মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অনিয়ম ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ‘অমূলক ও ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)। আজ রোববার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানায় বিএমএ। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা রাজপথে আন্দোলন করছেন। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও সত্য উদ্ঘাটনে বিএমএর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। তাঁরা অভিযোগের পক্ষে সুনির্দিষ্ট কোনো দালিলিক তথ্য-প্রমাণ বিএমএর নিকট দাখিল করতে পারেন নাই। ঘটনা পর্যালোচনা করে প্রতীয়মান হয় যে, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অনিয়ম ও প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়াকে কেন্দ্র করে যে আন্দোলন হয়েছে বা হচ্ছে তার কোনো নৈতিক ও সুনির্দিষ্ট ভিত্তি নাই।’এর আগে ১৯ অক্টোবর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ এনে আন্দোলন করা শিক্ষার্থী, তাদের অভিভাবক, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে একটি মতবিনিময় করে বিএমএ। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অভিযোগকারীদের ২০ আগস্টের মধ্যে প্রশ্ন ফাঁসের তথ্য প্রমাণ উপস্থিত করার কথা ছিল। বিএমএর দাবি, ওই দিন সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ কেউ উপস্থিত করতে পারেনি। পরে তথ্য প্রমাণ উপস্থাপনের জন্য একদিন সময় বৃদ্ধি করে তা ২১ অক্টোবর করা হয়। কিন্তু সেদিনও কেউ কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি। এ সব বিবেচনা করে বিএমএ ভর্তি পরীক্ষায় অনিয়ম ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগটি ‘ভিত্তিহীন ও অমূলক’ বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে। prothomalo
আফগানদের লক্ষ্যটা অনেক বড়। ছবি: এএফপি। টেস্ট খেলুড়ে দলের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়। আইসিসির কোনো সহযোগী দেশই এর আগে এই কীর্তি গড়ে দেখাতে পারেনি। যেটা করল আফগানিস্তান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অবিশ্বাস্য দ্রুততায় উত্থান হচ্ছে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটির। আরও ওপরে চোখ আফগানদের। স্বপ্ন আরও উঁচুতে বেঁধে রাখা।
কাল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ‘ঐতিহাসিক’ সিরিজ জয়ের পর এবার টেস্টের অভিজাত আঙিনায় পা রাখতে চায় তারা। আফগানিস্তানের টিম ম্যানেজার শির আগা হামকার জানিয়েছেন, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই সিরিজ জয় আফগানিস্তানকে ক্রিকেটকে অন্য উচ্চতাতেই প্রতিষ্ঠিত করেছে। এমনিতেই আফগান ক্রিকেটারদের ‘বীর’ হিসেবেই দেখে দেশের সাধারণ মানুষ। এই সিরিজ জয়ের পর খেলোয়াড়দের মর্যাদাটা যে আকাশ ছুঁয়ে যাচ্ছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই আগা হামকারের। ইএসপিএন ক্রিকইনফোকে তিনি জানিয়েছেন, দেশে ফেরার পর আফগান ক্রিকেটারদের বীরের সংবর্ধনা দেওয়ার সব প্রস্তুতিই নাকি সম্পন্ন করা হয়েছে, ‘ভাবতেও পারবেন না, কী অসাধারণ সংবর্ধনা অপেক্ষা করে আছে পুরো দলের জন্য। আমাদের মানুষের কাছে ক্রিকেটাররা এমনিতেই বীরের মর্যাদা পেয়ে আসছেন। ক্লাব ক্রিকেট বলুন কিংবা অনুশীলন সাধারণ মানুষ খেলোয়াড়দের অনুসরণ করে প্রতিটি পদক্ষেপেই। ভাবতেই পারছি না তাঁরা আমাদের কীভাবে স্বাগত জানাবে!’
আফগান দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় মোহাম্মদ নবী ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি পেয়েছেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজেই। ব্যাটিং অর্ডারে নিজেকে ওপরে তুলে পাঁচ ম্যাচে ২২৩ রান করে দেশের জয়ে তিনি রেখেছেন অন্য অবদান। নবীর যেন এই সাফল্য বিশ্বাসই হচ্ছে না। বলেছেন, ভাবা যায় ২০০ বছরের পুরোনো ক্রিকেটে আফগানিস্তানই একমাত্র সহযোগী সদস্য দেশ যারা টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছে! নবী অবশ্য অসম্ভব কৃতজ্ঞ দলের খণ্ডকালীন কোচ, সাবেক পাকিস্তানি ‘গ্রেট’ ইনজামাম-উল-হকের প্রতি। নবী জানিয়েছেন, ফর্ম হারিয়ে ধুঁকতে থাকার মুহূর্তে ইনজামামই তাঁর প্রতি আস্থা রেখে তাঁকে ৩ নম্বরে ব্যাট করতে পাঠিয়েছিলেন। বাকিটা তো ইতিহাসই।
ইনজামামের ছোঁয়ায় দলের টপ অর্ডারের মানসিকতাই বদলে গিয়েছিল। নবী মনে করেন, এই ব্যাপারটাই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সাফল্য ক্ষুধাটা যেন আরও বাড়িয়ে দিয়েছে আফগানিস্তানের। দলের ম্যানেজার আগা হামকার নিজেই জানিয়েছেন সেই লক্ষ্যের কথাটা। কেবল জিম্বাবুয়ে কেন, টেস্ট খেলুড়ে অন্যান্য দেশের বিপক্ষে সিরিজ নিজেদের করার প্রচেষ্টাও চালিয়ে যেতে চান তিনি। আফগানিস্তানের মূল স্বপ্নটা কিন্তু আরও বিস্তৃত। সেটা অবশ্যই টেস্ট মর্যাদা। হামকার খুব ভালো করেই জানেন, টেস্ট মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হতে না পারলে লাভ হবে না কিছুই। ক্রিকেটকে এগিয়ে নিতেই যে টেস্ট মর্যাদাটা খুব জরুরি আফগানদের জন্য।
এই শটেই রেকর্ড করলেন আমলা। ছবি: এএফপি। শ্মশ্রুমণ্ডিত শান্তশিষ্ট এক ব্যাটসম্যান। যখন ব্যাটিং করেন, মনে হয় যেন কোনো শিল্পী ক্যানভাসে তুলির আঁচড় দিচ্ছে। খুনে, মারকুটে—এসব ঠিক তাঁর সঙ্গে যায় না। অথচ ওয়ানডে ক্রিকেটে ইনিংস প্রতি দ্রুততম রান তোলার রেকর্ডগুলো একের পর এক নিজের করে নিচ্ছেন হাশিম আমলাই!
আজ মুম্বাইয়ে সবচেয়ে কম ইনিংসে ৬ হাজার রান তোলার রেকর্ডটিও নিজের নামে লেখালেন এই দক্ষিণ আফ্রিকান। এই রেকর্ড থেকে যাঁকে সরিয়ে দিলেন, সেই বিরাট কোহলি মাঠেই সাক্ষী হয়ে থাকলেন আমলার কীর্তির। নিজের ব্যাটিং স্টাইলের মতোই ওয়ানডে ক্যারিয়ারটাও ধীরে সুস্থে শুরু করেছিলেন। ১০০০ রান তুলতে ২৪টি ইনিংস লেগেছিল আমলার। এ জন্যই দ্রুততম ১০০০ রানের রেকর্ডটি হয়তো নিজের করে নিতে পারেননি। রেকর্ডটি ভিভ রিচার্ডসেরই রয়ে গেছে। কিন্তু এর পর থেকেই এগোচ্ছেন, আর প্রতিটি হাজার রানের রেকর্ড নিজের কবজায় নিচ্ছেন আমলা।
জহির আব্বাসের দুই হাজারের রেকর্ডটি দিয়ে শুরু করেছিলেন। এরপর টানা তিনবার রিচার্ডসের রেকর্ড ভেঙেছেন। তিন-চার-পাঁচ হাজারে আব্বাসকে অতীত করে দেওয়ার পর এবার ছয় হাজারে দুইয়ে ঠেলে দিলেন কোহলিকে। মাত্র এক বছর টিকল কোহলির রেকর্ড। গত বছরই রিচার্ডসের নাম মুছে দিয়ে নিজের নাম লিখিয়েছিলেন এই ভারতীয় ব্যাটসম্যান। রিচার্ডস ২৫ বছর ধরে এই রেকর্ড অক্ষত রেখেছিলেন, কোহলি রাখতে পারলেন ১১ মাস। সেটিও ১৩টি ইনিংস কম খেলে! ১২৬ ম্যাচে ১২৩ ইনিংস ব্যাট করেই ছয় হাজারের মাইলফলক পেরোলেন আমলা। তাও গত কিছুদিন ধরে ফর্মটা খারাপ যাচ্ছে। গত ১৫ ইনিংসে মাত্র ৩৯২ রান পেয়েছেন। কেবল একটি সেঞ্চুরি, ফিফটি নেই।
ভারতের বিপক্ষে সিরিজ শুরুর আগেই বোঝা যাচ্ছিল রেকর্ডটি নিজের করে নেবেন আমলা। ৬ হাজার থেকে মাত্র ৮১ রান দূরে সিরিজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু পড়তি ফর্মের কবলে পরে সিরিজের শেষ ম্যাচ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হলো। আজও রেকর্ড থেকে ১৫ রান দূরে থেকে ব্যাট করতে নেমেছিলেন। চতুর্থ ওভারে মোহিত শর্মার বলে পুল করে ছয় হাজারে পা। তবে মাত্র ২৩ রান করে আউট হয়ে যাওয়ায় উপলক্ষটা উদ্যাপন করতে পারলেন না ঠিক ভাবে। ৩২ বছর বয়সী আমলার পরবর্তী লক্ষ্য নিশ্চয়ই দ্রুততম ৭০০০ রানের রেকর্ডটি ভাঙা। এটি এখন সতীর্থ এবি ডি ভিলিয়ার্সের দখলে। ডি ভিলিয়ার্সকে ৭ হাজার ছুঁতে ১৬৬টি ইনিংস খেলতে হয়েছিল। আমলা হাতে পাচ্ছেন ৪২টি ইনিংস।
ভারতকে রানে চাপা দেওয়ার পথে ডু প্লেসি-ডি ভিলিয়ার্স। ছবি: এএফপিমুম্বাইয়ে আজ ঝড়ের পূর্বাভাস ছিল। বৃষ্টি, সঙ্গে ঝোড়ো বাতাস। কিন্তু সন্ধ্যা-রাতের ঝড়টা দুপুর থেকেই শুরু হবে, আরব সাগরের বদলে উৎপত্তিস্থল হবে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে, কে জানত! ১৩ বলে ২৩। হাশিম আমলার ব্যাটেই ছিল সেই ঝড়ের পূর্বাভাস। সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে শুরু থেকে একটাই রণকৌশল নিয়ে নেমেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। কুইন্টন ডি কক ভারতীয় বোলারদের কচু কাটা করলেন। মাঝখানে ফ্যাফ ডু প্লেসি, শেষে এবি ডি ভিলিয়ার্স। ওয়ানডে ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো এক ইনিংসে তিন ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরি। তাতে চেপে ৪৩৮ রানের পাহাড়ে উঠে ভারতের মাটিতে প্রথম বারের সিরিজ জেতার অপেক্ষায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয়বারের মতো চার শ রান উঠল। তিন ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরির আগের কীর্তির দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৪৩৯ করেছিল প্রোটিয়ারা। আজ করল এক কম। এই ‘৪৩৮’ আবার দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য একটা আনন্দের প্রতিশব্দও হয়ে আছে। জোহানেসবার্গে ৪৩৪ করেও অস্ট্রেলিয়া হেরে গিয়েছিল প্রোটিয়ারা পরে ব্যাট করে ৪৩৮ করায়। এমন ‘ভৌতিক’ ঘটনা রোজ তো আর ঘটে না। ভারতের তাই সিরিজ জেতার আশা না করাই বোধ হয় ভালো।
দিনের শুরুতেই সবচেয়ে কম ইনিংসে ৬ হাজার রান তোলার রেকর্ড গড়েছেন আমলা। ব্যক্তিগত এই অর্জনের পর অবশ্য খুব বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি অবশ্য। দলীয় ৩৩ রানের মাথায় মোহিত শর্মার বলে ধোনির হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তিনি। আমলার আউটে যদি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেও থাকে ভারতীয় দল, তবে সেই স্বস্তি খুব দ্রুতই উবে গেছে। ডি কক যে রুদ্রমূর্তিতে হাজির হওয়ার জন্য আজকের দিনটিকেই বেছে নিলেন। এক প্রান্তে ডু প্লেসিকে দর্শক বানিয়ে রান তুললেন ঝড়ের গতিতে। মাত্র ৭৮ বলে সেঞ্চুরি। ২৭তম ওভারে দলীয় ১৮৭ রানে সুরেশ রায়নার বলে যখন আউট হয়ে ফিরে যাচ্ছেন, তখন ডি ককের নামের পাশে ১০৯। ৮৭ বলের ইনিংসটায় ১৭টি চার এবং ১টি ছক্কা। কিন্তু এই ওপেনারকে আউট করেই যেন খাল কেটে হাঙর ডেকে আনল ভারত। উইকেটে এলেন অধিনায়ক ডি ভিলিয়ার্স।
এর পর সময়টা রীতিমতো দুঃস্বপ্নের মতো পার করেছে ভারতীয় বোলাররা। এর আগ পর্যন্ত খানিকটা রয়ে-সয়ে ব্যাট করছিলেন ডু প্লেসি। অধিনায়ককে পাওয়ার পর ভাবলেন, দায়িত্বটা ক্যাপটেনই নিক। আমি বরং মেরেই খেলি। হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট নিয়ে মাঠ ছাড়ার আগে অধিনায়কের সঙ্গে ১৬৪ রানের জুটি গড়েছেন মাত্র ১০৩ বলে। সব মিলিয়ে ৯টি চার এবং ৬টি ছক্কায় সাজানো ইনিংসটা থেমেছে ১৩৩ রানে। অন্যদিকে নিজের মতো করে বোলারদের শাসন করে যাচ্ছিলেন ডি ভিলিয়ার্স। দলীয় ৩৫১ রানে ডু প্লেসি মাঠ থেকে বেরিয়ে গেলেও ডি ভিলিয়ার্স ঠিকই সমানে ব্যাট চালিয়ে গেছেন। ভারতীয় বোলারদের একটু ‘রেহাই’ দিয়ে ৪৭তম ওভারে আউট হওয়ার আগে ১১৯ রান করলেন। ৬১ বলের এই টর্নেডোর পথে ১১টি ছক্কা মেরেছেন। অবশ্য চার ছিল মাত্র ৩টি। ব্যক্তিগত রেকর্ড দিয়ে দিনের শুরু করা দক্ষিণ আফ্রিকা শেষ করল দলীয় অনেক রেকর্ড দিয়ে। ভারতের মাটিতেই এটি যেকোনো দলের সর্বোচ্চ স্কোর, সব মিলিয়ে ওয়ানডে ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ। ডি কক, ডু প্লেসি আর ডি ভিলিয়ার্সের সেঞ্চুরি নিয়ে এত কথা বলায় ভুবনেশ্বর কুমার ‘আপত্তি’ করতে পারেন। বলতে পারেন, আমিও তো সেঞ্চুরি করলাম! তা অবশ্য তিনি করেছেন। ১০ ওভারে দিয়েছেন ১০৬ রান!
রাহানের আউটের পর স্টেইনের উল্লাস- পুরো ম্যাচের প্রতীকী ছবি । ছবি: এএফপি
এমন এক ম্যাচ, যেটি দেখতে দেখতে রেকর্ড বইয়ের পাতা উল্টাতে হয়েছে বেশ কয়েকবার। প্রথম ভাগে এত এত সব রেকর্ড যে ম্যাচে, তার শেষটাও যে রেকর্ড গড়েই হবে, তা আর আশ্চর্য কি! আজ সিরিজ নির্ধারণী খেলায় দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ২১৪ রানে হেরেছে স্বাগতিক ভারতীয় দল। আর এই জয় দিয়েই ভারতের মাটিতে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে সিরিজ জিতে নিল প্রোটিয়ারা। মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে রানের বন্যা বইয়ে দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যানরা। তিন-তিনজন ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরির ওপর ভর করে ৪৩৮ রানের পাহাড়সম স্কোর। জবাব দিতে নেমে প্রথম থেকেই পিছিয়ে পড়েছিল ভারত। স্কোরবোর্ডে ২২ রান উঠতেই আউট রোহিত শর্মা। কিছুক্ষণ পরেই ফিরে যান বিরাট কোহলিও। তৃতীয় উইকেট জুটিটাই যা একটু আশা দেখাচ্ছিল ভারতীয় দলকে। শিখর ধাওয়ান ও অজিঙ্কা রাহানের ১১২ রানের জুটিতে অসম্ভবকে সম্ভব করার স্বপ্নও উঁকি দিচ্ছিল দর্শকদের মনে। কিন্তু তখনই মঞ্চে আবির্ভাব কাগিসো রাবাদার। ধাওয়ানের ইনিংসটিকে ৬০ রানেই থামিয়ে দেন তিনি। অবশ্য এই আউটে রাবাদার চেয়ে হাশিম আমলার কৃতিত্বই বেশি। ঝাঁপিয়ে পড়ে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নিয়েছেন আমলা। কিছুক্ষণ পরেই সুরেশ রায়নার আউটের পর ভারতের হার একরকম নিশ্চিত হয়ে যায়। এর পরও লড়ে গেছেন রাহানে। অন্য প্রান্তে ধোনি থাকায় স্টেডিয়াম ভর্তি দর্শকেরাও আশা ছাড়েনি। মাত্র ২৫ ওভারে ১৮০ রান তুলে রান রেটের হিসাবেও লড়াইয়ে ছিল ভারত। কিন্তু দলকে ১৮৫ রানে রেখে ডেল স্টেইনের বলে আউট হয়ে যান রাহানে। ৯ চার ও ৩ ছক্কায় সাজানো ৫৮ বলে ৮৭ রানের স্বভাব বিরুদ্ধ এক ইনিংস খেলে যখন ফিরছেন রাহানে, তখন কেবল একটি প্রশ্নের উত্তরই বাকি ছিল—কত রানে হারছে ভারত? উত্তর পেতে সময় লাগেনি। রাহানে আউট হওয়ার পর দশ ওভারও টিকতে পারেনি ভারতীয় দল। ১৪ ওভার বাকি থাকতেই ম্যাচ শেষ। ২২৪ রানে অলআউট হয়ে ২১৪ রানে হার—দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ভারতের সবচেয়ে বড় পরাজয়। আরেকটি রেকর্ড! রেকর্ডময় এক ম্যাচের আদর্শ পরিণতিই বটে।
স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় খাতের আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি আর্থিক, অ-আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক বিবরণ ও নিরীক্ষণ প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে হচ্ছে না বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। গতকাল রোববার রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) রিপোর্ট অন বাংলাদেশ অবজারভেশনস অব স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড কোডস ঃ একাউন্টিং এন্ড অডিটিং’ শীর্ষক কর্মশালায় বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। কর্মশালাটির আয়োজন করে বিশ্বব্যাংক ও ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড একাউন্টস অব বাংলাদেশ। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ফাইন্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট স্পেশালিস্ট সুরাইয়া জান্নাত। প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান। এসময় বক্তব্য রাখেন, বিশ্বব্যাংকের প্র্যাকটিস ডিরেক্টর সামিয়া এম সাদেক, ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর ক্রিস্টান ই কিমস, আইসিএবি-এর সভাপিত মাসিহ মালিক চৌধুরী প্রমুখ। প্রতিবেদন তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় খাতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি আর্থিক, অ-আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক বিবরণ ও নিরীক্ষণ প্রতিবেদন ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্সিয়াল স্ট্যান্ডার্ডস (আইএফআরএস) এবং ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ডস অন অডিটিং অনুযায়ী হচ্ছে না। সুরাইয়া বলেন, বেসরকারি বিনিয়োগের জন্য ব্যাংকিং খাত প্রধান উৎস। কিন্তু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক বিবরণ ও নিরীক্ষণ প্রতিবেদন সঠিক হচ্ছে কি না তা বাংলাদেশ ব্যাংক ও ব্যাংকিং বিভাগ তদারকি করছে না। বেসরকরি ব্যাংকগুলো আর্থিক বিবরণ ও নিরীক্ষণ প্রতিবেদন প্রকাশ করলেও তা আন্তর্জাতিক মানের নয়। অপরদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর অবস্থা আরো খারাপ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) লোকবলের অভাবে এবং আইনি জটিলতার জন্য সঠিক সেবা দিতে পারছে না। পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত কোম্পানিগুলো যে আর্থিক প্রতিবেদন দিচ্ছে তা মানসম্মত এবং আইন মেনে চলছে কি না তা সঠিকভাবে তদারকি করতে পারছে না বিএসইসি। প্রতিবেদনে জানানো হয়, একাউন্টিং ও অডিটিং সেকশনকে উন্নত করার জন্য বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশে ২০০৩ সাল থেকে কাজ করছে। অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, সময়টা এখন চমৎকার। সারাদেশে উন্নয়নের হাওয়া বইছে। তাই আসুন সবাই এক সঙ্গে কাজ করি। আমাদের মধ্যে ছোটখাট সমস্যা, মতভেদ থাকতেই পারে। অতীতে যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। এখন সব ভুলে সবাই একসঙ্গে দেশের উন্নয়নে শরিক হই। জাতি হিসেবে আমাদের পেছনের অবদানকে স্বীকার করতে হবে, তা না হলে আমরা এগিয়ে যেতে পারবো না। daily sangram
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় শিয়া সম্প্রদায়ের মূল ধর্মীয় স্থাপনা হোসাইনী দালান ইমামবাড়ায় বোমা হামলার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের হয়েছে।
ঐ হামলার ঘটনায় ইসলামিক স্টেটের পক্ষ থেকে দায় স্বীকার করার দাবি করা হলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিবিসিকে বলেছেন যে আইএস নয়, বরং ষড়যন্ত্রমূলকভাবে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরী করতে শিয়া স্থাপনায় বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে।
এই ঘটনার পর সরকার বিরোধী বেশ কিছু নেতা-কর্মীকে গ্রেফতারের পর বিএনপি’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে সরকার ব্যর্থতা ঢাকতে বিরোধীদের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছে।
আশুরা উপলক্ষ্যে শিয়া সম্প্রদায়ের তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় ঢাকার হোসাইনী দালানে হামলার ঘটনায় চকবাজার থানায় পুলিশের পক্ষ থেকে এদিন সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হয়।
মামলায় আসামী করা হয়েছে অজ্ঞাত পরিচয়ধারীদের। যদিও ঘটনার পর পুলিশ চারজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে, এই মামলায় তাদের এখনও গ্রেফতার দেখানো হয়নি।
পুলিশ বলছে শুক্রবার রাতের ঐ হামলায় হাতে তৈরী গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়েছিল, আর এতে মারা যান এক কিশোর এবং আহত হন অন্তত ৫০ জন।
তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বিবিসিকে বলেছেন, তাঁরা আত্মবিশ্বাসী যে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হবে।
মধ্যপ্রাচ্য-ভিত্তিক ইসলামিক স্টেট এই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে, ওয়েব-ভিত্তিক নজরদারী প্রতিষ্ঠান সাইট এমন খবর দিলেও সরকার অবশ্য এই দাবিকে আমলে নিতে একেবারেই আগ্রহী নয়।
এর আগে বাংলাদেশে বিদেশী নাগরিক হত্যার ঘটনায় আইএস-এর পক্ষ থেকে একই রকমভাবে দায়িত্ব স্বীকার করা হলেও সরকার তা নাকচ করে দিয়েছিল।
সরকার কেন আইএস-এর কথিত এই দাবিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না, তা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘ইসলামিক স্টেট এখানে নিছক একটা প্রোপাগান্ডা। বাংলাদেশে আই এস-এর কোনও অস্তিত্ত্ব নেই!’’
‘‘বাংলাদেশে আসলে যারাই আই এস, তারাই জেএমবি, তারাই হুজি, তারাই আবার অনসারুল্লাহ্ বাংলা টিম’’, বলেন আসাদুজ্জামান খান কামাল।
শিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলার পরপরই পুলিশ বাহিনীর প্রধান এ কে এম শহীদুল হক বলেছিলেন যে বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা চায় না এবং দেশের স্বাধীনতা চায়নি এমন কোন গোষ্ঠী এই হামলা চালিয়েছে বলে তাদের বিশ্বাস।
এরপর দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি এবং দলটির রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতে ইসলামীর বেশ কিছু নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। এদেরকে গ্রেফতারের কারণ হিসেবে পুলিশ নাশকতার অভিযোগ করছে।
তবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মনে করছেন, সরকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যর্থতা ঢাকার জন্যে বিরোধীদের ওপর দোষ চাপাচ্ছে।
মি. আলমগীর আরো বলছেন, যে কোন ঘটনার জন্যে সরকার বিরোধীদের দায়ী করার ফলে আসল অপরাধীরা পার পেয়ে যেতে পারে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, সাম্প্রতিক কোন হত্যাকাণ্ডে তাঁর দল কোনভাবেই জড়িত নয়, বরং দলটি ক্ষমতায় থাকতে জঙ্গী কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিল। ওয়ালিউর রহমান মিরাজবিবিসি বাংলা, ঢাকা
নিহত সানজুর ছবি হাতে তুলে ধরে দেখাচ্ছেন তার বাবা মোহাম্মদ নাসির
ঢাকায় শিয়া সম্প্রদায়ের তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় হোসেনি দালানে হামলায় নিহত কিশোর সাজ্জাদ হোসেন সানজুর বাড়িতে এখনো স্তব্ধ তার পরিবার। শিয়াদের মিছিলে হামলা হলেও নিহত সাজ্জাদের পরিবার কিন্তু সুন্নি।
সপ্তম শ্রেনীতে পড়ত ১৫ বছর বয়সী সানজু। তার সহপাঠী, শিক্ষক ও পাড়া প্রতিবেশীরা রবিবারও সমবেদনা জানাতে বাড়িতে এসে ভিড় করেছেন।
তার পরিবার বলছে, হোসেনি দালানের ভেতরে এমন ঘটনা বাংলাদেশের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। এর পেছনে জড়িতদের বিচার না হলে তা হবে সরকারের ব্যর্থতা।
কর্তৃপক্ষ তাদের হয়রানি করছে বলেও অভিযোগ করছে নিহত সাজ্জাদ হোসেন সানজুর পরিবার, যারা বসবাস করেন ঢাকার কাছেই কেরানিগঞ্জে।
কেরানিগঞ্জের শুভাঢ্যা এলাকায় যে বাড়িতে সানজুর পরিবারের বাস সেখানে গিয়ে দেখা গেলো মেঝের উপর গোল হয়ে বসে আছেন সবাই।
কোনও কথা নেই কারো মুখে। মা রাশেদা বলছিলেন পাচ ভাই দুবোনের মধ্যে সব চাইতে ছোট সানজু ক্রিকেট খেলা নিয়ে খুব আগ্রহী ছিল।
স্থানীয় চরাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেনীর ছাত্র ছিলো সানজু। কদিন ধরে স্কুলের ছুটি চলছিল। মা রাশেদা জানালেন কয়েকদিন ধরেই তাই সে তাজিয়ার মিছিলে যাবার ব্যাপারে খুব ইচ্ছা প্রকাশ করছিল।
বোমা হামলার ঘটনায় এই পরিবারের আরো তিন জন আহত হয়েছেন। সানজুর ভাবি সুমি বেগম তাদের একজন।
তিনি বলছিলেন, ঘটনার পর সানজুকে নিয়ে যখন হাসপাতালে ছুটছিলেন, তখন কারো সাহায্য পাননি তারা।
মাত্র কদিন আগেই তোলা সানজুর একটি ফটোগ্রাফ হাতে নিয়ে ঘরের এক কোনায় বসে ছিলেন বাবা মোহাম্মদ নাসির। সেটি সবাইকে দেখাচ্ছিলেন তিনি।
মি নাসের বলছিলেন, তারা সুন্নি মুসলিম হলেও শিয়া সম্প্রদায়ের এই আয়োজনে নিয়মিত অংশ নিতেন।
হোসেনি দালানের ভেতরে ঐতিহ্যবাহী এই আয়োজনে এমন ঘটনাকে বাংলাদেশের জন্য এক দুর্ভাগ্য বলে অভিহিত করলেন মোহাম্মদ নাসির।
তিনি আরো বলছেন, এ ঘটনার সাথে জড়িতদের ধরে বিচারের আওতায় না আনা গেলে তা হবে সরকারের ব্যার্থতা।
ঘটনার পর থেকেই বারবার পুলিশ ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ডাক পড়ছে এই পরিবারের সদস্যদের।
মি নাসির বলছেন, কর্তৃপক্ষের কেউ এখনও আসেননি তার বাড়িতে, বরং তাদেরকেই বারবার ডাকা হচ্ছে। অনেক রাত অবধি থানায় বসিয়ে রাখা হয়েছে।
এই প্রতিবেদকের সামনেই জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ফোন পান মি. নাসির। তিনি বলছিলেন, ফোনে তাকে বলা হলো জাতীয় পরিচয় পত্র নিয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসকের অফিসে যেতে।
“আমারে বলতেছে তাড়াতাড়ি আসেন নাইলে কিন্তু পাইবেন না। আমি জিজ্ঞেস করলাম কী পামু না। তখন ওরা বললো মুরুব্বি একটু আসেন তারপর কথা বলি। দ্যাখেন যার ছেলে হারায় তার তো এমনিতেই অবস্থা অন্য রকম থাকে। মনে করেন পুলিশ বা অন্যরা তারে নিয়া যদি টানা হেঁচড়া করেন, বারবার ডাকেন, পেরেশানি করেন, তাইলে তো ঐ মানুষটারে মাইরা ফালানের অবস্থা!”
এই বিষয়টিকে শোক সন্তপ্ত একটি পরিবারের জন্য চরম এক হয়রানি বলেও মনে করছেন তিনি।
তবে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এখন কিছুই চান না সাজ্জাদ হোসেন সানজুর পরিবার। শুধু ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুত সনাক্ত করে বিচারের দাবি করছেন তারা। শাহনাজ পারভীন বিবিসি বাংলা, ঢাকা
সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার, যিনি সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাতে জর্জ বুশের প্রধান সঙ্গী ছিলেন, স্বীকার করেছেন ইরাকে সামরিক হামলার কারণেই ইসলামিক স্টেটের উদয় হয়েছে।
কিন্তু মার্কিন টিভি নেটওয়ার্ক সিএনএনের সাথে এক সাক্ষাৎকারে ইরাক যুদ্ধের জন্য তিনি কোনও রকম অনুশোচনা বা দুঃখ প্রকাশ করেননি।
ইরাক যুদ্ধের পক্ষে সংসদের সমর্থন আদায় করতে তিনি মনগড়া তথ্য দিয়েছিলেন কি না, তা নিয়ে মি ব্লেয়ারের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।
ওই সাক্ষাৎকারে মি ব্লেয়ার বলেছেন, সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতা থেকে সরাতে যারা জড়িত ছিলেন ইরাকের আজকের পরিস্থিতির জন্যে তাদেরও কিছু দায়ভার আছে।
কারণ ‘যুদ্ধ শেষে পরিস্থিতি কোন দিকে যেতে পারে সে বিষয়ে তাদের বোঝার কিছু ভুল হয়েছিল’।
ইরাক যুদ্ধের কারণে ইসলামিক স্টেইটের উত্থান ঘটেছে বলে যে ধারণা করা হয় তার মধ্যে কিছু সত্যতা আছে বলেও তিনি স্বীকার করেছেন।
তবে এবারেও তিনি যুদ্ধের পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন। বলেছেন, সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতা থেকে সরানোর মধ্যে দুঃখ প্রকাশের কিছু নেই।
ইরাক যুদ্ধে ব্রিটেনের অংশগ্রহণের ব্যাপারে যে তদন্ত চলছে, তার একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে টনি ব্লেয়ার মার্কিন টেলিভিশন নেটওয়ার্ক সিএনএনকে এসব কথা বলেন।
ইরাক যুদ্ধের কারণেই জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেইটের উত্থান হয়েছে কি না এই প্রশ্নের জবাবে মি. ব্লেয়ার বলেন, ‘আমার মনে হয়, এখানে কিছু সত্যতা আছে। তবে আমি মনে করি এবিষয়ে আমাদেরকে খুব সতর্ক থাকতে হবে। তা নাহলে আজকের ইরাক ও সিরিয়াতে কি ঘটছে সেটা বুঝতে আমরা ভুল করবো।’
‘অবশ্যই আপনি বলতে পারেন না যে আমরা যারা ২০০৩ সালে সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতা থেকে সরিয়েছি, ২০১৫ সালের পরিস্থিতির জন্যে তাদের কোনো দায়ভার নেই।’
‘তবে এটাও মনে রাখা জরুরি,২০১১ সালে যে আরব বসন্ত শুরু হয়েছিলো, আজকের ইরাকের ওপর তার একই ধরনের প্রভাব পড়তে পারতো। আর দ্বিতীয় কথা হলো- আইসিসের পরিচিতি ইরাক থেকে নয়, সিরিয়া থেকেই তৈরি হয়েছে’, যোগ করেন মি ব্লেয়ার।
টনি ব্লেয়ার বলেন, তার নীতি ইরাকে কার্যকর হয়নি ঠিকই, একই সাথে যুদ্ধের পরে যে সব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তাতেও পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি।
তার মতে, যুদ্ধ না হলেও দেশটি আজকের সিরিয়ার মতোই গৃহযুদ্ধে ছিন্নভিন্ন হয়ে যেতো। তিনি বলেন, যুদ্ধের পর একটি সর্বদলীয় সরকার গঠনে আন্তর্জাতিক জোট ইরাককে সহযোগিতা করেছে।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালে দেশটিতে ফিরে আসা স্থিতি নষ্ট হয়ে যায় গোষ্ঠীগত সংঘাতের কারণে, আর সেটা হয়েছে তৎকালীন ইরাকি সরকারের নীতি ও আরব বসন্তের কারণে।
বিবিসির সংবাদদাতা বলছেন, মি. ব্লেয়ার এসব বিষয়ে আগেও দুঃখ প্রকাশ করেছেন কিন্তু যুদ্ধে যাওয়ার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তিনি কোনো দুঃখ প্রকাশ করেননি। bbc
ভারতের ঘরে ঘরে যে বিপুল স্বর্ণালঙ্কার রক্ষিত আছে, অচিরেই তা ব্যাঙ্কে রেখে সুদ উপার্জন করার জন্য একটি প্রকল্প চালু হতে যাচ্ছে বলে ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
তিনি রবিবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া তাঁর মাসিক রেডিও ভাষণে বলেছেন, আগামী মাসে দীপাবলী উৎসবের আগে যে ধনতেরাসের সময় স্বর্ণ কেনাটা শুভ বলে মানা হয়, সে সময়ই ভারতে এই অভিনব প্রকল্প চালু হবে।
এই প্রকল্পের অধীনে ব্যাঙ্কের গ্রাহকরা তাদের বাড়িতে পড়ে থাকা অলস স্বর্ণ ব্যাঙ্কে জমা রাখতে পারবেন – এবং তার বিনিময়ে সেই আমানতের ওপর সুদ পাবেন।
তবে জমা রাখা স্বর্ণের ন্যূনতম পরিমাণ হতে হবে অন্তত ৩০ গ্রাম, যার ফাইননেস হতে হবে ৯৯৫। এই স্বর্ণ মুদ্রা, অলঙ্কার, গোল্ডবার বা গোল্ড বিস্কুট – যে কোনও আকারেই হতে পারে।
এই প্রকল্পের অধীনে কেউ ইচ্ছেমতো পরিমাণ স্বর্ণ ব্যাঙ্কে জমা রাখতে পারেন – এর কোনও ঊর্ধ্বসীমা থাকছে না।
অনুমান করা হয় ভারতের কোটি কোটি পরিবার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে বিশ হাজার টনেরও বেশি স্বর্ণ মজুত আছে।
কিন্তু এই বিপুল পরিমাণ স্বর্ণের প্রায় পুরোটাই অলস পড়ে আছে, কোনও কাজে লাগছে না – অথচ বিপুল চাহিদার কারণে ভারতকে প্রতি বছরই শত শত কোটি ডলার মূল্যের স্বর্ণ আমদানি করতে হয়।
প্রধানমন্ত্রী মোদি আজ এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে বলেছেন, ‘স্বর্ণকে একটা মৃত সম্পদ থেকে প্রাণবন্ত শক্তিতে রূপান্তরিত করা সম্ভব। আমরা ঠিক সেটাই করতে চাইছি, আর সে কাজে আপনাদের সমর্থন চাইছি।’
এই প্রকল্পে গ্রাহকরা নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য স্বর্ণ ব্যাঙ্কে জমা রাখতে পারবেন। মেয়াদের শেষে স্বর্ণের তখনকার বাজারদর অনুযায়ী আসল ও সুদের পরিমাণ স্থির করা হবে।
আমানতকারী চাইলে তার আসল ও সুদ স্বর্ণের আকারে ফেরত পাবেন, অথবা সমপরিমাণ অর্থও তিনি নিতে পারবেন।
গত মাসেই ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা এই প্রকল্পে অনুমোদন দিয়েছে, এখন দীপাবলী উৎসবের আগে প্রকল্পটি চালু হলে তাতে কেমন সাড়া মেলে সে দিকে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা সাগ্রহে তাকিয়ে আছেন। শুভজ্যোতি ঘোষবিবিসি বাংলা, দিল্লি
দক্ষিণ কোরিয়ার নৌবাহিনী দেশটির সমুদ্রসীমায় চলে আসা উত্তর কোরিয় নৌযান লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছে বলে জানাচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার সর্ববৃহৎ সংবাদ সংস্থা, ইয়োনহাপ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার কোরিয় সময় ১৫:৩০-এ (জিএমটি ০৬:৩০)উত্তর কোরিয়ার একটি টহল নৌকা সমুদ্রসীমা অতিক্রম করলে সেটি লক্ষ্য করে পাঁচটি গুলি ছোড়া হয়।
ইয়েলো সি-র সমুদ্রসীমা নিয়ে উত্তর কোরিয়া আপত্তি জানিয়ে আসছে এবং এর আগেও তারা সেই সীমা অতিক্রম করেছে।
গতবছরের অক্টোবরেও দুই দেশের জাহাজ ইয়নপিয়ং দ্বীপের কাছে গুলি বিনিময় করেছে।
এমন এক সময়ে ঘটনাটি ঘটলো যখন দুই দেশ ১৯৫০-৫৩ সালের কোরিয় যুদ্ধে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া পরিবারগুলোর একটি পুনর্মিলন আয়োজন করছে।
গত পাঁচ বছরের মধ্যে এটি এধরণের দ্বিতীয় পুনর্মিলন। bbc
অভিবাসীদের আগমন ঠেকাতে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছে ইউরোপের বলকান দেশগুলো।
এরই মধ্যে বুলগেরিয়া বলেছে যে, তারা অভিবাসীদের জন্য নিরাপদ অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে চায় না।
বলকানের উত্তরে অভিবাসীদের গন্তব্য দেশগুলো যদি তাদের দরজা বন্ধ করে দেয়, তাহলে সার্বিয়া এবং রোমানিয়াও এধরনের ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিয়েছে।
ব্রাসেলসে ইইউ সদস্য দেশ এবং বলকান দেশগুলোর মধ্যকার একটি বৈঠকের আগে এই হুমকি আসলো।
স্লোভেনিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেছেন, কোন সমাধান না আসলে তার দেশ ‘বেশি দেরি হবার আগেই নিজের মতো করে কাজ করবে’।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা বলছে, গত সপ্তাহে প্রতিদিন নয় হাজারেরও বেশি অভিবাসী গ্রীসে এসে পৌছেছে। এবছরের মধ্যে অভিবাসী আগমনের এটিই সর্বোচ্চ হার।
এই অভিবাসীদের অধিকাংশেরই গন্তব্য হচ্ছে জার্মানি, যাদের মধ্যে সিরিয়া, ইরাক এবং আফগানিস্তানের অনেক শরণার্থীরাও রয়েছেন। bbc
বাংলাদেশে শিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনার পর যুক্তরাজ্য তাদের নাগরিকদের জন্য সতর্কবার্তা হালনাগাদ করে বাংলাদেশে ব্রিটিশ নাগরিকদের সাবধানে থাকার নির্দেশ দিয়েছে।
শনিবার হালনাগাদ করে বিদেশিদের ওপর হামলা হতে পারে এমন কথা বলা হয়েছে সতর্কবার্তায়।
অস্ট্রেলিয়া তাদের সতর্কবার্তায় তাদের সব নাগরিক এবং কর্মীদের সাবধানে থাকতে বলেছে।
এর আগে দুইজন বিদেশী নাগরিকের হত্যাকাণ্ড নিয়ে বাংলাদেশ ভ্রমণে আগেই কয়েকটি বিদেশী রাষ্ট্রের সতর্কবার্তা ছিল।
নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পৃথিবীর সব বড় বড় সংবাদ মাধ্যমেই এ ঘটনাটি বেশ গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ হয়েছে।
আওয়ামী লীগের নেতারা এ ঘটনার জন্য বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীকে দায়ী করেছেন। অন্যদিকে, বিএনপি দোষারোপ বন্ধ করে, অপরাধীদের খুঁজে বের করার দাবি জানিয়েছে।
এদিকে তদন্ত এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোন মামলা হয় নি।
শনিবার ঘটনাটি ঘটার পরই সেখানকার সিসিটিভি ও বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশনের ধারণ করা ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। এখন পর্যন্ত সন্দেহভাজন হিসাবে তিনজনকে আটক করে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, তবে এখনো কোন তথ্য তারা জানাতে পারেনি।
পুলিশের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ঘটনাটির তদন্ত শুরু করেছে।
ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দায়িত্বে কোন অবহেলা ছিল কি-না সেটি জানতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পুলিশ।
ঘটনাস্থল থেকে কয়েকটি অবিস্ফোরিত বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, কিছুদিন আগে চট্টগ্রাম থেকে যেসব বোমা উদ্ধার করা হয়েছিল, তার সঙ্গে এই বোমাগুলোর মিল রয়েছে। bbc
জর্ডানের রাজধানীতে ফিলিস্তিনী নেতা মাহমুদ আব্বাসের সাথে বৈঠক করেন জন কেরি
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেছেন, জেরুজালেমের একটি পবিত্র স্থানকে ঘিরে উত্তেজনা প্রশমনে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে জর্ডান এবং ইসরায়েল।
জর্ডানে একটি বৈঠক শেষে একথা জানান মি. কেরি।
মুসলিমদের কাছে হারাম আল-শরিফ এবং ইহুদিদের কাছে টেম্পল মাউন্ট হিসেবে পরিচিত স্থানটির আনুষ্ঠানিক তত্ত্বাবধায়ক জর্ডান।
ইসরায়েলি এবং ফিলিস্তিনীদের মধ্যে সাম্প্রতিক সহিংসতার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল এই স্থানটি।
মি. কেরি বলেন, সেখানে বর্তমান আইন বলবৎ রাখার প্রতিশ্রুতি পুন:নবায়ন করেছে ইসরায়েল।
ইসরায়েল আইনটি পরিবর্তন করতে চায় এমন একটি গুজবের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি ঐ অঞ্চলে সহিংসতা বৃদ্ধি পায়। সাম্প্রতিক ছুরি এবং বন্দুক হামলায় অন্তত আটজন ইসরায়েলি নিহত হয়েছে এবং অনেকে আহত হয়েছে।
অন্যদিকে গত কয়েক সপ্তাহে কয়েকজন হামলাকারীসহ প্রায় ৫০ জন ফিলিস্তিনীও নিহত হয়েছে।bbc