রবিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৫

ফ্রান্স-জার্মানি ম্যাচেও বোমার গর্জন!

 
স্টাডে ডি ফ্রান্স স্টেডিয়ামে ফ্রান্স-জার্মানির মধ্যে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ চলাকালে প্যারিসের বিভিন্ন স্থানে হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর পর দর্শকেরা গ্যালারি ছেড়ে মাঠের মধ্যে নেমে আসে। ছবি: এএফপি

পুরো গ্যালারি ফাঁকা। গ্যালারির হাজার হাজার দর্শক আশ্রয় নিয়েছেন সবুজ মাঠে। যে মাঠে ফুটবলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসেছিলেন তাঁরা। দেখতে এসেছিলেন ফ্রান্স বনাম জার্মানি প্রীতি ম্যাচ। তাতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানিকে ২-০ গোলে হারানোর আনন্দও এনে দিয়েছে তাঁদের জাতীয় দল। কিন্তু সেই জয়ের আনন্দ ম্লান হয়ে গেল নিমেষেই। পুরো নগর যে ততক্ষণে পরিণত হয়েছে আতঙ্কের এক জনপদে!
প্যারিস জুড়ে স্মরণকালের ভয়াবহ পরিকল্পিত সন্ত্রাসী আক্রমণ চালানো হয়েছে। মূল আক্রমণের লক্ষ্য ছিল প্যারিসের কেন্দ্রস্থলের একটি কনসার্ট হল। কেবল সেখানেই কমপক্ষে ১০০ জনের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। প্যারিস জুড়ে মৃতের সংখ্যা ১৫০ ছাড়িয়ে গেছে। সন্ত্রাসীদের অন্যান্য আক্রমণের লক্ষ্যস্থলের মধ্যে ছিল প্যারিসের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম স্টাডে ডি ফ্রান্সও। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি রেস্তোরাঁতেও আক্রমণ চালানো হয়েছে।
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে ফ্রান্স এরই মধ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা দিয়েছে। প্যারিসে নামানো হয়েছে সেনাবাহিনী। সন্ত্রাসীরা বন্দুক ও বোমা নিয়ে এই আক্রমণ চালায়। এর মধ্যে আত্মঘাতী বোমা হামলা ছিল বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
আত্মঘাতী বোমা হামলার লক্ষ্য ছিল স্টাডে ডি ফ্রান্স। অবশ্য স্টেডিয়ামের ভেতরে হামলাকারীরা ঢুকতে পারেনি। প্রথম বোমা হামলা চালানো হয় স্টেডিয়ামের একেবারে কাছে। ম্যাচের ১৭ মিনিটের মাথায়ই প্রথম বিকট শব্দে একটি বোমার গর্জন শোনা যায়। কেউ বুঝে উঠতে পারেনি শব্দের কারণ ও উৎস। দর্শকেরা আতশবাজি ধরনের কিছুর আওয়াজ ভেবে সাদরেই উল্লাস করে সেই আওয়াজকে এক রকম স্বাগতই জানান।
তখনো তাঁরা জানতে পারেননি, কী ভয়াবহ তাণ্ডব শুরু হতে চলেছে প্যারিস জুড়ে। সংশয় আর আতঙ্ক নিয়েই স্বাগতিক দলের ২-০ গোলের জয়ে শেষ হয় ম্যাচ। গোল করেন অলিভিয়ের জিরু ও গিগন্যাক। উৎসবের আমেজ নিয়ে শুরু হওয়া সন্ধ্যাটি নিমেষেই পরিণত হয় কী ভীষণ আতঙ্কের রাতে!
২০ মিনিটের মাথায় আবারও বিকট আওয়াজ। এবার গ্যালারিতে আতঙ্কের মৃদু স্রোত বইতে শুরু করে। মাঠে অবশ্য খেলোয়াড়দের পুরো মনোযোগ ফুটবলে। কেবল সেই ২২ জন বাদে বাকিরা ততক্ষণে বুঝে গেছে কিছু একটা হচ্ছে। মাথার ওপর দিয়ে চক্কর দিতে থাকে হেলিকপ্টারও।
স্টেডিয়ামের সাউন্ড সিস্টেমে তখনো কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি। কিন্তু ম্যাচটি দেখতে আসা রাষ্ট্রপতি ফ্রাসোয়া ওঁলাদ দ্রুত স্টেডিয়াম ত্যাগ করেন। মাঠে ম্যাচ গড়াতে থাকে, আর দর্শকদের মুঠোফোনে আসতে থাকে একের পর এক দুঃসংবাদের বার্তা।
৯০ মিনিটে শেষ বাঁশি বাজে। বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে স্মরণীয় এক জয়েও দর্শকদের মধ্যে কোনো উল্লাস নেই। ততক্ষণে যে তাঁরা জেনে গেছেন, যা ঘটছে, তাতে ফুটবল স্রেফ গৌণ একটি ব্যাপার। প্যারিস জুড়ে এখানে-ওখানে পড়ে আছে মৃতদেহ। ছোপ ছোপ রক্তের দাগ।
ম্যাচ শেষ হওয়ার পরেই সাউন্ড সিস্টেমে জানানো হয় দুর্ঘটনার খবর। দর্শকদের পশ্চিমের গেট দিয়ে বেরিয়ে যেতে বলা হয়। কিন্তু আতঙ্কিত দর্শকেরা কেউ স্টেডিয়ামের বাইরে বেরোতে রাজি হন না। গেট ‘জে’-তে বোমা হামলা দুটি হয়েছে বলে তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়। যাতে কমপক্ষে তিনজন নিহত ও একাধিক আহত হয়েছেন।
ততক্ষণে বোঝা গেছে, স্টেডিয়ামের ভেতরেই তারা নিরাপদ। সবাই নেমে আসেন মাঠে। যে সবুজ মাঠ ফুটবলের উত্তেজনা, রোমাঞ্চ উপহার দিতে তৈরি, সেই মাঠ ৭০ হাজার সন্ত্রস্ত মানুষকে ঠাঁই দেয়। খেলোয়াড়ের টানেলে গিয়ে টিভিতে সরাসরি সম্প্রচারিত খবরে হালনাগাদ খবর নিতে থাকেন। এ সময় খেলোয়াড়, কোচ, কর্মকর্তা সবাই হতবিহ্বল।
এরই মধ্যে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পরবর্তী প্রীতি ম্যাচসহ যাবতীয় ফুটবলীয় কর্মসূচি স্থগিত করেছে ফ্রান্স। জীবন যেখানে এমন অনিশ্চিত, সেখানে ফুটবল অর্থহীন!

প্যারিসের সন্ত্রাসী হামলায় বিশ্ব নেতাদের প্রতিক্রিয়া

pray-for-paris
আন্তর্জাতিক ডেস্ক- ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের কয়েকটি জায়গায় একই সময়ে চালানো পৃথক সন্ত্রাসী হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ১৫৩ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যায় স্মরণকালের অন্যতম ভয়াবহ এই সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। হামলার পর  পুরো ফ্রান্সে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোয়া ওলাদঁ; বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সীমান্ত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথমবার পুরো দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে এবং বন্ধ করা হয়েছে সীমান্ত।
 
হামলার সময় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ স্টেড ডি ফ্রান্স স্টেডিয়ামে বসে ফ্রান্স-জার্মানির মধ্যকার আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ দেখছিলেন। স্টেডিয়ামের কাছাকাছি এলাকায় দুইটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। সে সময় দেশটির প্রধানমন্ত্রী ম্যানুয়াল ভলসও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। হামলার পর তাৎক্ষণিকভাবে হেলিকপ্টারে করে তাদের উদ্ধার করা হয়।
এদিকে, প্যারিস হামলার ঘটনার পরপরই বেলজিয়াম ও প্রতিবেশী দেশগুলোতে নিরাপত্তা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ফ্রান্স সংলগ্ন সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন ও তল্লাশি অভিযান জোরদার করেছে বেলজিয়াম।
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে বাটাক্লঁ হলসহ একাধিক স্থানে সিরিজ হামলায় কমপক্ষে ১৫৩ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মরকেলসহ বিশ্বনেতারা।
হামলার পর বাটাক্লঁ কনসার্ট হলের কাছাকাছি নিরাপত্তা বাহিনীর একটি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাদ বলেন, হামলাকারী সন্ত্রাসীরা সবাই নিহত হয়েছেন। যারা হামলা চালিয়েছে তাদের প্রতি কোনো দয়া দেখানো হবে না। তবে ভয় পাওয়ার অনেক কারণ আছে এখন। কিন্তু আমাদের এই ভয়কে এমন জাতি হিসেবে মোকাবেলা করতে হবে যারা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সমস্ত শক্তি নিয়ে লড়াই করতে পারে।
এ হামলাকে ‘জঘন্য’ উল্লেখ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, নিরপরাধ বেসামরিক লোকজনকে ভীতসন্ত্রস্ত করার জন্য আরেকটি জঘন্য চেষ্টা আমরা ফ্রান্সে দেখলাম। ফ্রান্সের সরকার ও জনগণের যেকোনো প্রয়োজনে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি। আমরা এসব সন্ত্রাসীর বিচারের সম্মুখীন করতে এবং যেকোনো সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ককে শায়েস্তা করার জন্য প্রস্তুত।
এদিকে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, ফ্রান্সে হামলায় তিনি ‘হতভম্ব ও ব্যথিত’ হয়েছেন।
এক টুইটার বার্তায় তিনি লেখেন, ফ্রান্সের জনগণের জন্য আমাদের সহমর্মিতা ও প্রার্থনা রইল। তাদের সাহায্য করার জন্য যা যা করণীয়, আমরা তা-ই করব।
জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মরকেল জানিয়েছেন, ফ্রান্সে সন্ত্রাসীদের হামলায় তিনি পুরোপুরি ‘হতভম্ব’।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে সন্ত্রাসী হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিবর্গ, তাদের পরিবার ও প্যারিসের সব জনগণের জন্য আমার সহমর্মিতা রইল। জার্মানি তাদের পাশে থাকবে।
এছাড়া এ ঘটনায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম জিয়া শোক ও নিন্দা জানিয়েছেন। সন্ত্রাসী হামলায় কোনো বাংলাদেশি হতাহত হয়নি এবং আট হামলাকারী নিহত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন প্যারিস বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি।
 

নির্বাচন উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিত করুন : বার্নিকাট

গতকাল শনিবার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট কনভেনশন সেন্টারে ইনসাইড এর উদ্যোগে নির্বাচনী সহিংসতা প্রতিরোধ ও শান্তি-সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে পিস অ্যাম্বাসাডারদের জাতীয় সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট -সংগ্রাম

 
কূটনৈতিক রিপোর্টার : চলমান বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য নির্বাচন উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাট। তিনি গতকাল শনিবার দুপুরে ফার্মগেট কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন অডিটোরিয়ামে পিস অ্যাম্বাসেডর ন্যাশনাল কনভেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান।
বেসরকারি সংস্থা ‘হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশ’ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্যে থেকে কয়েকজনকে শান্তির দূত নির্বাচন করেছে, যারা তাদের অঞ্চলে নির্বাচনী সহিংসতার বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করবেন এবং মানুষের কাছে শান্তির বার্তা নিয়ে যাবেন।
ওই শান্তির দূতদের সম্মেলন আয়োজন করে হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশ। এ আয়োজনে সহযোগিতা করেছে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা ইউএসএআইডি, ইউকেএআইডি ও ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর ইলেক্টোরাল সিস্টেম (আইএফইএস)।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, নির্বাচন উপযোগী পরিবেশ করতে হয়তো আরো সময় লাগবে। তবে ধৈর্যের সঙ্গে সেটি করতে হবে। এজন্য পারস্পরিক আস্থা এবং সম্মান অর্জন জরুরি বলেও মত দেন তিনি।
বার্নিকাট বলেন, ‘একটি বহুত্ববাদী সমাজে সহিংসতা রাতারাতি শেষ হবে না। তবে সবাইকে বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়ায় একে অপরের সহনশীলতা অর্জন করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভবিষ্যত নিয়ে কাজ করতে হবে।’
মার্কিন এই রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক অত্যন্ত শক্তিশালী। এ সম্পর্ক আরো জোরদার হবে। যুক্তরাষ্ট্র এদেশের সমাজে বিদ্যমান বিরোধপূর্ণ সমস্যার সমাধান খুঁজে ইউএসআইডি’র মাধ্যমে কাজ করে যাবে।’
সম্মেলনে শান্তির দূতদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী সহিংসতা-সংক্রান্ত সমস্যাগুলোর সমাধান রাতারাতি হবে না। কিন্তু শান্তির দূত হিসেবে সহিংসতাবিহীন ভবিষ্যৎ নির্বাচনের স্বপ্ন দেখার মাধ্যমে সমাজে আপনারা ইতিবাচক উদাহরণ হয়ে থাকবেন।’
মার্কিন লোকগায়ক পিট সিগারকে উদ্ধৃত করে বার্নিকাট বলেন, যে মানুষ একমত হচ্ছেন না, তার সঙ্গে কথা বলতে শিখতে পারা খুব গুরুত্বপূর্ণ। একুশ শতকে এই যোগ্যতাটা হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আস্থা ও সম্মান অর্জন করতে ভিন্নমতের প্রতি সহনশীলতা প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী জিএম কাদের বলেন, ‘বিরোধ নিষ্পত্তিতে দরকার শান্তিপূর্ণ আলোচনা। আর সেটির জন্য গণতান্ত্রিক সরকার প্রয়োজন। এখন যারা ক্ষমতায়, তারা ওই অর্থে গণতান্ত্রিক সরকার নয়।’
তিনি বলেন, গণতন্ত্র একেক দেশে একেকভাবে চর্চা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ভারত একেক দেশে একেকভাবে গণতন্ত্র কাজ করে। কিন্তু গণতন্ত্রের মূল কথা হলো, রাষ্ট্রের সব ক্ষমতার মালিক হচ্ছে জনগণ। যেভাবেই গণতন্ত্রের চর্চা হোক না কেন, এই নীতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের পরিচালক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, ‘বহুত্ববাদী সমাজে বিরোধ থাকবে। কিন্তু সেটা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে।’
বদিউল আলম বলেন, ‘আমরা সবাই সম্মিলিতভাবে দেশকে স্বাধীন করেছি। কিন্তু দেশ আজ বিভক্ত। আমরা একে অন্যের সঙ্গে সহিংসতায় লিপ্ত। যারা এই সহিংসতায় লিপ্ত, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে দুর্বৃত্তদের রুখে দাঁড়াতে হবে।’

জরুরি অবস্থা জারি ॥ তিন দিনের জাতীয় শোক ॥ আইএসের দায় স্বীকার , প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ১৪০

 

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অন্তত ছয়টি স্থানে সন্ত্রাসী হামলায় ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে। একটি রেস্তোরাঁর পাশে পড়ে আছে ওই হামলায় নিহত কয়েকটি নিথর দেহ -রয়টার্স


ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের অন্তত ছয়টি স্থানে সন্ত্রাসী হামলায় কমপক্ষে ১২৮ জন নিহত হয়েছেন। ভয়াবহ এসব হামলায় আরো দুই শতাধিক আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশংকাজনক। স্থানীয় সময় গত শুক্রবার রাতে এসব সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। এএফপি/এপি/বিবিসি/রয়টার্স/আলজাজিরা।
এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী হামলাকারীরা রেস্তোরাঁ, পানশালা, একটি কনসার্ট হল ও একটি ফুটবল স্টেডিয়ামের বাইরে আক্রমণ চালায়।
এ হামলার পর দেশটির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদ দেশে জরুরি অবস্থা এবং তিন দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছেন। একই সঙ্গে দেশটির সকল সীমান্ত বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। আর নাগরিকদের ঘরে অবস্থান করতে বলা হয়েছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম এ ধরনের ঘটনা ঘটলো। প্যারিসে কারফিউ জারি করা হয়েছে। প্যারিসের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মেট্রো স্টেশনগুলো বন্ধ করা হয়েছে। সরকারি অফিস-আদালত বন্ধ। জরুরিকালীন ভিত্তিতে চলছে কিছু রেল ও বিমান। এ ছাড়া ফরাসী পুলিশ আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্যারিস এলাকায় সব ধরনের জনসমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
গতকাল শনিবার আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পাশাপাশি ১৫০০ সেনাও মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে ইসলামিক স্টেট গ্রুপ এ হামলার দায় স্বীকার করেছে।
এই হামলার ঘটনায় নগরীর কেন্দ্রস্থলে বাতাক্লঁ কনসার্ট হলেই অন্তত ১২০ জন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
কনসার্ট দেখতে ওই হলে জড়ো হয়েছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। এরই মধ্যে অন্তত তিন হামলাকারী হলে ঢুকে কালাশনিকভের মতো দেখতে রাইফেল নিয়ে নির্বিচারে গুলী চালাতে শুরু করে বলে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান। পরে হামলাকারীরা ওই হলে অনেককে পণবন্দী করলে পুলিশ ভারী অস্ত্রসহ সেখানে অভিযান চালায়। সংঘর্ষে অন্তত আটজন হামলাকারী নিহতের খবর পাওয়া গেছে।
অন্য হামলাগুলো হয়েছে কয়েকটি বার ও রেস্তোরাঁয়। এর মধ্যে স্টেডিয়ামের কাছের ঘটনাটি আত্মঘাতী হামলা বলে ধারণা করা হচ্ছে। এসব হামলায় কম্বোডিয়ান একটি রেস্তোরাঁ, একটি পানশালার বাইরে, একটি অ্যাভিনিউতে এবং নগরের বাইরে এক স্থানে বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছেন।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এই হামলার নিন্দা জানিয়ে হোতাদের বিচারের মুখোমুখি করার আহ্বান জানিয়েছে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ফ্রান্সের পাশে থাকার কথা বলেছে ন্যাটো।
যুক্তরাষ্ট্র ফ্রান্সকে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত জানিয়ে এক বিবৃতি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।
প্যারিসে এই সন্ত্রাসী হামলার ভয়াবহতায় ক্ষুব্ধ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এক টুইটে বলেছেন সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা নিয়ে তারা ফ্রান্সের মানুষের পাশে থাকবেন।
জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল বলেছেন, প্যারিসে এই সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় তিনি বিস্মিত, হতবাক।
যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, এই হামলা ছিল সংঘবদ্ধ। তবে এই হামলা সংঘবদ্ধ এবং পরিকল্পিত কিনা, তা এখনি বলা সম্ভব নয় বলে প্যারিসের পুলিশ জানিয়েছে।
স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৮টা নাগাদ প্রথম হামলাটি হয় স্ট্যাডে ডি ফ্রান্স স্টেডিয়ামের বাইরে। সেখানে তখন ফ্রান্স-জার্মানি প্রদর্শনী ফুটবল ম্যাচ চলছিল। স্টেডিয়ামে হাজির ছিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদ। এর পরই একের পর এক হামলা শুরু হয় প্যারিসের বিভিন্ন প্রান্তে।
সব চেয়ে বড় হামলাটি হয়েছে বাতাক্লাঁ কনসার্ট হলে। জিহাদি স্লোগান তুলে ভিড়ে ঠাসা হলে ঢুকে পড়ে আত্মঘাতী জঙ্গি বাহিনী। সিরিয়ায় ফরাসী হানার বিরুদ্ধেও স্লোগান উঠতে থাকে। শুরুতেই শতাধিক দর্শককে পণবন্দী করে নেয় জঙ্গিরা। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, পণবন্দীদের অনেককেই জঙ্গিরা একে একে গুলী করে মারছিল। এরপর সেনা অভিযান শুরু হতেই একের পর এক আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটাতে থাকে জঙ্গিরা। কনসার্ট হলে হামলাতেই শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
নিহতদের স্মরণে অন্ধকারে আইফেল টাওয়ার : প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের শোকে প্যারিসের প্রতীক আইফেল টাওয়ারের আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়েছে। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ফ্রান্সের রাজধানী শহরে এই সন্ত্রাসী হামলায় ১২৮ জন নিহত হয়েছে। এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে যেখানে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ছিল সেখানে এলইডি আলোয় ফ্রান্সের পতাকার রং নীল, সাদা ও লাল রঙ্গের রাঙিয়ে নিহতদের স্মরণ করছে।
আইএসের দায় স্বীকার 
আরটিএনএন : ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার দায় স্বীকার করেছে ইরাক ও সিরিয়াভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)। যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি গোয়েন্দা নজরদারি সংস্থা ‘সাইট’ তার নিজস্ব ওয়েবসাইটে এ তথ্য জানিয়েছে। সাইট বলছে, আরবি ও ফরাসী ভাষায় আইএস প্যারিসে হামলার দায় স্বীকার করে ভিডিও প্রকাশ করেছে।
হামলাকারী সবাই নিহত: পুলিশ প্রধান
এপি: প্যারিসে গুলী ও বোমা বর্ষণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সন্ত্রাসীদের সবাই নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফ্রান্স পুলিশ।
প্যারিসের পুলিশ প্রধান মাইকেল কাদোঁ বলেন, আক্রমণকারীদের সকলেই নিহত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে পুলিশ এখনো সন্দেহভাজন হামলাকারীদের ধরার জন্য তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছে।
প্যারিসের কনসার্ট হলে যে ৪ জন হামলা চালিয়ে ছিল তারা পুলিশের অভিযান শুরুর পর আত্মহত্যা করে। হামলাকারী ৩ জনের শরীরে বিস্ফোরক বেল্ট ছিল যা তাদের নিজেদের শরীরেই বিস্ফোরিত হয়। কনসার্ট হলের হামলায় কমপক্ষে ১০০ জন নিহত হয়েছে।
কনসার্ট স্থলে থাকা এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, হামলাকারীদের একজনকে তিনি বলতে শুনেছেন সিরিয়ায় সামরিক হস্তক্ষেপ করায় ফ্রান্সকে এই শাস্তি পেতে হলো।
পিয়েরে জানাসজ্যাক নামের ওই ব্যক্তি বলেন, ‘আমি পরিষ্কার শুনেছি তারা বলছে, এটি তোমাদের প্রেসিডেন্টের ভুল, সিরিয়ায় হামলা চালিয়ে সে ভুল করেছে। তারা ইরাকের কথাও বলেছে।’
তখন অনেক মানুষের চিৎকার শুনতে পাই: শিল্পী সাহাবুদ্দিন
বিবিসি: শুক্রবার রাতে প্যারিসের কয়েকস্থানে প্রায় একই সঙ্গে এসব হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে গুলীর পাশাপাশি বোমার বিস্ফোরণও ঘটানো হয়।
বিবিসি বাংলার কাছে কয়েকটি ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
প্যারিসে যেসব স্থানে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে, তারই একটির কাছে একটি কফির দোকানে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত চিত্রশিল্পী সাহাবুদ্দিন।
তিনি বলছিলেন, শুক্রবার এ-রকম স্থানে অনেক মানুষের ভিড় থাকে। হঠাৎ করেই সেখানে পুলিশের আনাগোনা দেখতে পান। বাইরে গুলীর শব্দ শোনা যেতে থাকে আর পুলিশ এসে কফির দোকানের দরজা আটকে দেয়।
চিত্রশিল্পী সাহাবুদ্দিন বলছেন, গুলীর শব্দ শুনে ভয়ে আমরা পেছনের দরজা দিয়ে একটি বাগানে গাছের নিচে এক ঘণ্টার মতো লুকিয়ে ছিলাম।
পুলিশ বলেছে, তোমরা এখান থেকে নড় না, কারণ সন্ত্রাসীরা এখনো গুলী ছুঁড়ছে। সেখানে আমরা ৮০/৯০ জনের মতো লুকিয়ে ছিলাম।
কনসার্ট হলে জিম্মিদের উদ্ধারে পুলিশ হেলিকপ্টার নিয়ে অভিযান শুরু করে। তখন আমাদের বলা হয়, তোমরা এখনি ট্যাক্সি নিয়ে নিজেদের বাড়িতে চলে যাও। তিনি বলেন হামলার ঘটনায় শোকাহত হয়ে পড়েছে প্যারিস, মিজ সাহাবুদ্দিন বলছেন, এই প্রথম বারের মতো প্যারিসে আমরা এ ধরনের চিত্র দেখলাম যে, আমাদের মতো শত শত তরুণ বিভিন্ন গলিতে লুকিয়ে রয়েছে। তারা আস্তে আস্তে বেরিয়ে গাড়ি ধরার চেষ্টা করছে। মেট্টো বন্ধ করে দেখা হয়েছে, রাস্তা রাস্তায় পুলিশের ব্যারিকেড।
চারদিকে শুধু পুলিশের গাড়ি আর অ্যাম্বুলেন্স। গত শুক্রবার রাতে প্যারিস সরগরম থাকে। কিন্তু প্যারিসের আজকের (শনিবার) মতো এ-রকম চিত্র আমি আর কখনই দেখিনি, চারদিকেই নীরব, ভীতিকর একটি পরিবেশ।
প্যারিসের আরেকটি এলাকার বাসিন্দা জাহিদুল ইসলামের বাসার ঠিক উল্টো দিকে একটি এলাকায় হামলা করে সন্ত্রাসীরা।
জানালা দিয়ে আমরা অনেক লোকজনকে ছোটাছুটি করতে দেখতে পাই। কিছু পরে আমাদের একজন গ্রাহক সেখানে গিয়ে দেখতে পান, দশ-বারো জন মানুষ মাটিতে পড়ে রয়েছে। লাভলু বড়ুয়া, প্যারিসের একজন বাসিন্দা, তিনি বলছেন, আমি ঘরে বসে ইন্টারনেটে কাজ করছিলাম। হঠাৎ প্রচুর মানুষের ছোটাছুটির শব্দ শুনতে পাই। হঠাৎ করে এ-রকম একটি পরিস্থিতি দেখে আমি হতভম্ব হয়ে পড়েছিলাম। তখন অনেক মানুষের চিৎকার শুনতে পাই।
রোডে দ্য শাও নামের সড়কের পাশে একটি রেস্তরাঁয় হামলা চালিয়ে অন্তত ১০ জনকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। তার পাশেই একটি এশিয়ান রেস্তরাঁয় কাজ করেন বাংলাদেশে লাভলু বড়ুয়া।
তিনি বলছিলেন, আমাদের রেস্তরাঁর দুইশ গজ দূরেই, একটি ফরাসি রেস্তোরাঁ টেরাসে (খোলা জায়গায়) বসে খাবার ব্যবস্থা আছে। সন্ত্রাসীরা সেটা লক্ষ্য করেই হামলা করে। টেরাসে বসে যারা খাচ্ছিল, তাদেরকে লক্ষ্য করেই তারা গুলী করতে শুরু করে।
পুলিশকে সহায়তা করতে প্যারিসে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে গোলাগুলীর শব্দ শুনে প্রথমে তারা ভেবেছিলেন, সাপ্তাহিক ছুটির আগের দিন হওয়ায় হয় তো কেউ আতশবাজি ফোটাচ্ছে। একটু পরে দেখতে পেলেন, সব রেস্তরাঁর দরজা বন্ধ করে দিচ্ছে, তাদের রেস্তরাঁর দরজাও বন্ধ করে দেয়া হয়।
লাভলু বড়ুয়া বলছিলেন, জানালা দিয়ে আমরা অনেক লোকজনকে ছোটাছুটি করতে দেখতে পাই। কিছু পরে আমাদের একজন গ্রাহক সেখানে গিয়ে দেখতে পান, দশ-বারোজন মানুষ মাটিতে পড়ে রয়েছে।
মেট্টো চলাচল বন্ধ আর রাস্তাগুলো পুলিশ আটকে দেয়ায় প্রায় ৪৫ মিনিট হেঁটে তিনি বাসায় ফেরেন।
প্যারিসে হামলা বিস্ময়কর ঘটনা
বিবিসি: হামলার আকার ধারণা করতে না পারলেও এ-ধরনের একটি হামলা বিশ্লেষকদের কাছে একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল বলে মনে করেন না বিশ্লেষক আলী রিয়াজ।
বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিশয় স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আলী ইয়াজ বলেন, ফ্রান্সে এখন ইউরোপের সবচেয়ে বড় মুসলিম জনগোষ্ঠী বাস করে এবং একই সঙ্গে ইউরোপের সবচেয়ে বড় ইহুদী জনগোষ্ঠীও ফ্রান্সে। গত কিছুদিন যাবৎ সেখানে আমরা এন্টি সেমিটিজম এবং ইসলামোফোবিয়া বাড়তে দেখেছি, সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে রাজনীতিতে দক্ষিণ পন্থিদের উত্থান এবং শরণার্থী সংকট। এ-সব মিলিয়ে সেখানে একটি অস্থির মিশ্রণ তৈরি হয়েছে।
আলী রিয়াজ বলেন, হামলাটি যেভাবে হয়েছে তাতে এটি বিচ্ছিন্ন বলে মনে হয় না এবং হামলা সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতেই ওবামা এ মন্তব্য করে থাকতে পারেন।
এই হামলার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্স এখন আরো ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে বলে ধারণা করছেন অধ্যাপক রিয়াজ।

ইউরোপের ভেতরের যুদ্ধ?

প্যারিসের বাতাক্লোঁ কনসার্ট হলের বাইরেপ্যারিসের বাতাক্লোঁ কনসার্ট হলের বাইরেশুক্রবার সন্ধ্যার পরে প্যারিসে ফ্রান্সের জাতীয় স্টেডিয়ামে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ চলছিল ফরাসি ও জার্মান জাতীয় ফুটবল দলের মধ্যে। দর্শকদের সারিতে পাশাপাশি বসে খেলা উপভোগ করছিলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ ও জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমাইয়ার। হঠাৎ বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দে হতচকিত হয়ে উঠে দাঁড়ালেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। তাঁর দেহরক্ষী দল ছুটে এসে তাঁকে তড়িঘড়ি সেখান থেকে বের করে নিয়ে চলে গেল।
এর কিছু সময় পরে প্রেসিডেন্ট ওলাঁদকে দেখা গেল টেলিভিশনের পর্দায়। জাতির উদ্দেশে তিনি বললেন, ‘যে মুহূর্তে আমি আপনাদের উদ্দেশে কথা বলছি, তখন অভূতপূর্ব মাত্রার একাধিক সন্ত্রাসী হামলা চলছে প্যারিসের বিভিন্ন জায়গায়।...কয়েক ডজন লোক নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে অনেকে। এটা একটা বিভীষিকা।’
ওই রাতে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে প্যারিস নগরের ছয়টি জায়গায়; নিহত হয়েছে অন্তত ১২৭ জন। আহত হয়েছে প্রায় ২০০ জন, তাদের মধ্যে অন্তত ৮০ জনের অবস্থা গুরুতর। প্যারিসের পুলিশ কর্তৃপক্ষের বরাতে কিছু কম-বেশি এ রকম তথ্যই জানা গেল বার্তা সংস্থা এএফপি, যুক্তরাষ্ট্রের দৈনিক নিউইর্য়ক টাইমস, যুক্তরাজ্যের গার্ডিয়ান, দ্য ইনডিপেনডেন্ট, রুশ দৈনিক ইজভেস্তিয়ার অনলাইন সংস্করণসহ বিভিন্ন অনলাইন সংবাদমাধ্যম থেকে।
শনিবার বিকেলে ইসলামি স্টেট (আইএস) হামলাগুলোর দায়িত্ব স্বীকার করার আগেই নিউইয়র্ক টাইমস লিখেছে, হামলার পরপরই মাইক্রোব্লগের জনপ্রিয় সাইট টুইটারে ইসলামিক স্টেটের সমর্থকদের অ্যাকাউন্টগুলো উল্লাসে ভরে গেছে। পত্রিকাটি আরও লিখেছে, প্যারিসের বাতাক্লোঁ কনসার্ট হলে কনসার্ট চলার সময় সন্ত্রাসী হামলার সময় এক প্রত্যক্ষদর্শী ফ্রান্সের বিএফএম টিভি চ্যানেলকে বলেছেন, তিনি একজন হামলাকারীকে গুলি করতে করতে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে চিৎকার করতে দেখেছেন। রুশ দৈনিক ইজভেস্তিয়া লিখেছে, ইতালির লা রিপুবলিকা পত্রিকা বাতাক্লোঁর প্রবেশপথে একটা সাইনবোর্ডের ছবি প্রকাশ করেছে, যেখানে শার্লি এবদো পত্রিকার অফিসে আল-কায়েদা জঙ্গিদের হামলায় নিহত ব্যক্তিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে লেখা রয়েছে Je Suis Charlie (আমি শার্লি এবদো)। স্মরণ করা যেতে পারে, মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করার পর শার্লি এবদোর অফিসে হামলা চালিয়ে ইসলামি জঙ্গিরা ১৭ জন সাংবাদিককে হত্যা করেছিল।
অবশ্য প্রেসিডেন্ট ওলাঁদ শুক্রবার রাতে তাঁর টিভি ভাষণে কোনো গ্রুপের নাম উল্লেখ না করে বলেন, ‘আমরা জানি, এসব হামলা কারা চালাচ্ছে।’ তাঁর ইঙ্গিতও ছিল ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিদের প্রতিই। পরে তিনি সেটা স্পষ্ট করেই বলেছেন। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবল স্পষ্ট করে বলেন, ‘এই হামলগুলোতে ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিদের সংশ্লিষ্টতার সব লক্ষণ আছে।’ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বা ন্যাটোর মহাসচিব—কেউই আইএসএর নাম উল্লেখ করেননি। কিন্তু আইএস দায় স্বীকার করার আগে থেকেই ‘টেরোরিস্ট’, ‘ডেভিল’ এবং বাকি যেসব তীব্র নেতিবাচক বিশেষণের সঙ্গে হামলাকারীদের নিন্দা জানানো হচ্ছিল, ‘সন্ত্রাসবাদের’ বিরুদ্ধে ‘গণতন্ত্রের’ বিজয়ের আশাবাদ ব্যক্ত করা হচ্ছিল, তাতে এটা বুঝতে মোটেও কষ্ট হচ্ছিল না যে গোড়া থেকেই সবার আঙুল ছিল ইসলামি জঙ্গিবাদীদের দিকেই।
কিন্তু প্যারিস হামলার দায় স্বীকারকারী এই ‘আইএস’ও আমাদের দেশের ‘আইএস’ বা ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’-এর মতো ভারচুয়াল কি না, কে জানে। এক বন্ধু টেলিফোনে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, প্যারিস, ঢাকা, রংপুরের কাউনিয়া, ঈশ্বরদী একই সূত্রে গাঁথা কি না। এ প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই। কারণ এ ব্যাপারে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য নেই। অবশ্য জল্পনা-কল্পনা ও ‘ষড়যন্ত্র’ আছে অনেক। আমাদের সরকার বলছে, পশ্চিমা শক্তিগুলো আমাদের দিয়ে স্বীকার করিয়ে নিতে চায় যে এ দেশে আইএস আছে। তাহলে তাদের এ দেশের ওপর ‘হামলে পড়তে’ সুবিধা হবে।
কিন্তু প্যারিসে শুক্রবারের হত্যাযজ্ঞগুলোর ফলে কার কী সুবিধা হবে? এসব হামলা যদি সত্যিই আইএসের কাজ হয়ে থাকে, তাহলে খোদ ইউরোপীয় ভূখণ্ডের ভেতরে একের পর এক এগুলো তারা চালাতে পারছে কীভাবে? একই সঙ্গে এই প্রশ্নও চলে আসে, আইএস বা আইসিস বা দায়েশ আসলে কী? তাদের এমন ধ্বংসক্ষমতার উৎস কোথায়?
পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমের একটা অংশ অনেক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখানোর চেষ্টা করেছে, আইসিস আমেরিকা ও তার মিত্রদের তৈরি করা এক ভয়াবহ সশস্ত্র গোষ্ঠী, যাদের ব্যবহার করে বৈশ্বিক রাজনীতির একটা বড় অংশের কলকাঠি নাড়া হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, কুয়েত ও কাতারের সরকারি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো অর্থ, অস্ত্র ও পরামর্শ দিয়ে আইএসকে পরিপুষ্ট করেছে, এমন বক্তব্য–বিশ্লেষণসহ প্রচুর লেখা ইন্টারনেটে খুঁজলে পাওয়া যায়। এমন বক্তব্যও পাওয়া যায় যে আইএস আমেরিকা ও তার মিত্রদের জন্য এখন একটা ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন হয়ে উঠেছে। অর্থাৎ, এই ভয়াবহ দানব এখন আর তাদের নিয়ন্ত্রণে নেই।
এ রকম ধারণা কিছুটা সত্য হতেও পারে। এবং এমন সংশয়ও পুরোপুরি অমূলক হবে না, ইসলাম ধর্মের ঝান্ডাধারী সশস্ত্র কিছু গোষ্ঠীকে সম্ভবত ইউরোপীয় ভূখণ্ডের ভেতরের শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদী, উগ্র জাতীয়তাবাদী বিভিন্ন গোষ্ঠী ব্যবহার করছে। এই গোষ্ঠীগুলো রাজনৈতিক ক্ষমতা পেতে চায়, নিজ নিজ দেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে চায়। সেই লক্ষ্য হাসিলের উপায় একটাই, নির্বাচনে জয়ী হওয়া। কিন্তু আধুনিক ইউরোপে বহুত্বকামী মানুষ এখনো সংখ্যাগরিষ্ঠ; পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অভিবাসী নাগরিকদের সমান নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের ব্যাপারে তাদের আপত্তি নেই। এই বহুত্ববাদী, উদার গণতান্ত্রিক ইউরোপের বিপরীতে বিশুদ্ধ জাতীয়তাবাদী ইউরোপের স্বপ্নে উজ্জীবিত গোষ্ঠীগুলো পশ্চিম ইউরোপের প্রায় সব দেশেই ক্রমশ আগের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। আইএস কি এখন তাদের স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে? এ রকম একটার পর একটা হামলার মধ্য দিয়ে উগ্র জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীগুলো কি উদারপন্থী ইউরোপীয়দের মনে মুসলিম-বিদ্বেষ, অভিবাসী-বিদ্বেষ, বর্ণবাদী-বিদ্বেষ জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করছে?
প্যারিসে শুক্রবারের হামলাগুলো যারা চালিয়েছে, এ পর্যন্ত জানা খবরে তাদের মোট সংখ্যা ছিল আট। সাতজনই নির্বিচার গুলিতে সাধারণ মানুষের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালানোর একপর্যায়ে নিজেদের বুকে ও কোমরে বাঁধা আত্মঘাতী বোমা ফাটিয়ে মারা গেছে। অবশিষ্ট একজন মারা গেছে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে। তাদের পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে। এটা একটা কৌতূহলোদ্দীপক বিষয়: হামলাকারীরা শেতাঙ্গ না ভিন্ন বর্ণের? ফ্রান্সের নাগরিক, নাকি বিদেশ থেকে আসা? ফ্রান্সের নাগরিক হলে ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত, নাকি পাকিস্তান-আফগানিস্তান-বাংলাদেশ বা মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশের অভিবাসীদের সন্তান? সবাই মুসলমান কি না? এক প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণে জানা গেল, একজন হামলাকারীকে তাঁর মনে হয়েছে উচ্চ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ‘কমব্যাট সোলজার’।
ফরাসি পুলিশ সম্ভবত নিহত সব হামলাকারীর পরিচয় আদ্যোপান্ত উদ্ধার করে ফেলবে। আমরা তা জানতে পারব কি না, তা অবশ্য বলা যায় না। এ ধরনের হামলায় কখনো কেন একজন হামলাকারীকেও জীবন্ত ধরা সম্ভব হয় না, এমন প্রশ্নও আছে।
যাই হোক, আমাদের মনে যত প্রশ্ন জাগে, উত্তর জানার ততো উপায় আমাদের নেই। আমরা পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমের ওপর নিরুপায়রূপে নির্ভরশীল এবং নানা ধরনের জল্পনা-কল্পনা ও ‘ষড়যন্ত্রতত্ত্ব’ আমাদের ভাবনাগুলো এলোমেলো করে দিতে পারে।
পশ্চিমাদের দেওয়া আরও কিছু তথ্য এখানে তুলে ধরা যাক: গার্ডিয়ান লিখেছে, এ বছরের এপ্রিল মাসে ফ্রান্সের সিনেট ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসের প্রকাশ করা হিসাব অনুযায়ী ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে তিন হাজারের বেশি ‘জিহাদি’ তরুণ-তরুণী সিরিয়া ও ইরাকে গিয়ে ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১ হাজার ৪৩০ জনই ফরাসি নাগরিক। এ বছরের আরও আগের দিকে বার্তা সংস্থা এএফপি লিখেছিল, ফ্রান্সে বসবাসরত ১ হাজার ৫৭০ জন ফরাসি নাগরিক সিরিয়ার জিহাদিদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন বলে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জানতে পেরেছে। তারা আরও ধারণা করছে, প্রায় সাত হাজার ফরাসি নাগরিক আইএসের সঙ্গে যোগ দিতে সিরিয়া-ইরাকে যেতে পারেন। ফরাসি পুলিশ কর্তৃপক্ষের হিসাবে, বর্তমানে দেশটিতে ১৫০ জন ফরাসি নাগরিক ‘জিহাদি’ কর্মকাণ্ডের অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাভোগ করছেন এবং আরও ২০০ জন মুক্তভাবে চলাফেরা করছেন, যাঁরা সিরিয়া ও ইরাকের আইএস-নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলো থেকে ঘুরে এসেছেন।
এসব তথ্যের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ওলাঁদের ‘আমরা জানি, এসব হামলা কারা চালাচ্ছে’ উক্তিটা যোগ করলে প্রতীয়মান হয়, আইএস সম্ভবত এখন ফ্রান্সের ভেতরেরও বাস্তবতা। আরেকটু বড় অর্থে, এটা ইউরোপের অভ্যন্তরীণ যুদ্ধ।
আধুনিক, বহুত্ববাদী, উদার গণতান্ত্রিক ও মানবতাবাদী ইউরোপ এই যুদ্ধ কীভাবে মোকাবিলা করবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
মশিউল আলম: সাংবাদিক

‘বাংলাদেশে কথা বলে অনেক শান্তি পাই’

পার্বতী বাউল l ছবি: আশরাফুল আলমপার্বতী বাউল l ছবি: আশরাফুল আলমসাঙ্গ হলো ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসব’। গতকাল গভীর রাত পর্যন্ত শিকড়ের গানের মোহ পুরো শহরে ছড়িয়ে আসরটি এবারের মতো শেষ হলো। তিন দিনের এ উৎসবে অংশ নেন বিভিন্ন দেশের লোকগানের জনপ্রিয় শিল্পীরা। এ আয়োজনে গানের ফাঁকে কয়েকজন খ্যাতিমান শিল্পী কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে। তাঁদের কথা নিয়েই এ আয়োজন। শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রণব ভৌমিক ও আদর রহমান

পরিবারে একটা গানের চল ছিল। ছোটবেলা থেকেই বাড়িতে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, দ্বিজেন্দ্র, রজনীকান্ত, অতুল প্রসাদ শুনে শুনে পার্বতী বাউল বড় হয়েছেন। তখন থেকেই শিখেছেন শাস্ত্রীয় সংগীত ও কত্থক নাচ। কিন্তু এসব কোনো কিছুই পার্বতীকে শেষ পর্যন্ত টানল না।
পার্বতী বলেন, ‘আমরা যখন আসামে ছিলাম, তখন সেখানকার ভাওয়াইয়া, বিহু, গোয়ালপাড়িয়ার গান আমাকে আকর্ষণ করত।’
শাস্ত্রীয় সংগীত ভালোই লাগত পার্বতীর। কিন্তু জীবনের সত্যিকারের ছবি তিনি সেখানে পেতেন না। ‘সংগীত তো ভেতরে গিয়ে আঘাত করে, সেটা শাস্ত্রীয় সংগীত থেকে পেতাম না। আমার মাটির গানই ভালো লাগত।’ বলছিলেন পার্বতী বাউল।
পরে পার্বতী বাউল শান্তিনিকেতনে চিত্রকলা বিষয়ে পড়াশোনা করতে যান। সেখানে বাউলদের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। পার্বতী বলেন, ‘এরপর আমার আর কিছু দরকার হয়নি। বাউলগানের টানের মধ্যে একটা অদ্ভুত উদাত্ততা আছে, একটা উন্মুক্ত ভাব, গলাটা যেন আকাশ ছুঁতে যায়। আমি তার প্রেমে পড়ে গেলাম।’
পার্বতীর জন্ম পশ্চিমবঙ্গে হলেও তাঁর পূর্বপুরুষের আদি বাড়ি চট্টগ্রামে, রাউজানের পশ্চিম গুজরার গ্রামের পারিয়ালপাড়ায়। সেখানে তাঁর দাদুর একটি যাত্রার দল ছিল। ঠাকুমার কাছ থেকে চট্টগ্রামের অনেক গল্প শুনতেন পার্বতী। গত বছরের ডিসেম্বরে তিনি যান সেই ভিটেবাড়িতে। পার্বতী বলেন, ‘সেখানে যাওয়ার পর দেখি, গ্রামের অনেকে আমার দাদুকে চেনেন। পুরো গ্রাম আমাকে আপন করে নিয়েছিল, অথচ তাঁরা কেউ আমাকে কখনো দেখেননি। বাংলাদেশের ব্যাপারে এই আন্তরিকতার কথা আমি সব সময় মন থেকে বলি। আর আছে ভাষার আন্তরিকতা, এখানে কথা বলে আমি অনেক শান্তি পাই।’
আজকের দিনে বাউলগানের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে পার্বতী বলেন, বাউলগান আত্মচেতনার কথা বলে। মনের গণ্ডিকে পেরিয়ে যাওয়াই বাউলের কাজ। সবাই মুক্তির সেই জায়গায় পৌঁছাতে না পারে, কিন্তু তার আস্বাদ তো পেতে পারে। যে একবার ভালোবাসার স্বাদ পেয়েছে, তখন ঘৃণাকে সে আর জায়গা দেবে না। পার্বতী বাউল বলেন, ‘যেখানে আজ পৃথিবীজুড়ে অস্থিরতা—মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কটা কেবল বিনিময়ের, সেখানে বাউলতত্ত্ব অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক। তা না হলে আমাদের তো আর যাওয়ার জায়গা নেই। আমরা যে মানুষ, সেটাই তো ভুলে যাব!’ prothomalo

‘ভালোবাসার টানে এখানে আসা’

আবিদা পারভীন l ছবি: সাজিদ হোসেনআবিদা পারভীন l ছবি: সাজিদ হোসেনসাঙ্গ হলো ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসব’। গতকাল গভীর রাত পর্যন্ত শিকড়ের গানের মোহ পুরো শহরে ছড়িয়ে আসরটি এবারের মতো শেষ হলো। তিন দিনের এ উৎসবে অংশ নেন বিভিন্ন দেশের লোকগানের জনপ্রিয় শিল্পীরা। এ আয়োজনে গানের ফাঁকে কয়েকজন খ্যাতিমান শিল্পী কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে। তাঁদের কথা নিয়েই এ আয়োজন। শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রণব ভৌমিক ও আদর রহমান

পাকিস্তানের সুফি শিল্পী বলতেই যাঁর নাম প্রথমে আসে, তিনি আবিদা পারভীন। জন্ম পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের লারকানায়। বাবা ছিলেন গুলাম হায়দার, শাস্ত্রীয় সংগীতের বড় ওস্তাদ। তিন বছর বয়স থেকেই আবিদা বাবার কাছে তালিম নিতে শুরু করেন।
আবিদা পারভীনের সংগীত ঘরানা ‘সুফিয়ানা কালাম’ হিসেবে পরিচিত। তিনি বলেন, ‘বাবা শাস্ত্রীয় সংগীতের পাশাপাশি সুফিয়ানা কালামও করতেন। তিন বছর বয়সেই এই সংগীতকে ভালোবেসে ফেলি। সেটা এখনো আছে। আসলে সংগীত ওপর থেকে আসে।’
বাংলাদেশের সুফি ও বাউলগানের ব্যাপারেও দারুণ উৎসাহ আবিদার। বললেন, ‘আল্লামা ইকবাল ও কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সুফি ও বাউল ঘরানার সংগীত নিয়ে আমার কাজ করার ইচ্ছা আছে। এই ইচ্ছা আজ থেকে নয়, অনেক দিনের! কিন্তু পাকিস্তানে বাংলা ভাষা জানার লোক কম তো, তাই উচ্চারণ ঠিক করার কিছু ঝামেলা আছে।’
আবিদা পারভীন বলেন জীবন–সম্পর্কিত তাঁর দর্শনের কথা। এক মানুষের ভেতর তিনি অনেক জীবন দেখতে পান। সেই জীবনগুলোকে নতুন করে জন্ম দেওয়াই জীবনের লক্ষ্য। তিনি বলেন, ‘জীবন হলো খোদার এক অদ্ভুত উপহার। আমাদের লক্ষ্য, কীভাবে এর সম্পূর্ণ ব্যবহার করা যায়। সবকিছু মানুষের ভেতর থেকেই বের হয়। খোদা তো বাইরে নন! মানুষের ভেতরে তিনি বাস করেন।’
এমন দর্শন আবিদা পেয়েছেন বাবা ওস্তাদ গুলাম হায়দারের কাছ থেকে। বড়ই হয়েছেন ‘দরগাহী মহলে’। দরবেশ–প্রকৃতির বাবা সম্পর্কে আবিদা বলেন, ‘তিনি নিভৃতে থাকতে পছন্দ করতেন। টেলিভিশন-রেডিওতে তাঁকে পাওয়া যাবে না। তাঁর অনেক সাগরেদ, কিন্তু তিনি নিজে তেমন প্রকাশ্যে আসতেন না। বাবা জ্ঞান বিলিয়ে দিতেন। জ্ঞান লুকালে এলেম বাড়তে পারে না।’
আবিদা পারভীনের কাছে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা জানতে চাই। বললেন, তাঁর দারুণ ভালো লেগেছে। আসার সময় তাঁকে ভিসা জটিলতায় পড়তে হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত আসতে পারবেন কি না, তা নিয়ে ছিল সংশয়। তিনি বলেন, ‘বিশ্বাস করুন, এখানে আসার জন্য ভেতর থেকে একটা তাড়না ছিল। শেষ পর্যন্ত সবার ভালোবাসার টানে এখানে আসতে পেরেছি।’ prothomalo

অ্যাথলেটিক্স থেকে রাশিয়া সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ

 
    russ olympics                 
                        অলিম্পিক গেমসের পতাকার পাশে রুশ পতাকা (ফাইল ছবি)    
            
মাদক ব্যবহার বা ডোপিংয়ের অভিযোগে অলিম্পিক গেমসসহ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা থেকে রুশ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনকে সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
'রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়' ডোপিংয়ের অভিযোগ নিয়ে ডোপিংবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা, ওয়াডার একটি স্বাধীন প্রতিবেদন প্রকাশিত হবার পর রাশিয়ার বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেয় আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিক্সের নিয়ন্ত্রক সংস্থা, আইএএএফ।
রাশিয়াকে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব ২২-১ ভোটে পাশ করে কাউন্সিলের সদস্যরা।
এই নিষেধাজ্ঞাকে সবার জন্য একটি সতর্কবার্তা হিসেবে উল্লেখ করেছেন আইএএফের প্রেসিডেন্ট লর্ড কো।
রুশ ক্রীড়াবিষয়ক মন্ত্রী এই নিষেধাজ্ঞাকে 'সাময়িক' এবং 'সমাধানযোগ্য' হিসেবে মন্তব্য করেছেন। bbc

মানচিত্রে প্যারিস হামলা: কোথায়, কখন ঘটেছিল ঘটনা

 
   
শুক্রবার রাত সাড়ে ন’টা বাজার কয়েক মিনিট আগেই শুরু হয় আক্রমণ।
প্রথম লক্ষ্যবস্তু ছিল স্টাড দে ফ্রান্স স্টেডিয়াম, যেখানে প্রেসিডেন্ট ফ্রসোঁয়া ওলান্দ নিজ দেশের সাথে জার্মানি ম্যাচ দেখছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ওলান্দকে দ্রুত সেখান থেকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু ভেতরে আটকে যায় প্রায় ৮৫,০০০ দর্শক।
তারপর প্যারিসের কেন্দ্রস্থল থেকে একের পর এক হামলার খবর আসতে থাকে, বাড়তে থাকে হতাহতের সংখ্যা।
শুক্রবার রাতের ধারাবাহিক ঘটনাবলি, সময়সহ:
৯.২০: স্টাড দে ফ্রান্স-এ প্রথম বিস্ফোরণ।
৯.২৫: বিশা সড়কে লে কারিলঁ বার এবং লে পেতি কমবোজ রেস্তোরাঁয় গুলি।
৯.২৯: কাছা-কাছি এলাকা লা রিপুবলিক এ্যাভেন্যূ-তে আরো গুলি।
৯.৩০: স্টাড দে ফ্রান্স-এ দ্বিতীয় বিস্ফোরণ।
৯.৩৮: শারোঁ সড়কে লা বেল একুইপে বার-এ গুলি।
৯.৪৩: বুলেভার ভলটেয়ার-এ বাতাক্লাঁ কনসার্ট হল-এ কাছে বিস্ফোরণ।
২১.৪৯: বাতাক্লাঁ কনসার্ট হল-এ গুলি, তারপর আবার বিস্ফোরণ।
৯.৫৩: স্টাড দে ফ্রান্স-এ তৃতীয় বিস্ফোরণ।
১০.০০: বাতাক্লাঁ-র কাছে বোমার্শে সড়কে গুলি।
সূত্র: পুলিশকে উদ্ধৃত করে LeJDD website.
bbc

ইসলামিক স্টেট কেন এত বর্বর ও নৃশংস?

 
    আইএস                 আইএস জঙ্গিরা একদল ইথিওপিয়ান বন্দিকে হত্যা করছে - ফাইল ছবি           
     
শিল্প, সংস্কৃতি আর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে নজিরবিহীন হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট জঙ্গি গোষ্ঠী।
ইসলামিক স্টেট নামটি বিদ্বেষের সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শিরশ্ছেদ, ক্রুশবিদ্ধ করা, পাথর ছুড়ে মারা, পাইকারীহারে হত্যা, জীবন্ত কবর দেয়া আর ধর্মীয় ও জাতিগত নিধন – কী করছে না এই গোষ্ঠী।
সুন্নি এই চরমপন্থি গোষ্ঠীটি হঠাৎ করে ইরাক ও আশেপাশে আত্মপ্রকাশ করার পর শিউরে ওঠার মত হিংস্রতা আর রক্তপাতের মাধ্যমে পুরো বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
কিন্তু হিংস্রতার কারণ সম্পর্কে কিছুটা আলোকপাত করেছেন লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স ও পলিটিক্স-এর অধ্যাপক ফাওয়াজ এ. গারগেজ, যিনি ‘জার্নি অব দ্যা জিহাদিস্ট: ইনসাইড মুসলিম মিলিট্যান্সি’ শিরোনামে একটি বই লিখেছেন।
যে মাত্রায় আইএস বর্বরতা চালাচ্ছে তা হয়তো সভ্য সমাজের বেশীরভাগ মানুষের কাছে অর্থহীন মনে হতে পারে, কিন্তু আইএস-এর জন্যে এটি যৌক্তিক একটি পছন্দ।
এটি তাদের একটি সচেতন সিদ্ধান্ত শত্রুকে ভয় দেখানো এবং এর মাধ্যমে নতুনদেরকে প্রভাবিত করে দল ভারী করা।
আইএস                 আইএস জঙ্গিদের কনভয়ের এই ছবি রিলিজ করে জঙ্গিদের একটি ওয়েবসাইট -ফাইল ছবি                
আইএস কোন সীমা বা নিষেধ না মেনে সর্বাত্মক যুদ্ধে বিশ্বাসী। এমনকি অন্য সুন্নি প্রতিপক্ষের সাথে বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে এরা কোন সমঝোতায়ও বিশ্বাসী নয়।
পূর্বসূরি আল-কায়েদার মতো অপরাধকে যুক্তিগ্রাহ্য করার জন্যে আইএস ধর্মের বানীও আওড়ায় না।
আইএস-এর সহিংসতার শিকড় রয়েছে এর আগের দুটো সহিংসতার মধ্যে, যদিও সেগুলোর মাত্রা এত ব্যাপক ছিল না।
প্রথম ঢেউটির নেতৃত্বে ছিলেন সাঈদ কুতব-এর শিষ্যরা। মিশরীয় এই কট্টরপন্থীকে আধুনিক জিহাদীতন্ত্রের মূল তাত্ত্বিক মনে করা হয়।
এরা পশ্চিমা-পন্থী ধর্মনিরপেক্ষ আরব সরকারগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করেছিল, যাদেরকে তারা বলতো ‘কাছের শত্রু’।
এদের শুরু ১৯৮০ সালে মিশরীয় প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদতের হত্যাকাণ্ড দিয়ে, আর একটা বড় অংশ আফগানিস্তানে নতুন শত্রু খুঁজে পায়, যেটি ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন।
সোভিয়েতের বিরুদ্ধে আফগান জিহাদ জন্ম দেয় দ্বিতীয় ঢেউয়ের।
বিন লাদেন                 ১৯৯৮ সালে তোলা ওসামা বিন লাদেনের ছবি। নিউ ইয়র্কে সন্ত্রাসী হামলার জন্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাকেই দায়ী মনে করে - ফাইল ছবি                
এদের ছিল সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য বস্তু – ‘দুরের শত্রু’, যাদের মধ্যে ছিল মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, আর কিছুটা হলেও ইউরোপের দেশগুলো। আর এর নেতৃত্বে ছিলেন ধনী এক সৌদি নাগরিক, ওসামা বিন লাদেন।
বিন লাদেন এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বরে হামলার ঘটনা ঘটিয়েছিলেন, যাকে তিনি বলেছেন ‘আত্মরক্ষামূলক জিহাদ’ বা মুসলিম সমাজে কথিত মার্কিন প্রভাবের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ।
আইএস নেতা আবু বকর বাগদাদীর কাছে অবশ্য এসব যুক্তির কোন মূল্য নেই। তিনি ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা ধর্মের দোহাই আর তত্ত্বের ব্যাপারে মাথা না ঘামিয়ে সহিংসতার ওপর জোর দেন। নিজেদেরকে গড়ে তোলেন কিলিং মেশিন হিসেবে, যাকে শক্তি যোগায় রক্ত আর অস্ত্র।
বিন লাদেনের মূলমন্ত্র ছিল এ রকম – ‘মানুষ একটি শক্তিশালী ঘোড়া ও একটি দুর্বল ঘোড়া দেখলে তাঁরা সবলটিকে পছন্দ করে’। আর আল-বাগদাদীর মূলমন্ত্র হলো – ‘সন্ত্রাসের মাধ্যমে বিজয় অর্জন’।
আর এর মাধ্যমে তিনি বন্ধু ও শত্রুদের যে বার্তা দিচ্ছেন, তা হলো – আইএস নামের ঘোড়াটি জয় করতে এসেছে। সরে দাড়াও, না হলে পিষ্ট হবে। অথবা আমাদের বহরে যোগ দিয়ে ইতিহাস তৈরি করো।
সাক্ষ্য-প্রমাণ যা পাওয়া যাচ্ছে, তাতে দেখায় যায় আল-নুসরা ফ্রন্টের মতো গোষ্ঠী যারা এক সময় আইএস-এর বিরোধী ছিল, তারাও আল-বাগদাদীর ডাকে সাড়া দিয়েছে।
বাগদাদী                   আবু বকর আল-বাগদাদী - ফাইল ছবি                
ইসলামের শত্রুর বিরুদ্ধে আইএস-এর যে কৌশল, তাতে সাড়া দিয়েছে সারা বিশ্বের অনেক তরুণ, যারা এই গোষ্ঠীকে মুক্তির পথ বলে মনে করে।
ইরাক ও সিরিয়ায় আইএস বিশাল এলাকা দখল করে খেলাফত প্রতিষ্ঠা করেছে। সাফল্যের চেয়ে বড় আর কিছু নেই, ফলে অনেকেই তাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে।
খেলাফতের উত্থানের কথায় পশ্চিমা অনেক মানুষ সেখানে গেছে। প্রথম দিকে লন্ডন, বার্লিন আর প্যারিসের অনেক তরুণ স্বধর্মীদের রক্ষায় জিহাদের ভূমিতে গেছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আইএস-এর হাতে পড়ে অংশ নিয়েছে নিরীহ মানুষের শিরশ্ছেদের মতো ঘটনায়।
আইএস-এর লাগামছাড়া কট্টরপন্থার শেকড় রয়েছে ইরাকে আল-কায়েদার ভেতরে, যার নেতৃত্বে ছিলেন আবু মুসাব আল-যারকাওয়ি।
আইএস                 আইএস যোদ্ধা - ফাইল ছবি                
আল-কায়েদা শিয়া বিরোধী না হলেও আইএস শিয়া বিরোধী হিসেবে বেড়ে উঠেছে। আল-যারকাওয়ি এবং আল-বাগদাদী দু’জনেই শিয়াদেরকে বিধর্মী হিসেবে মনে করেন। শিয়াদের হত্যা না করতে আল-কায়েদা নেতা আইমান আল-যাওয়াহিরির একের পর এক ডাক উপেক্ষা করেছেন আল-বাগদাদী।
ইরাকে শিয়া-সুন্নি বিভেদ আর সিরিয়ায় জাতিগত দাঙ্গার সুযোগ নিয়ে আল-বাগদাদী সুন্নিদের মধ্যে একটি শক্তিশালী সমর্থক গোষ্ঠী গড়ে তুলেছেন।
এতদিন আইএস মূলত শিয়াদের নিয়ে ব্যস্ত ছিল, ‘দুরের শত্রু’র দিকে নজর ছিল কম। এখন যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ তাদের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে, তাই গোষ্ঠীটি তাদের সব শক্তি প্রতিশোধের জন্যে ব্যবহার করতে পারে।
কয়েকমাস আগে আল-বাগদাদী বলেছিলেন যে আমেরিকায় গিয়ে হামলা চালানোর মতো সক্ষমতা তাঁর সংগঠনের নেই। তবে তিনি চান আমেরিকানরা মাঠে নামবে এবং তিনি তাদের খুন করবেন। bbc

প্যারিস: রোমান্টিক সিটি থেকে আতংকের নগরী

 
                               
শুক্রবারের দুঃস্বপ্নের রাতের পর শনিবার সকাল। রাস্তাঘাট প্রায় ফাঁকা। সন্ত্রাসী হামলার জায়গাগুলোতে রক্তের দাগ এখনো স্পষ্ট। নিহতদের স্মরণে ফুলের তোড়া রেখে গেছে অনেকে। ভয় আর আতংকে প্যারিস এখন জড়োসড়ো।
গত জানুয়ারীতে শার্লি এবডো কার্টুন ম্যাগাজিনে হামলার পর প্রশ্ন উঠেছিল- প্যারিস এখন কতটা নিরাপদ। তবে এই প্রশ্ন সত্ত্বেও প্যারিস নিয়ে কিন্তু মানুষ আতংকে ভোগেনি।
সেবারের হামলার লক্ষ্য ছিল কার্টুনিষ্টরা, ইহুদীরা। সাধারণ মানুষ তখন এই ভেবে নিজেদের নিরাপদ মনে করেছে যে হামলাকারীরা যাকে-তাকে টার্গেট করছে না, সুতরাং তাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
কিন্তু শুক্রবারের রাতে ঘটনা সব বদলে দিয়েছে।
বাগদাদ কিংবা বৈরুতের রাস্তায় যে হামলা নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার, সেই হামলা প্রত্যক্ষ করেছে প্যারিস।
আর সে কারণেই এবার যেন ভয় আর আতংক গ্রাস করেছে এই নগরীকে।
“শনিবার সকাল থেকে প্যারিস থমথমে। রাস্তাঘাটে লোক নেই। শনিবার সকালে যে বাজার বসে, সেই বাজার বসেনি”, বলছেন প্যারিসের বাসিন্দা আনা ইসলাম।
সরকার আগেই ঘোষণা দিয়েছিল আজ স্কুল-কলেজ সব বন্ধ থাকবে। পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্থানগুলোও বন্ধ রাখা হয়েছে। এমনকটি প্যারিসের সবচেয়ে বড় ল্যান্ডমার্ক ‘আইফেল টাওয়ারও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
এই আতংক কাটিয়ে উঠে প্যারিস কি আবার তার স্বাভাবিক উচ্ছলতা ফিরে পাবে?
সন্দিহান অনেকেই। গত জানুয়ারিতে শার্লি এবডোর হামলার পর থেকে প্যারিসের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় মোতায়েন করা হয়েছে সশস্ত্র নিরাপত্তা রক্ষী। শুক্রবারের হামলার পর প্যারিসের রাস্তায় রাস্তায় তাদের উপস্থিতি এখন আরও বেড়েছে।
মা এখন তার টিনএজার ছেলেকে বাইরে যেতে দিতে উদ্বিগ্ন। স্ত্রী ঘরে ফিরতে দেরি হলে স্বামী টেনশনে।
                           
এভাবে প্রতিটি মানুষের নিত্যদিনের আচরণ যেন পাল্টে দিচ্ছে এই ভয় আর আতংক।
এর আগে শার্লি এবডোতে হামলার পর দশ লক্ষ মানুষ প্যারিসের রাস্তায় মিছিল করে এর প্রতিবাদ জানিয়েছে, শার্লি এবডোর কার্টুনিষ্টদের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছে।
কিন্তু এখন প্রতিটি মানুষই যখন হামলার সম্ভাব্য টার্গেট, তখন কে কার সঙ্গে সংহতি জানাবে ? bbc

''তখন অনেক মানুষের চিৎকার শুনতে পাই''

 
                     গোলাগুলির পর একজন নারীকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে     
           
শুক্রবার রাতে প্যারিসের কয়েক স্থানে প্রায় একই সঙ্গে এসব হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে গুলির পাশাপাশি বোমার বিস্ফোরণও ঘটানো হয়।
বিবিসি বাংলার কাছে কয়েকটি ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
প্যারিসে যেসব স্থানে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে, তারই একটির কাছে, একটি কফির দোকানে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত চিত্র সিঁথি সাহাবুদ্দিন।
তিনি বলছিলেন, শুক্রবার এরকম স্থানে অনেক মানুষের ভিড় থাকে। হঠাৎ করেই সেখানে পুলিশের আনাগোনা দেখতে পান।
বাইরে গুলির শব্দ শোনা যেতে থাকে আর পুলিশ এসে কফির দোকানের দরজা আটকে দেয়।
চিত্র সিঁথি সাহাবুদ্দিন বলছেন, ''গুলির শব্দ শুনে ভয়ে আমরা পেছনের দরজা দিয়ে একটি বাগানে গাছের নীচে একঘণ্টার মতো লুকিয়ে ছিলাম। পুলিশ বলেছে, তোমরা এখান থেকে নড়ো না, কারণ সন্ত্রাসীরা এখনো গুলি ছুঁড়ছে। সেখানে আমরা ৮০/৯০জনের মতো লুকিয়ে ছিলাম।''
''কনসার্ট হলে জিম্মিদের উদ্ধারে পুলিশ হেলিকপ্টার নিয়ে অভিযান শুরু করে। তখন আমাদের বলা হয়, তোমরা এখনি ট্যাক্সি নিয়ে নিজেদের বাড়িতে চলে যাও।'' তিনি বলেন।
                 হামলার ঘটনায় শোকাহত হয়ে পড়েছে প্যারিস                
মিজ সাহাবুদ্দিন বলছেন, ''এই প্রথমবারের মতো প্যারিসে আমরা এ ধরণের চিত্র দেখলাম যে, আমাদের মতো শত শত তরুণ বিভিন্ন গলিতে লুকিয়ে রয়েছে। তারা আস্তে আস্তে বেরিয়ে গাড়ি ধরার চেষ্টা করছে। মেট্রো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, রাস্তা রাস্তায় পুলিশের ব্যারিকেড। চারদিকে শুধু পুলিশের গাড়ি আর অ্যাম্বুলেন্স। শুক্রবার রাতে প্যারিস সরগরম থাকে। কিন্তু প্যারিসের আজকের মতো এরকম চিত্র আমি আর কখনোই দেখিনি, চারদিকেই নীরব, ভীতিকর একটি পরিবেশ।''
প্যারিসের আরেকটি এলাকার বাসিন্দা জাহিদুল ইসলামের বাসার ঠিক উল্টোদিকে একটি এলাকায় হামলা করে সন্ত্রাসীরা।
তিনি বলছেন, আমি ঘরে বসে ইন্টারনেটে কাজ করছিলাম। হঠাৎ প্রচুর মানুষের ছোটাছুটির শব্দ শুনতে পাই। হঠাৎ করে এরকম একটি পরিস্থিতি দেখে আমি হতভম্ব হয়ে পড়েছিলাম। তখন অনেক মানুষের চিৎকার শুনতে পাই।
রোডে দ্য শাও নামের সড়কের পাশে একটি রেস্তোঁরায় হামলা চালিয়ে অন্তত ১০জনকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। তার পাশেই একটি এশিয়ান রেস্তোঁরায় কাজ করেন বাংলাদেশী লাভলু বড়ুয়া।
তিনি বলছিলেন, ''আমাদের রেস্তোঁরার দুইশ গজ দূরেই, একটি ফরাসি রেস্তোঁরায় টেরাসে (খোলা জায়গা) বসে খাবার ব্যবস্থা আছে। সন্ত্রাসীরা সেটা লক্ষ্য করেই হামলা করে। টেরাসে বসে যারা খাচ্ছিল, তাদেরকে লক্ষ্য করেই তারা গুলি করতে শুরু করে।''
                               পুলিশকে সহায়তা করতে প্যারিসে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে                
গোলাগুলির শব্দ শুনে প্রথমে তারা ভেবেছিলেন, সাপ্তাহিক ছুটির আগের দিন হওয়ায় হয়তো কেউ আতশবাজি ফোটাচ্ছে। একটু পরে দেখতে পেলেন, সব রেস্তোঁরার দরজা বন্ধ করে দিচ্ছে, তাদের রেস্তোঁরার দরজাও বন্ধ করে দেয়া হয়।
লাভলু বড়ুয়া বলছিলেন, ''জানালা দিয়ে আমরা অনেক লোকজনকে ছোটাছুটি করতে দেখতে পাই। কিছু পরে আমাদের একজন গ্রাহক সেখানে গিয়ে দেখতে পান, দশ-বারোজন মানুষ মাটিতে পড়ে রয়েছে।''
মেট্রো চলাচল বন্ধ আর রাস্তাগুলো পুলিশ আটকে দেয়ায় প্রায় ৪৫ মিনিট হেঁটে তিনি বাসায় ফেরেন। bbc