বুধবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

কর্মবিরতিতে অচল সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়



স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো, অষ্টম পে-স্কেলের বৈষম্য দূরীকরণ ও পুনর্নির্ধারণ, শিক্ষকদের প্রাপ্য মর্যাদা প্রতিষ্ঠাসহ চার দফা দাবিতে গতকাল পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে পৃথক কর্মসূচি পালন করা হয়। শিক্ষক নেতারা বলেছেন, দাবি পূরণ না হলে তারা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে যাবেন। শিক্ষকদের এই কর্মবিরতিতে গতকাল দেশের ৩৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। এদিকে শিক্ষকদের নিয়ে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে শিক্ষক নেতারা বলেন, তার বক্তব্য অনভিপ্রেত, অসংলগ্ন।

বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে মৌন মিছিল বের করেন। টিএসসি হয়ে দোয়েল চত্বর ঘুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পৌঁছে শেষ হয় তাদের মৌন মিছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শতাধিক শিক্ষক এতে অংশ নেন। পরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, শিক্ষকরা স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো

আশা করছেন। এ দাবি পূরণ না হলে আমরা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে যেতে বাধ্য হবো। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বেতন কাঠামোতে নিজেদের অবস্থান ঠিক রাখার দাবিতে আন্দোলন করেছিলাম। শিক্ষকদের মর্যাদার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের বক্তব্য এসেছে, একটি কমিটিকে দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে। আমরা এখন সেই কমিটির দিকে তাকিয়ে আছি।’ তিনি ওই কমিটির সভায় শিক্ষক প্রতিনিধিদের রাখার আহ্বান জানান।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মবিরতি : আমাদের জাবি প্রতিনিধি জানান, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর দাবিতে এবং অষ্টম জাতীয় পে-স্কেলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অবমূল্যায়নের প্রতিবাদে মৌন মিছিল ও কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। শিক্ষকরা দাবি না মান পর্যন্ত সর্বাত্মক কর্মবিরতির মতো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছেন ফেডারেশনের প্রতি। মৌন মিছিল-পরবর্তী সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামছুল আলম সেলিম বলেন, আমলারা প্রধানমন্ত্রীর কানও বন্ধ করে দিয়েছে। তাই এখন মাঠে নামার সময় এসে গেছে। লাগাতার কর্মসূচি দিতে ফেডারেশন নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

চবি প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকরা সমাবেশ এবং বিক্ষোভ মিছিলের মাধ্যমে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন। কর্মবিরতির ফলে ক্যাম্পাস ছিল ফাঁকা। শাটল ট্রেন চলাচল করলেও অনুষ্ঠিত হয়নি কোনো ক্লাস ও পরীক্ষা। এক সমাবেশে শিক্ষক নেতারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অবমূল্যায়ন কখনও মেনে নেওয়া হবে না। সচিবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছ থেকে স্যার ডাক শোনার জন্য এই বৈষম্যমূলক বেতন স্কেল ঘোষণা করেছে, যা একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের জন্য চরম অবমাননাকর।
জবি প্রতিবেদক জানান, স্বতন্ত্র বেতন স্কেল গঠন, উচ্চশিক্ষা কমিশন গঠন এবং অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদে গতকাল পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালনের পাশাপাশি আজ এবং আগামীকাল পূর্ণ কর্মবিরতি ঘোষণা করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।

ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
কুবি সংবাদদাতা জানান, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বক্তব্য ও অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অবমূল্যায়নের প্রতিবাদে ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সব ধরনের ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। গতকাল শিক্ষক সমিতির কার্যকরী সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

রংপুর প্রতিনিধি জানান, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষকরা। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গতকাল এই কর্মসূচি পালন করা হয়। এছাড়া সমিতির সভাপতি ড. আর এম হাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় শিক্ষকরা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেন এবং নিন্দা জানান। পরে সমিতির পক্ষ থেকে শিক্ষকরা উপাচার্য অধ্যাপক ড. একেএম নূর-উন-নবীর সঙ্গে সাক্ষাত্ করে শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করে সহযোগিতা করার অনুরোধ করেন।

বরিশাল অফিস জানায়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা পূর্ণদিবস কর্মবিরতি ও অবস্থান ধর্মঘট পালন করেছেন। গতকাল সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে এই কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকরা।

সিলেট অফিস জানায়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি) ও শাহ্জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন শিক্ষকরা। গতকাল সিকৃবি ও শাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে প্রতিবাদ র্যালি ও সমাবেশ করেন শিক্ষকরা। সিকৃবিতে সকাল থেকেই ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে প্রশাসনিক ভবনের মত্স্য বিজ্ঞান অনুষদ ভবনের সামনে সমাবেশ করেন পে-স্কেলে আলাদা গ্রেডের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকরা। এ সময় দাবি মানা না হলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি দেন তারা। একইভাবে শাবিতেও কর্মবিরতি এবং সমাবেশ করেছেন শিক্ষকরা।
গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গাজীপুর শিক্ষক সমিতি সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে থেকে এক শোভাযাত্রা বের করে কর্মবিরতি পালন করে।
দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কর্মবিরতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ক্লাস হয়নি।

বাকৃবি সংবাদদাতা জানান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেছে শিক্ষক সমিতি। একই দাবিতে ক্যাম্পাসে শোভাযাত্রা এবং সমাবেশও করেন তারা।
এছাড়াও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট), শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েও কর্মবিরতি পালন করা হয়েছে।

‘অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য অনভিপ্রেত, অসংলগ্ন’ : গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জ্ঞানের অভাবে আন্দোলন করছেন’ এমন বক্তব্যকে অনভিপ্রেত ও অসংলগ্ন বলেছেন শিক্ষক নেতারা। বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষক ও শিক্ষা কার্যক্রম সম্পর্কে জ্ঞানের অভাবের কারণেই তিনি এরূপ দায়িত্বহীন মন্তব্য করেছেন বলে মনে করেন শিক্ষকরা। গতকাল বিকেলে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও মহাসচিব অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অর্থমন্ত্রী অতীতে অন্যান্যদের ক্ষেত্রেও বিরূপ মন্তব্য করেছেন। এসবের মাধ্যমে তিনি জাতির কাছে নিজেকে ইতিমধ্যে হাস্যকর করে তুলেছেন।’

শিক্ষকরা অর্থমন্ত্রীর কাছ থেকে সুবিচার পাবেন না উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘হলমার্ক কিংবা বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি তার (অর্থমন্ত্রী) কাছে কোনো ঘটনাই না। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের পদোন্নতি নিয়ে মন্তব্য করেছেন।’ বলাবাহুল্য, সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পদোন্নতি হয়ে থাকে; যে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর অনুমোদন রয়েছে। উচ্চশিক্ষার উত্কর্ষ সাধন ও প্রকৃত মানবসম্পদ সৃষ্টি এবং শিক্ষকদের মান উন্নয়নের জন্য শিক্ষকরা যেকোনো গঠনমূলক প্রস্তাব মেনে নেবেন। কিন্তু গণমাধ্যমে মন্ত্রীর কথায় মনে হয়েছে তিনি জনগণের প্রতিনিধি নন, আমলাদের প্রতিনিধি।’ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শিক্ষকদের পদোন্নতিকে ঘিরে তিনি যখন দুর্নীতির কথা বলেন, অন্যদিকে হলমার্ক কেলেঙ্কারিকে তিনি কিছুই মনে করেন না এবং বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি অত্যন্ত হালকাভাবে দেখেন, তখন তার মুখে অন্তত জাতি গঠনের কারিগর শিক্ষকদের বিষয়ে এরূপ অবাঞ্ছিত বক্তব্য নিতান্তই অশোভন। অর্থমন্ত্রী শিক্ষকদের বিষয়ে আরও কিছু অসংলগ্ন মন্তব্য করেছেন-এসব মন্তব্যের প্রতি উত্তর দেওয়াকেও আমরা সঙ্গত মনে করি না।’
এছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মবিরতির সমাবেশে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের চরম সমালোচনা করা হয়।

অ-মুসলিমদের ভারতে থেকে যাওয়ার সুবিধা কার্যকর হলো

বাংলাদেশ বা পাকিস্তান থেকে যে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ভারতে চলে এসেছেন, ভারত তাদের পাকাপাকিভাবে সে দেশে থাকতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই হিন্দু-শিখ বা বৌদ্ধদের দীর্ঘমেয়াদি ভিসা দেওয়া হবে মানবিক কারণে – তবে শর্ত একটাই, ২০১৪র ৩১শে ডিসেম্বর বা তার আগে যারা ভারতে প্রবেশ করেছেন তারাই কেবল এই সুযোগ পাবেন।
যে বেশ কয়েক লক্ষ হিন্দু বা শিখ এর আওতায় পড়ছেন শরণার্থীদের প্রাপ্য সব সুযোগ-সুবিধাই তাদের মিলবে, তবে নাগরিকত্বর ব্যাপারে ভারত তাদের এখনই কোনও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে না।
ভারত সরকারের বক্তব্য, ধর্মীয় কারণে নির্যাতনের শিকার হয়ে বা নির্যাতনের ভয়ে লক্ষ লক্ষ সংখ্যালঘু মানুষ প্রতিবেশী বাংলাদেশ বা পাকিস্তান থেকে ভারতে এসে আশ্রয় নিয়েছেন।
এই হিন্দু-বৌদ্ধ-শিখ-জৈনরা কেউ কেউ ভিসা নিয়ে ভারতে ঢুকলেও ভিসা শেষ হওয়ার পরও আর দেশে ফেরেননি, অনেকেই আবার কোনও কাগজপত্র ছাড়া হয়তো স্রেফ দালালকে ধরে সীমান্ত পেরিয়েছেন।
এখন ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে, গত বছর পর্যন্ত যারা এভাবে ভারতে এসেছেন তাদের দীর্ঘমেয়াদি ভিসা দিয়ে ভারতেই থাকার সুযোগ করে দেওয়া হবে।
ক্ষমতাসীন দল বিজেপি-র পলিসি রিসার্চ গ্রুপের সদস্য ড: অনির্বাণ গাঙ্গুলি বলছিলেন এর মাধ্যমে বিজেপি তাদের পুরনো একটি প্রতিশ্রুতিই রক্ষা করল।
তাঁর কথায়, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদি নির্বাচনী প্রচারে বারবার বলেছেন সারা দুনিয়ার হিন্দুদের নির্যাতিত হলে যাওয়ার জায়গা একটাই – আর সেটা ভারত। ভারত সব ধর্মেরই, কিন্তু এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ভারত সারা বিশ্বের হিন্দুদের প্রতিই তাদের দায়িত্ব পালন করল।’
প্রকারান্তরে বিজেপি নেতৃত্ব এটাও বলতে চাইছেন যে বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের মুসলিমদের এর আওতায় রাখা হয়নি – কারণ তাদের যাওয়ার জন্য আরও নানা দেশই আছে।
সরকার আসলে এই নির্বাহী আদেশটি জারি করেছে ১৯২০-র পাসপোর্ট আইন ও ১৯৪৬র ফরেনার্স অ্যাক্টের আওতা থেকে ওই সংখ্যালঘুদের বাইরে রেখে – যদিও তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া নিয়ে বিবৃতিতে কিছু বলা হয়নি।
বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দুদের পূর্ণ নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য বহুদিন ধরে সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা লড়ছে বিমলাংশু রায় ফাউন্ডেশন, তাদের আইনজীবী শুভদীপ রায় অবশ্য প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন।
তিনি বলছেন, ‘এই সিদ্ধান্তে আমাদের দাবি পুরোপুরি মিটছে না ঠিকই – তবে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার পরিচয় অন্তত মিলছে। পূর্ণ নাগরিকত্ব দিতে গেলে দেশের নাগরিকত্ব আইনে বদল আনতে হবে, কিন্তু পার্লামেন্টে যে অচলাবস্থা চলছে তাতে সেটা কবে সম্ভব হবে জানা নেই। আপাতত নির্বাহী আদেশে যেটুকু করা যায় সরকার সেটাই করেছে।’
ভারতের এই সিদ্ধান্তে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিক প্রভাব পড়বে আসামে – যেখানে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশ একটি প্রধান ইস্যু এবং যে রাজ্যে ভোট আর কয়েক মাসের মধ্যেই।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ইতিমধ্যেই সেখানে বিদেশি নাগরিকদের চিহ্নিতকরণের কাজ চলছে ও অনেককেই ডিটেনশন ক্যাম্পে আটক রাখা হয়েছে।
আসামে শিলচরের এমপি ও কংগ্রেস নেত্রী সুস্মিতা দেব মনে করছেন এই সরকারি নির্দেশনামা সেই সঙ্কটের কোনও সুরাহা করতে পারবে না।
তিনি বলছিলেন, ‘সম্প্রতি আমি শিলচরের বহু ক্যাম্পে গিয়ে দেখেছি বাংলাদেশ থেকে হিন্দুরাও সেখানে দীর্ঘদিন ধরে আটক আছেন এবং তারা দেশে ফিরতে চান। কিন্তু দেশে ফেরাতে হলে তাদের ডিপোর্ট করা ছাড়া কোনও রাস্তা নেই, অথচ দুই দেশের মধ্যে কোনও ডিপোর্টেশন চুক্তি নেই। এই অসহায় মানুষগুলো শিবির থেকে মুক্তি পাবেন কি না তার কোনও জবাব কিন্তু নির্বাহী আদেশে নেই।’
সুস্মিতা দেব আরও বলছিলেন এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশী হিন্দুরা কেউ সান্ত্বনা পেলে তার বলার কিছু নেই, তবে এটা কোনও সর্বাত্মক সমাধান নয় – বরং তার মতে আসামের নির্বাচনের আগে ঝুলিয়ে দেওয়া একটা ‘ললিপপ’ মাত্র!
এই সিদ্ধান্ত বিজেপিকে আসামে কোনও নির্বাচনী ফায়দা দিক বা না-দিক, যে হিন্দু বা শিখরা দিনের পর দিন ভারতে অবৈধভাবে বাস করছিলেন তারা যে আপাতত স্বস্তি পাবেন তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
তবে সরকার একটা কাট-অফ তারিখ বেঁধে দিলেও এর পর নতুন করে বাংলাদেশ বা পাকিস্তান থেকে ভারতে সংখ্যালঘুদের আসার ঢল নামতে পারে, এমন একটা সম্ভাবনাও কিন্তু দিল্লি নাকচ করছে না।

বছরে পাঁচ লাখ করে শরণার্থী নিতে পারবে জার্মানী

জার্মান ভাইস চ্যান্সেলর বলেছেন, প্রতি বছর পাঁচ লাখ করে নতুন শরণার্থীর ধাক্কা সামলানোর সামর্থ্য জার্মানীর আছে।
ইউরোপ অভিমুখে শরণার্থীদের স্রোত সামাল দিতে ইউরোপীয় কমিশনের নেতারা যখন আলোচনায় বসতে যাচ্ছেন তখনই জার্মান ভাইস চ্যান্সেলর জিগমার গ্যাব্রিয়েল এই মন্তব্য করেছেন।
বর্তমান সঙ্কটে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এক লাখ ৬০ হাজার শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, যাদের বেশিরভাগই সিরিয়া থেকে এসেছেন।
বলা হচ্ছে ইউরোপে যে অভিবাসী এবং আশ্রয়প্রার্থীর যে স্রোত এখন চলছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তা আর দেখা যায়নি।
আর এই স্রোতের মূল ধাক্কা গিয়ে পড়ছে জার্মানির ওপর। ২০১৫ অর্থাৎ বর্তমান বছরে জার্মানীতে আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা আট লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারনা করা হচ্ছে, যে সংখ্যা ২০১৪ সালের তুলনায় চারগুণ।
জার্মানীর ভাইস চ্যান্সেলর অর্থাৎ দ্বিতীয় শীর্ষ ক্ষমতাধর ব্যাক্তি জিগমার গ্যাব্রিয়েল বলছেন, আগামী বেশ কিছু বছর ধরে তার দেশ প্রতি বছর অন্তত ৫ লাখ করে শরণার্থীকে জায়গা দিতে পারবে। কোন অসুবিধা হবে না।
তবে একইসাথে মি গ্যাব্রিয়েল বলেন, জার্মানী অর্থনীতি শক্তিশালি বলে ইউরোপের অন্যরা কেউ দায় দায়িত্ব নেবেনা, তা হতে পারেনা।
ওদিকে শরণার্থীর দায়ভার কার কতটুকু হবে - তা নিয়ে ইউরোপ জুড়ে যখন মতভেদ তীব্রতর হচ্ছে, সে সময় সিরিয়া এবং সেই সাথে অন্যান্য কিছু দেশ থেকে আশ্রয়প্রার্থীর স্রোত অব্যাহত রয়েছে।
জাতিসংঘের হিসেবে, কেবল সোমবার মেসিডোনিয়াতে রেকর্ড ৭০০০ সিরিয় শরণার্থী হাজির হয়েছে। আর সমুদ্র পথে গ্রীসের বিভিন্ন দ্বীপে ৩০,০০০ অভিবাসী এসে হাজির হয়েছে। এবং তাদেরকে দ্রুত জার্মানীতে যেতে দেওয়ার জন্য বিক্ষোভ করেছে।
এখন পর্যন্ত জার্মানী এসব অভিবাসীদের স্বাগত জানালেও, ইউরোপের বহু দেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে।
হাঙ্গেরি তাদের সঙ্গে সার্বিয়ার সীমান্তে দ্রুত দেয়াল তুলছে। গ্রীসের একজন মন্ত্রী বলেছেন প্রতিদিন হাজার হাজার নতুন নতুন অভিবাসীর চাপে দ্বীপটি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
ওদিকে ১৬০,০০০ আশ্রয়প্রার্থীর দায় ইউরোপের কোন দেশকে কতটা নিতে হবে, তার একটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব আগামীকাল ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জ্যক্লদ ইয়ংকার ঘোষনা করবেন। তবে তার আগেই চেক রিপাবলিক, সোলাভাকিয়া, রোমানিয়াসহ কিছু দেশ সাফ জানিয়েছে তারা বাধ্যতামুলক কোনো কোটা মানবে না।


ম্যাপ: ইয়োরোপের কোন দেশে সিরিয়রা আশ্রয় চাইছে?


কয়েকদিন ধরে হাজার হাজার উদ্বাস্তু এবং অভিবাসী ইয়োরোপের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় পাবার চেষ্টা করছে।
আশ্রয় প্রার্থীদের বেশির ভাগই যুদ্ধ-বিধ্বস্ত সিরিয়া থেকে এসেছে।
আশ্রয় প্রার্থীরা সার্বিয়া এবং গ্রিস থেকে হাঙ্গেরি, তাপর অস্ট্রিয়া হয়ে জার্মানি যাবার চেষ্টা করছে।
প্রথম মানচিত্রে দেখানো হয়েছে ইয়োরোপের কোন দেশে আশ্রয়ের জন্য বেশি আবেদন পরেছে।
নিচের মানচিত্রে দেখানো হচ্ছে, যে ৪০ লক্ষেরও বেশি সিরিয় দেশত্যাগ করেছে, তারা বর্তমানে কোন দেশে আশ্রয় পেয়েছে।