শনিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৫

দুর্নীতির অভিযোগে প্রথম আদালতে গেলেন সোনিয়া ও রাহুল

 

                      দিল্লির আদালতে শনিবার সোনিয়া ও রাহুল গান্ধীকে দুর্নীতির মামলায় জামিন দেওয়া হয়েছে।      
           
ভারতে একটি কথিত দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত হয়ে আজ শনিবার দিল্লির একটি আদালতে হাজির হয়েছিলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী ও পুত্র রাহুল। প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকার বন্ডে জামিন দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে তাঁদের দুজনের পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করা বা দেশের বাইরে না যেতে দেওয়ার আর্জিও খারিজ করে দিয়েছে আদালত।
এই প্রথমবার কোনও আদালতের মুখোমুখি হলেন তাঁরা। সোনিয়া ও রাহুলের সঙ্গেই আদালত কক্ষে গিয়েছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ওয়াধ্রা সহ দলের সর্বোচ্চ নেতারা।
বস্তুত সত্তরের দশকের পর ভারতের পরাক্রমশালী নেহেরু-গান্ধী পরিবারের কোনো সদস্য এই প্রথম আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়ালেন।
ন্যাশনাল হেরাল্ড সংবাদপত্রের তহবিল তছরূপের অভিযোগে সোনিয়া ও রাহুলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন বিজেপি নেতা সুব্রহ্মনিয়ম স্বামী।
দুই শীর্ষ নেতা-নেত্রীকে আদালতের শমন ধরানোর পিছনে বিজেপির দুরভিসন্ধি রয়েছে বলে গত কয়েকদিন ধরেই কংগ্রেস ভারতের পার্লামেন্টে গোলযোগ করছে। কংগ্রেস অভিযোগ করছে বিরোধী দলগুলির মুখ বন্ধ করিয়ে দেওয়ার জন্যই তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী স্বয়ং।
                 দিল্লির পাটিয়ালা হাউসে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী।                
আজ শনিবারও সকাল থেকেই ভারতের নানা জায়গায় বিজেপি বিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়।
যদিও বিজেপি বারে বারই বলে আসছে যে সনিয়া আর রাহুল গান্ধীকে তাদের সরকার শমন পাঠায় নি – এটা আদালতের নির্দেশ।
তাঁরা যদি নির্দোষ হন, তাহলে সেটা আদালতে গিয়েই প্রমাণ করুন, নরেন্দ্র মোদীর দিকে কেন অভিযোগ তুলছেন - বক্তব্য বিজেপির।
দিল্লির পাটিয়ালা হাউস আদালতে হাজিরা দিতে যাওয়ার আগে দলের শীর্ষ নেতাদের ডেকে পাঠিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন সোনিয়া ও রাহুল গান্ধী। এই মামলায় হাজিরা দেওয়া, প্রয়োজন পড়লে জেলে যাওয়ার কথাও বলা হয়, যাতে যতদূর সম্ভব বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক ফায়দা তোলা যায় এই ইস্যু থেকে।
                 সুব্রহ্মনিয়াম স্বামীর দায়ের করা মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে যে ন্যশানাল হেরাল্ড সংবাদপত্র থেকে কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি তছরূপের চেষ্টা করেছেন সোনিয়া এবং রাহুল গান্ধী।                
বিজেপি নেতা সুব্রহ্মনিয়াম স্বামীর দায়ের করা মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে যে স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়ে জওহররাল নেহরু প্রকাশিত ন্যশানাল হেরাল্ড সংবাদপত্র থেকে কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি তছরূপের চেষ্টা করেছেন সোনিয়া এবং রাহুল গান্ধী।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে কংগ্রেস দলের পক্ষ থেকে ওই খবরের কাগজটির ৯০ কোটি টাকার ঋণ মেটানো হয়েছে, আবার ইয়ং ইন্ডিয়া নামে একটি সংস্থা তৈরি করে ৫০ লাখ টাকা দিয়ে ওই কাগজের সম্পত্তি নিজেদের কবলে নিয়ে এসেছে গান্ধী পরিবার।
সম্পত্তি হাতানো বা তহবিল তছরূপের এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে কংগ্রেস বলে আসছে ওই কাগজটির ইতিহাস মনে রেখে পুনরুজ্জীবনের জন্য বিনা সুদে ঋণ দেওয়া হয়েছিল দলের তরফে। আর ইয়ং ইন্ডিয়া তৈরি করে দলীয় তহবিলের ৯০ কোটি টাকার দায়ভার নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে তহবিল তছরূপের কোনও প্রশ্নই নেই।
২০ ফেব্রুয়ারি মামলাটির আবার শুনানি হবে।

গ্যাংনাম স্টাইল গানটি নিয়ে সব মহাদেশের মানুষ কেন পাগল

 
                     সাই-এর গ্যাংনাম স্টাইল এ পর্যন্ত ইউটিউবে দেখা হয়েছে প্রায় আড়াইশ কোটি বার।        
        
২০১২ সালে ইউটিউবে ছাড়া এক মিউজিক ভিডিও গ্যাংনাম স্টাইলের বদৌলতে সারা বিশ্বে রাতারাতি তারকা খ্যাতি পান দক্ষিণ কোরিয়ার শিল্পী সাই।
তার এই মিউজিক ভিডিওটি এ পর্যন্ত ইউটিউবে দেখা হয়েছে প্রায় আড়াইশো কোটি বার, এটা একটা রেকর্ড। স্বল্প পরিচিত এক কোরিয়ান শিল্পী থেকে রাতারাতি এই বিশ্বজোড়া খ্যাতির মোকাবেলা কিভাবে করেছেন সাই?
বিশ্বজুড়ে সবাই তাকে চেনেন সাই নামে। কিন্তু আসল নাম পার্ক জে সেং। তার উদ্দাম নাচের সঙ্গে তাল মেলানো মুশকিল। মোটাসোটা গড়ন। চোখে সবসময় কালো সানগ্লাস। দেখতে আকর্ষণীয়। কিন্তু একজন পপস্টার বলতে যেরকম বোঝায়, তার চেয়ে কিছুটা আলাদা সাই।
গ্যাংনাম স্টাইল ইউটিউবে আপলোড করার সঙ্গে সঙ্গে তুমুল হিট। বিশ্বের যে কোন প্রান্তে সবাই তাকে চেনেন একনামে। কোরিয়ান ভাষার একটা গান কিভাবে বিশ্বজয় করলো, সেটা শিল্পীর নিজের কাছেও এক অপার রহস্য।
বিবিসির স্টিভ ইভান্সকে শিল্পী সাই বলেছেন 'গ্যাংনাম স্টাইল' গানটা আসলেই অদ্ভুত।
''গানের সব কিছুই কোরিয়ান। অথচ বিশ্বের সবকটি মহাদেশের মানুষ এই গানটির জন্য পাগল হয়ে গেল।''
                 দক্ষিণ কোরিয়ায় ১৭তম এশিয়ান গেমসের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সাই পরিবেশন করছেন 'গ্যাংনাম স্টাইল'।                
ইউটিউবে এই গানের সুবাদে রাতারাতি তারকাখ্যাতির পর যে কারও মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু সাইকে সামনাসামনি সাক্ষাত করার পর যেন মনে হচ্ছে, এতো একেবারেই একজন সাধারণ মানুষ, দুই সন্তানের পিতা গড়পড়তা এক সাধারণ মানুষ।
এই তুমুল জনপ্রিয়তা সাই কিভাবে সামাল দিয়েছেন ?
                 বিশ্বজুড়ে এই খ্যাতিকে সাই বলেছেন একদিকে স্বপ্ন - অন্যদিকে দুঃস্বপ্ন।                
''এটা আমার ব্যক্তিগত একটা বিষয়। আমি আসলে একজন সাধারণ মানুষের মতো স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে চাই। আমি বাঁচতে চাই একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে, একজন বাবা হিসেবে, একজন স্বামী হিসেবে।''
''আসলে শিল্পী কিংবা গায়করা তো সেরকম আলাদা বা বিশেষ কিছু না। তারা যা করেন, সেটাও আসলে আর দশটা কাজের মত একটা কাজ। আমি যখন গান গেয়ে মঞ্চ থেকে নেমে আসি, তখন আমি আসলে একজন স্বাভাবিক মানুষের মতই চলার চেষ্টা করি।''
গ্যাংনাম স্টাইলের তুমুল সাফল্যের পর এই জনপ্রিয়তাকে বর্ণনা করেছিলেন একই সঙ্গে স্বপ্ন এবং দু:স্বপ্ন হিসেবে। সেটার কারণ কি?
''বিশ্বজুড়ে এই গানের পর এই যে খ্যাতি, এটা ছিল স্বপ্ন। বিশ্বের এত দেশে এই যে খ্যাতি এবং স্বীকৃতি, বিভিন্ন দেশের শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ, সেটা ছিল স্বপ্ন। কিন্তু তারপরই আমার মনে হলো, যখন এটা শেষ হয়ে যাবে তখন কি? আমি কি আর নতুন গান করতে পারবো? সেটাই ছিল আমার দু:স্বপ্ন।''
সাই অবশ্য এই দু:স্বপ্ন পেছনে ফেলে নতুন গান বেঁধেছেন, এবং সেই গানও সফল হয়েছে। এটি আসলে জনপ্রিয় রক গায়ক উইল-আই-এম-এর গানের প্যারোডি।
                 জনপ্রিয় রক গায়ক উইল-আই-এম-এর গানের আদলে নতুন প্যারডি বেঁধেছেন সাই।                 
''উইল-আই-এম-এর একটি গান ছিল- আই গট ইট ফ্রম মাই মামা। এই গানে এক সুন্দরীকে উইল-আই-এম জিজ্ঞেস করছেন, তোমার এত সুন্দর দেহ তুমি কোথায় পেয়েছে? মেয়েটি উত্তর দিচ্ছে, আই গট ইট ফ্রম মাই মামা''
''আমি ভাবলাম, মেয়েরা যদি আমাকে জিজ্ঞেস করে, তোমার এই সুন্দর দেহ তুমি কোথায় পেয়েছ?- আর আমি যদি বলি, আই গট ইট ফ্রম মাই ড্যাডি। সেখান থেকেই এই নতুন মিউজিক ভিডিওর আইডিয়াটা মাথায় আসে।''
কিন্তু গ্যাংনাম স্টাইলকে কি ছাড়িয়ে যেতে পারবে এই নতুন ভিডিও? সাই বলছেন গ্যাংনাম স্টাইল তার কাছে একটা ট্রফির মতো।
''সেটাকে কীভাবে আসলে ছাড়িয়ে যাওয়া সম্ভব? একটা ট্রফি জেতার পর সেটা যেমন আপনি ঘরে সাজিয়ে রাখেন, আমার জীবনে গ্যাংনাম স্টাইল আসলে তাই। যতবার আমি এই ট্রফি দেখি, নিজেকে সুখী মনে হয়।''

সিরিয়ার ভবিষ্যৎ ঠিক করবে সিরিয়ানরা

 
                     সিরিয়া সংকট সমাধানে সর্বসম্মতভাবে শান্তি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ          
      
সিরিয়া সংকট সমাধানে সর্বসম্মতভাবে একটি শান্তি প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন বিশ্বনেতারা।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ অনুমোদিত ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সিরিয়ার ভবিষ্যৎ প্রশ্নে সেদেশের নাগরিকরাই সিদ্ধান্ত নেবে। তাই জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে আগামী ১৮ মাসের মধ্যে একটি মুক্ত এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে।
ওই প্রস্তাবে সিরিয়ার সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে অবিলম্বে তারা সাধারণ নাগরিকদের উপর হামলা বন্ধ করবে।
জানুয়ারীতে উভয়পক্ষকে নিয়ে শান্তি আলোচনা শুরু হবে।
আঠারো মাসের মধ্যে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে, যার মাধ্যমে সেদেশের জনগণই তাদের ভবিষ্যতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন।
কিন্তু এই প্রক্রিয়ার মধ্যে সিরিয়ান প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের ভবিষ্যৎ কি হবে, তা পরিষ্কার নয়।
আমেরিকান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি মন্তব্য করেছেন, এই প্রস্তাব কার্যকর হলে সন্ত্রাসীরা আর সুযোগ নিতে পারবে না এবং রাজনৈতিকভাবেই সিরিয়ায় পরিবর্তন হবে।
এই শান্তি প্রক্রিয়ায় ইসলামিক স্টেট বা তাদের সহযোগী কোন দল অংশ নিতে পারবে না।
সিরিয়ান প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, এ সপ্তাহের মধ্যেই তার সরকার শান্তি আলোচনায় অংশ নিতে প্রস্তুতি নেবে। কিন্তু বিরোধী দলের পক্ষে কে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় আসবে, সেটি তারা আগে জানতে চায়।
প্রেসিডেন্ট আসাদের ভবিষ্যতের বিষয়ে বিশ্বনেতাদের কিছু বলার থাকতে পারেনা বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।
যদিও যুক্তরাষ্ট্র ও তার সহযোগী দেশের দাবি, শান্তি প্রক্রিয়ার এক পর্যায়ে বাশার আল আসাদকে ক্ষমতা থেকে সরে দাড়াতে হবে। ।

বহু বাংলাদেশী এখনও বিভিন্ন দেশের আশ্রয় শিবিরে

 

                     ইন্দোনেশিয়ার আশ্রয় শিবিরে রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশী, ফাইল ফটো                
বিদেশে পাড়ি দিতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন বা মারা গেছেন- এমন ব্যক্তিদের স্মরণ করা হচ্ছে আজ আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসে।
বিদেশে যেয়ে সুন্দর জীবন গড়ার স্বপ্ন থাকলেও নিখোঁজ ও প্রাণ হারানো এসব মানুষের পরিবার এখন পার করছেন এক অনিশ্চিত জীবন।
অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করে এমন সংস্থাগুলো বলছে, এখনও বিশ্বের কয়েকটি দেশের আশ্রয় শিবিরে আটকে রয়েছেন অনেক বাংলাদেশী যাদের খবর হয়ত তাদের পরিবারগুলোও জানে না।
দুই বছর আগে যশোরের শারশার বাবুল আখতার সমুদ্র পথে পাড়ি জমান মালয়েশিয়ায়।
স্থানীয়দের সহযোগিতায় কম খরচে মালয়েশিয়ার যাওয়ার প্রস্তাব ছিল তার কাছে সোনার হরিণ পাওয়ার মতো।
বাবুল আখতারের স্ত্রী রিপা বলছিলেন, ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে তার স্বামী বাড়ি থেকে বের হন।
দুই বছরে তার কোন খোঁজ পাননি তিনি।
বাবুল আখতার ছিলেন বর্গাচাষী।
তার কোন খোঁজ না পেয়ে রিপা দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে এখন বলা যায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
রিপা বলছিলেন, “সরকারি একটা কার্ড দিয়ে চাল আনি দু’বছর, চোখে না দেখলে আমার কষ্ট বোঝা যাবে না। দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে কিভাবে আছি তা শুধু আমি জানি।”
এ বছরের মার্চ মাসে নরসিংদী জেলার আব্দুর রশিদ একই ভাবে সমুদ্রপথে বিদেশে যাওয়ার জন্য বাড়ি ছাড়েন।
প্রথমে তার পরিবারের মানুষ জানতেন না ঠিক কোন দেশে তিনি যাচ্ছেন।
একমাস পরে মালয়েশিয়া থেকে একটি ফোন আসে আব্দুর রশিদের পরিবারের কাছে।
                            
তার ছেলে স্বপন বলছিলেন, এরপরের চারমাস আর কোন খোঁজ পাননি তার বাবার।
স্বপন বলছিলেন, এ বছরের অক্টোবরে তার বাবার মরদেহ তারা পান মালয়েশিয়া থেকে।
“আমরা তিন ভাই, আমি বড় এবার ডিগ্রী পরীক্ষা দিতাম। আব্বুর এই ঘটনায় আমি পরীক্ষা দেইনি, আমার দুই ভাইয়ের পড়াশোনা এখন বন্ধ। আমি একটা কাজ খুঁজছি,” বলছিলেন স্বপন।
নরসিংদীর আব্দুর রশিদ এবং যশোরের বাবুল আখতারের মতো নিখোঁজ রয়েছেন বা মারা যাওয়ার খবর রয়েছে আরো পরিবারে।
সিলেটের নারী শ্রমিক রিপন বেগম দুবাই যেয়ে দুই বছর ধরে নিখোঁজ বলছিলেন তার স্বামী।
একই ভাবে যশোরের তানভীর হোসেনের কোন হদিশ পাচ্ছেন না তিন বছর ধরে তার ভাই মহিউদ্দিন।
জাতিসংঘের এক হিসেব বলছে, বর্তমানে নৌকায় করে সমুদ্রপথে থাইল্যান্ড হয়ে মালয়েশিয়া রওয়ানা হওয়া লোকজনের ৪০% বাংলাদেশী।
এই বিপদজনক পথ পাড়ি দিতে গিয়ে হচ্ছেন অনেক নিখোঁজ আবার অনেকে প্রাণ হারাচ্ছেন।
তবে এদের কেউ কেউ বিভিন্ন দেশের আশ্রয় শিবেরে রয়েছেন। যাদের খোঁজ তাদের পরিবারের কাছে আসছে না।
এশীয় অঞ্চলে অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করে ক্যারাম এশিয়ার কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ বলেছেন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের আশ্রয় ক্যাম্পে এখনো অনেক বাংলাদেশী আটক রয়েছেন।
তিনি বলেন, “ মালয়েশিয়ার একটা ক্যাম্পে আছে দুশোর মত বাংলাদেশী, সম্প্রতি আরেকটি ক্যাম্পে ১২ জনের খবর পেয়েছি। থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ার ক্যাম্পগুলোতে ছড়ানো ছিটানো রয়েছে আরো অনেকে।”
এসব ব্যক্তিরা কোন আশ্রয় শিবিরে আছেন কিনা সেটার যেমন কোন তথ্য পরিবারের কাছে নেই আবার আশ্রয় শিবিরে আটকে থাকাদের উপায় নেই পরিবারের সাথে যোগাযোগের।

'বাংলাদেশে ৩০ লাখ গার্মেন্ট শ্রমিক নিরাপত্তা ঝুঁকিতে'

 

                               
যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গার্মেন্টস কারখানায় কমপক্ষে ত্রিশ লক্ষ শ্রমিক নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে।
এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, রানা প্লাজা ধসে ১১শর বেশি শ্রমিক নিহত হওয়ার পর বাংলাদেশের কারখানাগুলোতে শ্রমিকের কাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য যে কর্মসূচি নেয়া হয়, তার চার ভাগের তিন ভাগ কারখানাই সেই কর্মসূচির আওতার বাইরে রয়েছে।
এগুলোর বেশির ভাগই ছোট কারখানা এবং এগুলো বড় বা নামীদামী কারখানার জন্য কাজ করে থাকে।
তবে গার্মেন্টস মালিকরা এমন বক্তব্য নাকচ করে বলেছেন, রপ্তানিকারক সব কারখানাই নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার বলেছে, ছোট কারখানাগুলোকেও নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনা হচ্ছে।
নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্র্যান সেন্টার ফর বিজনেস এন্ড হিউম্যান রাইটস এর পক্ষ থেকে বাংলাদেশের গার্মেন্টস কারখানাগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে গবেষণাটি করা হয়েছে।
সেই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,বাংলাদেশে সাত হাজারের বেশি গার্মেন্টস কারখানা রয়েছে।
এগুলোর একটা বড় অংশের কোন নিবন্ধন নেই।
এই ছোট কারখানাগুলো বড় বা নামী-দামী কারখানার জন্য সাবকন্ট্রাক্টর হিসেবে কাজ করে থাকে।
কিন্তু এই ছোট কারখানাগুলোর নিরাপত্তার বিষয় নজরদারির আওতায় নেই।
ঢাকায় গার্মেন্টস শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করে, এমন একটি সংগঠনের নেত্রী মোশরেফা মিশু বলেছেন,সরকার এবং মালিকপক্ষ, কেউই ছোট কারখানাগুলোর নিরাপত্তার দিকে নজর দেয় না।
রানা প্লাজা ধ্বসে গার্মেন্টস শ্রমিক হতাহতের ঘটনার পরে কারখানাগুলোর শ্রমিকের কাজের নিরাপত্তার প্রশ্ন সামনে আসে।
সেই প্রেক্ষাপটে, ইউরাপে এবং যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো অ্যাকর্ড এবং অ্যলায়েন্স নামের দুটি ফোরাম গঠন করে বাংলাদেশের গার্মেন্টস কারখানাগুলো পরিদর্শনের মাধ্যমে নিরাপত্তা সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে পদক্ষেপ নেয়।
নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় বলা হয়েছে, গার্মেন্টস কারখানার চার ভাগের মাত্র এক ভাগ কারখানাকে সেই নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে।
ফলে বেশিরভাগ কারখানায় ত্রিশ লাখের মতো শ্রমিক নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে।
                           
তবে, যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের ফোরাম অ্যাল্যায়েন্সের মেজবাহ রবিন বলছিলেন, “সরকারি হিসাব এবং বিজিএমইএ’র তালিকা অনুযায়ী সাড়ে তিন হাজার কারখানা এখন চালু আছে। অ্যাকর্ড, এ্যালায়েন্স এবং আইএলও এর সহায়তায় সরকারের ন্যাশনাল কর্মসূচি অধীনে, এই তিন ভাগে তালিকাভুক্ত একশ ভাগ কারখানাকেই নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে।”
গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সিনিয়র সহসভাপতি ফারুক হাসান এটা স্বীকার করেছেন যে, ছোট কিছু কারখানা রয়েছে।
তবে তার দাবি হচ্ছে, বড় কারখানাগুলো এখন ঝুঁকিপূর্ণ কারখানার কাছে সাবকন্ট্রাক্টে কাজ দেয় না।
তিনি আরও বলেছেন, ছোট কারখানাগুলো দেশের ভিতরে চাহিদা মেটানোর জন্য কাজ করে।
এরা রপ্তানিকারক না হওয়ায় তারা বিজিএমইএ’র সদস্যও হতে পারে না।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব মিকাইল শিপার বলেছেন, কেরানীগঞ্জসহ কয়েকটি এলাকায় ছোট কারখানা রয়েছে।
এর সংখ্যা হাজার খানেক হবে।
এসব কারখানাকেও দু’বছরের মধ্যে নিরাপত্তা কর্মসূচির মধ্যে আনা হবে।