দুই তলা ভবনের কক্ষগুলো থেকে বেরিয়ে আসছে নানা রঙের আলোর রেখা, পলেস্তরা খসে পড়া দেয়ালের ইট থেকে ঝরছে রক্তিম আভা-এর মধ্যে নৃত্যরত শিল্পীরা।
শুক্রবার সন্ধ্যার পর এ চিত্র দেখা গেছে পুরান ঢাকার ফরাশগঞ্জের দেবীনিবাসে, কয়েক বছর ধরে যে বাড়ির আঙিনা জনসাধারণের জন্য নিষিদ্ধ রয়েছে।
পুরান ঢাকার প্রাচীন স্থাপনাগুলো সংরক্ষণের জন্য কাজ করা ‘আরবান স্টাডি গ্রুপের’ দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার পথ ধরে শুক্রবার দুই দিনের জন্য উন্মুক্ত হয়েছে দেবীনিবাস। সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সদরঘাটের খুব কাছে নদীমুখো দৃষ্টিনন্দন বাড়িটিতে ভ্রমণ ও আলোকসজ্জা দেখার সুযোগ পাচ্ছেন দর্শনার্থীরা।
আরবান স্টাডি গ্রুপের এই প্রচেষ্টার সহযোগী ঢাকায় ফ্রান্স দূতাবাসের সাংস্কৃতিক সংস্থা আঁলিয়স ফ্রঁসেজ ও জার্মানির সাংস্কৃতিক সংস্থা গ্যোয়টে ইন্সটিটিউট। ফ্রান্স ও জার্মানির দুই আলোকশিল্পী ক্রিস্তফ ব্রুয়াস ও ফিলিপ গাইস্ট ভবনে এই আলোকসজ্জা করছেন, যে আয়োজনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘পুরান ঢাকা আলোকায়ন-পাদপ্রদীপে ঐতিহ্য’।
এছাড়া মূল ভবনের ভিতরে ঢাকার প্রাচীন স্থাপনা ও শিল্পকর্মের আলোকচিত্র ও নৃত্যানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
শুক্রবার প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, আরবান স্টাডি গ্রুপের প্রধান নির্বাহী তাইমুর ইসলাম, ফরাসি দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন জ্যঁ-পিয়েরে ফুঁসে ও জার্মান দূতাবাসের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তাইমুর ইসলাম বলেন, “নতুন প্রজন্মের সঙ্গে পুরোনো প্রজন্মের পরিচয় করিয়ে দিতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে এসব প্রাচীন স্থাপনা। এগুলো প্রাচীন ঢাকার সংস্কৃতি, ঐতিহাসিক ঘটনা, ধর্মীয় আচারসহ অনেক ইতিহাসের ধারক।
“ইউরোপের দেশগুলো প্রাচীন স্থাপনাগুলো সংরক্ষণের মাধ্যমে তাদের ইতিহাসকে লালন করছে। কিন্তু বাংলাদেশে এখনও অনেক স্থাপনা সঠিক যত্নের অভাবে নষ্ট হচ্ছে।”
দেবীনিবাসের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেবনিবাস ও দেবীনিবাস দুই নামেই বাড়িটি পরিচিত। ১৯৮৬ সালের দিকেও সেনা সদস্যরা এই বাড়িতে থাকতেন। তাদের কাছ বাড়িটি সম্পর্কে অনেক গল্প শুনেছেন তিনি।
“উনিশ শতকের মাঝামাঝিতে কোনো এক জমিদার ভবনটি নির্মাণ করেছিলেন বলে শোনা যায়। তবে নির্মাণকারী বা তার উত্তরসূরির কোনো তথ্য জানা যায়নি।”
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, “দেবীনিবাসসহ এ ধরনের বাড়িগুলোকে টিকিয়ে রাখতে পারলে, পুরোনো প্রজন্মকে নতুন প্রজন্মের কাছে মূর্তমান করা যাবে। ঢাকায় ফ্রান্স ও জার্মানির দূতাবাসের সাথে সমন্বয় করে দেবীনিবাসে এতো সুন্দর একটি অনুষ্ঠান হচ্ছে। এর মাধ্যমে সংস্কৃতির অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের কাছে পৌঁছে যাবে।”
সরকারও পুরোনো এসব স্থাপনা টিকিয়ে রাখতে উদ্যোগী হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ফ্রান্স দূতাবাসের কর্মকর্তা জ্যঁ-পিয়েরে ফুঁসে বলেন, “প্রাচীন স্থাপনা নিয়ে এ ধরনের আয়োজন সত্যিই অনেক আনন্দের। প্রাচীন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে নতুনদের কাছে তুলে ধরতে এ ধরনের অনুষ্ঠান খুবই উপযোগী।
“আমি মনে করি, এ ধরনের অনুষ্ঠান দুই দিনব্যাপী নয়, বরং সপ্তাহব্যাপী হওয়া উচিত। কিন্তু সেটা হয়তো অনেক কঠিন ও ব্যয়বহুল হয়ে যাবে।”