সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

প্রার্থিতা প্রত্যাহার করলেন জর্জ বুশের ভাই জেব বুশ


প্রার্থিতা প্রত্যাহার করলেন জর্জ বুশের ভাই জেব বুশImage copyrightGetty
Image captionশনিবার সাউথ ক্যারোলিনায় চতুর্থ হবার পর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন জেব বুশ।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন রিপাবলিকান দলের বহুল আলোচিত প্রার্থী জেব বুশ।
এরই মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়া তিনটি রাজ্যের প্রাইমারি নির্বাচনের কোনটিতেই তিনি বিজয়ী হতে পারেননি।
শুধু তাই নয়, সাবেক ফ্লোরিডা গভর্নর জেব বুশ রিপাবলিকান দল থেকে কড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছেন বলা হচ্ছে।
শনিবার সাউথ ক্যারোলিনার প্রাইমারি নির্বাচনে চতুর্থ হয়েছেন তিনি।
আইওয়া, নিউ হ্যাম্পশায়ারের পর সাউথ ক্যারোলিনাতেও ব্যর্থ হওয়াতেই প্রেসিডেন্ট পদে না লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জেব বুশ।

প্রার্থিতা প্রত্যাহার করলেন জর্জ বুশের ভাই জেব বুশImage copyrightReuters
Image captionজেব বুশের হয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছিলেন তাঁর ভাই জর্জ ডাব্লিউ বুশ। (ফাইল ছবি)

একিদিকে তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডাব্লিউ বুশের ছেলে অন্যদিকে জর্জ ডব্লিউ বুশ এর ছোট ভাই । তার পক্ষে প্রচারণায় নেমেছিলেন ভাই জর্জ ডব্লিউ বুশও।
আর জেব বুশ আশাও করেছিলেন সাউথ ক্যারোলিনায় তিনি জয়ী হবেন।
কিন্তু এখানে ৩২ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন বিতর্কিত প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সাউথ ক্যারোলিনার ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর আবেগতাড়িত হয়ে তিনি বলেছেন, “আমি আজ আমার নির্বাচনী প্রচারণা স্থগিত করছি। আইওয়া, সাউথ ক্যারোলিনা ও নিউ হ্যাম্পশায়ারের মানুষ তাদের কথা বলে দিয়েছে এবং আমি তাদের সিদ্ধান্তকে সম্মান করি। আমি দারুণ একটি জীবন পেয়েছি। সেই জীবনে জনগণের সেবা করাই আমার উদ্দেশ্য”।

বিফ’ না ‘বাফেলো’? বিতর্ক আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে

aligarh_muslim_univ_campusImage copyrightwiki
Image captionআলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস
ভারতের ঐতিহ্যবাহী আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ক্যান্টিনে বিফ বা গোরুর মাংস পরিবেশন করা হচ্ছে – এই অভিযোগ ওঠার পর কর্তৃপক্ষ তা অস্বীকার করে জানিয়েছে ওটা আসলে ‘বাফেলো’ বা মহিষের মাংস।
আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে যে মেডিক্যাল কলেজ ক্যান্টিন আছে, তার মেনুতে ‘বিফ বিরিয়ানি’ নামে একটি পদ আছে – আর সেই মেনুর ছবি গতকাল থেকেই হোয়াটসঅ্যাপ ও সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়ে।
বিফ বা গোরুর মাংস নিষিদ্ধ করা নিয়ে গত বেশ কয়েক মাস ধরে ভারতে তুমুল বিতর্ক চলছে। নতুন করে বেশ কিছু রাজ্যে বিফ নিষিদ্ধ করা হয়েছে, উত্তরপ্রদেশে বিফ খাওয়ার মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে এক প্রৌঢ়কে পিটিয়েও মেরে ফেলেছে জনতা।
এই পরিস্থিতিতে বিফ বিরিয়ানি-র অভিযোগ নিয়ে আলিগড়েও পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। আলিগড় যে উত্তরপ্রদেশ রাজ্যে অবস্থিত – সেখানে বিফ বা গরুর মাংস আগে থেকেই নিষিদ্ধ।
আলিগড়ের বিজেপি মেয়র শকুন্তলা ভারতী তার সঙ্গীসাথীদের নিয়ে পুলিশ-প্রধানের দফতরের সামনে সঙ্গে সঙ্গে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। কট্টর হিন্দুত্ববাদী নানা সংগঠনের কর্মীরাও ওই বিক্ষোভে যোগ দেন।
তাদের দাবি ছিল, বিফ বিরিয়ানি পরিবেশন করার অভিযোগে ওই ক্যান্টিনের ঠিকাদারের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
beef_protest_india
Image captionবিফ নিষিদ্ধ করার পক্ষে-বিপক্ষে ভারতে তর্কবিতর্ক চলছে
এদিকে এই বিক্ষোভের খবর পেয়ে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও সঙ্গে সঙ্গে তদন্তের নির্দেশ দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টর এম মহসিন খান সঙ্গে সঙ্গে ওই ক্যান্টিনে ছুটে গিয়ে পরীক্ষা করেন বিফ বিরিয়ানি বস্তুটা আসলে কী!
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র রাহাত আবরার সাংবাদিকদের জানান, তারা পরীক্ষা করে দেখেছেন ওই বিরিয়ানিতে কোনও গরুর মাংসের লেশমাত্র নেই – ওখানে শুধুই বাফেলো বা মোষের মাংস ব্যবহার করা হয়ে থাকে, যা বেআইনি নয় মোটেই।
আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো নামী ও মর্যাদাবাহী একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে মিথ্যা বদনাম দিয়ে কলঙ্কিত করতেই এই ষড়যন্ত্র করা হয়েছে বলেও মি আবরার অভিযোগ করেন।
তিনি আরও বলেন, ওই ক্যান্টিনে খাবার পরিবেশনে ঠিকার মেয়াদ ফুরোচ্ছে খুব শিগগিরি। নতুন ঠিকার বরাত করায়ত্ত করার জন্যই কিছু ‘স্বার্থাণ্বেষী গোষ্ঠী’ অহেতুক এই বিতর্ক তৈরি করেছে বলে তারা ধারণা করছেন।
আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় ভারতে একটি সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেদের স্বীকৃতি বজায় রাখতে পারবে কি না তা নিয়ে আগে থেকেই বিতর্ক চলছে – এর মধ্যে এই বিফ বিতর্ক যে তাদের নতুন করে অস্বস্তিতে ফেলার চেষ্টা তাতে সন্দেহ নেই।

অমর একুশে-তে শুদ্ধ বাংলা বানান নিয়ে ভাবনা

bangladesh_language_martyrsImage copyrightBBC Bangla
Image captionভাষা শহীদদের স্মরণের দিনে সঠিক বাংলা বানানও লেখা প্রয়োজন?
বাংলাদেশে আজ পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস। বাংলাদেশের নানা প্রান্তে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন নানান স্তরের মানুষ।
বাংলাদেশে মানুষের মধ্যে ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা থাকলেও ভাষার ব্যবহারে সচেতনতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সবচেয়ে বড় একটি সমস্যা হচ্ছে বাংলা বানানে।
লেখার ক্ষেত্রে বানানের ভুলভ্রান্তিকে অনেকটা আশঙ্কাজনক হিসেবে দেখছে বাংলা একাডেমি। এর সাথে রয়েছে বানান নিয়ে বিভ্রান্তিও।
কথ্য ভাষায় উচ্চারণ এবং বিকৃতি নিয়ে যেমন বিতর্ক রয়েছে, তেমনি বানানের ক্ষেত্রে ভুলভ্রান্তিও ব্যাপক।
রাস্তার দু’পাশের সাইনবোর্ড, ব্যানার, দেয়াল-লিখন কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের বাংলা লেখার হাল দেখলেই এই দুরবস্থা চোখে পড়বে।
“বাংলা ভাষার প্রতি আমরা একটু উদাসীন হয়ে গেছি। মনে করি একটা হইলেই হইছে। ছাত্ররাও সচেতন না, আবার অনেক সময় শিক্ষকরাও দেখি আমাদের কনসিডারেসন কইরা দিতেছে। যে কারণে গাইডলাইনও পাওয়া যাচ্ছে না” বলেন একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহীদ মিনারে আসা একজন তরুণ।
bangla_signboards_spelling_dhakaImage copyrightBBC Bangla
Image captionকোনও মাথামুন্ডু নেই দোকানের সাইনবোর্ডের বানানে
তবে বানান নিয়ে সব ভুলভ্রান্তি যে শুধু মাত্র সাধারণ মানুষের মধ্যে তা-ই নয়। বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডেও দেখা যায় ভুল বানানে লেখা। যেখানে বাংলা একাডেমি প্রণীত প্রমিত বানানরীতি এখনো অনুসরণ করা হয়নি।
বাংলা একাডেমি এখন একাডেমি শব্দটি হ্রস-ই কার দিয়ে লিখলেও সরকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যেমন শিশু একাডেমি কিংবা শিল্পকলা একাডেমি কিন্তু এখনো দীর্ঘ-ঈ কার দিয়েই বানান করে যাচ্ছে। অবশ্য এক্ষেত্রে কিছু আইনগত জটিলতাও রয়েছে।
এর বাইরে বিভিন্ন দোকান বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে, ফেস্টুনে কিংবা পোস্টারে অহরহই ভুল বানান দেখা যায়।
ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব ভুল বানানে লেখাগুলো হাস্যরসের খোরাক যোগাচ্ছে।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বলছেন, বানান নিয়ে অসচতেনতার একটি বড় কারণ প্রাথমিক পর্যায়ে বাংলার প্রতি অবহেলা।
“এখানে পরিবারের একটি দায়িত্ব আছে, এরপর আছে স্কুলের দায়িত্ব এবং সবশেষে সমাজের দায়িত্ব। এই তিন ক্ষেত্রেই আমরা ব্যর্থ হচ্ছি। দুচারজন ভুল করতে পারে, কিন্তু শত শত লোক সব জায়গায় ভুল করছে, এটাতো হতে পারে না”, বলছেন মি. খান।
বানানের ক্ষেত্রে শুধু দুর্বলতাই নয়, বাংলা বানানরীতিতে পরিবর্তনের সাথেও সবাই খাপ খাইয়েও নিতে পারছে না।
store_shop_spelling_dhakaImage copyrightBBC Bangla
Image captionবাংলায় ‘ষ্টোর’ বানানটি কি শুদ্ধ?
অনেকেই ছোটবেলা থেকে স্কুল-কলেজের পাঠ্যপুস্তকে যে বানানে বাংলা লেখা শিখে এসেছে, বাংলা একাডেমির প্রমিত বানানরীতিতে তার কিছু পরিবর্তন এসেছে।
অথচ এর সাথে পরিচিত নয় অনেকেই - আর এর ফলে তৈরি হচ্ছে ব্যাপক বিভ্রান্তিও।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ বলছেন শিক্ষার বিভিন্ন পর্যায়ে একটি সুনির্দিষ্ট ভাষানীতি অনুসরণ করা না হলে এই বিভ্রান্তি থেকেই যাবে।
“স্কুল টেক্সটবুক বোর্ড, বাংলা একাডেমি এবং সরকার যদি বলে যে, এই হচ্ছে আমাদের বানানরীতি এবং স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত এই রীতিই চলবে, তাহলেই এই বিভ্রান্তি দূর করা সম্ভব হতে পারে ”, বলছেন অধ্যাপক ঘোষ।
তবে ভাষার রীতিনীতি যাই থাকুক না কেন সাধারণ মানুষ ভাষা এবং বানান শেখে মূলত চর্চার মাধ্যমে। আর সেখানেই ঘাটতি থেকে গেলে সেটি থেকে উত্তরণও কঠিন হয়ে পড়ে।
বাংলা একাডেমি এবং বিশেষজ্ঞরাও একমত, বাংলা বানান নিয়ে যে নৈরাজ্য সৃষ্টি হচ্ছে সেটিকে ঠেকাতে উপযুক্ত শিক্ষা এবং সরকারি উদ্যোগের কোনও বিকল্প নেই।