ইরান এবং চীনের মধ্যে কৌশলগত সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন দুই দেশের বিমান বাহিনীর কমান্ডাররা। আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য এ সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন তারা। বেইজিং-এ ইরান ও চীনের বিমান বাহিনীর কমান্ডারদের মধ্যে এক বৈঠকে এ কথা বলেন তারা।
চীনের সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের সদস্য এবং সেদেশের গণ মুক্তিফৌজ বিমান বাহিনীর প্রধান মাও শিয়াওতিয়ানের সঙ্গে বৈঠক করেন চীন সফর সফররত ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বিমান বাহিনীর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান শাহ সাফি। উচ্চপদস্থ সামরিক প্রতিনিধি দলের প্রধান হিসেবে সরকারিভাবে চীন সফর করছেন তিনি।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান শাহ সাফি বলেন, সামরিক অভিন্ন স্বার্থ সংক্রান্ত সব বিষয়ে ইরান ও চীনের সহযোগিতা জোরদার করা উচিত। এ সম্পর্ক দুই দেশের স্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি এশিয়ার পাশাপাশি সারাবিশ্বে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে।
তিনি আরো বলেন, তেহরান এবং বেইজিং অভিন্ন লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। এ সব লক্ষ্যের মধ্যে রয়েছে অন্য দেশের স্বাধীনতাকামী আন্দোলনের পাশাপাশি এসব দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলানো।
সাক্ষাতে চীনা কমান্ডার বলেন, চীন-ইরান পারস্পরিক সম্পর্ক বিশ্ব শান্তি এবং স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখবে। ইরান এবং চীনের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা আরো বাড়ানোর বিষয়ে তৎপর হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশে ব্লগার-প্রকাশকদের ওপর ধারাবাহিক হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনার জেইদ রাদ আল হুসেইন।
বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে চরমন্থিদের হুমকি পাওয়া সবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
গত ফেব্রুয়ারিতে নিহত লেখক অভিজিৎ রায়ের বই প্রকাশকারী দুটি প্রকাশনা সংস্থায় সন্ত্রাসী হামলায় একজন নিহত এবং তিনজন আহত হওয়ার পর এ বিবৃতি এলো।
শনিবার শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটে নিজের কার্যালয়ে সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হন জাগৃতি প্রকাশনীর মালিক ফয়সল আরেফিন দীপন। একইদিন লালমাটিয়ায় ‘শুদ্ধস্বর’ প্রকাশনীর অফিসে হামলায় প্রকাশক আহমেদুর রশিদ টুটুল এবং ব্লগার তারেক রহিম ও লেখক রনদীপম বসু আহত হন।
এর আগে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি বছরের অগাস্ট পর্যন্ত ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার, গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী আরিফ রায়হান দীপ, লেখক অভিজিৎ রায়, ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু, অনন্ত বিজয় দাশ ও নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয়কে একই কায়দায় হত্যা করা হয়।
বাংলাদেশে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা ছাড়াই মানবাধিকার কর্মী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও সাংবাদিকরা যাতে মত প্রকাশ করতে পারেন তা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন জেইদ।
তিনি বলেন, “যখন জনগণকে সহিংসতা বা হত্যাকাণ্ডের হুমকি দেওয়া হচ্ছে তখন তাদের কার্যকর সুরক্ষা দেওয়া সরকারের দায়িত্ব।
“অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা এবং লেখক, প্রকাশকসহ বাংলাদেশে অন্য যারা সহিংসতার হুমকি পাচ্ছেন তাদের রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে আরও হত্যাকাণ্ড রোধে সমন্বিত পদক্ষেপের জরুরি প্রয়োজন।”
‘রাষ্ট্র চরমপন্থি গ্রুপগুলোকে সবকিছু নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার সুযোগ দিতে পারে না’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
লেখক-প্রকাশকদের হত্যা ও হুমকির প্রতিবাদ জানাতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। bbc
বাংলাদেশের আশুলিয়ায় পুলিশের একটি তল্লাশি চৌকিতে অতর্কিত হামলা চালিয়ে একজন কনস্টেবলকে হত্যার ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ।
আশুলিয়া থানার পুলিশ গতকাল রাতে এই মামলা দায়ের করে। এছাড়া হামলার ঘটনার বিস্তারিত তদন্তের জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে।
ঘটনার পর থেকে পুলিশ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন কয়েকজনকে আটক করেছে এবং তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
হামলাকারীদের শনাক্ত করতে আশুলিয়ার বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে মোটরবাইকে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
আশুলিয়া শিল্প এলাকায় গতকাল সকাল আটটার দিকে একটি চেকপোস্টে তল্লাশি শুরু করার জন্য শিল্প পুলিশের পাঁচজন সদস্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
এমন সময় ছুরি, চাপাতি নিয়ে একদল দুষ্কৃতকারী পুলিশ সদস্যদের ওপর অতর্কিত আক্রমণ করে। তারা কজন পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে এবং এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়ে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশের একজন সদস্য মারা যান।
ঢাকার গাবতলী এলাকায় তল্লাশির সময় দুষ্কৃতকারীদের ছুরিকাঘাতে একজন পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনার দু’সপ্তাহের মধ্যেই আশুলিয়ায় পুলিশের ওপর হামলায় হতাহতের ঘটনা ঘটলো।
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মনিপুরে গরু চুরির সন্দেহে একজন মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষককে হত্যার প্রতিবাদে স্থানীয় মুসলিম সংগঠনগুলো আজ হরতাল ডেকেছে।
সেইসাথে তারা কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন মণিপুর সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্র সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে বলে সংবাদদাতারা বলছেন।
হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিকে বিক্ষোভ দেখিয়েছে এলাকার মুসলিম সংগঠনগুলো।
ইমফল জেলার একটি মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক পঞ্চাশোর্ধ মোহাম্মদ হাসমাদ আলীকে একটি বাছুর চুরির অভিযোগে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়, সরকারি একটি মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক পঞ্চাশোর্ধ মোহাম্মদ হাসমাদ আলীর মরদেহ সোমবার সকলে পড়ে থাকতে দেখেন গ্রামবাসী।
পুলিশ জানিয়েছে, মিস্টার আলীর বাড়ি থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে তার মরদেহ পাওয়া যায়। খবরে বলা হচ্ছে, মিস্টার আলীকে হত্যার পর হামলাকারীদের একজনের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেযা হয়েছে।
২০১১ সালের জরিপ বলছে, মনিপুরের মোট জনসংখ্যার ৮ দশমিক ৩২ শতাংশ মুসলিম। সম্প্রতি উত্তর প্রদেশে গরুর মাংস খাওয়ার গুজবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
তবে মিযোরামে গরুর মাংস খাওয়া নিয়ে কোনও বিতর্ক শোনা যায়নি। সেখানে গরুর মাংস বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞাও নেই। bbc
দুই শতাধিক যাত্রী নিয়ে মিশরের সিনাইয়ে রাশিয়ান বিমানটি বিধ্বস্ত হয়
বিবিসি জানতে পেরেছে, মিশরের সিনাইয়ে রাশিয়ার বিমান ধ্বসের ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করতে শুরু করেছেন ব্রিটিশ কর্মকর্তারা।
শনিবার মিশরের সিনাই উপত্যকায় ২২৪জন যাত্রী নিয়ে রাশিয়ার বিমানটি বিধ্বস্ত হয়।
বিমানটির উড্ডয়নের আগে সেটির কার্গো হোল্ডে একটি বোমা রাখা হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ বলছে, সিনাইয়ের কয়েকটি গোষ্ঠীর গোপন আলাপ থেকে তারা, ওই হামলাটি সন্ত্রাসী হামলা ছিল বলে জানতে পেরেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, কার্গোতে বোমা থাকার বিষয়টিকে তারাও গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছেন।
তবে মিশরের দাবি, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এখনো আসেনি।
ব্রিটেনের পর ফ্রান্স, আর বেলজিয়ামও মিশরের শার্ম আল শেইখে ভ্রমণের বিষয়ে তাদের নাগরিকদের সতর্ক করে দিয়েছে।
শনিবার ওই এলাকায় দুই শতাধিক যাত্রী নিয়ে রাশিয়ার একটি বিমান বিধ্বস্ত হলে, নাগরিকদের ভ্রমণ সতর্কতার পর শুক্রবার থেকে হাজার হাজার পর্যটনকে ফিরিয়ে আনছে ব্রিটেন।
দেশে ফেরার সময় বিমানে তাদেরকে শুধু হ্যান্ড লাগেজ বহন করতে বলা হয়েছে। আর তাদের মালামাল পরে আলাদা বিমানে করে ফেরত পাঠানো হবে।
বিমান দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে তৈরি হয়েছে এক ধরনের ধুম্রজাল।
রাশিয়া বলছে, সঠিক কারণ জানতে দেরী হচ্ছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ডসহ আরো অনেকেই বলছে যে, সন্ত্রাসী হামলার কারণেই ওই দুর্ঘটনা ঘটেছিল।
মায়ানমারে চলছে ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি-র নির্বাচনী প্রচার
মায়ানমারের বিরোধী নেত্রী আং সান সু চি অঙ্গীকার করেছেন, সে দেশের আসন্ন নির্বাচনে তাঁর দল জিতলে তিনিই সরকারের নেতৃত্ব দেবেন – যদিও তিনি প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না।
মায়ানমারে আগামী রবিবার, ৮ নভেম্বর সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যেটা হবে সে দেশে গত পঁচিশ বছরের মধ্যে প্রথম উন্মুক্ত নির্বাচন।
কিন্তু এই নির্বাচনে মিস সু চি-র দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) যদি জেতেও, তাহলেও দেশের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথে তাঁর সাংবিধানিক বাধা রয়েছে।
মায়ানমারের সেনাবাহিনী যে সংবিধানের খসড়া তৈরি করেছে, তাতে বলা হয়েছে বিদেশি নাগরিককে বিয়ে করলে কেউ দেশের প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না।
আং সান সু চি-র প্রয়াত স্বামী ঐতিহাসিক মাইকেল অ্যারিস ছিলেন ব্রিটিশ নাগরিক, ফলে নতুন সংবিধান অনুযায়ী দেশের প্রেসিডেন্টর পদ মিস সু চি-র জন্যও রুদ্ধ।
কিন্তু এই পটভূমিতেও মিস সু চি আজ দেশের বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গনে ভাষণ দিতে গিয়ে বলেছেন এভাবে তাঁকে আটকানো যাবে না – কারণ ভোটে তাঁর দল জিতলে সরকার পরিচালনা করবেন তিনিই।
বিরোধী নেত্রী জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট হতে না-পারলেও নতুন সরকারের প্রধান হবেন তিনিই।
তবে পাশাপাশি একজন প্রেসিডেন্টকেও নিয়োগ করা হবে, যিনি ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি-র আদর্শ ও নীতি অনুসরণ করে কাজকর্ম চালাবেন।
মায়ানমার থেকে বিবিসির এক সংবাদদাতা বলছেন, আং সান সু চি-র এই বক্তব্যকে দেশের সেনাবাহিনীর উদ্দেশে ছুড়ে দেওয়া চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
তিনি আরও বলছেন, মিস সু চি-র এই বক্তব্যকে অসাংবিধানিক বলেও চিহ্নিত করা হতে পারে। bbc
গত ২৮শে সেপ্টেম্বর ঢাকার গুলশানে খুন হন ইতালির নাগরিক চেজারে তাভেলা।
বাংলাদেশের ঢাকায় ইতালীয় নাগরিক চেজারে তাভেলা হত্যাকান্ডে সন্দেহভাজন হিসেবে এম এ মতিন নামে এক ব্যক্তিকে যশোরের বেনাপোলে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
এই হত্যাকান্ডের জন্য আব্দুল কাইয়ুম নামে বিএনপি'র যে নেতাকে সরকার সন্দেহ করছে, আটক মিস্টার মতিন তারই ভাই।
গতকাল রাতে বেনাপোলে তাকে আটকের পর আজ ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিবি পুলিশের সদস্যরা।
আজ তাকে আদালতে হাজির করা কথা রয়েছে।
বিদেশী নাগরিক হত্যার ঘটনায় বিএনপির নেতা আব্দুল কাইয়ুম এর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
তবে তা প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি নেতা ও সাবেক কমিশনার আব্দুল কাইয়ুম কাইয়ুম অজ্ঞাত স্থান থেকে বিবিসির ঢাকা অফিসে ফোন করে বলেন, সরকার তাকে এবং বিএনপিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়াতে চাইছে।
বেশ কিছুদিন আগেই তার ভাইকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় বলেও মিঃ কাইয়ুম সেসময় অভিযোগ করেছিলেন।
তিনি বলেন, “আমার ছোট ভাইকে গত ১৯ তারিখে নিয়ে গেছে। এলাকার আরও কয়েকজনকে নিয়ে গেছে। বিভিন্ন ভাবে শুনছিলাম যে আমাকে জড়াবে। আমার ভাই-এর দোষ নেই। আমিও বাইরে, বিভিন্ন মামলা আছে।”
তিনি দেশের বাইরে অসুস্থ বলেও জানান।
গত ২৮শে সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশান এলাকায় ইতালির নাগরিক চেজার তাভেলা খুনের ঘটনায় এর আগে সন্দেহভাজন আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। bbc
৩০ হেক্টর বিস্তৃত ওই খামারে প্রায় ১১ হাজার কুমীর থাকে।
হন্ডুরাসের এক কুমীর খামারে দশ হাজারেরও বেশি কুমীর বেশ কয়েক সপ্তাহ না খেয়ে থাকার পর অবশেষে তাদের খেতে দেওয়া হয়েছে।
আমেরিকার অর্থ মন্ত্রণালয় প্রভাবশালী ওই খামার মালিকের সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেছিল ৭ই অক্টোবর।
ওই খামার মালিক হাইমে রোজেন্থাল, তার ছেলে ইয়ানি আর ভাগ্নে ইয়াঙ্কেলের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার ও মাদক চোরাচালানের অভিযোগ আনা হয়েছিল এবং এই অভিযোগেই তাদের সব সম্পদ জব্দ করা হয়।
ওই খামারে কুমীরের চামড়া ও মাংসের জন্য কুমীর প্রজনন করানো হতো।
কুমীরগুলো প্রায় এক মাস না খেয়ে আছে এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর হন্ডুরাসের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত একটি বন সংরক্ষণ সংস্থা কুমীরগুলোর খাবার জন্য দেড় হাড়ার কিলোগ্রাম মুরগি দান করে।
কিন্তু খামারের কর্মচারীরা তাদের একমাসের বকেয়া বেতন না পাওয়া পর্যন্ত কুমীরগুলোকে খাওয়াতে অস্বীকার করে বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে খবর বেরয়।
ওই সংস্থা ফরেস্ট কনজারভেশান ইন্সটিটিউট জানায় তারা কর্মচারীদের সঙ্গে একটা সমঝোতায় আসার চেষ্টা করছে।
ইতিমধ্যে মঙ্গলবার ঘোষণা করা হয় যে স্থানীয় একটি খামার যারা কুমীর খামারের জন্য খাবার সরবরাহ করে থাকে তারা ওই খামারের অভুক্ত কুমীর এবং সিংহদের খাবার জন্য দুই টন পরিমাণ গরুর নাড়িভুঁড়ি সরবরাহ করে।
তারাই উদ্যোগী হয়ে কুমীরগুলোকে গরুর নাড়িভুঁড়ি এবং মুরগি খেতে দেয়।
খামারের পরিচালক বলছেন এই খাবারে ১০ হাজার কুমীরের দু-তিন দিন চলে যাবে। bbc
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বিবিসিকে বলেছেন, পুলিশের টহল বা তল্লাশির সময় সন্ত্রাসী হামলা হলে, পুলিশকে সাথে সাথে পাল্টা আক্রমণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঢাকার কাছে আশুলিয়ায় তল্লাশি চৌকিতে দুর্বৃত্তের আক্রমণে একজন পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনার প্রেক্ষাপটে টহল বা তল্লাশির সময় পুলিশের সতর্ক ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এমন পটভূমিতেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই মন্তব্য করেছেন।
বিবিসির কাছে এই সিদ্ধান্তের কথা নিশ্চিত করার সময় বাংলাদেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন পুলিশের মধ্যে আতংক সৃষ্টির জন্য গতকাল ঐ হামলা ও হত্যাকান্ড ঘটানো হয় বলে সরকারের ধারণা।
পুলিশের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানয়েছেন গতকালের হামলার পর তারা এখন অতিরিক্ত সতর্ক হচ্ছেন।
আশুলিয়া শিল্প এলাকায় তল্লাশি চৌকিতে কয়েকজন দুষ্কৃতকারীর হামলায় যখন পুলিশের একজন সদস্য নিহত হন তখন সেখানে পাঁচজন পুলিশ সদস্য ছিলেন।
কিন্তু সেই পুলিশ সদস্যরা কোনও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেননি। বরং সহকর্মীকে ফেলে অন্য পুলিশ সদস্যরা নিজেদের রক্ষায় পালিয়েছিলেন, এমনও অভিযোগ উঠেছে।
এই ঘটনার পর পুলিশে টহল বা তল্লাশির সময় কতটা সতর্কতা ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, এই আলোচনা সামনে এসেছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলছেন, “আশুলিয়ায় ঐ তল্লাশি চৌকিতে পুলিশ সদস্যদের সকলেই ছিলেন নতুন।এখন থেকে তল্লাশি বা টহলের সময় পুলিশের নতুন এবং পুরোনো বা অভিজ্ঞ সদস্যদের দিয়ে দল গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও উল্লেখ করেছেন, “তল্লাশি বা টহলের সময় নিরাপত্তার জন্য সতর্কতার সব ব্যবস্থাও যেন নেওয়া হয়। কোনও সন্ত্রাসী অ্যাটাক হলে পুলিশ সদস্যরা যেনো সাথে সাথেই কাউন্টার অ্যাটাক করে এই নির্দেশও পুলিশকে দেওয়া হয়েছে।”
সরকারের পাশাপাশি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আশুলিয়ার ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে।ফলে পুলিশকে সন্ত্রাসী হামলা প্রতিরোধের সব ব্যবস্থা নিয়েই তল্লাশি বা টহলে যেতে হবে।
আশুলিয়ার ঘটনার ব্যাপারে পুলিশ সদর দপ্তর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটি হত্যার কারণ অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে ঘটনার সময় পুলিশের গাফিলতি বা সতর্কতার অভাবের অভিযোগও খতিয়ে দেখবে।
সপ্তাহ দুয়েক আগেই ঢাকার গাবতলী এলাকায় তল্লাশি চৌকিতেই দুষ্কৃতকারীর ছুরিকাঘাতে একজন পুলিশ সদস্য নিহত হয়। পুলিশের কর্মকর্তারা বলেছেন,পুলিশের আক্রমণের দু’টি ঘটনার মিল রয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, পুলিশের মধ্যে আতংক সৃষ্টির জন্য এই আক্রমণ করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ আতংকিত নয়। কাদির কল্লোলবিবিসি বাংলা, ঢাকা
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ, পাচার সহ নানা ধরণের অপরাধমূলক কাজ নিয়ে খোঁজখবর করতে সীমান্ত পরিদর্শন শুরু করেছে সেদেশের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। বৃহস্পতিবার থেকে দক্ষিণবঙ্গ সীমান্ত অঞ্চলে ঘুরছেন ওই কমিটির সদস্যরা।
তাঁরা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতার, রাস্তা প্রভৃতি পরিকাঠামোর অভাবগুলি খতিয়ে দেখছেন যাতে সীমান্ত দিয়ে গরু, সোনা, জাল ভারতীয় নোট বা ফেন্সিডিল পাচারের মতো অপরাধ বন্ধ করা যায়।
পাচার বা অনুপ্রবেশের পেছনে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও প্রশাসনের একাংশের জড়িত থাকার যে অভিযোগ ওঠে মাঝে মাঝেই, সেগুলিও স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে কথা বলে যাচাই করছে এই সংসদীয় কমিটি।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি দক্ষিণবঙ্গ সীমান্ত অঞ্চল পরিদর্শনের প্রথম দিনে এদিন গিয়েছিল উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার স্বরূপনগর এলাকায়।
ওই কমিটির কয়েকজন সদস্য বলছেন যে তাঁরা অনেকটা এলাকা জুড়ে সীমান্তের পরিকাঠামো যেমন দেখেছেন, তেমনই স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেও পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করেছেন।
ওই সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান, কংগ্রেস দলের সংসদ সদস্য প্রদীপ ভট্টাচার্যের কাছে জানতে চেয়েছিলাম পরিকাঠামো পরিদর্শন ছাড়া সীমান্ত অঞ্চলে গরু, সোনা বা জাল ভারতীয় নোট পাচার এবং অনুপ্রবেশ নিয়ে তাঁরা কতটা খোঁজখবর করেছেন।
জবাবে মি. ভট্টাচার্য বলেন, “সীমান্ত এলাকায় বিভিন্ন ধরনের অপরাধের খবর আসে। কিছু জায়গা তো খুবই স্পর্শকাতর। এগুলো দিয়েই পাচার চলছে। গরু পাচার যদিও অনেকটাই বন্ধ করে দেওয়া গেছে। কিন্তু অনুপ্রবেশও যাতে সেভাবে পুরোপুরি বন্ধ করা যায়, তার জন্য কাঁটাতারের বেড়া, পর্যাপ্ত আলোর মতো পরিকাঠামো দরকার। সেগুলোই আমরা খতিয়ে দেখছি।’’
দক্ষিণবঙ্গ সীমান্ত অঞ্চলটি গরু, সোনা, জাল ভারতীয় নোট আর ফিন্সিডিল পাচারের একটা বড় রাস্তা। সম্প্রতি এই রাস্তা দিয়েই ছোট আগ্নেয়াস্ত্রও ভারত থেকে পাচার হচ্ছে।
তাই এই অঞ্চলে সীমান্ত অপরাধ রোধে ব্যবস্থা নেওয়া জন্য সুপারিশ করা যে এই সংসদীয় কমিটির একটা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব, সেটা স্বীকার করছেন কমিটির অন্যান্য কয়েকজন সদস্যও।
দক্ষিণবঙ্গ সীমান্তে প্রথম দিনে এঁদের নজরে এসেছে যে স্বরূপনগর এলাকার বহু জায়গায় সীমান্তে কাঁটাতার হয় নেই, নয়তো ভেঙ্গে পড়েছে। সারানো হয় নি।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য, তৃণমূল কংগ্রেসের কাকলি ঘোষ দস্তিদার উত্তর চব্বিশ পরগণা এলাকা থেকেই নির্বাচিত।
তিনি বিবিসিকে বলছিলেন, “আমাদের দেশের সুরক্ষা বা বাংলাদেশের সঙ্গে সুরক্ষা – দুটি বিষয়ের সঙ্গেই কাঁটাতারের বেড়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক বছর ধরে বেড়ার কাজ চলছে, কিন্তু এখনও সেই কাজ শেষ করা যায় নি। সারানো হয়নি ভেঙ্গে পড়া বেড়া। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এগুলো জরুরি। আমরা তাই পরিকাঠামোর ওপরে নজরদারি চালাতেই এই পরিদর্শনে গিয়েছিলাম।’’
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথ সিং কয়েক মাস আগে এই সীমান্ত অঞ্চলে সফর করতে এসেই বি এস এফ কে সব ধরনের পাচার, বিশেষত গরু পাচার একেবারে শূন্যে নামিয়ে আনতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তারপর থেকেই গরু পাচার রোধে তৎপর হয় বিএসএফ।
কিন্তু স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, বি এস এফ আর রাজ্য পুলিশের একাংশের সহযোগিতা না থাকলে যে সীমান্তে কোনও অপরাধ হওয়া সম্ভব নয়, সেটা মনে করেন অনেকেই।
তাই সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সেই বিষয়েও বিস্তারিত খোঁজখবর নিচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে।
ভারতে ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে সাহিত্যিক অরুন্ধতী রায়, চিত্রনির্মাতা কুন্দন শাহ ও সৈয়দ মির্জা-সহ আরও এক ঝাঁক শিল্পী ও বুদ্ধিজীবী তাদের জাতীয় পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন।
অরুন্ধতী রায় এদিন দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে লিখেছেন ‘মানুষ মানুষকে হত্যা করতে, পিটিয়ে বা গুলি করে মারতে, জ্বালিয়ে দিতে বা গণহত্যা করতে যে ধরনের হিংসার আশ্রয় নিচ্ছে তা বর্ণনা করার জন্য অসিহষ্ণুতা শব্দটা মোটেও যথেষ্ট নয়’।।
বুকার পুরস্কারজয়ী লেখিকা অরুন্ধতী রায় ১৯৮৯ সালে ‘ইন হুইচ অ্যানি গিভস ইট দোজ ওয়ানস’ ছবির চিত্রনাট্য লেখার জন্য জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন। তা ছাড়া সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কারের প্রস্তাবও তিনি আগেই ফিরিয়ে দেন।
বিশিষ্ট চিত্রনির্মাতা সৈয়দ আখতার মির্জা ১৯৮৪ সালে মোহন জোশী হাজির হো ছবির জন্য জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন, পরে তিনি আরও দুবার এই সম্মান লাভ করেন।
সিনেমা জগতের দিকপালরা যেভাবে অসহিষ্ণুতার প্রতিবাদে একজোট হচ্ছেন তাকে স্বাগত জানিয়ে সৈয়দ মির্জা বলেন, ‘এখন যদি আমরা প্রতিবাদ না-করি, তাহলে আর কখন করব?’
কুন্দন শাহ-ও জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন আশির দশকে তার কাল্ট-ক্লাসিক ‘জানে ভি দো ইয়ারো’ ছবির জন্য।
কুন্দন শাহ সেই সম্মান ফিরিয়ে দেওয়ার কথা জানিয়ে বলেছেন, ‘আজকের পরিবেশে’ হয়তো জানে ভি দো ইয়ারো’-র মতো ছবি বানানোই সম্ভব হত না।
সৈয়দ মির্জা, কুন্দন শাহ-সহ ভারতীয় সিনেমা জগতের মোট ২৪জন সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব আজ একযোগে তাদের পুরস্কার সরকারকে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন।
ভারতে সম্প্রতি এই পুরস্কার বর্জন করার ধারার সূচনা করেছিলেন দেশের বিভিন্ন ভাষায় লেখালেখি করা সাহিত্যিকরা।
একের পর লেখক অসহিষ্ণুতার প্রতিবাদ জানিয়ে তাদের সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার ফিরিয়ে দেন।
এরপর দেশের বহু শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানী, চিত্র পরিচালক ও ইতিহাসবিদরাও একে একে সেই প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন।
তবে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার একে ‘সাজানো প্রতিবাদ’ বলেই এ যাবত নাকচ করে এসেছে। bbc
সিরিয়াতে ‘অগুনতি বাংলাদেশী নারী’কে যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে
সিরিয়ায় যৌনদাসী হিসেবে চরম নির্যাতনের শিকার হওয়া এক বাংলাদেশী মহিলা বিবিসির কাছে বর্ণনা করেছেন, বন্দিদশায় তাকে কী অবর্ণনীয় অত্যাচারের শিকার হতে হয়েছে।
গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ লেবাননে গৃহকর্মীর কাজ দেবার নাম করে যুদ্ধকবলিত সিরিয়ায় পাচার করা হয়েছিল এমন কয়েকজন নারী সম্প্রতি বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন।
এমনই একজন বিবিসির সাথে আলাপ কালে বলছিলেন তাদের লেবাননের প্লেনে তোলার নাম করে আসলে সিরিয়ার প্লেনে উঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সিরিয়ায় নামার পরও তারা ভেবেছিলেন লেবাননেই এসেছেন।
ভুল ভাঙে যখন তাদের একটি অফিসঘরে আটকে রেখে চরম অত্যাচার শুরু করা হয়। ওই মহিলা বলছিলেন, ‘দিনের পর দিন মাসের পর আমাদের কিছু খেতে দিত না। শুধু চলত মার, প্রচন্ড মার!’
‘মারের চোটে আমার অনেক সময় প্রস্রাব-পায়খানা পর্যন্ত হয়ে যেত। আর সে কী মার, দুটো পা বেঁধে দিয়ে পা-গুলো উপরের দিকে করে বেল্ট দিয়ে একটানা মেরে যেত।’
‘অত্যাচারের চোটে আমার সর্বস্ব শেষ করে দিয়েছে ওরা। আমার চুল পর্যন্ত কেটে নিয়েছে।’
তিনি জানাচ্ছেন, সিরিয়ার হামা শহরে চার মাসের অবস্থানকালে তাকে অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়। তাকে মূলত যৌনদাসী হিসেবেই ব্যবহার করা হত।
টেলিফোনে কথা বলতে গিয়ে একটা পর্যায়ে ওই মহিলা জানান, তার সৌন্দর্যই আসলে তার কাল হয়েছে – তাকে আরও বেশি বেশি নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে।
'আপনি তো আমারে দেখেননি, আমি খুব সুন্দর ছিলাম। কিন্তু সেটাই বোধহয় আমার ভাগ্যে এতটা খারাপ বয়ে এনেছে।'
'কিন্তু বিশ্বাস করুন, গরিবের মেয়ে হলেও আমি কিন্তু সেখানে মান-ইজ্জত বেচে পয়সা কামাতে যাইনি। আমি মেহনত করে পয়সা উপার্জন করতে গিয়েছিলাম।'
'একটা সময় আত্মহত্যার কথাও ভেবেছিলাম – কিন্তু তাতে তো কোনও সমাধান হবে না। বাচ্চাটাকে তাহলে কে দেখবে, এই ভেবে শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে আসি।'
বিবিসির সাথে আলাপে তিনি আরো বলছিলেন, সেখানে যেসব বাংলাদেশী মেয়েদের নিয়ে যাওয়া হতো, তাদের মধ্যে দেখতে সুন্দর এমন মেয়েদের যৌনকাজে বাধ্য করা হতো। তাকেও তার সৌন্দর্যের জন্যই এ কাজে বেছে নেয়া হয়েছিল।
তিনি আরও বলছিলেন তারা একদল সিরিয়ায় অত্যাচারকারীদের কবল থেকে কোনওক্রমে পালিয়ে আসতে সক্ষম হলেও এখনও সেখানে ‘অগুনতি বাঙালি মেয়ে’ আছে।
তাদের ওপরও চরম অত্যাচার চলছে, কাউকে টেনে এনে দেওয়ালের সঙ্গে দাঁড় করিয়ে, কাউকে বা হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করা হচ্ছে। খেতে দেওয়া হচ্ছে না, সঙ্গে চলছে মারধর।
তাদেরকে যৌনদাসী এবং গৃহকর্মী হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। আর যাদের বিক্রি করা হয়নি, দালালেরা তাদের বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করাচ্ছে।
নিপীড়নের শিকার মেয়েটি এক পর্যায়ে প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর দেশে মাকে ফোন করে জানানোর পর তার মা’ই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানোর পর, দালালকে চাপ দিলে তাঁকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
বাংলাদেশে ফেরার পরও ওই মহিলার কষ্টের শেষ হয়নি। তাঁর স্বামী তাকে ভাত-কাপড় দিতে রাজি নন, ফলে ছোট একটি বাচ্চাকে নিয়ে তিনি পড়েছেন চরম অসহায় অবস্থায়।
তার বয়স্কা মা লোকের বাড়ি বাড়ি কাজ করে কোনও রকমে এখন তার অভাগা মেয়ের মুখে দুটো খাবার তুলে দিচ্ছেন।
সিরিয়ায় যৌনদাসী এবং গৃহকর্মী হিসেবে বাংলাদেশ থেকে যে মেয়েদের পাঠানো হচ্ছে, ঢাকার একটি দৈনিকেই প্রথম এরকম একটি খবর প্রকাশিত হয়।
এরপরই সরকার জানায়, আটকে পড়া মেয়েদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হবে। পুলিশের বিশেষ বাহিনী র্যাব এ বিষয়ে তদন্ত করে নারী পাচারের দুটি মামলা করেছে এবং মোট পনেরজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
ঢাকার দৈনিক প্রথম আলোতে ওই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি যিনি করেছেন, সেই রোজিনা ইসলাম জানিয়েছেন যুদ্ধকবলিত সিরিয়ায় বাংলাদেশ থেকে আরো অনেক নারীকে অবৈধভাবে পাচার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে মাত্র তিনজন ফেরত এসেছে।
এদিকে র্যাব বলছে, গত জুনে একজন নির্যাতিতা নারীর মা তাদের কাছে অভিযোগ করার পর তারা এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে।
এরপরে তাদের রিক্রুটিং এজেন্ট ও দালালসহ মোট পনেরজনকে গ্রেপ্তার করে। এ নিয়ে দুটি মামলাও দায়ের করা হয়েছে।
র্যাব তিন-এর এর অধিনায়ক খন্দকার গোলাম সারোয়ার বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, গ্রেপ্তার ব্যাক্তিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সিরিয়ার বিভিন্ন শহরে আটকে পড়া আরো মেয়েদের ফিরিরে আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য তারা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন।
মি. সারোয়ার আরো বলছিলেন, সিরিয়ার অন্যান্য শহরে আরো মেয়েদের পাচার করা হয়ে থাকতে পারে, যাদের সম্পর্কে এখনো তথ্য জানা যায়নি। র্যাব এখন তাদের সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমও জানিয়েছেন বিষয়টি সম্পর্কে পূর্নাঙ্গ তথ্য জেনে তারা যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন আটকে পড়া মেয়েদের ফিরিয়ে আনতে।
তিনি সেই সঙ্গে এটিও বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের যেসব দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস রয়েছে, সেসব জায়গায় বাংলাদেশী নারী কর্মীরা নির্যাতনের শিকার হলে তাদের সাহায্য দেবার জন্য হটলাইনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেসব জায়গা থেকেও সাহায্য চাইতে পারেন তারা। সাইয়েদা আকতারবিবিসি বাংলা, ঢাকা