বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ১৯৫ জন পাকিস্তানি সৈন্যের বিচার করা হবে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
পাকিস্তানি এসব সৈন্যকে যুদ্ধের পর আটক করা হয়েছিলো। পরে ত্রিদেশীয় এক চুক্তির আওতায় তাদেরকে বিচার করার শর্তে পাকিস্তানে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।কিন্তু গত ৪৪ বছরেও তাদের কোনো বিচার হয়নি।
যুদ্ধাপরাধের দায়ে সম্প্রতি বাংলাদেশে দু’জন রাজনীতিকের ফাঁসি কার্যকর করার পর পাকিস্তানের পক্ষ থেকে তার সমালোচনা করে বিবৃতি দেওয়া হলে পাকিস্তানি সৈন্যদের বিচারের বিষয়টি নিয়ে আবারও আলোচনা শুরু হয়।
তদন্ত সংস্থার একজন আইনজীবী তুরিন আফরোজ বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, ১৯৭৩ সালের আইন অনুসারে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় যদি কেউ মানবতাবিরোধী অপরাধ করে থাকে এবং সে যে দেশেরই নাগরিক হোক না কেনো বাংলাদেশে তার বিচার করা সম্ভব।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক আইনেও বলা আছে যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা যেকোনো রাষ্ট্রেই হোক না কেনো, অন্য কোনো রাষ্ট্রও তার বিচার করতে পারে।
তুরিন আফরোজ বলেন, পাকিস্তানি এই সৈন্যদের বিচার করা যাবে কীনা তার আইনগত বিষয়গুলো তারা বছর দেড়েক আগে বিশ্লেষণ করে দেখেছিলেন। এর মধ্যেই ট্রাইব্যুনালে বিভিন্ন মামলায় পাকিস্তানি সৈন্যদের নামও এসেছে।
তিনি জানান, এসব সৈন্যের ব্যাপারে তারা তথ্য সংগ্রহের কাজ করছেন।
তিনি বলেন, যখনই তারা পর্যাপ্ত তথ্য প্রমাণ ও সাক্ষীর ব্যাপারে সন্তুষ্ট হবেন তখনই তারা এবিষয়ে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিকভাবে মামলা দায়ের করবেন।
ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে ১৯৭৩ সালে স্বাক্ষরিত বন্দী বিনিময় এক চুক্তির আওতায় পাকিস্তানি সৈন্যদেরকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিলো।
তিনি জানান, ওই চুক্তিতে সৈন্যদের পাকিস্তানের মাটিতে বিচারের কথা উল্লেখ করা না হলেও পাকিস্তান সরকার তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করবে এরকম সমঝোতা হয়েছিলো।
তবে তিনি এও বলেছেন যে এই চুক্তিটি বৈধ নয়। কারণ জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার মতো অপরাধকে কেউ ক্ষমা করতে পারে না।
এবং তারপরেও সেধরনের কোনো চুক্তি হলে আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে সেটা বাতিল বলে গণ্য হবে।
তুরিন আফরোজ বলেন, বাংলাদেশের সংসদেও ওই আইনটি অনুমোদিত হয়নি। ফলে কোনো আদালত বিচারের সময় ওই আইনটিকে গ্রহণ করতে পারে না।
এই ১৯৫ সৈন্যের মধ্যে এখনও অনেকে বেঁচে আছে বলে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ধারণা করছে।
তবে তাদের সবাই যে পাকিস্তানে অবস্থান করছে তা নয়, অনেকে অন্য কোনো রাষ্ট্রেও বসবাস করছে।
তাদের কে কোন পদে এবং কোথায় যুদ্ধ করেছে সেসব দলিল তদন্ত সংস্থার হাতে রয়েছে।