শুক্রবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

পশু জবাই: নিয়মে আনার চেষ্টা সাড়া পায়নি

 

হজ্জ বিপর্যয় নিয়ে সমালোচনার মুখে সৌদি আরব

   

                 মিনার জনস্রোত: হজ্জ ব্যবস্থাপনায় সৌদি আরবের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ইরান।
মুসলমানদের পবিত্র শহর মক্কার কাছে মিনা উপত্যকায় প্রচণ্ড ভিড়ের চাপে ৭১৭ জন মারা যাবার পর প্রবল সমালোচনার মুখে পরেছে সৌদি আরব সরকার।
ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল সৌদি আরবকে ‘অযোগ্য’ এবং ‘অদক্ষ’ অভিহিত করে তাদেরকে এই ব্যাপক মৃত্যুর জন্য দায়িত্ব স্বীকার করার আহ্বান জানিয়েছে।
সৌদি স্বাস্থ্যমন্ত্রী খালেদ আল-ফালিহ বিপর্যয়ের জন্য হাজিদেরই দায়ী করে বলেছেন তারা নিয়মকানুন অনুসরণ না করায় ঘটনাটি ঘটেছে। কিন্তু সবাই তার কথা মানতে রাজি নয়।
নাইজেরিয়ার হাজি দলের নেতা কানো প্রদেশের আমীর মুহাম্মাদি সানুসি বলেন ভিড়ের চাপ আসে যখন জামারাত পিলারে যাবার এবং সেখান থেকে আসার নির্ধারিত রাস্তায় ভিন্নমুখী জনতার স্রোত মুখোমুখি হয়, যেটা হবার কথা না।
“আমরা সৌদি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যাতে তারা নিয়ম না মানার কারণে হাজিদের দোষারোপ না করেন”, মি: সানুসি বলেন।
সৌদি আরবরে হজ্জ কমিটির প্রধান যুবরাজ মোহাম্মদ বিন নায়েফ ইতোমধ্যেই তদন্ত শুরু করে ‘দ্রুত ফল’ প্রকাশের আশ্বাস দিয়েছেন।
 
মিনার বিপর্যয়ে সব চেয়ে বেশি সংখ্যক নাগরিক মারা গেছে ইরানের – ১৩১ জন, এবং সৌদি আরবরে এই আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী থেকেই সবচেয়ে তীব্র সমালোচনা এসেছে।
“আসল কথা হচ্ছে, হজ্জ ব্যবস্থাপনায় সৌদি আরব অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে, এবং এই ঘটনার জন্য রিয়াদকে দায়িত্ব স্বীকার করতেই হবে”, ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল-এর মুখপাত্র কেয়ভান খোরসাভি বলেন।
ইরানের সংসদের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির প্রধান আলাদিন বরুজেরদি অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোকে প্রতিবাদ করার আহ্বান জানান।
মৃতদের জাতীয়তা সম্পর্কে এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য:
ইরান – ১৩১
ভারত – ১৪
মিশর – ৮
পাকিস্তান – ৬
তুরস্ক – ৪
ইন্দোনেশিয়া – ৩
কেনিয়া – ৩
ভিড়ের চাপ সৃষ্টি হয় বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় ভোর ছ’টায়, যখন লক্ষ লক্ষ হাজি ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপে হজ্জের শেষ রীতি পালন করছিলেন।
হাজিরা ‘জামারাত’ নামের কয়েকটি পিলার লক্ষ্য করে সাতটি পাথর ছুঁড়ে মারেন, যেখানে বলা হয় শয়তান নবী ইব্রাহীমকে প্রলোভন দেখানের চেষ্টা করেছিল।
মিনার পাঁচ-তলা জামারাত সেতুর কাছে হাজিদের দুটো বিশাল লাইন দুই রাস্তা দিয়ে এসে একে অপরের মুখোমুখি হয়।
গত ২৫ বছরে এটাই ছিল হজ্জের সময় সব চেয়ে ভয়াবহ ঘটনা                        
তবে এটা ছিল দু’সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় বিপর্যয়। এ’মাসের ১১ তারিখে মক্কার মসজিদ আল-হারামে একটি বড় ক্রেন ভেঙ্গে পরলে ১০৯ জন মারা গিয়েছিলেন।
নয় বছর আগে আরেকটি বড় বিপর্যয়ের পর সৌদি আরব অবকাঠামো উন্নয়ন করার জন্য কোটি কোটি ডলার খরচ করেছে। একই সাথে, প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ হাজি আসায় সৌদি অর্থনীতিও কোটি কোটি ডলার আয় করে।
bbc bangla

হজ্জ দুর্ঘটনা: ব্যবস্থাপনা পর্যালোচনার নির্দেশ সৌদি বাদশার

                     অাহত বহু মানুষকে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ছোটাছুটি চলেছে      
          
সৌদি আরবের বাদশা সালমান হজ্জ পালনের সময় নেওয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যালোচনার নির্দেশ দিয়ে হজ্জ ব্যবস্থাপনার মান উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।
মিনায় পদদলনের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭১৭। আহত হয়েছেন আরও ৮৬৩ জন।
গত পঁচিশ বছরের মধ্যে এটি অন্যতম সবচেয়ে ভয়াবহ হজ্জ দুর্ঘটনা।
বিশ লাখ হাজি প্রতীকি রীতি অনুযায়ী যখন শয়তানের উদ্দেশ্যে পাথর ছুঁড়ছিলেন তখন ভিড়ের চাপে এবং হুড়োহুড়িতে পদদলিত হয়ে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
সৌদি বাদশা সালমান বলেছেন, ''হজ্জযাত্রীদের চলাচল নিয়ন্ত্রণ এবং হজ্জ ব্যবস্থাপনার মান উন্নয়নের প্রয়োজন রয়েছে।''
সৌদি সরকার ঘটনা তদন্তে একটি কমিশন গঠন করেছে।
সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রী খালেদ আল ফালি বলেছেন বহু হাজি কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত ''সময়সূচি অমান্য করার'' কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
  • ইরানের সর্ব্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা খামেইনি বলেছেন সৌদি সরকারকে ''বড়ধরনের দায়িত্ব স্বীকার করে নিতে হবে।'' তিনি বলেছেন, ''অব্যবস্থাপনা এবং যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না নেওয়াই এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।'' এই দুর্ঘটনায় পদপিষ্ট হয়ে ইরানের ৯৫জন হাজি মারা গেছেন।
  • হজ্জে নাইজেরীয় হাজিদের প্রতিনিধি দ্বিতীয় মোহাম্মদ সুনুসি বলেছেন হাজিরা নির্দেশ অমান্য করেছে বলে তাদের ওপর সৌদি কর্তৃপক্ষের চাপানো সঠিক নয়।
  • আমেরিকা সফররত পোপ ফ্রান্সিস নিউ ইয়র্কের সেন্ট প্যাট্রিক গির্জায় প্রার্থনাকালে মুসলমান সমপ্রদায়ের প্রতি তাঁর ''সহমর্মিতা ও একাত্মতা'' প্রকাশ করেছেন।
 গত ২৫ বছরে এটি অন্যতম সবচেয়ে ভয়াবহ হজ্জ দুর্ঘটনা
সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র মেজর জেনারেল মনসুর আল তুর্কি বলেছেন দুটি ভিন্ন পথ দিয়ে আসা হাজিদের দুটি বিশাল দল রাস্তা দুটির সংযোগস্থলে পৌঁছলে ভিড়ের চাপে ও হুড়োহুড়িতে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।