বুধবার, ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

বাংলাদেশে শেখ মুজিবর রহমানের একটি ছবি ফটোশপে বিকৃত করা হয়েছে এই অভিযোগে ক্ষোভ ও বিতর্ক

চট্টগ্রামের বিভিন্ন সড়কে সম্প্রতি টানানো বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবর রহমানের ছবি সম্বলিত একটি ফেস্টুন নিয়ে শহরটিতে বিস্তর বিতর্ক চলছে।
অভিযোগ করা হচ্ছে, ওই ফেস্টুনটিতে যে ছবি রয়েছে তার চেহারা শেখ মুজিবের হলেও দেহটি তার নয়, বরঞ্চ দেহটি চট্টগ্রামের একজন সরকার দলীয় সংসদ সদস্য এম এ লতিফের।
বলা হচ্ছে, কম্পিউটারের ফটোশপ সফটওয়্যার ব্যবহার করে এই ছবি সম্পাদনার কাজ করা হয়েছে।
এই ছবি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে চট্টগ্রামের মানুষ, শহরটি গত কয়েকদিন ধরেই উত্তপ্ত হয়ে আছে।
সর্বস্তরেই এই ছবির ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
ছোট খাট দুএকটি বিক্ষোভ প্রতিবাদের ঘটনাও ঘটেছে।
তবে আজ (বুধবার) বিকেলে শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই ঘটনার প্রতিবাদে এবং এমপি লতিফের শাস্তির দাবিতে একটি বড়সড় বিক্ষোভ সমাবেশ আহ্বান করা হয়েছে বলে চট্টগ্রাম থেকে স্থানীয় সাংবাদিকেরা জানাচ্ছেন।
Image copyrightZahid Hossain
Image captionআলোচিত সেই ফেস্টুন। চিত্র সৌজন্য: জাহিদ হোসেন।
চট্টগ্রামের একজন বাসিন্দা এবং 'খেলাঘর' নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা জাহিদ হোসেনের তোলা ওই ফেস্টুনটির ছবিতে দেখা যাচ্ছে, শেখ মুজিবের একটি আপাদমস্তক ছবিরে নিচে একটি বানী লেখা।
এমপি লতিফের বয়ানে সেখানে লেখা রয়েছে "মানব সম্পদ মহাসম্পদ, এতে নেই দ্বিধা, এতেই মোদের দেশ এগুবে, বঙ্গবন্ধুর কথা।"
ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে শেখ মুজিব যথারীতি একটি পাঞ্জাবির ওপর তার বিখ্যাত 'মুজিব কোট' পরে আছেন। নিচে সাদা পাজামা এবং কালো রঙের জুতো বা স্নিকার।
জাহিদ হোসেন বলছেন, "বঙ্গবন্ধু জীবনে কোনদিন স্নিকার পরে ছবি তোলেন নি। বঙ্গবন্ধু কখনো পাকিস্তানি সালোয়ার পরে ছবি তোলেননি।"
মি. হোসেন আরো বলেন, তারা ওই ছবিটির সাথে এমপি লতিফের একটি ছবি মিলিয়ে দেখেছেন এবং দেখা গেছে মাথার অংশ বাদ দিয়ে দুটো ছবিই নিচের দিকে হুবহু একই।
"বঙ্গবন্ধুর শত্রু, সমালোচনাকারী কিংবা যুদ্ধাপরাধীরাও যে কাজ করার দুঃসাহস দেখায়নি, আমাদের এই সংসদ সদস্য সেই দু:সাহস দেখিয়েছে", বলছিলেন জাহিদ হোসেন।
এই নিয়ে ফেসবুকেও অনেকেই কথা বলছেন এবং এই ছবি সম্পাদনার নিন্দা জানাচ্ছেন।
এ নিয়ে এমপি লতিফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক চট্টগ্রাম সফর উপলক্ষে তিনি এই ফেস্টুনগুলো করিয়েছিলেন।
তবে, ফেস্টুনে যে তার শরীরের সাথে শেখ মুজিবের মাথা জুড়ে দিয়ে ছবি ব্যাবহার করা হয়েছে সেটা তার অগোচররেই হয়েছে।
তিনিও ঘটনাটি জেনেছেন তখনই, যখন প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম ঘুরে যাবারও দুদিন পরে এটা নিয়ে কথা উঠেছে।
কোনও একটি পক্ষ স্বার্থ হাসিলের জন্য একাজ করেছে এবং কারা এটা করেছে সেটা খুঁজে বের করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
"আমার বক্তব্য হচ্ছে কোন পক্ষ করেছে, কার মানুষ করেছে এটা ফাইন্ড আউট করতে হবে। এটা আমার দায়িত্ব খুঁজে বের করা", বলছিলেন এম এ লতিফ।

মধ্যপ্রাচ্য থেকে কমছে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স আয়

মধ্যপ্রাচ্যে কমে আসছে শ্রমিকদের আয়।Image copyrightAFP
Image captionমধ্যপ্রাচ্যে কমে আসছে শ্রমিকদের আয়।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ায় সেটির ধাক্কা বাংলাদেশের রেমিট্যান্স আয়ের ওপর পড়তে শুরু করেছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, সর্বশেষ ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে সে তুলনায় জানুয়ারি মাসে প্রায় ১২% কম এসেছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিমাসে রেমিট্যান্স বাবদ বাংলাদেশে প্রায় গড়ে ১.২ বিলিয়ন ডলারের আসে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বেশ উর্দ্ধমুখী ছিল।
কিন্তু গতমাস অর্থাৎ জানুয়ারি মাসে এসে সে উর্ধ্বমুখী প্রবণতায় বড় একটি ধাক্কা লাগলো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ বিরূপাক্ষ পাল জানান, বাংলাদেশের রেমিট্যান্স সবচেয়ে বেশি আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে।
এক্ষেত্রে সৌদি আরব প্রথম স্থানে এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে।
এর পরেই আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে তারপরেই আবার মধ্যপ্রাচ্যের অবস্থান।
অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির কারণে মধ্যপ্রাচ্যের কোম্পানিগুলিতে ছাঁটাইয়ের হুমকি বাড়ছে।Image copyrightGetty Images
Image captionঅভ্যন্তরীণ অর্থনীতির কারণে মধ্যপ্রাচ্যের কোম্পানিগুলিতে ছাঁটাইয়ের হুমকি বাড়ছে।
মি. পাল বলেন, তেলের দাম কমে যাওয়ায় সৌদি আরব ৯৮ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি তৈরি হয়েছে যেটি বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় অর্ধেক।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অর্থনৈতিক মন্দার বিষয়টি বাংলাদেশে রেমিট্যান্সের প্রবাহ কমে যাবার একটি কারণ বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই প্রধান অর্থনীতিবিদ।
তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বাংলাদেশের শ্রমিকরা তাদের নির্ধারিত কর্ম ঘণ্টার বাইরে যে ওভারটাইম কাজ করতেন সেটিও কমে গেছে। যে কারণে অনেকে আগের তুলনায় দেশে কম পরিমাণ টাকা পাঠাচ্ছেন।
দুবাই থেকে সাংবাদিক সাইফুর রহমান জানান, তেলের দাম কমে যাবার কারণে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনেক ছোট-খাটো কোম্পানি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে অনেকেই চাকরি হারাবে বলে মি: রহমান বলেন।
তিনি বলেন, “তেলের দাম কতদিন নিচে থাকে সেটা দেখার বিষয়। কিছু কোম্পানি হয়তো টিকে থাকবে। কিন্তু এই প্রবণতা দীর্ঘায়িত হলে হয়তো বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে।”
তেলের দাম কমে যাওয়ায় রেমিট্যাটেন্সের প্রবাহ কমলেও বাংলাদেশ আরেকটি উপায়ে লাভবান হচ্ছে।
তেল আমদানি বাবদ অনেক ডলার সাশ্রয় হচ্ছে।
রেমিট্যান্স কমে যে ক্ষতি হচ্ছে সেটি পুষিয়ে যাচ্ছে তেল আমদানি থেকে অর্থ সাশ্রয় করে।
বিরূপাক্ষ পাল বলেন, যোগ-বিয়োগে সমান হলেও বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স আসার বাড়তি গুরুত্ব রয়েছে।
তিনি বলেন, “রেমিট্যান্সটা যখন আসে সেটা গ্রামে-গঞ্জে চলে যায়। রেমিট্যান্স কমে আসুক সেটা আমরা চাই না। কারণ এটা গ্রামীণ অর্থনীতিতে ভোগ প্রবণতার ব্যাপক শক্তি বাড়ায়।”

বাংলাদেশে কুমারী মা বা স্বীকৃতিহীন শিশুর আশ্রয় কোথায়?

Image captionবাংলাদেশের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে বলা রয়েছে, ধর্ষণের ফলে যদি কারো কোনও সন্তান হয়ে থাকে তাহলে তার দায়িত্ব রাষ্ট্র নেবে। কিন্তু এটা অনেক কঠিন এবং দীর্ঘ একটা প্রক্রিয়া, বলছেন মানবাধিকার কর্মীরা। (ছবিটি প্রতিকী)
বাংলাদেশে কোনও অবিবাহিত মেয়ে যদি সন্তানের জন্ম দেন তাহলে তার এবং তার সেই সন্তানের আশ্রয় কোথায় হবে, এটা এখন একটা বিরাট প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যদিও দেশটির নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সুস্পষ্টভাবে বলা রয়েছে, ধর্ষণের ফলে যদি কারো কোনও সন্তান হয়ে থাকে তাহলে তার দায়িত্ব রাষ্ট্রই নেবে।
কিন্তু এটাকে অনেক কঠিন এবং দীর্ঘ একটা প্রক্রিয়া বলে বর্ণনা করছেন মানবাধিকার সংস্থা আইন ও শালিস কেন্দ্রের কর্মকর্তা নীনা গোস্বামী।
এদেরকে সহায়তা বা আশ্রয় দেবার জন্যও যথাযথ কোনও ব্যবস্থাও বাংলাদেশে নেই বলে উল্লেখ করেন মিজ গোস্বামী।
বাংলাদেশে সরকারের ব্যবস্থাপনায় বেশ কিছু এতিমখানা আছে উল্লেখ করে মিজ গোস্বামী বলেন, যে সন্তান স্বীকৃতি পাচ্ছে না তার বাবা কে, তার জন্য এখনো পর্যন্ত কোনও রাষ্ট্রীয় কাঠামোই কিন্তু গড়ে উঠেনি।
প্রসঙ্গটি সামনে আসে গত সোমবার ঢাকায় এক কুমারী মাতা তার নবজাতককে ছয় তলা ভবনের উপর থেকে ছুড়ে ফেলবার ঘটনা ঘটানোর পর।
ওই শিশুটি অবশ্য বিস্ময়করভাবে বেঁচে যায়।
পুলিশের বরাতে জানা যাচ্ছে, কুমারী এই মেয়েটিকে তার এক আত্মীয় ধর্ষণ করেছিল যার ফলশ্রুতিতে সে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে।
তাই সন্তানটি প্রসব করবার পর মেয়েটি সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হওয়া এড়াতেই শিশুটিকে জানালা দিয়ে ছুড়ে ফেলে।
স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, ওই কিশোরীটি মনে করেছিল, এই সন্তানটি জন্ম দেয়ার জন্য বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থা তাকেই বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে।
নীনা গোস্বামী বলছেন, “পনের বছরের একটি শিশু যখন মা হয়ে যায়, সে কি জানে মায়ের মমত্ববোধটা কি? শরীর এবং মনে মা হওয়ার জন্য যে পরিপক্বতা আসার কথা সেটাই তার আসেনি। তার আগেই সে চাপিয়ে দেয়া মা হয়ে গেছে”।
“এই সমাজে থাকতে হলে যে পরিচয়টা তাকে দিতে হবে তার চাইতে হয়তো এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়াটাই সে ভাল মনে করে এ ধরনের একটা পথ বেছে নিয়েছে”।
এর আগে গত বছরও একই রকম একটি ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে ঢাকায়।
সেবার অবশ্য বস্তায় মোড়া একটি শিশুকে একটি ডাস্টবিনে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।
শিশুটিকে কুকুর কামড়ে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলেছিল।
ওই শিশুটির মা কিংবা বাবার খোঁজ আজও মেলেনি।
তবে নীনা গোস্বামী বলছেন, সামাজিক কারণে শিশু ফেলে দেয়ার ঘটনা ঘটবার নজির বাংলাদেশে থাকলেও এটা খুব বেশী দেখা যায় না।