বাংলাদেশে আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে বিপাকে রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।
বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের হিসেবে ২৩৪ টি পৌরসভার মাঝে ৬৯ টিতে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা মেয়র পদে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।সাংগঠনিক ব্যবস্থা হিসেবে এরই মধ্যে এই প্রার্থীদের দল থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছে আওয়ামীলীগ এবং পরবর্তীতে তাদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে বলেও হুশিয়ারি দেয়া হচ্ছে।
নির্বাচনে বিরোধী দল বিএনপিরও কিছু বিদ্রোহী প্রার্থী থাকলেও এর সংখ্যা তুলনামুলকভাবে বেশ কম।
বেশ কিছু বিদ্রোহী প্রার্থী প্রচারণা থেকে সরে মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন - এমন কথা বললেও বিদ্রোহী প্রার্থীরা নির্বাচনে দলের জন্য যে সমস্যার তৈরি করছে তা স্বীকার করছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ।
“যেসব এলাকায় এখনো বিদ্রোহী প্রার্থীরা আছেন সেখানে কিছুটা হলেও আমাদের প্রার্থীকে সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তবে আমরা আশা করছি সকল নেতা-কর্মীরাই দলের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষেই কাজ করবেন।”
তিনি বলছেন, যে নেতা-কর্মীরা বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধেও অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কিন্তু এসব হুশিয়ারি দিয়েও অনেক এলাকায় দমানো যাচ্ছে না বিদ্রোহীদের। এদের অনেকেই শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হিসেবেই নির্বাচনে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভায় আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী আমিনুল ইসলাম মনে করছেন, তার এলাকায় দলের বিদ্রোহী প্রার্থী প্রচারণায় শক্তিশালী থাকলেও, ভোটের ক্ষেত্রে সেটি খুব একটা সমস্যার সৃষ্টি করবে না।
“মানুষ কিন্তু চায় এখন উন্নয়ন। মানুষ চায় বাস্তবে কে কাজ নিয়ে আসতে পারবে। এজন্যে ভোটাররা তাদের মতামত নৌকা প্রতিকে দেবে বলেই আমি শতভাগ আশাবাদী।”
কলারোয়ায় দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়ছেন আওয়ামী লীগ নেতা আরাফাত হোসেন। তিনি বলছেন, দলের মনোনীত প্রার্থী জিততে পারবেন না এমন বিশ্বাস থেকেই তিনি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তবে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার হলেও তিনি আশাবাদী জয়ী হলে ক্ষমাপ্রার্থনা করে তিনি দলে আবার ফেরার সুযোগ পাবেন।
দলের উচ্চপর্যায় থেকে কোন চাপ নেই বললেও তার অভিযোগ, এলাকায় দলের মনোনিত প্রার্থীই তার প্রচারণায় নানা সমস্যার সৃষ্টি করছেন।
“এমন কথাও বলা হচ্ছে যে নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন, আমাকে পাশ করানোর দায়িত্ব নেত্রীর। এসব অভিযোগ নিয়ে অনেক মানুষের সাক্ষর আমার কাছে আছে,” বলেন মি. হোসেন।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করছেন আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থী।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম মনে করছেন, বিদ্রোহী প্রার্থীদের কারণে নির্বাচনের ফলাফলে আওয়ামী লীগের ওপর অনেক বড় প্রভাব হয়তো পড়বে না। কিন্তু কিছু বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচিত হয়ে গেলে তার ফলে দলের প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠবে।
“তখন প্রশ্ন উঠবে যে জনপ্রিয় প্রার্থীদেরই কেন মনোনয়ন দেয়া হলোনা। তখন দেখা যাবে যে স্থানীয় অনেক প্রভাব সেখানে কাজ করছে"।
তবে বিদ্রোহী প্রার্থীদের স্থায়ী বহিষ্কারের যে কথা বলা হচ্ছে সেটিকে একটি ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’ প্রক্রিয়া হিসেবেই দেখছেন অধ্যাপক ইসলাম। জয়ী বিদ্রোহী প্রার্থীদের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের এই অবস্থান ধরে রাখাটা কঠিন হবে বলেই তিনি মনে করছেন।