সোমবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৫

আমরা সজাগ: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

প্যারিসের বাটাক্লঁ কনসার্ট হলে হামলার পর ফ্রান্সের দাঙ্গা পুলিশের অবস্থান। ছবি: রয়টার্স
প্যারিসের বাটাক্লঁ কনসার্ট হলে হামলার পর ফ্রান্সের দাঙ্গা পুলিশের অবস্থান। ছবি: রয়টার্স

আঙ্গুলের ছাপে সিম পুনঃনিবন্ধন শুরু

রবির গ্রাহক সেবা কেন্দ্রে রোববার সিম নিবন্ধনে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালুর পরীক্ষামূলক কার্যক্রম ঘুরে দেখেন টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। ছবি: নয়ন কুমার
রবির গ্রাহক সেবা কেন্দ্রে রোববার সিম নিবন্ধনে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালুর পরীক্ষামূলক কার্যক্রম ঘুরে দেখেন টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। ছবি: নয়ন কুমার


নূর হোসেনকে রিমান্ডে নেয়ার দাবিতে উত্তাল সিদ্ধিরগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জে ৭ খুনের আসামী নূর হোসেনের রিমান্ড ও ফাঁসি দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মৌচাক এলাকায় মানববন্ধন করেছে বিক্ষুব্ধ মানুষ

 
 নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ৭ খুন মামলার প্রধান আসামী নূর হোসেনের রিমান্ড ও ফাঁসির দাবিতে উত্তাল নারায়ণগঞ্জ। প্রতিদিনই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী। পাশাপাশি মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াছিন মিয়ার ফাঁসি চেয়েছে বিক্ষোভে অংশ নেয়া এলাকাবাসী। গতকাল রোববার সকাল ১১ টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মৌচাক এলাকায় ঘণ্টাব্যপী এ কর্মসূচি পালন করা হয়। মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন মামলার বাদী নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি, ছোট ভাই আবদুস সালাম, শ্যালক শফিকুল ইসলাম শফি, নিহত মনিরুজ্জামান স্বপনের ভাই রিপনসহ শতাধিক এলাকাবাসী।
নিহত নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি তার বক্তব্যে বলেন, নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশের মানুষ এ হত্যা কা-ের বিচার চায়। নূর হোসেনকে রিমান্ডে নিয়ে হত্যাকান্ডের পরিকল্পনাকারী ও অর্থ জোগানদাতাদের নাম বের করা হোক। যারা এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি করে তারাই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। নূর হোসেন দেশে ফিরে আসায় নিহতের স্বজনরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বলে দাবি করে তাদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সরকার ও প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান স্বামী হারা এই গৃহবধূ।
এদিকে নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলার প্রধান আসামী নূর হোসেনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতদের পরিবার থেকে যে দাবি উঠেছে, তার প্রতিফলন দেখতে চায় সচেতন মহল। তাদের মতে মামলার ন্যায়বিচারের স্বার্থে বিশেষ ব্যবস্থায় হলেও তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। অন্যথায় মামলাটির বিচার কার্যের স্বচ্ছতা নিয়ে বাদীপক্ষসহ বিভিন্ন মহল থেকে যে সকল অভিযোগ তোলা হয়েছে, সে সকল অভিযোগ আমলে না নিয়ে বিচার কার্য সম্পন্ন করা হলে পুরো জাতির কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকবে।
গত শুক্রবার নূর হোসেনকে আদালতে তোলার আগে ও পরে সাংবাদিকদের কাছে মামলার বাদী নিহত কাউন্সিলর নজরুলের স্ত্রী সালমা ইসলাম বিউটি দাবি করে বলেছিলেন, তার স্বামী নজরুলসহ সাতজনকে কেন হত্যা করল এবং কার নির্দেশে এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তা আমি নূর হোসেনের মুখ থেকে শুনতে চাই।
তিনি আরও দাবি করে বলেন, এ ঘটনায় তাকে ব্যবহার করা হয়েছে মাত্র। সুতরাং কে তাকে ব্যবহার করল, তা সকলের জানা প্রয়োজন এবং তাকে ব্যবহারকারী ও নির্দেশদাতাকে মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। অতএব নূর হোসেনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এসব তথ্য বেরিয়ে আসবে। এ ছাড়াও তিনি অভিযোগ করে বলেছিলেন, মামলা যে চার্জশিট দেয়া হয়েছে, সেই চার্জশিট থেকে মামলার অন্যতম আসামী ইয়াসিন, বাদল, ইকবাল ও রাজুকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তাই এদেরকে সম্পৃক্ত করে এবং নূর হোসেনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর নতুন করে চাজর্শিট দেয়ারও দাবি জানিয়েছিলেন।
একই বিষয়ে সাংবাদিকদের কাছে প্রায় অভিন্ন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন বাদী পক্ষের আইনজীবী এড.শাখাওয়াত হোসেন খান। ওই প্রতিক্রিয়ায় তিনি আর বলেছিলেন, মামলার ন্যায় বিচারের স্বার্থে নূর হোসেনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। ন্যায় বিচারের স্বার্থে রাষ্ট্র বা সরকার চাইলে তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। তাই নূর হোসেনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর নতুন করে চার্জশীট দেয়ারও দাবী জানিয়েছিলেন। সাত খুন মামলার আসামী নূর হোসেনকে রিমান্ডে নেয়ার সুযোগ নেই বলে পুলিশ দাবি করলেও সোনারগাঁওয়ে যুবলীগ নেতা ইসমাইল অপহরণ মামলায় তাকে রিমান্ডে নেয়ার সুযোগ আছে বলে মত দিয়েছেন আইনজীবীরা। এদিকে, নূর হোসেনকে রিমান্ড নেয়ার দাবি জানিয়েছেন নিহত ইসমাইলের স্বজনরা।
সাত খুন মামলার প্রধান আসামী নূর হোসেনের বিরুদ্ধে ১৩ টি মামলায় অভিযোগপত্র দেয়ায় এসব মামলায় তাকে রিমান্ডে নেয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে পুলিশ। রিমান্ডে নেয়া- না নেয়া নিয়ে আইনজীবীরাও ভিন্ন ভিন্ন মত দিয়েছেন। রিমান্ডের আবেদন না করায় নিহতের স্বজনরাও হতাশ।
গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি যুবলীগ নেতা ইসমাইলকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাইনাদী এলাকা থেকে র্যাব পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে নিহতের পরিবার মামলা করে। এ মামলায় প্রথমে নূর হোসেন ও র‌্যাব কর্মকর্তাদের আসামী করা না হলেও পরে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
নূর হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ইসমাইল হত্যার রহস্য উদঘাটিত হবে বলে মনে করেন তার স্বজনরা। আইনজীবীরা বলছেন, যুবলীগ নেতা ইসমাইলকে অপহরণ মামলায় নূর হোসেনকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ আছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীও একই মত প্রকাশ করে বলেছেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চাইলে নূর হোসেনকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন।
তবে ইসমাইল হত্যা মামলায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য সাত খুন হত্যা মামলার ক্ষেত্রে আইনগতভাবে কতটা কাজে আসবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
আর অন্যদিকে একই বিষয়ে নিহত নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম সাংবাদিকদের কাছে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, নূর হোসেনকে যে ভারতে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছিলেন, তাকে ধরতে হবে। তাকে না ধরলে মামলার সুষ্ঠু বিচার সম্ভব নয়।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের পাশে লিংক রোড থেকে না:গঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম প্রবীণ আইনজীবী এড.চন্দন সরকার সহ ৭ জনকে তুলে নেয়া হয়। এর তিনি দিন পর ৩০ এপ্রিল ৬ জন ও ১ মে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে অপহৃতদের লাশ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। পরে এই হত্যাকান্ড নূর হোসেন ৬ কোটি টাকার বিনিময়ে র‌্যাবকে দিয়ে ঘটিয়েছে। এমন অভিযোগ উঠলে নূর হোসেন ভারতে পালিয়ে যায়। তবে নূর হোসেন পালিয়ে গেলেও পরবর্তীতে উচ্চ আদালতের নির্দেশে এ ঘটনায় র‌্যাব-১১’র তখনকার সিও তারেক সাঈদ ও মেজর আরিফ ও এমএম রানা সহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করতে বাধ্য হয় পুলিশ। এরাই পরবর্তীতে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছিলেন। পরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডের ১১ মাস পর গত ৮ এপ্রিল ৩৫ জনকে আসামী করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। বর্তমানে ওই ৩৫ আসামীর মধ্যে উপরোক্ত র‌্যাব কর্মকর্তা ও নূর হোসেন সহ ২৩ জন আসামী কারাগারে রয়েছেন। পলাতক রয়েছে আরও ১১ আসামী।
কামাল উদ্দিন সুমন,dailysangram

৩ বছরে ৫০০ কোটি ডলার দেবে এডিবি




আগামী তিন বছরে বাংলাদেশে ৫০০ কোটি ডলার অর্থায়নের কথা জানিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।

শেষ ম্যাচে সান্তনার জয় জিম্বাবুয়ের

প্রাণআপ টি-টোয়েন্টিতে ১-১ সিরিজ ড্র শেষে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের কাছ থেকে ট্রফি গ্রহণ করছেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা এবং জিম্বাবুয়ে দলপতি চিগুম্বুরা -ইন্টারনেট

  • বাংলাদেশ-১৩৫/৯ (২০ ওভার)
  • জিম্বাবুয়ে-১৩৬/৭ (১৯.৫ ওভার)
  • জিম্বাবুয়ে ৩ উইকেটে জয়ী। 
রফিকুল ইসলাম মিঞা : শেষ ম্যাচে জয় দিয়েই বাংলাদেশ সফর শেষ করেছে জিম্বাবুয়ে। গতকাল দু’ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশকে তিন উইকেটে হারিয়েছে জিম্বাবুয়ে। ফলে ওয়ানডে ম্যাচে হোয়াইটওয়াশ হওয়া জিম্বাবুয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজে সমতা রেখেছে ১-১। কারণ টি-টোয়েন্টি সিরিজটি থাকলো অমীমাংসিতই। প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বাংলাদেশ জয় পেয়েছিল ৬ উইকেটে। আর দ্বিতীয় ম্যাচে জিম্বাবুয়ে জয় পেল তিন উইকেটে। ফলে দেশে ফিরার আগে অন্তত একটি সান্ত¦নায় জয় নিয়ে দেশে ফিরতে পারছে দলটি। তবে শেষ ম্যাচে জয় দিয়ে বছর শেষ করার টার্গেট থাকলেও সেটা পারেনি টাইগাররা। পুরো সিরিজ ভালো খেলে শেষ ভালোটাই করতে পারেনি বাংলাদেশ। গতকাল আগে ব্যাট করে বাংলাদেশ ৯ উইকেটে করে ১৩৫ রান। জয়ের জন্য জিম্বাবুয়ের সামনে টার্গেট ছিল ১৩৬ রান। জিম্বাবুয়ে এক বল বাকি থাকতে ৭ উইকেটে ১৩৬ রান করে ম্যাচ জিতে নেয় তিন উইকেটে। আর এক বল বাকি থাকতে ছক্কা মেরে দলকে জয় এনে দেয়া মাদজিবা ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কারও পান। আর সিরিজসেরা পুরস্কার পান ওয়ালার।
জয়ের জন্য জিম্বাবুয়ের সামনে টার্গেট ছিল ১৩৬ রান। টার্গেটটা সহজই ছিল আগের ম্যাচে ১২৩ রান করা জিম্বাবুয়ের জন্য। কিন্তু এই টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে জিম্বাবুয়েও শুরুটা ভালো করতে পারেনি। কারণ ৭ রানে প্রথম দু’ উইকেট হারানো দলটি ফিফটি রান করার আগেই হারায় ৫ উইকেট। ওপেনার সিকান্দার রাজা ৫ রানে আউট হওয়ার পর উইলিয়ামস আইটন হন শূন্য রানে। আর অপর ওপেনার ছাকাভা ৪ রানে আউট হলে দলীয় ৫ রানেই দলটি হারায় প্রথম তিন উইকেট। দলীয় ৩৩ রানে চতুর্থ আর ৩৯ রানে পঞ্চম উইকেট হারানো দলটির চাপ ক্রমেই বাড়তে থাকে। এরভাইন ৫ রান করলেও চিগুম্বুরা রানের খাতা খোলার আগেই আউট হন। তবে ৬ষ্ঠ উইকেট জুটিতে জং উইয়ে আর ওয়ালার জুটি করে দলকে ভালোই এগিয়ে নেন। আল-আমিনের বলে এই গুরুত্বপূর্ণ জুটি ভাঙ্গার আগেই দলটি পৌঁছে যায় ৯৪ রানে। এই জুটির ওপর ভর করেই শেষ ম্যাচে জয়ের স্বপ্ন দেখে সফরকারী দলটি। কিন্তু আল-আমিনের বলে ইমরুলের হাতে ক্যাচ আউট হয়ে ৩৪ রানে জং উইয়ে ফিরলে আবার চাপে পড়ে দলটি। তবে ওয়ালার আর মাদজিবার ব্যাটিং তখনও আশায় রাখে দলটিকে। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ৮ রান। নাসির বল করতে এসে প্রথম বলেই তুলে নেন বিপদজনক ওয়ালারের উইকেটটি। নাসিরের বলে সাব্বিরের হাতে ক্যাচ আউট হওয়ার আগে ওয়ালার করেন সর্বোচ্চ ৪০ রান। ওয়ালার আউট হলে জয়ের পথটা সহজই মনে করেছিল টাইগাররা। কিন্তু লাইফ পাওয়া মাদজিবার আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিংয়ে শেষ দু’ বলে জয়ের জন্য দরকার ছিল ৬ রান। কিন্তু নাসিরের পঞ্চম বলে মাদজিবা সরাসরি ছক্কা মেরেই দলকে জয় এনে দেন। কারণ এক বল বাকি থাকতেই জিম্বাবুয়ে ৭ উইকেটে পৌঁছে যায় টার্গেট ১৩৬ রানে। মাদজিবা ৯ বলে তিন চার আর দু’ ছক্কায় ২৮ রানে অপরাজিত ছিলেন। বাংলাদেশের পক্ষে আল-আমিন তিনটি উইকেট নেন।
এর আগে শেষ ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বড় স্কোর গড়তে পারেনি বাংলাদেশ। ৯ উইকেটে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ১৩৫ রান। দলের পক্ষে এনামুল হক ছাড়া কোন ব্যাটসম্যানই ভালো স্কোর করতে পারেনি। দলের পক্ষে এনামুল হক করেছেন সর্বোচ্চ ৪৭ রান। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১ রান করেন ওপেনার তামিম ইকবাল। গতকাল ব্যাট করতে নেমে দু’ ওপেনার তামিম-ইমরুল শুরুটা ভালোই করেছিলেন। কিন্তু ৩৫ রানের মধ্যে দু’ ওপেনারের বিদায়ে একটু চাপেই পড়ে বাংলাদেশ। ইনিংসের তৃতীয় ওভারের চতুর্থ বলে তামিম লং অনে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ২১ রানে। দলীয় স্কোর তখন ৩৪ রান। ১৫ বলে ২১ রান করেন তামিম। এর পর দলীয় ৩৫ রানে ফিরলেন ইমরুলও। শন উইলিয়ামসের দুর্দান্ত ক্যাচের শিকার হয়ে ফিরার আগে ইমরুল করেন ১০ রান। ব্যাট করতে নেমে অভিজ্ঞ মুশফিকও ভালো করতে পারেননি। মাত্র ৯ রান করে ক্রেমারের শিকার মুশফিক। তবে চতুর্থ উইকেটে এনামুল হক বিজয় আর সাব্বির মিলে ৩৯ রানের জুটি করে দলের প্রাথমিক চাপটা কাটান। তবে ১৭ রানে এলবির ফাঁদে পড়ে আউট হন সাব্বির। এর পর এনামুল এক প্রান্ত আগলে থাকলেও অন্য প্রান্তে ছিল আসা-যাওয়ার মিছিল। নাসির ৩ রানে, রিয়াদ ৮ রানে আর আরাফাত সানি ৫ রানে আউট হওয়ার পর মাশরাফিকে ফিরতে হয়েছে শূন্য রানেই। তবে এই আসা-যাওয়ার মাঝে এনামুল হক বিজয়ের ওপর নির্ভর করেই শতরান পার করে বাংলাদেশ। ইনিংসের শেষ ওভারে রান আউট হওয়ার আগে বিজয় করেন ৪৭ রান। এতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৩৫ রানের ইনিংস গড়তে পারে বাংলাদেশ। ৫১ বলে ৩টি চারে সাজানো ছিল বিজয়ের ইনিংসটি। জিম্বাবুয়ের পক্ষে পানিয়াঙ্গারা ৩টি, মাদজিবা ও ক্রেমার নেন ২টি করে উইকেট।

প্যারিস হামলায় তিনটি দল জড়িত

  
                                 প্যারিসের হামলায় তিনটি দল আলাদাভাবে কাজ করছিল বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা   
             
প্যারিস হামলার পেছনে তিনটি দল জড়িত ছিল বলে জানিয়েছেন ফ্রান্সের তদন্তকারীরা।
তারা আলাদাভাবে হামলা করেছে, বলছে ফরাসি কর্তৃপক্ষ।
অন্তত একজন হামলাকারীর পরিচয় পেয়েছে ফরাসি পুলিশ। সে প্যারিসেরই একটি শহরতলীর বাসিন্দা, যার বিরুদ্ধে আগেও অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। আরেকজন হামলাকারীর কাছে সিরিয়ার পাসপোর্ট পাওয়া গেছে।
ওমর ইসমাইল মোস্তেফা নামের ওই হামলাকারীর স্বজনদের আটক করেছে পুলিশ। তার বাড়িতেও তল্লাশী চালানো হয়েছে।
প্রসিকিউটর ফাঁসোয়া মোলিস বলেন, তারা কিভাবে এবং কোন খান থেকে এসেছেন, তাদের কারা অর্থ দিয়েছে, সেগুলো আমরা খুঁজে বের করব।
প্রসিকিউটর বলছেন, ওই হামলায় নিহত সাতজন ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ছিলেন।
এদিকে, শনিবার ভোরে সীমান্ত অতিক্রমের সময় তিনজন ফরাসি নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে বেলজিয়াম পুলিশ। প্যারিস হামলার সঙ্গে তাদের সম্পৃকতা আছে কিনা সেটা যাচাই করছে বেলজিয়াম কর্তৃপক্ষ।
এদের অন্তত একজন শুক্রবার সন্ধ্যায় প্যারিসে ছিলেন বলে বেলজিয়াম কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে।
                 হামলার পর প্যারিসে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হয়েছে                
শুক্রবারের ওই হামলায় ১২৯জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৩৫০জন।
এই সন্ত্রাসী হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে ইসলামিক স্টেট।
প্যারিস থেকে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা ওয়াহেদ তাহের বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, ওই ঘটনায় কোন বাংলাদেশী হতাহত হয়নি।
প্যারিস হামলায় বেলজিয়ামের লাইসেন্স প্লেট রয়েছে, বাটাক্লাঁ কনসার্ট হলের কাছাকাছি এমন একটি ভক্সওয়াগন পোলো গাড়ি দেখা যাওয়ার পর অভিযান শুরু করেছে বেলজিয়ামের পুলিশ।
বেলজিয়ামে বসবাসকারী একজন ফরাসি নাগরিক ওই গাড়িটি ভাড়া করেছিলেন। কিন্তু অন্য একটি গাড়িতে করে শনিবার ভোরে সীমান্ত অতিক্রমের সময় তাকে আটক করে বেলজিয়াম পুলিশ।
হামলার পর শুক্রবারই ফ্রান্সে জরুরী অবস্থা জারি করা হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথমবার প্যারিসে কার্ফ্যু জারি করা হয়েছে, বন্ধ করা হয়েছে সীমান্ত।
হামলার পর ফ্রান্সে আড়াই হাজারের বেশি সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত শহরে সব ধরণের জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ অফিস বন্ধ রয়েছে। অনিদিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে আইফেল টাওয়ার। bbc

বেদনা ভারাক্রান্ত এই দিনে বাংলাদেশকে ধন্যবাদ

 
                     বাংলাদেশের বহু ফেসবুক ব্যবহারকারীকে দেখা যাচ্ছে ফরাসীদের প্রতি সহানুভূতিস্বরূপ তাদের প্রোফাইল ছবি ফ্রান্সের পতাকার রঙে রাঙাতে।    
             
প্যারিসে বর্বরোচিত সন্ত্রাসী হামলায় ১২৯ জন নিহত হবার ঘটনায় ফরাসীদের পাশে থাকবার জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ দিয়েছে ফ্রান্স।
ঢাকায় ফরাসী দূতাবাসের ওয়েবসাইটে আজ প্রকাশ করা এক বার্তায় রাষ্ট্রদূত সোফি অবার্ট বলেছেন, 'বাংলাদেশকে এবং ফ্রান্সের যত বন্ধু আছে তাদের সবাইকে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি দু:খ ভারাক্রান্ত এই দিনে আমাদের পাশে থাকবার জন্য'।
বার্তায় আরো বলা হয়, 'ফ্রান্সের হৃদয় আজ ব্যথিত কিন্তু ফ্রান্স দুর্বল নয়। আমরা সন্ত্রাসবাদের কাছে পরাস্ত হব না'।
সারা পৃথিবীর মানুষই এখন ফরাসীদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছে।
                 যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর সিটি হলে রঙিন আলো ফেলে ফুটিয়ে তোলা হয় ফ্রান্সের পতাকা।                 
গতকাল পৃথিবীর বেশীরভাগ প্রধান শহরের বড় বড় স্থাপনাতেই দেখা গেছে ফ্রান্সের পতাকার আদলে আলোকসজ্জা করা হয়েছে।
বাংলাদেশেও অনেক মানুষ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছে ফ্রান্সের প্রতি সমবেদনা দিয়ে।
অনেকেই ফেসবুকের প্রোফাইল ছবি রাঙিয়েছেন ফ্রান্সের পতাকার রঙে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগেই ফরাসী নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ করে সমবেদনা জানিয়েছেন এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তাদের লড়াইয়ে পাশে থাকবার অঙ্গীকার করেছেন। bbc

প্যারিসের মুসলমানদের মধ্যে আতঙ্ক

 
                     প্যারিসে হামলার পর নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন অনেকে।  
               
প্যারিসে শুক্রবার রাতের গোলাগুলি শুরু হয় যখন তখন কাসা নস্ত্রা রেস্তোরার পেছনের এক বারে কাজ করছিলেন সাফের।
“আমি কাউন্টারে দাঁড়িয়ে ছিলাম। বিস্ফোরণের শব্দ শুনলাম, প্রচণ্ড শব্দ। সবাই চিৎকার করতে শুরু করল। আমাদের উপর ঝুরঝুর করে কাঁচ ভেঙে পড়লো। আমাদের মুখে এসে কাঁচের টুকরো লাগছে। খুবই ভীতিকর লাগছিল”, ওই সময়ের ঘটনা প্রবাহের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলছিলেন সাফের।
‘আমি দেখলাম বারান্দায় দাঁড়ানো দুটি মহিলা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। একজনের কবজিতে লেগেছে, আরেকজনের কাঁধে। প্রচন্ড রক্তপাত হচ্ছে’।
বিপদ হতে পারে জেনেও সাফের তাদেরকে সাহায্য করবেন বলে মনস্থ করেন।
তিনি গোলাগুলি একটু স্তিমিত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেন, তারপর তাদের কাছে ছুটে যান।
‘আমি তাদের নিয়ে নিচতলায় ভূগর্ভস্থ প্রকোষ্ঠে নিয়ে গেলাম। তাদের পাশে বসলাম এবং রক্তপাত বন্ধে সচেষ্ট হলাম’।
‘গোলাগুলি থামার পর বাইরে এসে দেখলাম, ভয়াবহ পরিস্থিতি। রাস্তায় বহু মৃতদেহ পড়ে রয়েছে। বহু মানুষ আহত’। বলছিলেন সাফের।
                 কাসা নস্ত্রা রেস্তোরার পেছনে একটি বারে কাজ করেন সাফের।
এই কাসা নস্ত্রা রেস্তোরাটি যেখানে অবস্থিত সেখানে বহু মুসলিম এবং আরব বংশোদ্ভূত মানুষের বসবাস।
এইটিন্থ অ্যারোডিসমেন্টে প্যারিসের মুসলিমদের অন্যতম একটি আবাসস্থল। এখানের মানুষ এখন আতঙ্ক বোধ করছে।
জামাল নামে ৪৪ বছর বয়স্ক এক বাসিন্দা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন এই হামলার পর মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর কি ধরণের প্রভাব এসে পড়বে সেটা নিয়ে।
‘আমরা হামলাকারীদের মতো নই। তাদের সাথে আমাদের কোনও সম্পর্ক নেই। কিন্তু ফরাসীরা আমাদেরকে আর আপন করে নেবে না’।
চলতি বছরের গোড়ার দিকে শার্লি হেবদো পত্রিকায় চালানো হামলায় ফরাসী নাগরিকেরা জড়িত আছে এটা প্রতীয়মান হবার পর প্রশ্ন ওঠে ফ্রান্সে বসবাসরত তরুণ মুসলিমদের জীবনযাত্রায় এর কি প্রভাব নেমে আসবে সেটা নিয়ে।
সাফেরের কাছে এর কোনও জবাব নেই। সে একজন আলজেরিয়া বংশোদ্ভূত মুসলিম।
তার গল্পটা অনেকটাই লাসানা ব্যাথিলির সাথে মিলে যায়। মালির এই তরুণী অভিবাসী জানুয়ারি মাসে একটি সুপারমার্কেটে হামলা চলাকালে ভীত সন্ত্রস্ত্র ক্রেতাদেরকে তার দোকানের ভেতর লুকিয়ে রেখেছিলেন।
সাফের এবং লাসানা দুজনেই মুসলিম। দুজনেই মানুষের জীবন বাঁচাতে নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন।
কিন্তু এই মুসলিমদেরই একটি দল আবার সৃষ্টিকর্তার নামে মানুষ হত্যা করছে কেন? জানতে চাইলে সাফের বলেন, ‘এর সাথে ধর্মের কোনও সম্পর্ক নেই’।
“সত্যিকারের মুসলমানেরা কখনো মানুষ হত্যা করবে না। এরা অপরাধী”। bbc

সীমান্ত ও শরণার্থী সঙ্কট এবং প্যারিস হামলা

 
   
 
 
ফরাসী প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া বলেছেন, প্যারিসের হামলা ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ইসলামিক স্টেটের যুদ্ধের সামিল।
তিনি বলেছেন, ফ্রান্সের বাইরে থেকে এই হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
ফলে বাইরে থেকে ইউরোপে অভিবাসনের ওপর এই হামলার একটি বড়ো রকমের প্রভাব পড়বে।
বিশেষ করে শরণার্থী সঙ্কটের ওপর।
নতুন মাত্রা:
গ্রিসে কর্তৃপক্ষ বলছে, হামলাকারীদের অন্তত একজন, ৬৯ জন শরণার্থীর একটি গ্রুপের সাথে লেরোস দ্বীপ দিয়ে ফ্রান্সে গিয়েছেন।
গ্রিসে তিনি প্রথম তার নাম নিবন্ধন করেছেন এবং সেখানে তার আঙ্গুলের ছাপ নেওয়া হয়েছে।
তবে প্যারিসের একটি হামলাস্থলের কাছে সিরিয়ার যে পাসপোর্ট পাওয়া গেছে তার সাথে গ্রিসে নিবন্ধিত ওই পাসপোর্টের কোনো মিল আছে কীনা সেটা এখনও জানা যায়নি।
                           
সার্বিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, সিরিয়ার ওই পাসপোর্টধারী ব্যক্তি গত ৭ই অক্টোবর সার্বিয়াতে প্রবেশ করেছে এবং সেখানে আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে আবেদন করেছেন।
এই পাসপোর্ট আর হামলাকারীর মধ্যে সম্পর্কের সত্যতা নিশ্চিত হলে ইউরোপের শরণার্থী সঙ্কট যে নতুন এক মাত্রা পাবে সেটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
পোল্যান্ডে তার ইঙ্গিত এর মধ্যেই পাওয়া গেছে। সেখানকার একজন মন্ত্রী বলেছেন, “নিরাপত্তার ব্যাপারে নিশ্চয়তা পেলেই শুধু শরণার্থীদেরকে আশ্রয় দেওয়া হবে।”
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমঝোতা অনুসারে পোল্যান্ডের সাড়ে চার হাজারের মতো শরণার্থীর আশ্রয় দেওয়ার কথা।
কিন্তু প্যারিসের হামলার পর এখন মনে হচ্ছে সেটা অনিশ্চিত হয়ে যেতে পারে।
                           
শরণার্থীদেরকে আশ্রয় দেওয়ায় পোল্যান্ডের আরো একজন মন্ত্রী জার্মানির কড়া সমালোচনা করেছে।
শরণার্থীরা যে পথ দিয়ে ইউরোপে আসছে, সন্ত্রাসীরা সেই একই রুট ধরে এসেছে তার কোনো আভাস পাওয়া গেলে সেটাও শরণার্থীদের জন্যে সমস্যার সৃষ্টি করবে।
সমস্যা হবে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেলের জন্যেও।
ইতোমধ্যেই শরণার্থী ইস্যুতে দেশের ভেতরে তার ওপর চাপ তৈরি হয়েছে। কমেছে তার জনপ্রিয়তা। সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার জন্যেও চাপ আছে তার ওপর।
আর জার্মানি যদি সীমান্ত বন্ধ করে দেয় তাহলে তার প্রভাব পড়বে বলকান দেশগুলোর ওপরেও। ফলে বিভিন্ন দেশের মধ্যে উত্তেজনাও বৃদ্ধি পেতে পারে।
এর পাশাপাশি ইউরোপের অভিন্ন ভিসা ব্যবস্থা যা শেঙ্গেন ভিসা নামে পরিচিত, তার ওপরেও এই প্যারিস হামলার প্রভাব পড়তে পারে।
ইতোমধ্যেই এই ভিসা নিয়ে কথাবার্তা শুরু হয়েছে।
                           
ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক কিছুদিন আগেই বলেছেন, শেঙ্গেন ভিসার ভবিষ্যৎ যে হুমকির মুখে সেটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আমাদের বাইরের সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ পুন-প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
প্যারিসের হামলার পর এই পরিস্থিতি আরো জরুরী হয়ে পড়েছে।
প্যারিসের হামলার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে বেলজিয়াম থেকেও কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।
তারা কিভাবে হামলার পর সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বেলজিয়ামে গেছে সেটা এখনও নিশ্চিত হয়নি।
জার্মানিসহ বেশ কয়েকটি দেশ শেঙ্গেন ভিসা ব্যবস্থা স্থগিত করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে অংশগ্রহণকারী যেকেনো দেশের ওপরেই হামলা হতে পারে।
সেক্ষেত্রে ইউরোপের সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ আরোপ জরুরী বিষয় হয়ে উঠবে কোনো সন্দেহ নেই।

প্যারিসের মতো হামলা কি বাংলাদেশ ঠেকাতে পারবে

 
                               
প্যারিসে যে মাপের হামলার ঘটনা ঘটেছে, তার জন্যে একদিকে ছিলো নিখুঁত পরিকল্পনা আর অন্যদিকে তার বাস্তবায়ন।
মুসলিম প্রধান বাংলাদেশেও সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি হামলার ঘটনা ঘটেছে, যেখানে লক্ষ্যবস্তু ছিল হয় পশ্চিমা স্বার্থ কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
কিন্তু একটি বড় মাত্রার হামলা ঠেকাতে এই দেশটি কতটা প্রস্তুত?
প্যারিসে খুব নিরবে প্রস্তুতি নিয়ে যে হামলার ঘটনাটি ঘটলো, বলা যায় তা পশ্চিমা বিশ্বকে অনেকটা কাঁপিয়ে দিয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই হামলার জন্যে পরিকল্পনা করতে হয়েছে, অস্ত্র ও বিস্ফোরক জোগাড় করতে হয়েছে, খুঁজে বের করতে হয়েছে তাদের যারা ধর্মের নামে শহীদ হতে প্রস্তুত, এরপর এদের প্রশিক্ষণ দিতে হয়েছে। আর পুরো কাজটি খুব সফলভাবে সমন্বয় করা হয়েছে।
                                  শিয়াদের তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় হামলা, যাতে দু'জন নিহত হয়
তবে প্যারিস হয়তো এ ধরণের হামলার শেষ লক্ষ্যবস্তু নয় বলেই মনে করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক, অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমোডর ইশফাক ইলাহী চৌধুরী।
তিনি বলেন, “এর সাথে আমি মুম্বাই হামলার সামঞ্জস্য দেখতে পাচ্ছি। সেখানে ১০ জন শহরের নানা জায়গায় ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীকে দু’দিন ধরে ব্যস্ত রেখেছিল। আইএস-এর মূল যে এলাকা ছিল, সেখানে তারা চাপের মুখোমুখি হচ্ছে। সুতরাং এটা একটা গ্লোবাল রূপ নিতে পারে।”
সফট টার্গেট অর্থাৎ সাধারণ মানুষকে সন্ত্রাসী হামলার লক্ষ্যবস্তু করার ঘটনা এর আগে অনেকবার ঘটেছে।
আর তা ঘটেছে পুরো বিশ্ব জুড়েই।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ঘটেছে বেশ কয়েকটি ঘটনা, যা নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের ভাবিয়েছে।
বেশ কয়েকজন ব্লগার খুন হয়েছেন, খুন হয়েছেন বইয়ের প্রকাশক, বিদেশী নাগরিক ও পুলিশ।
                 ব্লগার হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ                
আর হামলার ঘটনা ঘটেছে এমনকি সেনা সদস্যের ওপরও।
প্রায় কোন ঘটনারই কুল-কিনারা করা যায়নি এখনো।
বাংলাদেশে প্যারিসের মতো বড় মাপের ঘটনার আশঙ্কা বিশ্লেষকরা পুরোপুরি নাকচ করে দিচ্ছেন না। তবে এ ধরণের ঘটনা ঠেকানো সম্ভব বলে মনে করেন আরেকজন নিরাপত্তা বিশ্লেষক আবদুর রব খান।
তিনি বলেন, “এরা তো মাইনোরিটি। তাদের মূল অস্ত্র বন্দুক কিংবা বোমা না। তাদের মূল অস্ত্র সারপ্রাইজ দেয়া। মানসিক প্রস্তুতি অর্থাৎ তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া দেখানো খুব জরুরি এখানে। তাহলে বাকি সব ঠিক হয়ে যাবে।”
মি. খান মনে করেন, জঙ্গি কিংবা সন্ত্রাসী হামলা ঠেকাতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো গোয়েন্দা তৎপরতা ও নজরদারী।
দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গি কর্মকাণ্ড নিয়ে গবেষণা করছেন নূর খান।
তিনি বলছেন, বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে বেশী জোর দেয়া হচ্ছে, কোন ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর অনুসন্ধানের দিকে, কিন্তু এসব ঘটনা প্রতিরোধে যেসব কাজ জরুরি, সেগুলো হচ্ছে খুবই কম।
                 নিহত ইতালির নাগরিক তাভেলা চেজারে                
“কাউন্টার টেরোরিজমের ক্ষেত্রে কিছু কাজ হচ্ছে, কিন্তু যে মাত্রায় হওয়া দরকার সেই মাত্রায় হচ্ছে না। গোয়েন্দা তৎপরতা, গোয়েন্দা সরঞ্জাম ও দক্ষতার অভাব রয়েছে।” বলেন তিনি।
নূর খান মনে করেন কেবলমাত্র আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বা সামরিক বাহিনীর পক্ষে জঙ্গি কিংবা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পুরোপুরি ঠেকানো সম্ভব না।
তার সুপারিশ হলো, গোয়েন্দা তৎপরতার পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সম্পৃক্ত করা। আর এর সাথে একমত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান।
তিনি বলেন, “এটা একটা চ্যালেঞ্জ। রাজনৈতিকভাবে এটাকে ফেস করতে হবে। একটা সামগ্রিক শান্তি আন্দোলন বা সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে জনমত তৈরি গঠন করা প্রয়োজন।”
সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রুখতে বাংলাদেশে পুলিশের একটি কাউন্টার-টেরোরিজম ইউনিট গঠন করার প্রস্তাব ছিল।
কিন্তু ঐ প্রস্তাবে খুব একটা সাড়া মেলেনি।
বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দমনে র‍্যাব হতে পারে সবচেয়ে কার্যকরী বাহিনী।

হামলাকারীদের একজন ফরাসী নাগরিক মোস্তেফাই

 
                         প্যারিসে পুলিশের পাশাপাশি মোতায়েন রয়েছে সেনাবাহিনীর সদস্যরাও।      
           
প্যারিসের হামলাকারীদের একজনকে চিহ্নিত করতে পেরেছেন তদন্তকারীরা।
ফ্রান্সের স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেল এবং একজন পার্লামেন্ট সদস্যের বরাতে জানাচ্ছে তার নাম ওমর ইসমাইল মোস্তেফাই। সে ফ্রান্সেরই নাগরিক।
২৯ বছর বয়েসী এই যুবকের আগেও বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার রেকর্ড রয়েছে। সে চরমপন্থি আদর্শে উজ্জীবিত বলে কর্তৃপক্ষ আগেই জানতো।
তার আঙ্গুলের কয়েকটি খণ্ডাংশ পাওয়া যায় বাতাক্লঁ কনসার্ট হল থেকে যেখানে তিনজন আত্মঘাতী হামলাকারী বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে নিজেদেরকে উড়িয়ে দেয়।
মোস্তেফাইয়ের বাবা এবং ভাইকে পুলিশী হেফাজতে নেয়া হয়েছে।
তার বড় ভাই বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, 'এটা একেবারেই পাগলামি। আমি নিজেও ওই রাতে প্যারিসে ছিলাম। আমি দেখেছি, কি ধরণের ধ্বংসযজ্ঞ ছিল এটা'।
শনিবার নিজ থেকে একটি পুলিশ স্টেশনে যায় মোস্তেফাইয়ের বড় ভাই এবং পরে পুলিশ তাকে আটক করে।
পুলিশ এখন খতিয়ে দেখছে মোস্তেফাই ২০১৪ সালে সিরিয়াতে গিয়েছিলো কিনা।
প্যারিসের ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণের শহর কুরকুরনের বাসিন্দা মোস্তেফাই।
ছোটখাটো অপরাধের ইতিহাস রয়েছে তার যদিও সে জেল খাটেনি কখনো।
২০১০ সাল থেকে সে চরমপন্থি আদর্শে উজ্জীবিত বলে নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর কাছে তথ্য আছে যদিও সন্ত্রাসবাদ বিরোধী কোনও তদন্তে তাকে অভিযুক্ত করা হয়নি কখনো।
মোস্তেফাইয়ের ভাই বলেছে, পারিবারিক বিরোধের কারণে কয়েক বছর ধরে তার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না কোনও। মোস্তেফাই চরমপন্থী হয়ে গেছে জেনে বিস্ময় প্রকাশ করে তার ভাই।
মোস্তেফাইরা ছয় ভাইবোন, তার নিজেরও একটি কন্যা সন্তান রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। পরিবার নিয়ে একবার আলজেরিয়াতেও সফর করেছিল সে।
কৌঁসুলিরা বলছেন, সাতজন হামলাকারী কালাশনিকভ রাইফেল এবং বিষ্ফোরক ভর্তি বেল্ট পরিধান করে তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে হামলাগুলো চালিয়েছিল।
অনেকে মনে করছেন, কয়েকজন হামলাকারী হয়তো হামলার পর পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে।
তদন্তকারীরা এখন এই হামলার সাথে সম্ভাব্য বেলজিয়াম সংযোগের সূত্র খুঁজছে। দেশটির ফরাসী সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে তিন জনকে আটকও করেছে পুলিশ।
প্যারিসের বাতাঁক্ল হলের সামনে একটি পরিত্যক্ত কালো রঙের ভক্সওয়াগন গাড়ি পাওয়া গেছে যেটির রয়েছে বেলজিয়ান নম্বর প্লেট। বেলজিয়ামে বসবাসরত একজন ফরাসী নাগরিক গাড়িটি ভাড়া করেছিল বলে তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন।
ওই একই ব্যক্তি শনিবার আরো দুজন সঙ্গীকে নিয়ে অপর একটি গাড়িতে করে সীমান্ত পার হয়ে বেলজিয়াম ঢুকেছে বলেও তথ্য পাওয়া যাচ্ছে এখন। bbc