শনিবার, ২ জানুয়ারী, ২০১৬

সৌদি আরবে শিয়া নেতার মৃত্যুদন্ডের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ

 

Image copyrightAP
Image captionশেখ নিমরের মৃত্যুদন্ডের খবরে সৌদি আরবে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে
সৌদি আরবের এক নেতৃস্থানীয় শিয়া ধর্মীয় নেতার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার পর এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।
সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে সৌদি আরবে যে ৪৭ জনের মৃত‍্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছে শিয়া নেতা শেখ নিমর আল নিমর তাদের অন্যতম।
শেখ নিমর আল নিমর সৌদি আরবের সবচেয়ে সুপরিচিতি শিয়া নেতাদের একজন। শিয়া তরুণদের মধ্যে তার প্রচুর অনুসারি রয়েছে।
তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়ার খবরে সৌদি আরবে এবং মধ্যপ্রাচ্যের আরও কিছু দেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে।
সৌদি আরবের শিয়া অধ্যূষিত পূর্বাঞ্চলীয় শহরে এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভে যোগ দেন কয়েকশো মানুষ। তারা রাস্তায় মিছিল করে সৌদি রাজপরিবারের ধ্বংস চেয়ে শ্লোগান দেন।
ইরান বলেছে, সৌদি আরবকে এ ঘটনার জন্য কড়া মূল্য দিতে হবে।
ইরানের এক শিয়া নেতা আয়াতোল্লাহ আহমেদ খাতামি একে 'অপরাধ' হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন, এ ঘটনা সৌদি রাজপরিবারের ধ্বংস ডেকে আনবে।
ইরাকের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নুরী আল মালিকিও একই ধরণের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন।
বাহরাইনে এ ঘটনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভরত জনতার ওপর পুলিশ টিয়ার গ্যাস ছুঁড়েছে।
২০১১ সালে সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলে যে সরকার বিরোধী গণবিক্ষোভ শুরু হয়, শেখ নিমর তাতে জোরালো সমর্থন জানিয়েছিলেন। সৌদি আরবের ঐ অঞ্চলের শিয়ারা বহুদিন ধরে সরকারের বিরুদ্ধে বৈষম্য এবং বঞ্চনার অভিযোগ করে আসছে।
দু বছর আগে শেখ নিমরকে যখন গ্রেফতার করা হয়, তার প্রতিবাদে কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভ হয়েছিল।
গত অক্টোবরে বিচারে তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।
তার বিরুদ্ধে সৌদি শাসকদের অমান্য করা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে নেয়ার অভিযোগ আনা হয়।

শেখ নিমর: সৌদি শিয়াদের কন্ঠস্বর নাকি ইরানের অনুচর

 

Image copyrightReuters
Image captionশেখ নিমর আল নিমর: জনপ্রিয় সৌদি শিয়া নেতা
শেখ নিমর আল-নিমর সৌদি আরবের শিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে তুমুল জনপ্রিয় এক নেতা। বিশেষ করে শিয়া তরুণদের মধ্যে তার প্রচুর অনুসারি রয়েছে।
আরব বসন্তের পর মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের মতো সৌদি আরবেও বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। শেখ নিমর আল-নিমর এই বিক্ষোভে জোরালো সমর্থন দেন।
সৌদি আরবের রাজপরিবারের সবচেয়ে তীব্র সমালোচকদের একজন তিনি।
বিগত দশকগুলোতে তাকে সৌদি সরকার বেশ কয়েকবার গ্রেফতার করে।
২০১২ সালে যখন তাকে গ্রেফতার করা হয়, তখন এর বিরুদ্ধে তীব্র বিক্ষোভ হয়েছিল। সেই বিক্ষোভে তিনজন নিহত হয়।
সৌদি আরব অভিযোগ করে যে শেখ নিমর ইরানি মদতপুষ্ট।
Image copyrightAP
Image captionসৌদি আরবের শিয়া তরুণদের মধ্যে শেখ নিমরের বহু অনুসারি রয়েছে
তবে ২০০৮ সালে শেখ নিমর মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
উইকিলীকসের ফাঁস করা তথ্য অনুযায়ী এই সফরের সময় তিনি তীব্র মার্কিন বিরোধী এবং ইরানপন্থী অবস্থান থেকে সরে আসার চেষ্টা করেন।
সৌদি আরবের শিয়ারা বহুদিন ধরেই নানা ধরণের বৈষম্য এবং বঞ্চনার অভিযোগ করে আসছে সৌদি রাজপরিবারের বিরুদ্ধে। শেখ নিমর যেহেতু এই শিয়াদের অন্যতম নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন, স্বাভাবিকভাবেই সৌদি রাজপরিবার তাকে এক বড় হুমকি হিসেবে বিবেচনা করতে শুরু করে।
বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে যেভাবে ইরানের প্রভাব বলয় বাড়ছে, তা সৌদি আরবকে উদ্বিগ্ন করে তোলে।
ইরান আগেই শেখ নিমরের মৃত্যুদন্ড কার্যকর না করার জন্য সৌদি আরবকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছিল।
কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সব আবেদন অগ্রাহ্য করে শেষ পর্যন্ত এই শিয়া নেতার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করে সৌদি আরব।
এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে সৌদি আরবের শিয়া অধ্যূষিত অঞ্চলে। বিক্ষোভ হয়েছে বাহরাইনে।
ইরান এর প্রতিবাদ জানাতে তেহরানে সৌদি কূটনীতিককে তলব করেছে।
ইরানের পররাষ্ট্র দফতর বলেছে, এ ঘটনার কড়া মূল্য দিতে হবে সৌদি আরবকে।
ইরাকের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নুরী আল মালিকী বলেছেন, এ ঘটনার জের ধরে সৌদি রাজপরিবারের পতন ঘটবে।
লেবাননের শিয়া দল হেযবোল্লাহ এটিকে হত্যাকান্ড বলে বর্ণনা করেছে।
তারা বলেছে, শেখ নিমরকে এই পরিণতি বরণ করতে হয়েছে সৌদি আরবের নির্যাতিত জনগোষ্ঠীর অধিকার নিয়ে সোচ্চার হওয়ার কারণে।
এ ঘটনার যে প্রতিক্রিয়া ইতোমধ্যে দেখা গেছে, তা মধ্যপ্রাচ্যেরে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিকে আরও সংকটজনক করে তুলবে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ভারতে বিমান ঘাঁটিতে আক্রমণ, অন্তত সাতজন নিহত

 

Image copyrightAP
পাকিস্তান সীমন্তের কাছে ভারতীয় বিমান বাহিনীর এক ঘাঁটিতে একদল বন্দুকধারী হামলা চালালে অন্তত সাতজন নিহত হয়েছে।
এদের মধ্যে চারজন সন্দেহভাজন জঙ্গী এবং তিন জন সেনা সদস্য।
ভারতীয় সময় ভোর সাড়ে তিনটার দিকে পাঠানকোট বিমান ঘাঁটিতে এই আক্রমণ চালানো হয়, এবং তাদের মোকাবেলায় সেনাবাহিনীর কমান্ডো এবং হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়েছে।
বিমান ঘাঁটিতে জঙ্গীদের বিরুদ্ধে এখনো অভিযান চলছে।
ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তারা জানান, ছিনতাই করা পুলিশের একটি গাড়ি এই আক্রমণে ব্যবহার করা হয়েছে, এবং বন্দুকধারীরা ভারতীয় সেনাবাহিনীর পোশাক পরা ছিল।
একজন ভারতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে সংবাদ সংস্থা এএফপি জানাচ্ছে আক্রমণে ভারত-শাসিত কাশ্মীরের জঙ্গিদের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে।
''আমাদের বিশ্বাস, তারা জয়েশ-এ-মোহাম্মদ গ্রুপের সন্ত্রাসী'', কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন।
কাশ্মীর-ভিত্তিক এই সংগঠনকে পাকিস্তান সমর্থন করে বলে ভারত অভিযোগ করে। তবে পাকিস্তানে এই অভিযোগ বরারবই প্রত্যাখান করে আসছে।
Image copyrightAP
Image captionপাঠানকোট ঘাঁটিতে মিগ-২৯ এর মত অত্যাধুনিক জঙ্গি বিমান আছে (ফাইল ফটো)।
এই আক্রমণ আসলো লাহোরে ভারত এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীদের মধ্যে বৈঠকের মাত্র কয়েকদিন পরেই।
অগাস্ট মাসে পাঞ্জাবের ঘুরুদাসপুরে একটি পুলিশ স্টেশনে সশস্ত্র হামলায় সাতজন নিহত হয়। প্রায় ১২ ঘণ্টা ঘরে চলা বন্দুক যুদ্ধে তিনজন আক্রমণকারী নিহত হয়।