মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের একাউন্টে থাকা বাংলাদেশের রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে আজ বাংলাদেশ সাড়ে চার মিলিয়ন ডলার ফেরত পেয়েছে।
ফিলিপাইনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জন গোমেজ বিবিসিকে বলেছেন তার সামনেই সেখানকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৪ দশমিক ৬৩ মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ ব্যাংককে ফেরত দিয়েছে।
কিভাবে ফেরত পাওয়া গেলো ওই টাকা জানতে চাইলে মিস্টার গোমেজ বলেন ক্যাসিনোর অপারেটর মাইক ওয়াং সিনেটের শুনানিতেই বলেছিলেন তার কাছে ৪.৬৩ মিলিয়ন ডলার আছে এবং ক্যাসিনোতে আরও ৪৫০ মিলিয়ন পেসো (১০ মিলিয়ন ডলারের সমমান)রয়েছে।
তিনি জানান সেটাই প্রথম অংশ আজ বাংলাদেশকে ফেরত দেয়া হয়েছে।
কয়েকদিনের মধ্যেই আরও কিছু টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
কিন্তু পুরো টাকাটা ফেরত পাওয়া যাবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত জন গোমেজ বলেন, “ফিলিপাইনের সিনেটররাই বলছে বাংলাদেশ ৩৪ মিলিয়ন ডলার ফেরত পাবে কিন্তু তাতে তো সন্তুষ্ট হতে পারিনা। পুরোটাই তো উদ্ধার করতে হবে”।
ক্যাসিনোতে যাওয়া টাকা পাওয়ার বিষয়ে যে সংশয় রয়েছে সে বিষয়ে তিনি বলেন, “ক্যাসিনোতে চলে গেছে বলে টাকা পাবেনা তাতো মানবোনা। সিনেট দারুণ কাজ করছে। সিনেটর বলছেন ৩৪ মিলিয়ন ডলার পাওয়া যাবে। আমরা ধাপে ধাপে আগাবো”।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন রিজার্ভ চুরির সাথে প্রধানত যারা জড়িত তাদের সবাইকে চিহ্নিত করা হয়েছে। চারজনের বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল কেস হয়েছে।
ফিলিপাইনের আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসর থেকে বাংলাদেশকে বেশ হতাশ হয়ে ফিরতে হলেও ভারতের ক্রিকেট কিংবদন্তী কাপিল দেব কিন্তু মনে করছেন এই দলটা আগামীতে সবাইকে চমকে দেবে।
পুরোপুরি স্পিন-নির্ভর বোলিং আক্রমণ থেকে তারা যেভাবে ফাস্ট বোলিংকে তাদের দলের বড় অস্ত্র করে তুলেছে, তার অসম্ভব তারিফ করেছেন কাপিল দেব।
বিবিসি বাংলাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ভারতের বিশ্বকাপজয়ী এই সাবেক অধিনায়ক আরও বলেছেন – বাংলাদেশ দলে দুর্দান্ত কিছু অ্যাথলিট আছে, এখন তাদের চাই শুধু আর একটু পরিণতি!
এমন কী বেঙ্গালুরুতে ভারতের কাছে বাংলাদেশের অবিশ্বাস্য হারের ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তিনি। দিল্লির ফিরোজ শাহ কোটলা গ্রাউন্ডে মুখোমুখি হয়েছিলাম এমনই এক অন্তরঙ্গ কাপিল দেবের।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে কপিল দেব অবসর নিয়েছেন প্রাই বাইশ বছর আগে – কিন্তু টিভিতে ধারাভাষ্য, ক্রিকেট অ্যাকাডেমি বা কোচিংয়ের সুবাদে এই খেলাটার সঙ্গে তার নিবিড় সম্পর্ক রয়েই গিয়েছে।
আর এই সময়সীমাটায় যে দলটার উত্থান তাকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করেছে, কাপিল নির্দ্বিধায় বলছেন সে দলটার নাম বাংলাদেশ।
তিনি বলছিলেন, ‘‘ভীষণ উন্নতি করেছে ওরা, এখন ওদের শুধু আরও ম্যাচিওরড হয়ে উঠতে হবে। বাংলাদেশ দলে যে জিনিসটা আমার সবচেয়ে ভাল লাগে তা হল মাত্র দশ-পনেরো বছর আগেও স্পিনাররাই ছিল তাদের একমাত্র ভরসা। আর এখন দেখুন, ঢাকার এশিয়া কাপে ওরা কী দারুণ সিমিং ট্র্যাক বানাচ্ছে আর সেখানে ওদের ফাস্ট বোলাররা কাঁপিয়ে দিচ্ছে।’’
‘‘ফাস্ট বোলাররা এখন ওদের বড় শক্তি, এবং সেটা ভারতের ফাস্ট বোলিং অ্যাটাকের চেয়েও ভাল। এটা তো আপনাকে সমীহ করতেই হবে।’’
দেড় দশক আগে যখন বাংলাদেশ আইসিসি-র পূর্ণ সদস্যপদ পায়, তারপর প্রথম কয়েক বছর বাংলাদেশের পারফরম্যান্স নিয়ে কম সমালোচনা হয়নি।
কাপিল দেব কিন্তু মনে করেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মানিয়ে নিতে এই সময়টা তাদের দরকার ছিল – এবং এখনকার বাংলাদেশ দলটার আত্মবিশ্বাসই আলাদা।
‘‘ইদানীংকালে তাদের যেভাবে আত্মবিশ্বাসে টগবগ করতে দেখছি সেটা প্রায় অবিশ্বাস্য। এই একই জিনিস কিন্তু শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রেও ঘটেছিল – টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর দলটা যেভাবে দ্রুত ঘুরে দাঁড়িয়েছিল তা ভাবাই যায়নি।’’
‘‘বাংলাদেশকে সে জায়গায় পৌঁছতে অবশ্য আরও ভাল পারফর্ম করতে হবে। কিন্তু আমার বিশ্বাস সেটা সম্ভব – কারণ ক্রিকেট নিয়ে যে মাতামাতি ওখানে, আর বাঙালিরা তো পাগল আমি সব সময়ই বলি ... ’’
‘‘আর বাংলাদেশ দলে কয়েকজন সাঙ্ঘাতিক অ্যাথলিট তো আমাকে একেবারে চমকে দিয়েছে। (সৌম্য) সরকার যেমন কয়েকটা ক্যাচ নিয়েছে, ভাবাই যায় না। দলে কিন্তু ওদের এমন ক্রিকেটারেরই প্রয়োজন – শুধু বাইরের নানা দেশের সিনিয়র ক্রিকেটাররা এসে যদি ওদের ঠিকমতো পরামর্শ দিতে পারে তাহলে আর দেখতে হবে না! ’’
কিন্তু এরকম প্রতিভাবান একটা দল বেঙ্গালুরুতে তিন বলে দু’রান তুলতে না-পেরে কীভাবে ভারতের কাছে হেরে গেল, এবারের ওয়ার্ল্ড টিটোয়েন্টিতে এখনও সেটা সবচেয়ে বড় রহস্য। কাপিল অবশ্য ভেবে ভেবে এর একটা উত্তর বের করেছেন!
তার ব্যাখ্যা হল, ‘‘দেখুন, ওরকম পরিস্থিতিতে দশবারের মধ্যে নবারই যে কোনও দল জিতবে। এমন কী আফগানিস্তানও। ফলে ভারত যদি শেষ পর্যন্ত এই টুর্নামেন্টে জেতে, তাহলে আমি বাংলাদেশকে একটা ফুলের তোড়া পাঠাতে চাই।’’
‘‘কিন্তু হাসির কথা নয়, আমি যেটা বলতে চাইছি ক্রিকেটে এমন অনেক কিছু ঘটে যা আপনি কখনও ভাবতেও পারেন না – আর তাই খেলাটা এমন মহান অনিশ্চয়তার। খেলার ঠিক সেই মুহুর্তে, ওই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা সঠিক পরিণতিবোধটা দেখাতে পারেনি – কিন্তু আমি নিশ্চিত ওরকম অবস্থায় তারা আর কখনও হারবে না।’’
ব্যক্তিগতভাবে কাপিলও বিশ্বের আরও নানা ক্রিকেট-পন্ডিতের মতো বাংলাদেশের মুস্তাফিজুর রহমানের ভক্ত – যদিও তিনি ওর বোলিংয়ে আরও বৈচিত্র্য দেখতে চান।
ভারতের ক্রিকেট মহলে স্পষ্টবাদী ও অপ্রিয় কথা বলার জন্য পরিচিত কাপিল সরাসরি আর একটা বলছেন – আগামী পাঁচ বছরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ডার্ক হর্স হিসেবে তার বাজি হবে বাংলাদেশই!