রবিবার, ১০ জানুয়ারী, ২০১৬

'অর্থনৈতিক অঞ্চল সংকটে ফেলবে চা বাগানগুলোকে'

 

Image copyrightgoogle
Image captionহবিগঞ্জে তিনটি চা বাগানের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্যে।
বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় জেলা হবিগঞ্জে, চা বাগানের জায়গায় বিশেষ অর্থনৈতিক এলাকা গড়ে তুলতে যে ৫১১ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে তা ফিরিয়ে দেয়ার জন্যে ২৫ শে জানুয়ারি পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়েছে সেখানকার চা শ্রমিকরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন বাগান এলাকায় শিল্প কারখানা হলে অস্তিত্ব সংকটে পড়বে চা বাগানগুলো ।
বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে 'প্ল্যান্টেশন বিশেষজ্ঞ' নাসিম আনোয়ার বলেন, “চা শিল্পের ওপর বিরাট খড়গ পড়ছে । এ শিল্পের অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সরকারের উচিত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা।”
তবে জেলা প্রশাসক সাবিনা আলম বলেছেন বাগানের জমি ফিরিয়ে দেয়ার সুযোগ নেই তবে সরকার ক্ষতিপূরণসহ শ্রমিকদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছে।
Image copyrightEPA
Image captionবাংলাদেশের একটি চা বাগান
তবে তারপরেও বাগানে অর্থনৈতিক অঞ্চল করার এ উদ্যোগ চা বাগানগুলোর মালিকদের জন্যও ক্ষতিকর হবে - এমনটাই বলছিলেন নাসিম আনোয়ার।
তিনি বলেন সরকার চা বাগানের জন্যে জমি দিলে নিয়মানুযায়ী অর্ধেক জমিতে শ্রমিকদের বাসস্থান বা ওদের জন্যে দিতে হয় নানা কাজে ব্যবহারের জন্যে। কিন্তু সরকার বলছে অর্ধেক জায়গা তো কাজে লাগছেনা।
শিল্প এলাকা হলে চা বাগানের ওপর কি প্রভাব পড়বে , এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন চা বাগান এতে সংকটে পড়বে এবং শ্রমিক সংকট দেখা দিবে।
“পিক সিজন হচ্ছে জুন থেকে সেপ্টেম্বর। ওই সময় শ্রমিক না পেলে সময়মত চা পাতা তোলা না গেলে সমস্যা হবে। গুনগত মানেও প্রভাব পড়বে।”

গুজমানকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দিচ্ছে মেক্সিকো

 

Image copyrightReuters
Image captionআটকের পর মেক্সিকোর শীর্ষ মাদক কারবারী জোয়াকুইন এলো চ্যাপো গুজমান
মেক্সিকোর শীর্ষ মাদক কারবারী জোয়াকুইন এলো চ্যাপো গুজমানকে আমেরিকার কাছে প্রত্যর্পনের ব্যাপারে প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।
কারাগার থেকে পালানোর ছয়মাসের মাথায় শুক্রবার আবার গ্রেপ্তার করা হয় সিনাওলার এই মাদক ব্যবসায়ীকে।
মিস্টার গুজমানকে এর আগেও যুক্তরাষ্ট্র তদের হাতে তুলে দেয়ার জন্যে মেক্সিকোকে অনুরোধ করেছিলো।
কিন্তু তখন সে অনুরোধ ফিরিয়ে দিয়েছিলো দেশটি।
এবার আর তাকে নিজ ভূখন্ডে আটক রাখা নিরাপদ মনে করছে না মেক্সিকো।
ছয়মাস আগে মিস্টার গুজমান কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টিত কারাগার থেকে পালিয়ে গেলে দেশটির কর্তৃপক্ষকে চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়।
উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকার পরও সেই জেলের ভেতরে একটি টানেল খুঁড়ে সে পালিয়ে যায়।
নিজের তৈরি করা এক বিশাল মাদক সাম্রাজ্যে গুজমানের হিংস্রতা ছিল সীমাহীন।
তার বিরুদ্ধাচরণের আভাস পেলেই নিজের গুপ্তহত্যা বাহিনী দিয়ে প্রাণনাশের জন্য গুজমান অর্জন করেন বিরাট কুখ্যাতি।

অভিবাসন বিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল কোলন

 

Image copyrightAFP
Image captionপুলিশ জলকামান ব্যবহার করে ছত্রভঙ্গ করেছে বিক্ষোভকারীদের
জার্মানির কোলন শহরে অভিবাসন-বিরোধী বিরাট বিক্ষোভ চলার সময় জল কামান ব্যবহার করে প্রতিবাদকারীদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে কোলনের দাঙ্গা পুলিশ।
নববর্ষ উদযাপন উৎসবে কোলনে নারীদের উপরে যে ব্যাপক যৌন সন্ত্রাস চালানো হয়েছে এর প্রতিবাদে এখন কোলনে চলছে মুসলিম-বিদ্বেষী এবং অভিবাসন বিরোধী বিক্ষোভ।
তারই ধারাবাহিকতায় শনিবারেও ইসলাম বিরোধী পেজিটা মুভমেন্ট-এর নেতৃত্বে কোলনে অভিবাসন বিরোধী বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়েছে।
জার্মান চ্যান্সেল আঙ্গেলা মের্কেল বলেছেন, যে সব অভিবাসী অপরাধ করবে তাদেরকে নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হবে।
Image copyrightGetty Images
Image captionনববর্ষে যৌন হয়রানির ঘটনার পর বিক্ষোভ চলছে জার্মানির কোলন শহরে
শুধু তাই নয়, অপরাধীদের যেনো সহজেই নিজদেশে ফেরত পাঠানো যায় সেই বিষয়ে তারা প্রয়োজনে আইন সংশোধন করার কথা ভাবছে।
মিস মের্কেল বলেছেন, তার শরিক দলগুলোর সাথেও তিনি এই বিষয়ে আলোচনা করতে হবে এবং অভিবাসীদের নিজদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য সংসদের অনুমোদন প্রয়োজন।
এই আঙ্গেলা মের্কেলই গত বছর ১০ লাখেরও বেশি শরণার্থীকে জার্মানিতে স্বাগত জানিয়েছিলেন।
যৌন হামলার ঘটনা নিয়ে আঙ্গেলা মের্কেলের ওপর চাপ বাড়ছিল।
আশ্রয়প্রার্থীরাই এসব হামলার পেছনে আছে বলে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা আঙ্গেলা মের্কেলের পুরো অভিবাসন নীতিকেই প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয়।
Image copyrightAP
Image captionকোলনের রেল স্টেশনে পুলিশী পাহাড়া

রিয়ালের ম্যানেজার হিসেবে জিদানের শুভ সূচনা

 

Image copyrightAP
Image captionজিনেদিন জিদান
সাবেক ফরাসি ফুটবল তারকা জিনেদিন জিদান স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের ম্যানেজার হিসেবে ক্যারিয়ারের সূচনা করলেন দারুণ এক জয় দিয়েই।
দেপার্তিভো লা করুনা ক্লাবকে ৫-০ গোলের ব্যবধানে হারানোর মধ্য দিয়েই যেন নতুন কোচ জিদানকে যেন বরণ করে নিলো তার দলের শীষ্যরা।
আর ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমর্থকরাও উল্লাসধ্বনিতে মুখরিত করে রাখেন।
সাবেক ম্যানেজার রাফায়েল বেনিতেজকে বরখাস্ত করার পর গত সোমবার ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ পান সাবেক রিয়াল তারকা জিনেদিন জিদান।
Image copyright
Image captionগত সোমবার রিয়ালের ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পান সাবেক ফরাসি তারকা জিদান
এর আগে রিয়ালের বি দলের কোচ জিনেদিন জিদানকে মূল দলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়।
তবে মাঠে রিয়ালের জয়ে বড় ভূমিকা রাখেন গ্যারেথ বেল যিনি একাই তিনটি গোল করেছেন। আর কারিম বেনযেমা করেছেন দুটো গোল।
এর মধ্য দিয়ে দলীয় ব্যবস্থাপনার দক্ষতার পরীক্ষা শুরু হলো জিদানের।
সামনের মাসগুলোতে এই পরীক্ষাই দিয়ে যেতে হবে ৪৩-বছর বয়সী সাবেক ফরাসি এই ফুটবল অধিনায়ককে।

ডিজিটাল নিরাপত্তায় নতুন আইন

 

আনিসুল হক, আইনমন্ত্রীImage copyrightBBC Bangla
Image captionআনিসুল হক, আইনমন্ত্রী
বাংলাদেশে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার নতুন একটি আইন তৈরি করতে যাচ্ছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিবিসিকে বলেছেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’-এর খসড়ায় তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারাসহ যে কটি বিতর্কিত ধারা রয়েছে, সেগুলো দূর হবে।
তিনি বলেন, ``তথ্য প্রযুক্তি আইনে ৫৪, ৫৫, ৫৬ এবং ৫৭ ধারাগুলোর প্রয়োজন নেই। এগুলো তখন রিপিল করা হবে।``
তবে নতুন এই আইনের পাশাপাশি তথ্য প্রযুক্তি আইনও বলবৎ থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মি. হক জানান, তথ্য প্রযুক্তি আইনে সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত ধারাগুলো এক জায়গায় আনা হচ্ছে এবং এগুলোর আইনগত ব্যাখ্যা আরো স্পষ্ট করা হচ্ছে।
তথ্য প্রযুক্তি আইনের আওতায় অপরাধ দমন সংক্রান্ত কটি ধারা থাকলেও তার প্রয়োগ নিয়ে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশে ইন্টারনেট আন্দোলনকারীরা বিশেষভাবে এই আইনের ৫৭ ধারাকে মুক্ত চিন্তা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার অন্তরায় হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

ইতিহাসের সাক্ষী: রুশ বিপ্লব ও কেরেনস্কি

 

১০ জানুয়ারি ২০১৬ শেষবার আপডেট করা হয়েছে ২১:৪৮ বাংলাদেশ সময় ১৫:৪৮ GMT
১৯১৭ সালে রাশিয়ায় যে বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে ভ্লাদিমির লেনিনের নেতৃত্বে বলশেভিকরা ক্ষমতায় আসে তা ছিল বিংশ শতাব্দীর সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোর একটি।
এ বিপ্লব ঘটেছিল কয়েকটি পর্বে। সে বছর ফেব্রুয়ারি মাসে একের পর এক গণবিক্ষোভের পর ক্ষমতা ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন রাশিয়ার জার নিকোলাস।
জার সেসময় ছিলেন পুরানো, অচল, এবং স্বৈরতান্ত্রিক এক শাসকচক্রের প্রতিনিধি।
তার পতনের পর রুশ উদারপন্থী এবং সমাজতন্ত্রী দলগুলো মিলে সরকার গঠন করেছিলেন। তাদের লক্ষ্য ছিল রাশিয়াকে একটি আধুনিক পশ্চিমা ধাঁচের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পথে নিয়ে যাওয়া। তাদের কথায়, তাদের নীতির মূল আদর্শ ছিল ফরাসী বিপ্লব।
সে সময় পশ্চিমা বিশ্বে রাশিয়ার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রতীক ছিলেন একজন তরুণ সমাজতন্ত্রী - যার নাম আলেক্সান্ডার কেরেনস্কি। অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে জনপ্রিয় মন্ত্রী ছিলেন তিনি।
তার উচ্চাভিলাষ ছিল রাশিয়াকে বিশ্বের সবচাইতে বড় প্রগতিশীল রাষ্ট্রে পরিণত করা, রাশিয়ায় গণতান্ত্রিক পথ অনুসরণ করা।
১৯১৭ সালেল বসন্তকালে তিনি ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের একমাত্র সমাজতন্ত্রী এবং সবচাইতে জনপ্রিয় মন্ত্রী।
বহু আইন পাস করেছিলেন কেরেনস্কি। এর মধ্যে ছিল ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, পুরোনো বংশগত পদবী বিলুপ্ত করা, নারীদের সমানাধিকার - এ রকম আরো অনেক আইন। মনে করা হয়, কেরেনস্কি ছাড়া কেউই এত আইন পাস করাতে পারতেন না।
russian_revolution_kerensky
Image captionআলেক্সান্দর কেরেনস্কি
কেরেনস্কি ছিলেন একজন দুর্দান্ত বক্তা - যিনি রাজনৈতিক তত্বকে প্রায় আধ্যাত্মিক ভাষায় প্রকাশ করতে পারতেন। হয়তো সে অর্থে একজন রাজনৈতিক নেতার চাইতে একজন ধর্মযাজকের সাথেই তার বেশি মিল ছিল।
কিন্তু জনপ্রিয়তার স্রোতে ভাসতে থাকা কেরেনস্কি হয়তো বিপদ আন্দাজ করতে ভুল করেছিলেন।
১৯১৭ সালের ৩রা এপ্রিল আরেকজন সম্মোহনীক্ষমতা সম্পন্ন নেতা ১০ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষ সেন্ট পিটার্সবার্গ বা পেত্রোগ্রাদে এলেন। তার নাম ভ্লাদিমির লেনিন।
শুরু থেকেই লেনিন অন্তর্বর্তী সরকারকে উৎখাত করার ডাক দিতে থাকলেন। কারণ তার ভাষায় ওই সরকার ছিল একটি বুর্জোয়া পুঁজিবাদী সরকার।
বাস্তবিক লেনিন তার পুরো জীবনে কখনোই উদারনৈতিক কোন সরকারকে ভালো চোখে দেখেন নি। লেনিন বলতেন, একটা সরকার বা দেশ যদি পুঁজি দিয়ে শাসিত হয়, এবং ভূমির ব্যক্তিগত মালিকানা থাকে - তা হলে সেই সরকার বা প্রজাতন্ত্র কত 'গণতান্ত্রিক' বা কত 'স্বাধীন' - তাতে কিছুই আসে যায় না। কারণ তাহলে একটা নিয়ন্ত্রিত হবে অল্প কিছু লোক দিয়ে - যাদের অধিকাংশই হবে হয় ধনী, নয় পুঁজিপতি।
রুশ ইতিহাসের একজন বিশেষজ্ঞ অরল্যান্ডো ফাইজেস বলেন, দু'জন রাজনৈতিক নেতার মধ্যে এর চেয়ে বেশি বৈপরীত্য বোধ হয় কল্পনা করা যায় না, যতটা লেনিন এবং কেরেনস্কির মধ্যে ছিল।
অনেক বছর পর বিবিসিতে ইতিহাসবিদ এলেনা শাপিরোকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে কেরেনস্কি স্বীকার করেছিলেন যে তিনি লেনিন এবং বলশেভিকদের উপযুক্ত গুরুত্ব দিতে ভুল করেছিলেন।
কেরেনস্কি বলেছিলেন, "সেই সময় বলশেভিকদের ভুমিকা খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। তারা ছিল সংখ্যালঘু। আমাদের সরকারকে 'বুর্জোয়া এবং পুঁজিবাদী' বলে লেনিন যে শ্লোগান দিতেন - শুরুর দিতে সেন্ট পিটার্সবুর্গে শ্রমিক সমাবেশগুলোতে এসব কথাবার্তা তেমন কোন সাড়া পায় নি।"
১৯১৭ সালের জুলাই মাসে কেরেনস্কি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হলেন। এবং তার থাকার জায়গা হলো উইন্টার প্যালেস বা শীত প্রাসাদে - যা ছিল জারের সাবেক বাসভবন।
russian_revolution_leninImage copyrightunk
Image captionভ্লাদিমির লেনিন
অনেকে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললেন যে কেরেনস্কি নেপোলিওনের মতোই উচ্চাভিলাষী।
অরল্যান্ডো ফাইজেসের কথায়, ১৯১৭ সালের আগস্ট মাস নাগাদ কেরেনস্কি একটা বিভ্রমের মধ্যে ছিলেন। সামরিক বাহিনীর শৃঙ্খলা তখন ভেঙে পড়েছে। কেরেনস্কি যাকে সামরিক বাহিনীর কমান্ডার ইন-চিফ হিসেবে অধিষ্ঠিত করেছিলেন - সেই কর্নিলভ তখন কেরেনস্কিকে রেখে হোক বা বাদ দিয়ে হোক - এক ধরণের সামরিক একনায়কতন্ত্র কায়েম করার চেষ্টা করছিলেন। কেরেনস্কির ওপর তখন আরো কারোরই আস্থা ছিল না।
অক্টোবরের শুরুর দিকে কেরেনস্কির কর্তৃত্ব ভেঙে পড়লো। অন্যদিকে লেনিনের চাপে বিপ্লবী বলশেভিকরা একটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটানোর জন্য এক গোপন প্রস্তাব পাস করলো ।
লেনিন জোর দিয়ে বললেন, যা করার দ্রুত করতে হবে।
তিনি ঠিক করলেন রাশিয়ার পুরোনো ক্যালেন্ডার অনুযায়ী অক্টোবরের ২৫ তারিখ অভ্যুত্থান হবে। যা ইউরোপিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ৭ই নভেম্বর। পেত্রোগ্রাদে মোতায়েন সামরিক বাহিনীর লোকদের মধ্যে যে বলশেভিক সমর্থকরা ছিল - তাদের দিয়ে রাজধানীতে সশস্ত্র পাহারা বসানো হলো।
এর পর বলশেভিকরা শীত প্রাসাদ আক্রমণ করলো, কেরেনস্কির অবশিষ্ট কয়েকজন মন্ত্রীকে গ্রেফতার করা হলো। লেনিনের নেতৃত্বে বলশেভিকরা সোভিয়েত শাসনকে একদলীয় একনায়কতন্ত্রে পরিণত করলো।
কেরেনস্কি মনে করতেন, বলশেভিক শাসন বেশি দিন টিকবে না। তাই অভ্যুত্থানের পর তিনি গ্রামে চলে গেলেন এবং সৈন্য সংগ্রহ করে লেনিনের অনুগত বিদ্রোহীদের আক্রমণের চেষ্টা করলেন। যখন সে চেষ্টা ব্যর্থ হলো, কেরেনস্কি রাশিয়া ছেড়ে পালালেন।
বাকি জীবন নির্বাসনেই কাটাতে হয় কেরেনস্কিকে। তিনি মারা যান নিউইয়র্কে ১৯৭০ সালে।

রাম মন্দির নিয়ে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিতর্কিত সেমিনার

 

অযোধ্যায় রাম মিন্দর নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে।
Image captionঅযোধ্যায় রাম মিন্দর নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে।
চলতি বছরের মধ্যেই অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণ করা হবে, এই ঘোষণার মধ্যে দিয়ে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত একটি বিতর্কিত সেমিনার রোববার শেষ হয়েছে।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদ-প্রভাবিত একটি থিঙ্কট্যাঙ্ককে কেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় রামমন্দির নিয়ে আলোচনাসভা করতে দিল, কংগ্রেস ও বামপন্থীরা সেই প্রশ্নে প্রতিবাদ জানালেও সেমিনারে অবশ্য বাধা দিতে পারেননি।
আলোচনায় প্রধান বক্তা বিজেপি নেতা ড. সুব্রহ্মণ্যম স্বামী ঘোষণা করেছেন – সুপ্রিম কোর্টে মামলা জিতেই এ বছর রামমন্দির গড়ার কাজ শুরু হবে, এর জন্য কোনও বল প্রয়োগের দরকার হবে না।
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্টস ফ্যাকাল্টির সামনে কংগ্রেস ও বাম দলগুলির ছাত্র সংগঠনগুলো গতকাল থেকেই যে আলোচনাসভার প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন, তার মূল বিষয় ছিল রামমন্দির।
ওই সভার আয়োজন করে অরুন্ধতী বশিষ্ঠ অনুসন্ধান পীঠ নামে একটি সংগঠন, যার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সদ্যপ্রয়াত বিশ্ব হিন্দু পরিষদ নেতা অশোক সিংঘল।
দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে এমন একটি বিতর্কিত বিষয় নিয়ে তাদের আলোচনার অনুমতি দিল, ছাত্রদের প্রতিবাদের মূল কথা ছিল সেটাই।
কিন্তু সভার মূল বক্তা ও বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী পরিষ্কার জানিয়ে দেন, রামমন্দির নিয়ে তারা আসল তথ্য মানুষের কাছে তুলে ধরতে চাইছেন, এর মধ্যে কোনও কোনও অন্যায় নেই।
১৯৯২ সালে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা অযোদ্যার বাবরি মসজিদটি ধ্বংস করে।Image copyright
Image caption১৯৯২ সালে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা অযোদ্যার বাবরি মসজিদটি ধ্বংস করে।
ড. স্বামী বলেন, ‘‘আমরা একটি রুদ্ধদ্বার আলোচনা করছি, যেখানে শুধু আমাদের মতাদর্শের লোকদেরই আহ্বান জানানো হয়েছে। রামমন্দিরের নানা দিক নিয়ে তাদের শিক্ষিত করে তুলতেই এই আলোচনা। আপনি মার্ক্সের কথা বলতে পারবেন, আর আমি শ্রীরামচন্দ্রের কথা বললেই সাম্প্রদায়িক বিভাজন – এটা আবার কী ধরনের দ্বিচারিতা?’’
তিনি নিজের বক্তৃতায় আরও দাবি করেন, সুপ্রিম কোর্টে এই মুহুর্তে অযোধ্যার বিতর্কিত ধর্মীয় স্থান নিয়ে যে মামলা চলছে তাতে রামমন্দির ট্রাস্টেরই জয় হবে – এবং ২০১৬ সালের মধ্যেই সেখানে শুরু হয়ে যাবে মন্দির নির্মাণের কাজ।
সাবেক কংগ্রেসি প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী পর্যন্ত রামমন্দির নির্মাণের সমর্থক ছিলেন বলেও ড. স্বামী দাবি করেন।
তবে মুসলিম নেতা ও হায়দ্রাবাদের এমপি আসাদউদ্দিন ওয়াইসি বলছেন, এই সব মন্তব্য আদালত অবমাননারই সামিল।
মি ওয়াইসির প্রশ্ন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট কী করবে সেটা উনি কীভাবে জানলেন? কেউ যদি আগে থেকেই দাবি করে সুপ্রিম কোর্টের ফয়সালা তার জানা আছে, সেটা তো শীর্ষ আদালতের দিকেই আঙুল তোলা। এ বছরের মধ্যেই ফয়সালা হয়ে যাবে বলে উনি যে বলছেন, উনি কি বিচারপতি না কি ?’’
বিরোধী কংগ্রেস আবার অভিযোগ করেছে, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতিকরণ করতেই এই সেমিনারের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
দলীয় মুখপাত্র শোভা ওঝার কথায়, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে রাজনীতির আখড়া বানাতে চাইছে, আর সে কারণেই পুনের ফিল্ম ইনস্টিটিউটের পর এবার দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়েও ড: স্বামীকে দিয়ে রামমন্দিরের মতো ইস্যু আমদানি করা হল। এরকম বিতর্কিত বিষয়ে ওখানে সেমিনার করাটা একেবারেই অন্যায়।’’
বিরোধীরা অভিযোগ করছেন, আগামী বছর উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনের আগেই ইচ্ছে করে বিজেপি রামমন্দির ইস্যুকে খুঁচিয়ে তুলে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ করতে চাইছে।
কিছুদিন আগে বিশ্ব হিন্দু পরিষদও ঘোষণা করেছে, মন্দির বানানোর জন্য সারা দেশ থেকে অযোধ্যায় পাথর এসে পৌঁছতে শুরু করেছে। ফলে মন্দির নির্মাণ শুরু হোক বা না-হোক, হাওয়া গরম করার চেষ্টা চলছে পুরো দমেই।

 

মসজিদ কমিটির সদস্যদের তথ্য নিচ্ছে গোয়েন্দারা

 

সরকারের লক্ষ্য মসজিদগুলোকে যেন জঙ্গিবাদ প্রসারে ব্যবহার করা না হয়।Image copyrightBBC Bangla
Image captionসরকারের লক্ষ্য মসজিদগুলোকে যেন জঙ্গিবাদ প্রসারে ব্যবহার করা না হয়।
জঙ্গিবাদ রোধে বাংলাদেশের গোয়েন্দা পুলিশ দেশের মসজিদগুলোর কমিটির সদস্য ও ইমামদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করছে।
পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশে জঙ্গিবাদী তৎপরতায় ইসলাম ধর্মের ব্যবহার প্রতিরোধে এবং এর সম্পর্কে সঠিক বার্তা দিতে মসজিদ-ভিত্তিক নানা ধরনের প্রচারণা কার্যক্রম ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে।
সেই উদ্দেশ্যে পুলিশের আইজিপি সম্প্রতি দেশের ইমাম ও ওলামাদের সাথেও বসেছিলেন।
কমলাপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব খাজা মোহাম্মদ আরিফ রহমান তাহেরি বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের কাছে দেশব্যাপী ও ইমাম ও মসজিদ কমিটির সদস্যদের তালিকা চাওয়া হয়েছে।
তারা ঢাকায় উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মসজিদগুলোর উপর কাজ করছেন।
তার মতে “দেশে লক্ষ লক্ষ মসজিদ রয়েছে যার মধ্যে কোন কোনটিতে আলেম-ওলামারাই উগ্রপন্থী মতাদর্শে বিশ্বাসী এবং তারা ইসলাম সম্পর্কে বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিয়ে থাকেন।”
বাংলাদেশে প্রায় তিন লাখের মতো মসজিদ রয়েছে।
অক্টোবর মাসে ঢাকার হোসেনি দালান চত্বরে বোমা হামলা চালানো হয়।
Image captionঅক্টোবর মাসে ঢাকার হোসেনি দালান চত্বরে বোমা হামলা চালানো হয়।
মি. তাহেরি আরও জানান, তারা এখন বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে জঙ্গিবাদ-বিরোধী প্রচারণা চালানোর কাজ করছেন।
বাংলাদেশে সম্প্রতি কজন ব্লগার হত্যা, শিয়া মসজিদ ও ধর্মীয় স্থাপনায় হামলা, বিদেশি নাগরিক হত্যাকাণ্ড ও কজন খ্রিষ্টান পাদ্রীকে হুমকির ঘটনায় পুলিশ জঙ্গিবাদের সংশ্লিষ্টতার কথা বলছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক সায়িদ আব্দুল্লাহ আল মাজিদ বলছেন, মসজিদে মানুষজনের যে ধরনের জমায়েত হয়, বিশেষ করে শুক্রবার তাদের সেখানে দিকনির্দেশনা মূলক বক্তব্য দিয়ে মসজিদ জঙ্গিবাদ রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
তার মতে শুধু মসজিদ নয় এই কার্যক্রম হওয়া উচিত মাদ্রাসা-ভিত্তিকও।
তবে কাছাকাছি সময়ে পুলিশ জঙ্গি কর্মকাণ্ডের সম্পৃক্ততার জন্য যাদের আটক করেছে তাদের বেশিরভাগই বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র।
এই বিষয়টিতে মি. মাজিদের মন্তব্য:“তারা তাদের ভোল পাল্টেছে। কারণ, ইসলামের পোষাকে জঙ্গি কার্যক্রম সাধারণ মানুষ পছন্দ করে না।”
বাংলাদেশে পুলিশ ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, জঙ্গিবাদের সাথে সম্পৃক্তরা ইদানীং তাদের কৌশল পরিবর্তন করছে এবং পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকার জন্য ছোট দলে কাজ করছে।
বাংলাদেশে ডিসেম্বরের শেষের দিকে পর পর দুটি অভিযানে পুলিশ চট্টগ্রামের হাটহাজারী এবং ঢাকার মিরপুরে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি স্নাইপার রাইফেল ও সেনাবাহিনীর পোশাক উদ্ধার করে।
মিরপুরে উদ্ধার করা হয় গ্রেনেড, বিপুল পরিমাণ বোমা, বোমা তৈরির সরঞ্জাম ও সুইসাইড ভেস্ট।
সেখানে বোমা ও গ্রেনেড বানানোর একজন প্রশিক্ষকও ছিলও বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইন ও শালিস কেন্দ্রের জঙ্গিবাদ বিশেষজ্ঞ নুর খান লিটন বলেন, জঙ্গিবাদ রোধে শুধু মসজিদ-ভিত্তিক কার্যক্রম নিয়ে এগুনো সঠিক সিদ্ধান্ত নয়।
তার মতে, “পুলিশ বা প্রশাসনকে যুক্ত করার আগে রাজনীতিবিদরা যদি ধর্মীয় নেতাদের সাথে প্রাথমিকভাবে কাজ করতেন তাহলে ফল হতো। কারণ পুলিশকে ব্যবহার করলে মুসল্লিদের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।”
“জঙ্গিবাদ শুধু মসজিদ-কেন্দ্রিক বা নির্দিষ্ট কোন বলয়ে সীমাবদ্ধ নয়। এটি সমাজের সব জায়গায় বিস্তৃত। তাই সমাজের সর্বস্তরেই প্রচারণা দরকার। শুধু মসজিদে কাজ করার মানে সমাজের একটি অংশকে আলাদা করে দেখা। তাতে ক ধরনের বৈষম্য তৈরি হতে পারে।”