যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশের আগের সাফল্যকে ছাপিয়ে গেছে এবারের দল। শেষ পর্যন্ত শিরোপা জয়ের মঞ্চে ওঠা হলো না। তবে দেশকে ট্রফি এনে দেওয়ার দায়িত্ব ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দিয়ে রাখলেন এখনকার অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ।
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা সাফল্য ছিল ২০০৬ সালে মুশফিকুর রহিমের নেতৃত্বে দলটির পঞ্চম হওয়া। সেই সাফল্যকে ছাড়িয়ে এবার প্রথমবারের মত যুব বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে খেলেছে বাংলাদেশ। হাতছানি ছিল আরও বড় সাফল্যের। শিরোপা জয়ের সব সম্ভাবনাই ছিল এবারের দলটির। কিন্তু বৃহস্পতিবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরে শেষ হয়েছে ফাইনালের আশা।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির নানা হিসাব-নিকাশ মেলানোর চেষ্টা করলেন মিরাজ।
“চ্যাম্পিয়ন বা রানার্সআপ হওয়া বড় কথা নয়। ১৬টি দলের বিশ্বকাপ, ১০টি টেস্ট খেলুড়ে দেশের মধ্যে আমরা ওপরের দিকে আছি। একটা বিশ্বকাপে আমরা সেরা তিন-চারে আছি, এটাও কম কথা নয়।”
সবশেষে জানিয়ে রাখলেন, দেশকে যুব ক্রিকেটের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করতে আগ্রহ ভরে তাকিয়ে থাকবেন উত্তরসূরীদের দিকে।
“আস্তে আস্তে আমরা উন্নতি করছি। মুশফিক ভাইরা পাঁচ নম্বর হয়েছিল, আমরা আরেকটু এগোলাম। আশা করি, সামনের প্রজন্ম আরও এগোবে। ওরা চিন্তা করবে, চ্যাম্পিয়ন-রানার্সআপ হতে হবে।”
প্রায় একযুগ আগে ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর উপর গ্রেনেড হামলা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি নেতাদের সাজা বহাল রেখেছে হাইকোর্ট।
নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে দণ্ডপ্রাপ্তদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) শুনানি শেষে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আমির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দিয়েছেন।
২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের আদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামীর নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান, শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল এবং দেলোয়ার হোসেন ওরফে রিপনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। এই তিনজনের ডেথ রেফারেন্সের শুনানি হয়েছে।
একই রায়ে হান্নানের ভাই মহিবুল্লাহ ওরফে মজিবুর রহমান এবং মুফতি মঈন উদ্দিন ওরফে আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন দেয়া হয়।
পাঁচ দণ্ডপ্রাপ্তই তাদের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। সবাই বর্তমানে কারাগারে রয়েছে।
২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটে শাহজালাল মাজার প্রাঙ্গণে তৎকালীন ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর উপর গ্রেনেড হামলা হয়। ঘটনাস্থলেই পুলিশের একজন কর্মকর্তা মারা যান, আহত আরো দুজন পরে হাসপাতালে মারা যান।
মি. চৌধুরীসহ সেই হামলায় আহত হয়েছিলেন আরো অন্তত ৪০জন।
পুলিশ অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের আসামী করে মামলা করে। ২০০৭ সালের ৭ জুন অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
৫৬ জনের সাক্ষগ্রহণ শেষে ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণা করেন।
এ বছর ৬ জানুয়ারি হাইকোর্টে মামলার আপিল এবং ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শুরু হয়।
বিবিসি পরিচালনা ব্যবস্থায় বড় ধরণের পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে ব্রিটিশ সংসদ সদস্যদের একটি কমিটি।
বিবিসি ট্রাস্টও পুরোপুরি বিলুপ্ত করে দেয়ার পক্ষে তাদের মত।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সংস্কৃতি, গণমাধ্যম ও ক্রীড়া বিষয়ক কমিটি বলছে, বিবিসির মহাপরিচালক টনি হল ''একটু বেশি স্বাধীন ভাবে'' সংস্থাটি পরিচালনা করছেন। তাকে আসলে কারো কাছেই জবাবদিহি করতে হয়না।
ফলে বিবিসির বোর্ড পুনর্গঠন করে স্বতন্ত্র একজন চেয়ারম্যান নিয়োগের সুপারিশ করেছে ওই কমিটি।
বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস এবং বিবিসি ওয়ার্ল্ড নিউজের মধ্যে স্পষ্ট সীমারেখা টানার সুপারিশ করেছে পার্লামেন্টের এই কমিটি।
যে সনদের মাধ্যমে বিবিসি পরিচালিত হয়, সেই ‘রয়্যাল চার্টার’ ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হচ্ছে।
সাধারণত প্রতি দশকে একবার এই সনদ পর্যালোচনা করা হয়ে থাকে।
২০১৭ সালে বিবিসির জন্য নতুন চার্টার জারি হবে।
কিন্তু তার আগে সংস্থাটির ভবিষ্যৎ কি হবে এবং কিভাবে বিবিসির অর্থায়ন হবে তা নিয়েই আলোচনা চলছে।
এরই অংশ হিসাবে বিবিসির বিভিন্ন বিষয়ে মতামত দিচ্ছে পার্লামেন্টের নানা কমিটি।
যদিও হাউজ অব কমন্সেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
ঠিক চার বছর আগে ঢাকায় নিজেদের বাসায় নৃশংসভাবে খুন হয়েছিলেন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার এবং মেহেরুন রুনি।
সেসময় গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচিত এই হত্যাকান্ডের পর ৪৮ ঘন্টার মধ্যে হত্যাকারীদের ধরার নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন।
কিন্তু ৪৮ ঘন্টা পার হয়ে ৪৮ মাস পরেও সাগর-রুনি হত্যার কোন সুরাহা এখনও হয়নি, ধরা পড়েনি হত্যাকারী।
ওই হত্যাকান্ডের পর আরও যে দুবছর তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন, সেই সময়ের মধ্যেও কেন এই হত্যাকান্ডের সুরাহা করা যায়নি এ প্রশ্নের উত্তরে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বিবিসি বাংলাকে বলেছেন তিনি এই কথাটা ঠিক ওইভাবে বলেন নি।
‘‘আমি আমার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আদেশ দিয়েছিলাম যে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে এটা ধরতে হবে। আমি এই কথাটা বলেছিলাম- কিন্তু দু:খজনক হলেও আমার এই কথাটা ‘টুইস্ট’ করে আমার সাংবাদিক ভাইরা – বিভিন্নভাবে এটাকে টুইস্ট করা হয়েছে।’’
‘‘আমার মুখের যে বক্তব্যটা সেটার তো রেকর্ড আছে।’’
কিন্তু ওই হত্যাকান্ডের পর আরও যে দুবছর তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন, সেই সময়ের মধ্যেও কেন এই হত্যাকান্ডের সুরাহা করা যায়নি – কেন হত্যাকারীদের ধরা যায় নি - এ প্রশ্নের উত্তরে সাহারা খাতুন বলেন সবক্ষেত্রেই যে অপরাধীদের সাথে সাথে ধরা যায়, তা নয়।
‘‘যখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এটা এনকোয়েরি ক'রে- ক্লু পাওয়ার জন্য চেষ্টা করে – তখন কিছু কিছু মামলায় দেখা যায় তারা ক্লুটা পাচ্ছে না। সেই আসামীকে সঠিকভাবে ধরতেও পারছে না।’’
তিনি বলেন সাগর-রুনি হত্যার ক্ষেত্রেও এমনটাই ঘটেছে, যার ফলে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখনও পর্যন্ত আসামীকে ধরার জন্য সঠিক কোনো সূত্র বের করতে পারছে না ।
তিনি বলেন সরকারের আন্তরিকতা ও চেষ্টার কোনো অভাব নেই। পুলিশ কোনো ক্লু পায় নি বা কাউকে এখনও ধরতে পারে নি তার মানে এই নয় যে পুলিশ চেষ্টা করছে না।
সাহারা খাতুন বলেন বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও পুলিশকে ‘‘অবশ্যই বারবার তাগাদা দিচ্ছেন’’ এবং মাসে মাসে তিনি এ ব্যাপারে মিটিংও করছেন।
সাহারা খাতুন যখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন তখন এই মামলার অগ্রগতি নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার যেসব কথাবার্তা হয়েছে সে প্রসঙ্গে সাবেক মন্ত্রী বলেন কিছু কিছু ব্যাপার থাকে যেগুলো সবার সামনে বলা যায় না।
‘‘কথাটা বুঝছেন? অনেক কিছু থাকে যেটাতে গোপনীয়তা রক্ষা করতে হয়। কাজেই তারা কী বলেছে সেই কথাটা তো আমি আপনাদের ওপেনলি বলে দিতে পারি না। আই অ্যাম সরি।’’
বাংলাদেশে অনেক মামলা, অনেক পুলিশি তদন্ত প্রভাবশালীদের কারণে বিঘ্নিত হয় এমন অভিযোগ তিনি জোরের সঙ্গে নাকচ করে দেন।
এই মামলার ক্ষেত্রে তার আমলে কোনো প্রভাব খাটানোর চেষ্টা হয়েছে কীনা এ প্রশ্নের উত্তরে সাহারা খাতুন বলেন ‘‘যতই প্রভাব খাটানো হোক্- আমি বলতে পারি অন্তত আমাদের সরকার কোনো প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে কোনো কাজ করে না।’’
‘‘এই তদন্তের ক্ষেত্রে তেমন কিছু হয়েছে বলে আমি বিশ্বাস করি না। অন্তত আমার সময়ে আমি তো তাদের বলেছি যে কেউ হোক্- হু মে বি- বের করতেই হবে।’’
ইরানের একটি টেলিভিশন স্টেশনে যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে একজন সংবাদ পাঠিকা মুখ খোলার পর আরো অনেকেই প্রকাশ্যে এগিয়ে এসেছেন।
রক্ষণশীল মনোভাবের দেশ ইরানে এই সমস্যাটি প্রকট এবং পুরনো হলেও, সাধারণত কেউ প্রকাশ করতে চাননা।
তবে দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন, প্রেস টিভির ইংরেজি ভাষার সংবাদ পাঠিকা, শিইনা শিরানি সম্প্রতি অভিযোগ তোলেন, দুজন জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক তাকে যৌন হয়রানি করেছেন।
তাকে হয়রানি করার একটি টেলিফোন কথোপকথনও তিনি ফেসবুকে তুলে দেন, যে কণ্ঠটি তার বস হামিদ রেজা ইমাদির কণ্ঠ বলেই ধারণা করা হয়। সেখানে তিনি বার বার তাকে যৌন সম্পর্কের প্রস্তাব দিচ্ছিলেন।
তার এই অডিওটি ১ লাখ ২০ হাজার বারের বেশি শোনা হয়েছে। তাদের ম্যাসেঞ্জার ও হোয়াটস অ্যাপের বার্তা বিনিময়ের এর ছবিও অনলাইনে তুলে দেয়া হয়েছে।
এ ঘটনার পর, অনেকটা অভাবনীয় ভাবে, ইরানের রাষ্ট্রীয় প্রেস টিভি জানিয়েছে, তারা তাদের দুজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে তদন্ত শুরু করেছে। যদিও ওই কর্মকর্তাদের নাম তারা প্রকাশ করেনি।
যদিও প্রেস টিভি বলছে, শিইনা শিরানির অভিযোগটি সন্দেহজনক, কারণ তিনি কারো বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করেননি। এর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে তাদের ধারণা।
তবে শিইনা শিরানি বলছেন, ইরানের মতো সমাজে যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার পরও তার অভিযোগ করার মতো কোন জায়গা ছিল না। কারণ যাদের কাছে তিনি যেতে পারতেন, তাদের কাছেই তিনি হয়রানির শিকার হয়েছেন।
তার এই ঘটনা ইরানের কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছে। সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই তাকে সমর্থন দিচ্ছেন।
একজন নারী লিখেছেন, তাঁর মতো ঘটনা আমার জীবনেও ঘটেছে। আমি কেঁদেছি, কিন্তু আমার যাবার মতো কোন জায়গা ছিল না।
আরেকজন লিখেছেন, আমি একটি সরকারি মন্ত্রণালয়ের কর্মী হওয়ার পরও শিইনার মতো অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছি।
এ ঘটনার পর চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন মিজ শিরানি। তিনি এখন ইরানের বাইরে বসবাস করছেন।
ভারত শাসিত কাশ্মীরের সিয়াচেন হিমবাহে বরফধসের নিচ থেকে আশ্চর্যজনকভাবে উদ্ধার হওয়া ভারতীয় সেনা সদস্য হনুমানথ্থাপ্পা কোপ্পাঢ় আজ বৃহস্পতিবার মারা গেছেন।
পৃথিবীর উচ্চতম যুদ্ধক্ষেত্র বলে পরিচিত সিয়াচেন হিমবাহে প্রায় ২৫ ফিট বরফের তলায় ৬ দিন চাপা পড়ে ছিলেন তিনি। প্রচন্ড ঠান্ডায় দীর্ঘ সময় কাটানোর ফলে তাঁর হাইপোথার্মিয়া হয়ে গিয়েছিল। ফুসফুসে নিউমোনিয়াও ধরা পড়ে। এক এক করে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হচ্ছিল।
আজ সকাল থেকে গভীর কোমায় চলে গিয়েছিলেন ওই সেনা সদস্য। দুপুরে তাঁর মৃত্যু হয়।
গোটা দেশের মানুষ যখন মি. কোপ্পাঢ়ের জন্য শ্রদ্ধা জানাচ্ছে, তখনই প্রশ্ন উঠছে সত্যিই কি এই মৃত্যুর কোনও যৌক্তিকতা আছে?
সিয়াচেন হিমবাহ দখলে রাখতে গিয়ে ১৯৮৪ সাল থেকে এ নিয়ে ৮৮০ জন ভারতীয় সেনা মারা গেলেন। বেশিরভাগেরই মৃত্যু হয়েছে চূড়ান্ত কঠিন প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে।
অন্যদিকে প্রতি চারদিনে একজন পাক সেনা মারা যান সিয়াচেন পাহারা দিতে গিয়ে।
কারাকোরাম পর্বতের সিয়াচেন হিমবাহ দখলে রাখা নিয়ে দুই চিরবৈরী দেশ ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে লড়াই শুরু হয় আশির দশকের গোড়া থেকে।
তবে দ্বন্দ্বের বীজ লুকিয়ে ছিল দুই দেশের মধ্যে সই হওয়া করাচি আর সিমলা চুক্তি দুটির মধ্যেই – যেখানে ‘এন জে ৯৮৪২’ নামের একটি অবস্থানের পরে নিয়ন্ত্রণ রেখা নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা হয় নি মানচিত্রে। মনে করা হত ওই এলাকার আবহাওয়া এতটাই প্রতিকুল, যেখানে কোনও মানুষ থাকতে পারবে না।
“পাকিস্তানি অনুমতি নিয়ে সিয়াচেন হিমবাহে পর্বত অভিযানের সংখ্যা বাড়তে থাকে সাতের দশকের শেষের দিকে। তখনই আমরা খবর পাই যে লন্ডনের একটি দোকান থেকে সিয়াচেন অভিযানের জন্য প্রচুর পোশাক আর সরঞ্জাম কেনা হচ্ছে। পাকিস্তান সিয়াচেন দখলের জন্য তৈরি হচ্ছে। তড়িঘড়ি বিমানবাহিনী আর স্থল সেনা পাঠিয়ে ১৯৮৪ সালে ভারত দখল নেয় সিয়াচেনের,” বলছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত প্রধান জেনারেল শঙ্কর রায়চৌধুরী।
ওই এলাকায় পৌঁছতে পাক বাহিনীর মাত্রই কয়েকদিন দেরী হয়ে গিয়েছিল। ৭৪ কিলোমিটার লম্বা এই হিমবাহের দখল নিয়ে তখন থেকেই দ্বন্দ্ব চলছে দুই দেশের। সিয়াচেন হয়ে উঠেছে পৃথিবীর উচ্চতম যুদ্ধক্ষেত্র।
“সিয়াচেন কৌশলগত কারণেই আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর পশ্চিমদিক থেকে পাকিস্তান আর পূবদিকে চীন আমাদের ওপরে হামলা চালাতে পারে। পুরো লাদাখ এলাকাকেই ভারতের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে পারত যদি আমরা সিয়াচেন দখল না করতে পারতাম,” বলছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল কে কে গাঙ্গুলি।
ভারতের দিকে যেমন হিমবাহটি দখলে রাখতে গিয়ে সেনাসদস্যদের মৃত্যু হয় প্রাকৃতিক কারণে, পাকিস্তানের দিকেও মৃত্যুর সংখ্যা কম না। ২০১২ সালে এক বড় বরফধসে একসঙ্গেই ১৪০ জন পাক সেনা সদস্য মারা গিয়েছিলেন।
একটি সাম্প্রতিক হিসাব বলছে ভারতের দিকে গড়ে প্রতি দুদিনে একজন আর পাকিস্তানি বাহিনীতে গড়ে প্রতি চার দিনে একজন করে সেনা সদস্যের মৃত্যু হয়। আর দুই বৈরী দেশের গোলাগুলির কারণে নয়, বেশিরভাগ সেনাই মারা গেছেন বরফ চাপা পড়ে বা অতিরিক্ত ঠান্ডার মতো চরম প্রতিকুল আবহাওয়ার জন্য।
পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষে তাদের চৌকিগুলিতে পৌঁছন তুলনামূলকভাবে সহজ, কারণ তারা হিমবাহের কম উচ্চতার দিকটা দখলে রেখেছে, অন্যদিকে ভারতীয় বাহিনীকে শুধুই হেলিকপ্টারের মাধ্যমে পৌঁছতে হয় বেশি উচ্চতায় থাকা এলাকাতে।
এই সেনাসদস্যদের কাছে একেকটি রুটি পৌঁছিয়ে দিতে ভারতের খরচ হয় প্রায় দুশো টাকা, আর পাকিস্তান এক টিন কেরোসিন পৌঁছতে খরচ করে ২০ মার্কিন ডলার। সিয়াচেন দখলে রাখার জন্য ভারত প্রতিদিন এক মিলিয়ান মার্কিন ডলার খরচ করে।
সত্যিই কি প্রয়োজন রয়েছে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করার?
জেনারেল শঙ্কর রায়চৌধুরীর কথায়, “খরচের তো প্রশ্ন নেই। এটা ভারতের জমি। আমরা কোনওমতেই ছাড়ব না। তাতে খরচ হলে হবে। পাকিস্তানকে তো বহুবার বলা হয়েছে যে নিয়ন্ত্রণ রেখার মানচিত্রে যে ধোঁয়াশা রয়েছে, তা আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে নিতে। তারা তো করে নি সেটা। আমরা কেন আমাদের জমি ছাড়ব!”
পাকিস্তানেও যেমন সিয়াচেন দখলে রাখার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে – সিয়াচেন নামের একটি নাটকের মাধ্যমে সেখানে প্রহরারত সেনাসদস্যদের কঠিন জীবনযাত্রা তুলে ধরা হয়েছে। আবার ভারতেও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে সিয়াচেনের জন্য এই বিপুল খরচ নিয়ে।
ইনস্টিটিউট অফ পিস এন্ড কনফ্লিক্ট স্টাডিসের পত্রিকায় একটি নিবন্ধে অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গুরমীত কানওয়াল লিখেছেন সিয়াচেন হিমবাহ বা তার আশেপাশের পর্বতশিখরগুলি দখলে রাখার আসলে কোনও কৌশলগত সুবিধাই নেই। সিয়াচেন দখলে রাখতে গিয়ে উল্টে ক্ষতি হচ্ছে, বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ভাল করার প্রচেষ্টা।
আর ব্রুকিংস্ ইনস্টিটিউটশনের বিশেষজ্ঞ স্টিফেন কোহেন ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সিয়াচেন নিয়ে এই দ্বন্দ্বকে বর্ণনা করছেন ''দুই টাকমাথা লোকের একটা চিরুনি নিয়ে লড়াই'' বলে।