেরকে রিমান্ডেও নেয়া হয়।
তবে তাদের মধ্যে আটককৃত ইদ্রিস আলী নামে একজন স্থানীয় ফটো সাংবাদিককে সম্প্রতি জামিনে ছাড়া হয়েছে।
সংবাদদাতারা বলছেন, অপর চারজনকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
এ মামলার আর কোনও অগ্রগতির খবর এখনো জানা যায়নি। মামলাটি এখন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ বা সিআইডি'র অধীনে রয়েছে। নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়:
লেখালেখির অভিযোগে ব্লগার হত্যাকাণ্ডের সর্বশেষ সংযোজন নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়।
গত ৭ই অগাস্ট দুপুরে বাড়িতে ঢুকে হত্যা করা হয় মি. চট্টোপাধ্যায়কে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা যায়নি।
মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব ডিবি বা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
প্রত্যেকটি হত্যাকাণ্ডই বলছে, নিহতদের দীর্ঘদিন ধরে অনুসরণ করা হয়েছে। প্রত্যেককেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
প্রত্যেকটি ঘটনার পরই ধর্মীয় মৌলবাদী সংগঠনের নামে দায় স্বীকার করা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বরাবরই বলে আসছেন, বিচারহীনতার কারণে দেশটিতে এ ধরণের হত্যাকাণ্ড থামানো যাচ্ছে না।
অর্চি অতন্দ্রিলাবিবিসি বাংলার জন্য বিশেষ প্রতিবেদন
আজিজ সুপার মার্কেটে জাগৃতির অফিসে হামলা চালিয়ে ফয়সাল আরেফিন দীপনকে হত্যা করা হয়
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় আজ কয়েকজন ব্লগার, লেখক ও প্রকাশককে টার্গেট করে হামলা চালানো হয়েছে।
শাহবাগ এলাকায় আজিজ সুপার মার্কেটে চালানো একটি হামলায় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান জাগৃতির মালিক ফয়সাল আরেফিন দীপন নিহত হয়েছেন।
ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে আঘাত করা হয়েছে।
এর আগে ঢাকার লালমাটিয়ায় আরো একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান শুদ্ধস্বরে ঢুকে হামলা করা হলে প্রকাশক ও ব্লগার আহমেদুর রশীদ টুটুলসহ সেখানে তিনজন আহত হন।
তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, আহতদের অবস্থা গুরুতর।
এই দুটো প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকেই নিহত ব্লগার অভিজিৎ রায়ের বই প্রকাশ করা হয়েছিলো।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে অভিজিৎ রায়কে ঢাকায় বইমেলার কাছে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
এবছরেই প্রায় একই ধরনের হামলায় চারজন ব্লগার নিহত হয়েছে।
শনিবারের সবশেষ হামলা ও হত্যাকাণ্ডের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বিবিসিকে বলেছেন, 'অধিকাংশ হত্যাকারীকেই ধরা হয়েছে। তবে নতুন করে যারা হত্যা করছে তাদেরকে খুব শীঘ্রই গ্রেফতার করা হবে।'
হত্যাকারীরা কেনো আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে সেটাও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি।
তবে তিনি ব্লগারদেরকেও লেখালেখির ব্যাপারে সংযত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। দীপন হত্যা
ঢাকার শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেট বলে পরিচিত বহুতল একটি ভবনের তৃতীয় তলায় ছিল জাগৃতি প্রকাশনীর অফিস।
সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টার দিকে তৃতীয় তলার অফিস কক্ষের বন্ধ দরজা ভেঙে বেড় করা হয় জাগৃতির মালিক ফয়সাল আরেফিন দীপনের মৃতদেহ।
তার গলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল, অফিস কামরার মেঝে ছিল রক্তে প্লাবিত।
আজিজ সুপার মার্কেটটি মূলত বইপাড়া বলে পরিচিত, বহু প্রকাশনীর কার্যালয় এবং বইয়ের দোকান রয়েছে এখানে।
ঢাকার তরুণ বুদ্ধিজীবীদের আড্ডাস্থল বলেও এই আজিজ সুপার মার্কেটের খ্যাতি রয়েছে। নিহত দীপনের জাগৃতি প্রকাশনী এখানকার নামকরা একটি প্রকাশনা সংস্থা।
কারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারে, তা পুলিশ এখনো স্পষ্ট করতে পারেনি।
পুলিশের রমনা জোনের এডিসি জসিম উদ্দিন বলেছেন, তদন্ত একদম প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।
তবে দীপনের বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক অভিযোগ করছেন, আজ দুপুরে শুদ্ধস্বর প্রকাশনীতে ব্লগার ও প্রকাশকের উপর যারা হামলা চালিয়েছে এবং যে কারণে চালিয়েছে, দীপনকেও একই কারণে, একই ব্যক্তিরা হত্যা করেছে।
শাহবাগেরই আরেকজন প্রকাশকের কাছ থেকে জানা যাচ্ছে, জাগৃতি প্রকাশনী থেকে ইতিপূর্বে নিহত লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়ের দুটো বই প্রকাশিত হয়েছিল, তার মধ্যে একটি বইয়ের নাম ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ বলে ওই প্রকাশক জানিয়েছেন।
সন্ধ্যে সাড়ে ছ’টায় ফয়সাল আরেফিন দীপনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হলেও এক ঘণ্টারও বেশী সময় ধরে উৎসুক জনতা ও সাংবাদিকদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে পুলিশকে, রাত সাড়ে আটটা নাগাদ ওই অপরাধ-স্থলে তদন্ত শুরু করতে পারেনি পুলিশ। bbc
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় একজন বই প্রকাশকসহ তিনজনের ওপর হামলার ঘটনায় তাঁরা আহত হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এই প্রকাশনী থেকে এর আগে খুন হওয়া ব্লগার অভিজিৎ রায়ের বই প্রকাশিত হয়েছিল।
পুলিশ জানিয়েছে, শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর মালিকসহ এই তিন জনের ওপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে প্রথমে আঘাত করা হয় এবং পরে গুলিও চালানো হয়।
এদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর বলে পুলিশ জানিয়েছে।
শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর মালিক আহমেদুর রশীদ টুটুলের ওপর হামলার ঘটনাটি ঘটেছে লালমাটিয়ায় প্রকাশনীটির অফিসে।
পুলিশ বলছে, সে সময় আহমেদুর রশীদের সঙ্গে ছিলেন তারেক রহিম এবং রণদীপম বসু। এরা সবাই লেখালিখির সঙ্গে জড়িত।
শুদ্ধস্বর প্রকাশনী থেকে মার্কিন প্রবাসী লেখক অভিজিৎ রায়ের বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছিল।
মি. রায় গত ফেব্রুয়ারিতে স্ত্রীসহ ঢাকার বই মেলা থেকে বেরিয়ে বেরিয়ে হামলার মুখে পড়েন এবং ধারালো অস্ত্রের কোপে নিহত হন।
প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুলসহ তিনজন আহত হওয়ার পর তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
সেখানে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার শেখ মারুফ হাসান সাংবাদিকদের বলেন, আক্রমণকারীরা শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর অফিসে ঢোকে বই কেনার নাম করে। এরপর তারা অতর্কিতে হামলা করে।
পুলিশের অন্য কর্মকর্তারা জানান, তিনজনের ওপর হামলার ঘটনাটি ঘটে যে ভবনে, সেটি একটি পাঁচ তলা ভবন।
চতুর্থ তলায় পৌনে তিনটার দিকে হামলাকারীরা ঘটনা ঘটিয়ে অফিসটির দরজা বন্ধ করে চলে যায়।
এরপর আশেপাশের ফ্লাট থেকে পুলিশে খবর দেয়া হলে পুলিশ এসে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যায়।
হাসপাতালে আহতদের দেখে মহানগর পুলিশের শেখ মারুফ হাসান তাদের অবস্থা সম্পর্কে বলেন, মি. রহিমের ঘাড়ে, মাথায় আর দুই হাতেই আঘাত রয়েছে। এছাড়া, তাঁর কোমরে একটা গুলির চিহ্ন রয়েছে। বাকী দুজনের শরীরে আঘাত থাকলেও তুলনামূলকভাবে মি. রহিমের অবস্থা গুরুতর।
আহমেদুর রশীদ টুটুলই এই হামলার মূল লক্ষ্য ছিলেন বলে মনে করছেন প্রকাশনা জগতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
তার শুদ্ধস্বর থেকে অভিজিৎ রায়ের বই প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে তাকে হুমকি দেয়া হচ্ছিল বলে তাঁরা বলছেন।
আহমেদুর রশীদ টুটুলের ঘনিষ্ঠ ছিলেন আরেকজন লেখক শাহীন লতি।
তিনি বলছেন, অভিজিৎ রায়ের হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই তাকে হত্যা করা হবে, এমন হুমকি দেয়া হয়েছিল ।
তবে পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, সাধারণ ডায়েরি করার পর আহমেদুর রশীদ টুটুলের জন্যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল।
পুলিশ বলছে, এই তিনজনের ওপর কেন হামলা হয়েছে, তা কেবল তদন্ত শেষে বলা যাবে।
মিশরের সিনাই উপদ্বীপে ২২৪ জন আরোহী সহ এক রুশ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর দুর্ঘটনাস্থলে এখন উদ্ধার কর্মীরা অভিযান চালাচ্ছে।
একটি রুশ বিমান সংস্থার এই বিমানটি মিশরের অবকাশ কেন্দ্র শার্ম আল শেখ থেকে পর্যটকদের নিয়ে ফিরে যাচ্ছিল রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে।
বিমানের আরোহীদের সকলেই ছিলেন রুশ নাগরিক।
খবরে বলা হচ্ছে, বিমানের পাইলট জরুরী অবতরণের জন্য চেষ্টা করছিলেন এবং সিনাই উপদ্বীপের এক পাহাড়ি এলাকায় এটি বিধ্বস্ত হয়।
রাশিয়ায় বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বলছে, উড়ান শুরু করার ২৩ মিনিট পরেই বিমানটি সাইপ্রাসে নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সাথে নির্ধারিত যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয় এবং রাডার থেকে হারিয়ে যায়।
পরে মিশরের প্রধানমন্ত্রী নিশ্চিত করেন যে সিনাইয়ের মধ্যাঞ্চলে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে।
রুশ কর্মকর্তারা বলছেন, বিমানটিতে ২১৭ জন যাত্রী ছিলো। তাদের মধ্যে ১৩৮জন নারী এবং ১৭জন শিশু। এরা ছাড়াও ছিলেন সাতজন ক্রু।
বলা হচ্ছে, যাত্রীদের বেশিরভাগই পর্যটক এবং ক্রুসহ আরোহীদের সবাই নিহত হয়েছেন।
উদ্ধারকারীরা বলছেন, বিমানটি যেখানে বিধ্বস্ত হয়েছে সেখানে মৃতদেহ এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। কোনো কোনো মৃতদেহ বিমানের সিটের সাথে বেল্ট দিয়ে বাধা।
সেখান থেকে বিমানের ব্ল্যাক বক্সটিকেও উদ্ধার করা হয়েছে। অত্যন্ত দুর্গম এলাকা হওয়ার কারণে উদ্ধারকাজে বিলম্ব হচ্ছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, ৫০টির মতো অ্যাম্বুলেন্স এই উদ্ধারকাজে অংশ নিচ্ছে।
উদ্ধারকারীরা বলছেন, বিমানটি দুই টুকরো হয়ে গেছে।
রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন রোববার জাতীয় শোক ঘোষণা করেছেন। মিশরে উদ্ধারকারী দল পাঠাতেও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
একই সাথে এই দুর্ঘটনার তদন্তেরও নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন।
রাশিয়ার একটি বার্তা সংস্থা বলছে, ফ্লাইটের নিয়মনীতি লঙ্ঘনের অভিযোগে পশ্চিম সাইবেরিয়া-ভিত্তিক এই এয়ারলাইনটির বিরুদ্ধে একটি ফৌজদারি মামলাও দায়ের করা হয়েছে।
যাত্রীদের আত্মীয় স্বজনকে সাহায্য সহযোগিতা করতে রাশিয়ায় একটি তথ্যকেন্দ্র চালু করা হয়েছে।bbc
মদে বেহুঁশ হয়ে হাফ প্যান্ট আর টি-শার্ট পরে আদালত চত্বরে হাজির হয়েছিলেন বিচারক।
পরে গায়ের টি শার্টটিও খুলে ফেলেন তিনি!
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ওই বিচারককে শাস্তি দিয়েছে সেখানকার হাইকোর্ট।
ওই রাজ্যের অন্য একজন বিচার বিভাগীয় অফিসার আরও কড়া শাস্তি পেয়েছেন।
পি এইচ ডি-র পরীক্ষায় টুকলি করতে গিয়ে ধরা পড়ায় অবসরগ্রহণে বাধ্য করা হয়েছে তাঁকে।
ত্রিপুরা সরকার ওই দুজনের শাস্তি ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে।
প্রথম ঘটনাটি ঊনকোটি জেলার কৈলাশহর আদালতের।
অন্য একটি জেলার পারিবারিক আদালতের বিচারক জেষ্ঠ্যমনি মূঢ়াসিং ছুটিতে থাকাকালীন মদে চূর হয়ে কৈলাশহর আদালতে চলে আসেন।
পরনে হাফ প্যান্ট আর টি শার্ট।
প্রথমে একজন সিভিল জজের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে তার দপ্তরে ঢুকে চেয়ার টেবিল ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন।
তারপরে এক সময়ে টি-শার্টটিও খুলে ফেলেন মি. মূঢ়াসিং – সেটির জায়গা হয় তাঁর কাঁধে।
ভরা আদালত চত্বরে তখন বিচারপ্রার্থী থেকে শুরু করে জজ সাহেবরা – সকলেই হতবাক খালি গায়ে হাফ প্যান্ট পরা মাতাল বিচারকের কাণ্ডকারখানা দেখে।
ঊনকোটি জেলা জজের রিপোর্ট আর বিভাগীয় তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে ত্রিপুরা হাইকোর্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে মি. মূঢ়াসিং যা করেছেন, তা কখনই একজন বিচারকের কাছে প্রত্যাশিত নয় –
আর এই ঘটনায় আইন-ভঙ্গও হয়েছে।
পরবর্তী দুবছর বেতন বৃদ্ধি হবে না জেষ্ঠ্যমনি মূঢ়াসিংয়ের - এটাই শাস্তি।
এই বিচারককে বেতন বৃদ্ধি বন্ধের শাস্তি দিলেও অন্য এক বিচারবিভাগীয় অফিসারকে চাকরি থেকে অবসর নিতে বাধ্য করা হয়েছে।
গোমতী জেলার লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটির সচিব প্রকাশ চন্দ্র বিশ্বাস ডক্টরেট ডিগ্রির একটি লিখিত পরীক্ষায় নকল করতে গিয়ে ধরা পড়েন।
সংবাদমাধ্যমে সেই খবর প্রকাশিত হয়।
তাঁকে সাসপেন্ড করে বিভাগীয় তদন্ত চলে। মি. বিশ্বাস দোষী প্রমাণিত হন।
সেই তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে ত্রিপুরা হাইকোর্ট তাকে চাকরি থেকে অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। অমিতাভ ভট্টশালীবিবিসি বাংলা, কলকাতা
সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট গ্রুপের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তার জন্যে যুক্তরাষ্ট্র তার একটি বিশেষ বাহিনীর অন্তত ৫০ জন সেনাকে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে পাঠাতে যাচ্ছে।
হোয়াইট হাউজের একজন মুখপাত্র আইএসের বিরুদ্ধে কুর্দি বিদ্রোহীদের লড়াইয়ের প্রশংসা করে বলেন, এ ধরনের শক্তিগুলোকে সহায়তার জন্যেই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
তবে সিরিয়ায় বিশেষ বাহিনী প্রেরণে যুক্তরাষ্ট্রের এ পরিকল্পনার কঠোর সমালোচনা করেছে রাশিয়া।
রাশিয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই ল্যাভরভ বলছেন, সিরিয়ায় মার্কিন সেনা পাঠানো হলে তা ওই অঞ্চলে স্নায়ুযুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টির ঝুঁকি তৈরি করবে।
এদিকে সিরিয়া থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে দামাস্কাসের কাছে বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা একটি শহরে বোমা হামলায় অন্তত ৮০ জন মারা গেছে।
সিরিয়ার একটি মানবাধিকার সংস্থা বলছে সরকারি বাহিনীর মিসাইল হামলায় ওই হতাহতের ঘটনা ঘটে। সিরিয়া সংকট নিরসনে ভিয়েনা আলোচনা
সিরিয়ার গৃহযু্দ্ধে বিবদমান পক্ষগুলোকে যেসব দেশ সমর্থন দিয়ে আসছিলো তারা দেশটির সংকট সমাধানে একটি যুদ্ধবিরতির জন্যে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
যদিও তারা দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের ভবিষ্যত প্রশ্নে একমত হতে পারেননি।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই লাভরভ বলেছেন সিরিয়ার জনগণই তাদের প্রেসিডেন্টের ভবিষ্যতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
যদিও যুক্তরাষ্ট্র ও তার সহযোগীরা বলছে মিস্টার আসাদের কার্যত কোন ভূমিকা থাকতে পারেনা।
ওদিকে সিরিয়ার সরকার ও বিরোধীদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসতে জাতিসংঘকে আহবান জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে আগামী দু'সপ্তাহের মধ্যে আবারও আলোচনায় বসবে দেশগুলো। bbc