director and actors                 বিবিসি বাংলার স্টুডিওতে চিত্রনায়িকা নায়িকা নিপুণ (বামে), পরিচালক অরুপ রতন চৌধুরী (মাঝে) এবং চিত্রনায়ক ফেরদৌস (বামে)                
বাংলাদেশে মাদকবিরোধী সচেতনতা তৈরিতে যোগ হয়েছে বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র। দেশটিতে শুক্রবার একটি চলচ্চিত্র মুক্তি পাচ্ছে, যেটিকে নির্মাতা এবং কলাকুশলীরা একটি মাদকবিরোধী চলচ্চিত্র হিসেবে বর্ণনা করছেন।
চিত্রনায়ক ফেরদৌস এবং নায়িকা নিপুণ অভিনীত ‘স্বর্গ থেকে নরক’ নামের এই চলচ্চিত্রটির নির্মাতা বলছেন, এর মাধ্যমে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে মাদকের ভয়াবহতা এবং এ থেকে বেরিয়ে আসার একটি বার্তা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রচারণার মাধ্যমে মাদক বিষয়ে সচেতনতা তৈরির চেষ্টা হলেও, চলচ্চিত্র মাধ্যমে এধরণের উদ্যোগ নতুন।
বাংলাদেশে সরকারী হিসেবে দেশটিতে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৫০ লক্ষাধিক। এবং বেসরকারী হিসেবে এই সংখ্যা প্রায় ৭০-৮০ লক্ষ। এমন পরিস্থিতিতে মাদকের ভয়াবহতা এবং তা থেকে ফিরে আসার কাহিনী নিয়ে তৈরি হয়েছে চলচ্চিত্র ‘স্বর্গ থেকে নরক’।
চলচ্চিত্রটির নির্মাতা এবং চিত্রনাট্যকার ড. অরূপ রতন চৌধুরী, যিনি গত প্রায় ৩০ বছর যাবত মাদকবিরোধী আন্দোলনের সাথে যুক্ত।
তিনি বলেন, "শুধু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে মাদক পাচারকারীদের ধরে বা মাদক আটক করে কোন লাভ হচ্ছে না। মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়ছে। আমি মনে করি চলচ্চিত্র সর্বশ্রেষ্ঠ যার মাধ্যমে একটি শিক্ষা বা একটি সচেতনতামূলক কার্যক্রম নিয়ে আমি তরুণ সমাজের কাছে পৌছাতে পারি।"
ড. চৌধুরী বলছেন, চলচ্চিত্রটি একটি সামাজিক বার্তাসম্বলিত চলচ্চিত্র হলেও বাংলাদেশের বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের সকল বিনোদনই এই চলচ্চিত্রে থাকছে। আর একারণেই এধরণের চলচ্চিত্র মানুষের মধ্যে আরো বেশি সচেতনতা তৈরি করতে পারবে বলে মনে করছেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ।
"অনেক চলচ্চিত্রেই আমরা বিভিন্ন সামাজিক অসঙ্গতি কিংবা সমস্যা তুলে ধরে তাকে পাশ কাটিয়ে চলে যাই। আমরা দেখাতে চেষ্টা করেছি যে ড্রাগসটা কিভাবে মানুষের মধ্যে ঢুকে পড়ছে এবং কিভাবে আমরা তাকে সুস্থ করে তুলতে পারি এর পুরো প্রক্রিয়া আমরা দেখিয়েছি। তবে সেটা তথ্যচিত্রের স্টাইলে নয়," বলেন ফেরদৌস।
director and actors                                     'স্বর্গ থেকে নরক' চলচ্চিত্রের শ্যুটিংয়ের একটি দৃশ্য                
এই চলচ্চিত্রের নায়িকার চরিত্রে রয়েছেন অভিনেত্রী নিপুণ আক্তার। মাদকবিরোধী চলচ্চিত্রের প্রতি দর্শকরা কেন আগ্রহী হবে ব্যখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলছিলেন, এধরণের চলচ্চিত্রের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরী থেকে সব বয়সের মানুষই সচেতন হতে পারে।
"চলচ্চিত্র দেখতে গেলে মানুষ বুঝতে পারবে যে এখানে বিনোদনের মাধ্যমে খুব বড় একটা জিনিস দেখানো হচ্ছে। শুধু স্মোকিং, ড্রাগস নিচ্ছে কিংবা ওয়াইন খাচ্ছে সেটা দেখানো নয়, দেখানো হচ্ছে ড্রাগস কিভাবে একটি পরিবারকে ধ্বংস করে দিতে পারে," বলেন নিপুণ।
"আমি নিজেই একসময় ড্রাগস খাইতাম। পরে আমার বন্ধু-বান্ধব খায়া কি করে না করে দেখছি, নিজের অবস্থা দেখছি। তারপর ছাইড়া দিছি। সিনেমা দেইখা এইটা আরো সুন্দরভাবে হইতে পারে, যে দেখবে সেতো আর পোলাপান না। ছবিতে যদি এইটা দেখানো হয় তাইলে ও তো বোঝেই" ঢাকার একটি প্রেক্ষাগৃহের সামনে বলছিলেন একজন সিনেমার দর্শক।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমান বলছেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে আইন প্রয়োগের সাথে সাথে জনসচেতনতা তৈরি সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আর এই সচেতনতা তৈরির ক্ষেত্রে মাদকবিরোধী চলচ্চিত্র একটি বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
তিনি বলেন, "আমরা যদি সব এজেন্সি মিলেও মাদকের অবৈধ পাচার রোধ করে দেয়, কিন্তু দেশের ভেতরে যদি চাহিদা কমানো সম্ভব না হয়, তাহলেও এটা রোধ করা সম্ভব হবে না। যারা এখনো মাদক নেয়নি তাদেরকে সচেতন করার জন্য এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে তাদেরকে সচেতন করার কোন বিকল্প নেই।"
মি. রহমান বলছেন, মাদকবিরোধী কর্মসূচির অংশ হিসেবে তারা বিভিন্ন জেলার হলগুলোতে মাদকবিরোধী চলচ্চিত্র প্রদর্শনের উদ্যোগ নিচ্ছেন। আর এই চলচ্চিত্রটি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও প্রচারের উদ্যোগ নিচ্ছেন চলচ্চিত্রটির নির্মাতা।