এর বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হিসেবে পরিচিত চারজনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে, যাদের একজন ভোট থেকে বাদ পড়ার পর অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন।
নির্বাচন হতে চলা ২৩৫ পৌরসভার সবগুলোতে শনিবার মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শুরু হয়। সাড়ে ১৩ হাজার প্রার্থীর মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই রোববার শেষ হবে।
এদিন ফেনীর ফেনী সদর ও পরশুরাম পৌরসভা, চাঁদপুরের ছেংগারচর এবং মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিম পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিলের খবর পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে ফরিদপুরের বোয়ালমারী, টাঙ্গাইলের গোপালপুর, মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিম ও বাগেরহাট পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।
তবে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিলের খবর পাওয়া যায়নি।
এবারই প্রথম পৌরসভায় মেয়র পদে দলীয়ভাবে নির্বাচন হচ্ছে। দল সমর্থিত প্রার্থীরা নিজের দলের প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তবে কাউন্সিলর পদে আগের মতোই নির্দলীয়ভাবে ভোট হবে।
যাচাই-বাছাই শেষে টিকে থাকা প্রার্থীদের কেউ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে চাইলে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় পাবেন। এরপর লড়াইয়ে থাকা প্রার্থীদের নিয়ে ৩০ ডিসেম্বর ভোট হবে।
গত এপ্রিলে অনুষ্ঠিত ঢাকা ও চট্টগ্রামের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে মাঝপথে ভোট থেকে সরে দাঁড়ানো বিএনপির নেতাদের আশঙ্কা, ‘নানা ছলে’ তাদের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হবে। তবে নির্বাচন কমিশন বলছে, সব প্রার্থীকে সমান চোখে দেখবেন তারা।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
চাঁদপুর
মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের প্রথম দিনে তথ্যে গরমিলের কারণে চাঁদপুরের ছেংগারচর পৌরসভায় ধানের শীষ প্রতীক প্রত্যাশী বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী সারোয়ারুল আবেদীনের মনোনয়নপত্র বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা কাজী হেকমত আলী সাংবাদিকদের বলেন, “মেয়র প্রার্থী সারোয়ারুল শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ ও আয়কর রিটার্ন জমা দেননি।
“জাতীয় পরিচয়পত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক উল্লেখ করা হলেও মনোনয়ন ফরমে এসএসসি লিপিবদ্ধ করা হয়।”
মনোনয়নপত্রের সঙ্গে সব কাগজপত্র জমা দিয়েছেন দাবি করে সারোয়ারুল আবেদীন বলেছেন, প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করবেন তিনি
“আমি মনোনয়নপত্র জমাদানকালে প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র জমা দিয়েছি। কোনো ধরনের ভুল-ত্রুটি ছিল না। এরপরও কেন আমার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে তা আমার বোধগম্য নয়।”
ছেংগারচরে মেয়র পদে সারোয়ারুলসহ দুজন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪০ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১০ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন।
ফেনী
প্রথম দিনের বাছাইয়ে ফেনীতে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ফেনী পৌরসভায় ফজলুর রহমান বকুল এবং পরশুরামে মো. মোস্তাফিজুর রহমানের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. এনামুল হক সাংবাদিকদের বলেন, “ফেনী পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থী ফজলুর রহমান বকুল তার হলফনামায় তথ্য গোপন করায় এবং পৌর অডিট আপত্তি নিষ্পত্তি না থাকায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।”
ওই পৌরসভায় বর্তমান মেয়র আওয়ামী লীগের আলাউদ্দিন ও জাতীয় পার্টির মির্জা ইকবাল আলমগীর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন।
অন্যদিকে পরশুরাম পৌরসভার সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সাহেদা আক্তার বলেন, “বিধি মোতাবেক জামানত না দেওয়ায় মো. মোস্তাফিজুর রহমানের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।”
এ পৌরসভায় আর কোনো প্রার্থী না থাকায় একক প্রার্থী হিসেবে বর্তমান মেয়র আওয়ামী লীগের নিজাম উদ্দিন আহাম্মেদ চৌধুরী সাজেল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণায় অপেক্ষায়।
মুন্সীগঞ্জ
মিরকাদিম পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থী মো. শামসুর রহমান এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জামান হোসেনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
তিন হাজার ৪৫৭ টাকার পৌর হোল্ডিং কর বকেয়া থাকায় শামসুরের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন রিটার্নিং ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফয়সাল কাদের।
তিনি বলেন, “পৌরসভার সচিব স্বাক্ষরিত বকেয়া তালিকা অনুযায়ী বিধি মোতাবেক বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।”
তবে বিএনপির এই প্রার্থীর দাবি হোল্ডিং কর বকেয়ার বাড়ির মালিক তিনি নন, তার শ্বশুর।
বর্তমান মেয়র আওয়ামী লীগ প্রার্থী শহিদুল ইসলাম শাহিন ‘ষড়যন্ত্র করে’ তার নামে কর বকেয়া দেখিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন শামসুর রহমান। প্রার্থিতা ফিরে আপিল করবেন বলেও জানান তিনি।
এছাড়া আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জামান হোসেনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয় একশ ভোটারের সমর্থনের তালিকা ঠিক না থাকায়।
মিরকাদিম পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শহিদুল ইসলাম শাহীন, জেপির (মঞ্জু) প্রার্থী সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হোসেন রেনু, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আব্দুল গফুর মিয়া এবং স্বতন্ত্র হিসাবে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সদর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মনসুর আহম্মেদ কালামের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
টাঙ্গাইল
টাঙ্গাইলের গোপালপুর পৌরসভায় মেয়র পদে মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার পর আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. এনামুল হক মারা গেছেন।
গোপালপুর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এনামুলের জমা দেওয়া সমর্থক ভোটারের স্বাক্ষরে গরমিল থাকায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয় বলে গোপালপুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শামছুল হুদা জানান।
মনোনয়নপত্র বাতিলের খবর শুনে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে বাড়ি ফেরার পথে এনামুল অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তার সঙ্গীরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে গোপালপুর থানার ওসি জহিরুল ইসলাম জানান।
হাসপাতালের চিকিৎসক খায়রুল আলম বলেন, তিনি হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
ফরিদপুর
বোয়ালমারী পৌরসভায় মেয়র পদে স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মনিরুজ্জমান মৃধা লিটনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মু. খায়রুজ্জামান বলেন, “স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুজ্জমান মৃধা লিটনের দাখিল করা কাগজপত্রে ত্রুটি থাকায় তা বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।”
ফরিদপুরের নগরকান্দায় পৌর নির্বাচনে প্রার্থী ও তাদের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের কাজ করছেন নির্বাচনী কর্মকর্তারা
লিটন মৃধা বোয়ালমারী উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। দল থেকে নির্বাচনের টিকেট না পাওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন তিনি।
লিটন মৃধা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে আমি ১০৩ জন ভোটারের স্বাক্ষর ও নাম তালিকা দিয়েছিলাম। সেখানে একজনের ক্রমিক নম্বর ঠিক না থাকায় আমার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।”
এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সোমবার জেলা রির্টানিং কর্মকর্তার কাছে আপিল করবেন বলে জানান তিনি।
বোয়ালমারী পৌরসভায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগের শাহজাহান মিরদাহ পিকুল, বিএনপির আব্দুল শুকুর শেখসহ ছয় প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন।
বাগেরহাট
বাগেরহাট পৌরসভায় মেয়র পদে স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিনা হাসিবুল হাসান শিপনের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে।
হলফনামায় ‘অসত্য তথ্য’ দেওয়ায় তার মনোনয়নপত্রটি বাতিল করা হয় বলে বাগেরহাট পৌরসভার সহকারী রিটার্নিং অফিসার দিলীপ কুমার হাওলাদার জানান।
তিনি বলেন, “এক মেয়র প্রার্থীর অভিযোগের ভিত্তিতে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী মিনা হাসিবুল হাসান শিপনের মনোনয়নপত্রটি বাতিল করা হয়েছে। তিনি তার দাখিল করা মনোনয়নপত্রের হলফনামায় ব্যক্তিগত ঋণের তথ্য গোপন করেছেন।”
এ বিষয়ে শিপন বলেছেন, “আমার যে ব্যাক্তিগত ঋণ (দায়) ছিল তা মনোনয়নপত্র দাখিলের আগেই পরিশোধ করেছি। তাই নির্বাচন অফিসে দাখিল করা মনোনয়নপত্রের হলফনামায় ওই বিষয়ে উল্লেখ না করায় তারা আমার মনোনয়নপত্রটি বাতিল করেছে। আমি এর বিরুদ্ধে আপিল করব।”
এ পৌরসভায় মেয়র পদে তিনজনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।