মঙ্গলবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

বাংলাদেশে ফেরা নয়, আগে চিকিৎসা চান বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহমেদ

Image captionবিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহমেদ
ভারতের শিলংয়ে ন’মাসেরও বেশি সময় ধরে প্রায় নির্বাসিত জীবন কাটানো বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহমেদ এখন উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর – বা তা সম্ভব না হলে ভারতেরই অন্য কোনো বড় শহরে যাওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করছেন।
অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের জন্য তার বিরুদ্ধে যে মামলা চলছে, তাতে পরবর্তী শুনানি এ সপ্তাহেই – তার ঠিক আগে মি আহমেদ শিলং থেকে বিবিসিকে জানিয়েছেন উন্নত চিকিৎসার সুযোগ পাওয়াটাই এখন তার অগ্রাধিকার।
বাংলাদেশে ফেরাটা যে এখনই তার ইচ্ছা নয়, সেটাও স্পষ্ট হয়ে গেছে তার কথা থেকেই।
গত বছরের ১২ই মে ভারতের শিলং শহরে ‘রহস্যজনকভাবে’ এসে পৌঁছনোর পর গত ন’মাসেরও বেশি সময় ধরে সেখানেই আছেন বিএনপি নেতা মি. আহমেদ।
প্রথমে মাসখানেক বিচারবিভাগীয় হেফাজত আর হাসপাতালে কাটাতে হলেও তারপর অবশ্য তিনি জামিন পেয়ে যান – যার শর্ত হল শিলং থেকে তিনি বাইরে যেতে পারবেন না।
অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশ মামলায় পরবর্তী শুনানির দিন ১৮ই ফেব্রুয়ারি – কিন্তু তার আগে তিনি বলেছেন, হার্ট আর কিডনির ক্রমশ অবনতিটাই তাকে বেশি দুশ্চিন্তায় রেখেছে।
‘‘আমি খুবই অসুস্থ – আমার উন্নত চিকিৎসা দরকার। আর বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ভারতে ঢোকার অভিযোগে পাসপোর্ট অ্যাক্টে আমার বিরুদ্ধে যে মামলা চলছে সেই বিচারাধীন বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। আমরা আইনি পথেই এর মোকাবিলা করছি, এখন দেখা যাক,’’ বিবিসিকে বলছিলেন তিনি।
তবে ওই মামলায় মেঘালয় সরকারের নিযুক্ত কৌঁসুলি আই সি ঝা বিবিসিকে জানিয়েছেন আদালতে আরও কিছু সাক্ষীর জেরা করা বাকি, তবে মি. আহমেদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হয়ে গেছে অনেক আগেই।
পিপি মি. ঝা-র কথায়, ‘‘এখনও দু’জন সাক্ষীকে জেরা করা বাকি। তালিকায় মোট ছ’জনের নাম বাকি থাকলেও চারজনকে আমরা বাদ দিয়েছি – কারণ এদের মধ্যে কেউ কেউ ডাক্তার, যারা তাকে পরীক্ষা করেছিলেন। তাদের সাক্ষ্যের অতটা প্রয়োজন নেই।’’
Image copyrightAFP
Image captionশিলং এর একটি হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে সালাউদ্দিন আহমেদের
‘‘বাকি সাক্ষীদের জেরার পর অভিযুক্তের জবানবন্দী নেওয়া হবে, তারপর চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক। মি. আহমেদ এখনও দোষ স্বীকার করেননি বলেই মামলাটা চলছে, নইলে অনেক আগেই এর নিষ্পত্তি হয়ে যেত,” বলছেন সরকারি কৌঁসুলি।
মি. আহমেদ অবশ্য বলছেন, আদালত কী রায় দেয় তার চেয়েও এই মুহূর্তে তিনি বেশি দুশ্চিন্তায় আছেন শিলংয়ের বাইরে ভাল চিকিৎসার সুযোগ পাবেন কি না তা নিয়ে।
‘‘দেশের বাইরে (সিঙ্গাপুরে) যেখানে আমি আগে চিকিৎসা করাতাম সেখানে করাতে পারলে ভাল, তা সম্ভব না-হলেও ভারতেরই দিল্লি বা অন্য শহরে যাতে আমার কিডনি ও হার্টের চিকিৎসা করানোর অনুমতি দেওয়া হয়, আদালতে আমারে আইনজীবী সে আবেদন জানাবেন। শিলংয়ের সেরা হাসপাতাল নেগ্রিমসে আমি চেক-আপ করাই, ওখানকার ডাক্তাররাও কিন্তু সেরকমই রেফার করেছেন,’’ বলেন সালাউদ্দিন আহমেদ।
শিলংয়ে একটি অতিথিনিবাস ভাড়া করে আছেন মি. আহমেদ, ঢাকা থেকে পরিবারের সদস্যরা অতটা আসতে না পারলেও বাংলাদেশের নানা প্রান্ত থেকে নেতাকর্মীদের ভিড় কিন্তু সেখানে লেগেই আছে।
‘‘স্ত্রী-সন্তানরা অতটা আসতে পারেন না, তবে দেশের প্রায় প্রতিটি জেলা থেকেই পরিচিতরা, দলীয় কর্মীরা পুরনো ভালবাসার টানে প্রায় রোজই আসেন। কোর্ট-কাছারি আর হাসপাতালের বাইরে খুব একটা কোথাও যাওয়া হয় না, তবে অনলাইনে দেশের সব খবরই পাই – আর নানা বইটই, পত্রিকা পড়েই সময় কেটে যায়’’, বিবিসিকে বলছিলেন তিনি।
শিলংয়ে তিনি ঠিক কীভাবে এসে পৌঁছেছিলেন তা নিয়ে রহস্যের জট এখনও খোলেনি – তবে মি. আহমেদ সে বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি।
রাজনৈতিক বা কূটনৈতিক যে সব বিষয়ে কথা বললে বিতর্ক তৈরি হতে পারে – আইনজীবীর পরামর্শে বিরত থেকেছেন সে সব প্রসঙ্গে মন্তব্য করা থেকেও।

সিরিয়ায় দুটো হাসপাতালে বোমা হামলা, বহু হতাহত

Image copyrightReuters
Image captionবোমা হামলায় বিধ্বস্ত এই হাসপাতাল
চিকিৎসা বিষয়ক দাতব্য সংস্থা মেদসা স’ ফ্রঁতিয়ের বা এমএসএফ বলছে, তাদের সহযোগিতায় সিরিয়ায় পরিচালিত একটি হাসপাতালে ইচ্ছাকৃতভাবে বোমা ফেলা হয়েছে।
সংস্থাটি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, ইদলিব প্রদেশে ৩০ শয্যার এই হাসপাতাল ধ্বংস হওয়ায় ৪০ হাজারের মতো লোক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হবে।
এই হামলার জন্য এমএসএফ এখনও পর্যন্ত সরাসরি কাউকে দায়ী না করলেও, লন্ডন ভিত্তিক সিরিয়ান একটি মানবাধিকার গোষ্ঠী বলছে, রুশ বিমান থেকে এই হামলা চালানো হয়েছে।
মারাত আল নুমান নারেমর এই জায়গাটিতে মেদসা স’ ফ্রঁতিয়ের সহায়তায় পরিচালিত হাসপাতালটিতে দু’দফা আক্রমণে চারটি মিসাইল আঘাত হানে।
সিরিয়ান অবসারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস নামের একটি ব্রিটিশ সংস্থা বলছে, এতে ন’জন মারা যায়, এবং রুশ বিমান থেকেই ওই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়।
বিমান হামলার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে - যাতে দেখা যাচ্ছে আক্রান্ত ভবনটি থেকে ঘন কালো ধোয়ার কুণ্ডলী উঠছে। ওই ভিডিওতে একজন লোককে ঘটনার বর্ণনা দিতে শোনা যায়।
তিনি বলেন, আল্লাহ আমাদের সাহায্য করুন। এমএসএফের হাসপাতালে রাশিয়ান বিমান হামলা করেছে। এটা দ্বিতীয় হামলা।
Image copyrightReuters
Image captionইদলিব প্রদেশের বিধ্স্ত হাসপাতাল
আরো খবর পাওয়া গেছে, তুরস্কের সীমান্তের কাছে সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত গ্রামের একটি হাসপাতালে এবং একটি স্কুলে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে।
আজাজ নামের এই জায়গাটিতে আলেপ্পো থেকে আসা সিরিয়ান শরণার্থীদের ভিড় বাড়ছে। আর এখানেই তুরস্কের বাহিনী একটি কুর্দি মিলিশিয়া গ্রুপের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালাচ্ছে।
এই মিলিশিয়াদের তুরস্ক সন্ত্রাসী সংগঠন বলে মনে করলেও তারা আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পায়, কারণ তারা ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মিত্র মনে করে। তারা সম্প্রতি এই এলাকায় অবস্থান সংহত করছিল।
তুর্কী প্রধানমন্ত্রী আহমেদ দাভুতোলু বলেছেন, আজাজ কুর্দিদের হাতে চলে যাক এটা তার সরকার কখনোই হতে দেবে না।
কিয়েভ সফররত মি. দাভুতোলু মস্কোর বিরুদ্ধেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।
Image copyright
Image captionকুর্দী যোদ্ধা
তিনি বলেন, “রাশিয়া যদি এরকম সন্ত্রাসী সংগঠনের মতো আচরণ করতে থাকে এবং সিরিয়ার বেসামরিক লোকদের পালাতে বাধ্য করতে থাকে, তাহলে আমাদের এর জবাবে চরম ব্যবস্থা নেবার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”
সিরিয়া এরই মধ্যে অভিযোগ করেছে যে তুরস্ক তার এই কুর্দিবিরোধী অভিযানের সময় প্রায় একশ সৈন্যকে সীমান্ত পার হয়ে সিরিয়ায় ঢুকতে দিয়েছে - যদিও তুরস্ক তা অস্বীকার করেছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি এর মধ্যেই বলেছেন, শান্তি প্রক্রিয়া ব্যর্থ হলে সিরিয়ার এই সংঘাতের মধ্যে আরো বিদেশী সৈন্য জড়িয়ে পড়তে পারে।
এর জবাবে সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভিয়েদেভ বলেন, এর পরিণাম হবে একটি দীর্ঘ ও পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ।
তিনি বলেন, “আপনারা কাউকে ভয় দেখাবার চেষ্টা করবেন না। কেউই নতুন কোন যুদ্ধ চায় না। কিন্ত আরব দেশগুলো এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি স্থল অভিযান চালাতে চায় তার পরিণাম হবে দীর্ঘ এবং পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ ।”
বিবিসির মার্ক লোয়েন বলছেন, সিরিয়ায় এখন পরিস্থিতি এতই জটিল যে আর কোন নতুন যুদ্ধ শুরু হোক তা কেউ চায় না কিন্তু এখন তুরস্ক এর মধ্যে আবার আরো একটি যুদ্ধ শুরু করেছে।
কুর্দি বাহিনীর বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ নেটোর মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করেছে এবং আন্তর্জাতিক শান্তি আলোচনার ওপরও এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে।

ইসলাম নিয়ে বিতর্কিত বই থাকায় মেলার একটি স্টল বন্ধ

Image captionবই মেলায় বাংলা একাডেমির স্টল
ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত একটি বই নিয়ে আপত্তি ওঠার পর ঢাকার একুশে বইমেলায় একটি প্রকাশনা সংস্থার স্টল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘ইসলাম বিতর্ক’ শিরোনামে বইটিতে ইসলাম ধর্ম এবং নবী মোহাম্মদ সম্পর্কে অত্যন্ত আপত্তিকর মন্তব্য রয়েছে জানতে পেরে তারা দ্রুত এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
স্টল থেকে বেশ কিছু বইও জব্দ করা হয়েছে।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বিবিসিকে বলেছেন, বই মেলার নীতিমালা অনুসারেই ওই স্টলটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেছেন, বইটিতে ইসলামের নবী সম্পর্কে এমন কুৎসিত ও জঘন্য কথাবার্তা রয়েছে যে এই ব্যবস্থা না নেওয়া হলে বই মেলাটি চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো না।
তিনি বলেন, এর ফলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
এধরনের বই প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রকাশকদেরকে দায়িত্ব নেওয়ার আহবান জানান মি. খান।
Image captionএকুশে বই মেলার একটি স্টলে বই সাজিয়ে রাখা হয়েছে
বাংলা একাডেমির এই বক্তব্যের জবাবে বইটির প্রকাশক ব-দ্বীপ প্রকাশনা কর্তৃপক্ষের মন্তব্য জানার জন্যে কাউকে পাওয়া যায়নি।
গত দুদিন ধরে এই বইটির প্রতিবাদে কিছু কিছু সংগঠন প্রতিবাদ জানায়। তার পরই প্রকাশনা সংস্থাটির স্টল বন্ধ করে দেওয়া হলো।
বইটি নিষিদ্ধ না করে প্রকাশনী সংস্থার এই স্টলটি কেনো বন্ধ করে দেওয়া হলো এই প্রশ্নের জবাবে মি. খান বলেন, এবিষয়ে প্রকাশনা সংস্থাটির কাছে জানতে চাওয়া হবে এবং তাদের জবাব সন্তোষজনক হলে স্টলটি আবার খুলে দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা বইটির কপি সংগ্রহ করে বাংলা একাডেমির কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।
মি. খান বলেন, প্রকাশককে তারা খুঁজে পাচ্ছেন না। তারা ধারণা করছেন যে প্রকাশক গা ঢাকা দিয়েছেন।