শনিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

'ইসলাম-ভীতির কারণে' সিরীয় শরণার্থী নেবে না গার্নসি


uk_guernsey_syria
Image copyrightAFP
Image caption'সিরীয় অভিবাসীদের ব্যাপারে গার্নসির লোকদের নেতিবাচক মনোভাব আছে' বলছেন মুখ্যমন্ত্রী
যুক্তরাজ্যের স্বশাসিত দ্বীপ গার্নসির অধিবাসীদের মধ্যে ইসলামভীতি এতটাই প্রবল যে তারা কোন কোন সিরিয়ান শরণার্থীকে আশ্রয় না দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ব্রিটেনের মূলভূমির বাইরে ইংলিশ চ্যানেলে অবস্থিত দ্বীপটির মুখ্যমন্ত্রী জোনাথন লু টক বলেছেন, এখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে অনেক 'ইসলামোফোবিয়া' বা ইসলাম-ভীতি এবং 'নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী' রয়েছে।
"এ কারণে সিরিয়ার কোন শরণার্থীকে এখানে আশ্রয় দেয়া হলে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হবে।"
মি. লু টক অন্য কারণ হিসেবে দ্বীপটির অবকাঠামো নিয়ে উদ্বেগের কথাও বলেন।
এর আগেই দ্বীপটির কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করে যে যুক্তরাজ্যের ভালনারেবল পার্সনস রিলোকেশন স্কিমের আওতায় তারা কোন সিরীয় শরণার্থী নেবে না।
uk_guernsey_map
Image captionগার্নসি ব্রিটেনের একটি স্বশাসিত দ্বীপ
ব্রিটেনের আরো একটি দ্বীপ জার্সিও ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছে যে তারাও কোন সিরীয় শরণার্থীকে আমন্ত্রণ জানাবে না।
তবে গার্নসির একজন ত্রাণকর্মী এবং সাবেক সাংবাদিক এডি পার্কস মুখ্যমন্ত্রীর এই উক্তিকে অবমাননাকর বলে অভিহিত করেন।
তিনি বলেন, বাইরের লোককে স্বাগত জানানোর ব্যাপারে দ্বীপটি দারুণ সুনাম রয়েছে।
কিন্তু মি. লু টকের কথায়, বেশীর ভাগ লোক এ ব্যাপারে সদয় মনোভাব দেখালেও বিপদ হলো, অন্যরা একে স্বাগত জানাবে না।
গার্নসি কর্তৃপক্ষ অবশ্য সিরীয় শরণার্থীদের জন্য কর্মরত দাতব্য সংস্থাগুলোকে ৯০ হাজার পাউন্ড সহায়তা হিসেবে দিয়েছে।

ঐতিহ্যবাহী ঢাকাই মসলিন আবার জনপ্রিয় করতে নতুন উদ্যোগ

Image captionঐতিহ্যবাহী ঢাকাই মসলিনের বাজার সীমিত হলেও এর অর্থনৈতিক সম্ভাবনা মন্দ নয়- বলছেন গবেষকরা।
ঢাকার ঐতিহ্যের কথা আসলেই মসলিন কাপড়ের নাম সবার আগে আসে। এখন থেকে চার-পাঁচশ বছর আগে ঢাকাই মসলিনের কদর ছিল পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে।
মসলিনের প্রসঙ্গ উঠলে তার সাথে অনেক গল্পও সামনে আসে। জনশ্রুতি আছে যে একটি মসলিন শাড়িকে দিয়াশলাইয়ের বাক্সে রাখা সম্ভব। যদিও এর স্বপক্ষে কোন প্রমাণ মেলেনা।
দিয়াশলাইয়ের বাক্সে রাখা সম্ভব না হলেও, মসলিনের কাপড়ের সূক্ষ্মতা এবং হালকা আরামদায়কভাব নিয়ে কোন বিতর্ক নেই।
এই মসলিন বিলুপ্ত হয়ছে আজ থেকে অন্তত তিনশ বছর আগে। বিলুপ্ত এই মসলিনকে আবার ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ঢাকায় মাসব্যাপী মসলিন উৎসব শুরু হয়েছে শুক্রবার। দৃক গ্যালারি , আড়ং এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এই মাসব্যাপী উৎসব।
শতশত বছরের পুরনো এই কাপড়কে আয়োজকরা কেন ফিরিয়ে আনতে চাইছেন?
Image caption''আমরা তো রোজ মোটা চালের ভাত খাই- তাই বলে আমরা তো বাসমতি ফেলে দেইনি। সে হিসাবে স্পেশাল জিনিস ফেলে দেওয়া উচিত নয়''- বলেন দৃক গ্যালারির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম।
মসলিন বিষয়ে গবেষক এবং দৃক গ্যালারির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম মনে করেন মসলিন শুধু একটি কাপড় নয়, এটিকে দেখতে হবে ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে।
মি: ইসলাম বলেন , “আমরা তো রোজ মোটা চালের ভাত খাই। তাই বলে আমরা তো বাসমতি ফেলে দেইনি। সে হিসেবে একটি স্পেশাল জিনিস ফেলে দেওয়া উচিত না।”
মসলিনের অংশ হিসেবে এখনো পর্যন্ত টিঁকে আছে জামদানী শাড়ি।
মসলিনের দাপট এক সময় ইউরোপের বাজারে থাকলেও, ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের পরে মসলিন আর টিঁকে থাকতে পারেনি। কারণ ইউরোপ জুড়ে তখন বস্ত্রশিল্প প্রসার লাভ করায় মসলিন বাজার হারিয়েছিল। তাছাড়া যে তুলা থেকে মসলিনের সুতা উৎপাদন হতো, সেই তুলার বীজও এখন আর নেই।
Image captionএক কারিগরের মতে আগের মসলিন উৎপাদন পুরোপুরি সম্ভব না হলেও কাছাকাছি যাওয়া সম্ভব।
Image captionমসলিনের একটা বিশেষ বাজার রয়েছে বলে আয়োজকরা মনে করছেন- তারা বলছেন মসলিন কাপড় এখনও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয়।
উৎসবে আসা একজন কারিগর জানালেন আগের মসলিনে হয়তো পুরোপুরি যাওয়া সম্ভব না হলেও কাছাকাছি যাওয়া সম্ভব।
এই উৎসব দেখতে অনেক দর্শক এসেছিলেন উৎসবস্থল জাতীয় জাদুঘরে। এদের একজন নুরুল ইসলাম বলছিলেন মসলিনকে তিনি উচ্চবিত্তদের কাপড় বলে মনে করেন।
“এই কাপড় আগের দিনেও রাজা-বাদশারাই পরতেন। এখনও যারা শৌখিন তারাই এটা পরবে। এটা সাধারণ মানুষের কাপড় না।”
বিশ্বায়নের এই যুগে যখন দেশে-বিদেশে কাপড়ের হাজারো বৈচিত্র্য আছে, সেখানে মসলিন কতটা প্রাসঙ্গিক?
গবেষক সাইফুল ইসলাম মনে করেন সীমিত হলেও বাজার একেবারে মন্দা নয়। মি: ইসলাম তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন ভারতের একটি গ্রাম মসলিনের নামে বছরে ২৫ কোটি টাকার কাপড় বিক্রি করছে।
“ভারত খাদি মসলিন হিসেবে বছরে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার ব্যবসা করে। কিন্তু এগুলোকে সব বলা হয় বেঙ্গল মসলিন। তাহলে নিশ্চয়ই মসলিনের বাজার আছে।”
মসলিন কাপড় এখনো ইউরোপের বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয় বলে উল্লেখ করেছন মি: ইসলাম। তবে এটা কোনদিন সাধারণ মানুষের জন্য জনপ্রিয় হবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বাণিজ্যিক সম্ভাবনার চেয়ে মসলিনকে ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে দেখছেন আয়োজকরা।
সেজন্যই দর্শকদের সামনে আবার মসলিনকে পরিচয় করিয়ে দেবার এই আয়োজন।