শুক্রবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

উন্নতির স্বার্থে ঢাকার আমলাদের জেলায় পাঠাতে চান মুহিত


বাংলাদেশের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে

 সব জেলাকে ‘আলাদা রাষ্ট্রের মতো’ গড়ে তুলে রাজধানীর আমলাদের স্থানীয় 

সরকারে পাঠানোর ওপর জোর দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

অবশ্য তা বাস্তবায়ন করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে মন্তব্য করে রাজনীতিবিদদের সতর্ক
করেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে মুহিত বলেন, “বাংলাদেশ যে উন্নয়নের 
লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সেটি বাস্তবায়ন করতে ৬৪ জেলাকে পৃথক রাষ্ট্রের ন্যায় গড়ে 
তোলা হবে। এর জন্য ২০১৮-১৯ সালের মধ্যে এক কোটি ৪৫ লাখ দক্ষ জনশক্তি গঠনের 
কাজ চলছে।
“এরজন্য কেন্দ্রীয় আমলাতন্ত্রকে সংকোচন করে জেলায় পাঠিয়ে দিতে হবে। ঢাকা
থেকে আমলাতন্ত্রকে স্থানীয় সরকারে পদায়ন করতে হবে। এটা রাজনীতিবিদদের জন্য
একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এটা করতে হলে অনেক বাধা-বিপত্তি আসবে। সেসব বাধা বিপত্তি দূর
করে বাংলাদেশের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে হবে।”
সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি
এসব কথা বলেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমাদের প্রতি জেলায় ২০ থেকে ২২ লাখ জনগণ 
রয়েছে। বিশ্বের ৬০টি দেশে জনগণ এর তুলনায় কম। আবার ৫০টি দেশের আয়তন এই 
জেলার তুলনায় কম।”
দেশকে উন্নয়নের পথে নিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম ছাড়া জেলা শহরগুলো নিয়ে সরকারের নতুন
 পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “জেলা পরিষদের ক্ষমতা বাড়াতে হবে।
স্থানীয় সরকার পরিষদে পদায়ন করতে হবে। এসব প্রতিষ্ঠান হবে দায়িত্বশীল ও
সত্যিকারের জনগণের প্রতিষ্ঠান। এজন্য আমাদের সবাইকে সাবধান থাকতে হবে।”

আগামী বাজেট উপস্থাপনের সময় বড় বড় প্রকল্পের জন্য পৃথক ‘প্রজেকশন’ থাকবে বলেও
জানান অর্থমন্ত্রী।
“আগামী বছর থেকে বাজেট উপস্থাপন বদলে যাবে। সরকারের বড় প্রকল্পগুলো নিয়ে
বাজেটে স্বতন্ত্র হিসাব থাকবে। পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র, মহেশখালী
পাওয়ার প্লান্ট, মেট্টোরেল প্রকল্প ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসহ যেসব ট্রান্সফরমেশন প্রজেক্ট আছে
 সেগুলো আলাদাভাবে দেখানো হবে।”
এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন শুধু সুদমুক্ত ঋণ দিয়ে হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বড় বড়
প্রকল্প বাস্তবায়নে বৈদেশিক ঋণ সহজ শর্তের উপরের লেভেলে নিয়ে যেতে হবে; যথেষ্ট
ঋণ নিতে হবে। এজন্য আমাদের সাবধানে ঋণ পর্যবেক্ষণ করতে হবে।”
এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) প্রকল্প হলে গ্যাস সংকট থাকবে না মন্তব্য করে
অর্থমন্ত্রী বলেন, “ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পের প্রসারে পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ করা হবে। তবে
বাসা-বাড়ির রান্নার গ্যাস কখনই পাবে না।”
দেশকে দারিদ্রমুক্ত করতে সরকারের অঙ্গীকার বাস্তবায়নের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন,
“১০ থেকে ১৪ শতাংশ মানুষ সবসময়ই রাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল থাকে। বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ও
 সমাজের নির্যাতিত মানুষকে রাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল থাকতেই হয়।
“বর্তমান সরকারের এই মেয়াদেই আমরা সেই অবস্থায় চলে যাব। আমাদের বাণিজ্যের
কলেবর হবে জাতীয় আয়ের অর্ধেক। দারিদ্রতা থাকবে না; জীবন-যাপনের মান উন্নত হবে।
আজ উন্নত বিশ্বের মানুষ যেমন জীবন-যাপন করছে সেভাবেই হবে


ঢাকায় একদিন ব্যক্তিগত গাড়ি বের না করার আহ্বান

Image captionপ্রায়ই ঢাকার রাস্তা চলে যায় ব্যক্তিগত গাড়ির দখলে। (ছবি শায়লা রুখসানা)
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় মাসে অন্তত একটি দিন 'নো কার ডে' পালন করার উদ্যোগ নিয়েছেন একদল তরুণ। সেই দিনটিতে লোকজনকে নিজেদের ব্যক্তিগত গাড়ি রাস্তায় বের না করতে আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
আর আজ বৃহস্পতিবার থেকে প্রথম এই 'নো কার ডে' (No Car Day) পালন শুরু হচ্ছে।
দেশের সব বড় বড় কর্পোরেট অফিসে গিয়ে তাদের প্রধান কর্তাব্যক্তিদের অনুরোধ করেছেন এই তরুণরা। যাতে প্রতিষ্ঠানের অন্য কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি আনতে নিষেধ করা হয়।
এই উদ্যোগের নিয়েছেন যারা তাদের একজন বেসরকারি ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আরাফাত নোমান।
তিনি বলছেন, “প্রথমে অনেকেই হেসে উড়িয়ে দিয়েছিল। তখন তাদের বুঝিয়েছি খুব জরুরি না হলে বের না করতে অনুরোধ করেছি। এখানে কোনও জোরাজুড়ি নেই”।
Image copyrightBBC Bangla
Image captionএকটি দিন 'নো কার ডে' পালনের ফলে যানজট এড়ানোর প্রত্যাশা উদ্যোক্তাদের। (ফাইল ছবি)
এই উদ্যোগে কতটা সাড়া পাবেন বলে মনে করছেন? এমন প্রশ্নে আয়োজকরা বলছেন, তারা বেশ সাড়া পাচ্ছেন। ফেসবুকে অন্তত ১০ হাজার মানুষ এতে অংশ নেয়ার আগ্রহ দেখিয়েছেন।
তবে তারা বলছেন, খুব জরুরি প্রয়োজন হলে ভিন্ন কথা।
তাদের এই উদ্যোগ সফল হলে মাসে অন্তত একদিন তারা নো কার ডে পালনের আহ্বান জানাবেন। এরপর থেকে তারা বুধবার নো কার ডে পালন করবেন।
তারা মনে করছেন, এই উদ্যোগ সফল হলে জ্বালানী সাশ্রয় থেকে শুরু করে ঢাকাবাসীর প্রধান কষ্টের কারণ যানজট অন্তত একদিন হলেও অনেকখানি কমে যাবে।
সেইসাথে গাড়ি ভাগাভাগি করে ব্যবহারের প্রবণতা তৈরিও তাদের উদ্দেশ্য। বাংলাদেশে এ ধরণের উদ্যোগ প্রথম হলেও ২০০৭ সালে চীনে প্রথম শুরু হয় 'নো কার ডে' পালনের উদ্যোগ।
পরবর্তীতে ইউরোপের অনেক দেশেই এটা শুরু হয়।

আঙ্কারা হামলায় সিরীয় কুর্দী জঙ্গীদের দায়ী করছে তুরস্ক

Image copyrightEPA
Image captionআঙ্কারায় পার্লামেন্ট ভবনের কাছে বিস্ফোরণে ২৮ জন প্রাণ হারিয়েছে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইপ এরদোয়ান বলছেন রাজধানী আঙ্কারায় বুধবারের বোমা বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে চোদ্দজনকে আটক করা হয়েছে।
তিনি বলেছেন আরও লোককে গ্রেপ্তার করা হবে।
আঙ্কারায় পার্লামেন্ট ভবন এবং সেনা সদরদপ্তরের কাছে ঘটানো বুধবারের ওই বিস্ফোরণে মারা গেছে ২৮ জন।
এর আগে দেশটির প্রধানমন্ত্রী এই ঘটনার জন্য কুর্দী জঙ্গীদের দায়ী করে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্টও সেই কথাই বলেছেন।
Image copyrightReuters
Image captionপ্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইপ এরদোয়ান বলেছেন বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ২৮জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আহমেদ দাভুতগলু বলেন কুর্দী জঙ্গী গোষ্ঠি পিকেকে-র সহায়তায় ওয়াইপিজি নামে সিরীয় কুর্দী জঙ্গী এই হামলা চালিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন বোমা হামলাকারীর নাম সালিহ নেসার- এবং সে সিরীয় নাগরিক।
তবে ওয়াইপিজি গোষ্ঠি বিবিসিকে জানিয়েছে তারা এই হামলার জন্য দায়ী নয় এবং পিকেকে বলেছে কারা এই হামলা চালিয়েছে তা তারা জানে না।
তুরস্কের সেনাবাহিনী ইতিমধ্যেই উত্তর ইরাকে পিকেকে লক্ষ্যবস্তুর ওপর গত রাতে শাস্তিমূলক বিমান হামলা চালিয়েছে এবং মিঃ দাভুতগলু বলেছেন পিকেকে

মালয়েশিয়ায় বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় কর্মী যাবে আবার


Image captionমালয়েশিয়ায় যেতে আগ্রহী বহু মানুষ সরকারি নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। (ছবি শায়লা রুখসানা)

বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় শ্রমিক পাঠানোর বিষয়ে একটি সমঝোতা চুক্তি সই হয়েছে আজ। একে বলা হচ্ছে জিটুজি প্লাস পদ্ধতি।
রাজধানীর ইস্কাটনে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশের পক্ষে সই করেন প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি এবং মালয়েশিয়ার পক্ষে সে দেশের মানবসম্পদ মন্ত্রী দাতো রিচার্ড রায়ট আনাক জায়েম সই করেন।
এর আগে বেসরকারি রপ্তানিকারকদের বাদ দিয়ে শুধুমাত্র সরকারি ব্যবস্থাপনায় শ্রমিক পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তবে নানা জটিলতায় গতি হারায় সে কার্যক্রম।
এবার আবার বেসরকারি রপ্তানিকারকদের সংযুক্ত করা হল।
নতুন এই পদ্ধতিতে মনোপলির অবকাশ তৈরি হবে বলে আশংকা প্রকাশ করে আসছেন বেসরকারিভাবে শ্রমিক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রা।
তবে কেউ এক

যে ছবি দেখে অঝোরে কাঁদলেন হৃতিক রোশন-আমির খান

Image copyrightbbc delhi
Image caption৫ই সেপ্টেম্বর ১৯৮৬ সালে ৩৬১ জন যাত্রী ও ১৯জন ক্রু নিয়ে প্যান অ্যাম বিমানটি হাইজ্যাক করে চারজন সশস্ত্র যাত্রী। (নীরজা ছবির একটি দৃশ্য)
সালটা ১৯৮৬, তারিখ ৫ই সেপ্টেম্বর। পাকিস্তানের করাচি বিমানবন্দরে মুম্বাই থেকে সবে এসে নেমেছে প্যান অ্যামের ফ্লাইট ৭৩, একটু বাদেই তা রওনা দেবে ফ্রাঙ্কফুর্ট হয়ে নিউ ইয়র্কের পথে।
ঠিক সেই সময়ই ৩৬১জন যাত্রী আর ১৯জন ক্রু সদস্যকে নিয়ে সেই বিমানটিকে হাইজ্যাক করে চারজন সশস্ত্র জঙ্গী।
লিবিয়ার মদতপুষ্ট আবু নিদাল অর্গানাইজেশনের সদস্য সেই জঙ্গীরা চেয়েছিল সেটিকে ইসরায়েলে উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে কোনও উঁচু ভবনের সঙ্গে ধাক্কা মেরে বিরাট এক আঘাত হানতে।
ওই বিমানের ফ্লাইট পার্সার, অর্থাৎ প্রধান ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট ছিলেন নীরজা ভানোত – যার ওপর ছিল বিমানের সব আরোহীর দেখাশোনা আর তাদের যাত্রাকে আরামদায়ক করে তোলার প্রধান দায়িত্ব।
ভারতের চন্ডীগড়ে জন্মানো নীরজা তখন তার তেইশতম জন্মদিন থেকে মাত্র কয়েক ঘন্টা দূরে – মডেলিং আর প্যান অ্যাম এয়ারলাইন্সের চাকরি সামলে কেরিয়ারে তরতর করে উন্নতি করছেন।
ছিনতাই হওয়া বিমানটিতে জঙ্গীদের প্রথম নিশানা ছিলেন মার্কিন নাগরিকরা। মোট ৪১জন মার্কিন নাগরিক ছিলেন সেই বিমানে।
কিন্তু নীরজা ও তার সঙ্গী অ্যাটেনডেন্টরা মিলে প্রথমেই কৌশলে সেই মার্কিন নাগরিকদের পাসপোর্টগুলো লুকিয়ে ফেলেন – যাতে জঙ্গীরা তাদের আলাদা করতে না পারে।
Image copyrightTrailer of Neerja
Image captionতিনটি বাচ্চাকে অসম সাহসিকতায় জঙ্গীদের বুলেটবৃষ্টি থেকে রক্ষা করতে গিয়ে নীরজা নিজের প্রাণ আর বাঁচাতে পারেননি। (নীরজা ছবির দৃশ্য)
করাচি এয়ারপোর্টে ১৭ ঘন্টা ধরে হাইজ্যাক করে রাখার পর বিমানের ভেতর জঙ্গীরা গুলি চালাতে ও বিস্ফোরক প্রয়োগ করতে শুরু করে – তখনই মরিয়া নীরজা ভানোত বিমানের ইমার্জেন্সি ডোর খুলে একে একে যাত্রীদের বাইরে বের করতে থাকেন।
ইমার্জেন্সি ডোর খোলার পর নীরজা নিজেই প্রথমে বাইরে বেরোতে পারতেন, কিন্তু তা না-করে তিনি আগে সব যাত্রীকে বেরোতে সাহায্য করেন।
কিন্তু তিনটি বাচ্চাকে অসম সাহসিকতায় জঙ্গীদের বুলেটবৃষ্টি থেকে রক্ষা করতে গিয়ে নীরজা নিজের প্রাণ আর বাঁচাতে পারেননি, বিমানের ভেতরই গুলিতে লুটিয়ে পড়ে তার নিথর দেহ।
শেষ পর্যন্ত ৪১জন মার্কিন যাত্রীর মধ্যে মারা যান মাত্র দুজন। ভারত, পাকিস্তান, আমেরিকা ছাড়াও ইউরোপ ও এশিয়ার নানা দেশের যাত্রীরা ছিলেন ওই বিমানে – নিজের প্রাণ দিয়ে তাদের এক রকম জীবন উপহার দিয়ে যান নীরজা ভানোত।
আজ থেকে প্রায় তিরিশ বছর আগে নীরজার সেই অসম সাহসিকতা আর মানবিকতা আজ প্রায় রূপকথার মতো শোনাতে পারে – তবে ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই কিন্তু তাকে অসীম শ্রদ্ধায় কুর্নিশ জানিয়েছিল।
নীরজা ভানোতকে ভারত সরকার মরণোত্তরভাবে সর্বোচ্চ বেসামরিক সাহসিকতা সম্মান অশোক চক্রে ভূষিত করেছিল। ২০০৪ সালে ভারতের পোস্টাল সার্ভিস তার সম্মানে একটি ডাকটিকিটও প্রকাশ করে।
যে দেশের মাটিতে নীরজা ভানোত অসীম সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন, সেই পাকিস্তান সরকারও তাকে ‘তামঘা-ই-ইনসানিয়াত’ খেতাবে ভূষিত করেছিল, যা সে দেশে মানবিকতার শ্রেষ্ঠ স্বীকৃতি।
Image copyrightIndia gov
Image caption২০০৪ সালে ভারতের পোস্টাল সার্ভিস তার সম্মানে একটি ডাকটিকিটও প্রকাশ করে।
একজন মানুষ ভারত ও পাকিস্তান, উভয় দেশেই তার সাহস ও মানবিকতার জন্য সেরা সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন – নীরজা ভানোত ছাড়া এমন দৃষ্টান্ত বোধহয় আর একটিও নেই।
নীরজা ভানোতের জীবনের এই অসাধারণ কাহিনি নিয়েই শুক্রবার ভারতে মুক্তি পাচ্ছে একটি সিনেমা – নীরজা নামে যে ছবিটির পরিচালক হলেন রাম মাধবানি।
এই জীবনী-ভিত্তিক ছবি বা বায়োপিকে নীরজার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন বলিউড অভিনেত্রী সোনম কাপুর।
ভারতের চলচ্চিত্র জগতের দিকপালরা প্রায় সবাই মুক্তির আগে এই ছবিটির প্রিভিউ প্রিমিয়ার দেখে উচ্ছ্বসিত – তাদের প্রত্যেকে টুইটারে বা সোশ্যাল মিডিয়াতে নীরজা ছবির প্রশংসায় ফেটে পড়েছেন।
বলিউড তারকা হৃতিক রোশন টুইট করেছেন ‘অবিশ্বাস্য একটা পারফরম্যান্স! কোন্ ছবি দেখে শেষবার এত কেঁদেছি, মনে করতে পারলাম না!’
Image copyrightspice
Image captionনীরজা ছবিতে ফ্লাইট অ্রাটেনডেন্ট নীরজা ভানোতের ভূমিকায় বলিউড অভিনেত্রী সোনম কাপুর।
আর এক তারকা আমির খানও নীরজা দেখে একই রকম উচ্ছ্বসিত ও আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছেন। তিনিও বলেছেন সকলের এই ছবিটা দেখা উচিত।
মুম্বাইয়ে সিনেমা-জগতের ছোটবড় প্রায় সব অভিনেতাই নীরজা নিয়ে একই রকম ভাললাগা ব্যক্ত করেছেন।
নীরজার জীবনের এই গল্প বলার জন্য তার পরিবার এই ছবির নির্মাতাদের কাছে একটি পয়সাও রয়্যালটি দাবি করেননি।
গোটা ভারত এখন রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনায় তিন দশক আগের এক অবিশ্বাস্য মানবিকতার চিত্রায়ন দেখার অপেক্ষায় বসে আছে!

মাহফুজ আনাম ইস্যুতে আওয়ামী লীগে ভিন্ন ভিন্ন মত

Image captionমাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা নিয়ে আওয়ামী লীগে অস্বস্তি।
বাংলাদেশে ইংরেজী দৈনিক দ্যা ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে একের পর এক মানহানির মামলা নিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতারা ভিন্ন ভিন্ন মতামত দিচ্ছেন।
এদের একাংশ বলছেন, একজন সম্পাদকের বিরুদ্ধে এই মামলা সরকার ও দলের জন্য অস্বস্তি তৈরি করছে। অন্য অংশটি মামলার প্রতি সমর্থন জানাচ্ছেন।
মি. আনামের বিরুদ্ধে এপর্যন্ত ৭৩টি মামলা হয়েছে। বেশিরভাগ মামলায় মানহানির অভিযোগ এনে বলা হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে মি: আনাম ডিজিএফআইয়ের দেয়া তথ্য যাচাই না করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে পত্রিকায় খবর প্রকাশ করেছিলেন।
ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের শাস্তি চেয়ে প্রথম বক্তব্য তুলে ধরেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা এবং ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয়। ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে তিনি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে মাহফুজ আনামের গ্রেপ্তার এবং বিচার চেয়েছিলেন।
এরপরই দেখা গেছে, সংসদে ইস্যুটি তোলেন আওয়ামী লীগের কয়েকজন সদস্য। এখন সারাদেশে একের পর এক মামলা হচ্ছে মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে।
তবে প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানার স্বামী শফিক সিদ্দিকী একের পর এক মামলা করাকে বাড়াবাড়ি বলে মনে করেন।
''আমার অবাক লাগে - এটা নিয়ে একটু বাড়াবাড়ি হয়েছে। জয় কিন্তু কথা বলে ছেড়ে দিয়েছে। জয় কোনো কেস করে নাই। প্রধানমন্ত্রী কোনো কেস করে নাই। অন্য লোক মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা করছে। মাহফুজ আনাম দেশদ্রোহী না। ভিন্নমত হইতে পারেন।'' বেসরকারি টেলিভিশন বাংলাভিসনে নিউজ অ্যান্ড ভিউজ নামে অনুষ্ঠানে বলেন শফিক সিদ্দিকী।
তিনি প্রশ্ন তোলেন মানহানির মামলা অন্য কেউ কীভাবে করেন?
মাহফুজ আনামকে ঘিরে এই ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে কোনো বক্তব্য এখনও আসে নি।
তবে আওয়ামী লীগের ভেতর থেকে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য শোনা যাচ্ছে। এখনকার পরিস্থিতি নিয়ে সরকার এবং আওয়ামী লীগ যে সমালোচনার মুখে পড়ছে সেটা দলের অনেকেই স্বীকার করছেন।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নূহ আলম লেনিন মনে করেন, পরিস্থিতিটা সরকার এবং তাদের দলের জন্য অস্বস্তি তৈরি করছে।
“ফেসবুকে দেয়া সজিব ওয়াজেদ জয়ের বক্তব্যের সাথে মামলার কোন সম্পর্ক নেই। এটা একটা সাধারণ প্রতিক্রিয়া হয়েছে। সেই প্রতিক্রিয়া থেকে কেউ উৎসাহে, কেউ অতিউৎসাহে মামলা করছে।”
মি: লেনিন আরও বলেছেন, “একদিকে কর্মীদের ক্ষোভের প্রকাশ ঘটছে, এটা যেমন সত্য, তেমনি এত মামলা দেয়ার ফলে অস্বস্তিকর পরিবেশও তৈরি করছে। এবং অহেতুক সরকারের ওপর দায় আসছে।”
তবে দলটির নেতাদের সাথে কথা বলে মনে হয়েছে, যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয় একটি বক্তব্য তুলে ধরেছিলেন, ফলে আওয়ামী লীগের তরুণ অংশ সেটাকে একটা দায়িত্ব হিসেবে মনে করেছে। তরুণ অংশই মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ব্যাপারে একটা অবস্থান নিচ্ছে। অবশ্য তরুণ অংশের পক্ষে দলের প্রভাবশালী অংশও রয়েছে।
দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেছেন, “যেহেতু আমাদের দলীয় নেত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যা খবর ডেইলি স্টার প্রকাশ করেছিল, সেকারণে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে মামলা করছে। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে কী ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল এবং কারা তা করেছিল, এসব আইনগতভাবে তদন্তে বেরিয়ে আসা প্রয়োজন।”
যদিও সরকার এবং আওয়ামী লীগ দলীয় কোন পর্যায়ে মাহফুজ আনামের ইস্যূ নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোন আলোচনা করেনি বা কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি, কিন্তু সারাদেশে মামলাগুলো করছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, মাহফুজ আনামের ভুলের কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জেল খাটতে হয়েছিল। ফলে তারা এটি হালকাভাবে নিচ্ছেন না।
তিনি আরও বলেছেন, “মাহফুজ ভুল স্বীকার করায় তাঁর নিজেরই প্রত্রিকার সম্পাদকের পদ থেকে সরে যাওয়া উচিত।”