শুক্রবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৫

জলবায়ু ক্ষতিপূরণের নামে ঋণ চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে -টিআইবি

 
আসন্ন কপ-২১ প্যারিস সম্মেলনের বিষয়ে নিজস্ব কনফারেন্স রুমে গতকাল বৃহস্পতিবার টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন -সংগ্রাম


স্টাফ রিপোর্টার : আসন্ন কপ-২১ প্যারিস সম্মেলনে সরকারি প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণের আগেই সুন্দরবনের রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিষয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে নিজস্ব মিলনায়তনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে বার্লিনভিত্তিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটির বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান একথা বলেন। ইউনাইটেড নেশনস ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (ইউএনএফসিসিসি)’র আগামী ৩০ নবেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অনুষ্ঠিতব্য জলবায়ু বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন ‘কপ-২১’ উপলক্ষে আয়োজিত এ সাংবাদিক সম্মেলনে টিআইবির অবস্থানপত্র তুলে ধরেন সংগঠনটির জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসন (সিএফজি) বিভাগের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার মু. জাকির হোসেন খান। এ সময় টিআইবির উপ-নির্বাহী পরিচালক সুমাইয়া খায়েরও উপস্থিত ছিলেন।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্যারিস সম্মেলনে যাওয়ার আগেই সুন্দরবনে কয়লাভিত্তিক রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিষয়ে একটা ঘোষণা আসা উচিত। সর্বসম্মতিক্রমে একটি সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। যারা আন্তর্জাতিক এক্সপার্ট তাদের দিয়ে এ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা ও ক্ষতিকারক প্রভাব পর্যালোচনা করা যেতে পারে। তিনি বলেন, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে নিয়ে প্যারিসে আলোচনা হবে, এটা অবধারিত। আমাদের সরকারের প্রতিনিধি দল সেখানে অপমান হোক, সেটা আমরা চাই না। তাই সম্মেলনে যোগদানের আগেই সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।
তিনি আরো বলেন, আমাদের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যারা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী তারা আন্তর্জাতিকভাবে অঙ্গীকার করেছেন যে, জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে তারা ক্ষতিপূরণ দেবে। তবে সে অঙ্গীকার অনুসারে উন্নত দেশগুলো অর্থ ছাড় করছেন না। আবার যতটুকু ক্ষতিপূরণ দেয়া হচ্ছে তা আবার কোনো কোনো মহল থেকে ঋণ হিসেবে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের মতো ক্ষতিগ্রস্ত দেশ উভয়দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ড. ইফতেখার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ‘চ্যাম্পিয়ন্স অব দি আর্থ’ পুরস্কার অর্জনের প্রেক্ষিতে পরিবেশ সুরক্ষায় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশসহ ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রগুলো যে ঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছে তা মোকাবিলা এবং বিশ্বের কোটি কোটি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের স্বার্থ রক্ষায় বাংলাদেশকেই নেতৃত্ব দিতে হবে। তাই কপ-২১ এ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দক্ষতার সাথে উন্নত রাষ্ট্রগুলোর সামনে এ সংক্রান্ত দাবি বলিষ্ঠভাবে তুলে ধরতে হবে।
সবুজ জলবায়ু তহবিল (জিসিএফ) ছাড়ের চিত্র তুলে ধরে সাংবাদিক সম্মেলনে জানানো হয়, শিল্পোন্নত ৩৪টি দেশ এই তহবিলে ১০ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার প্রদানের ঘোষণা দিলেও ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিশ্রুত তহবিলের ৫০ শতাংশ প্রদান করেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন প্রকল্প/কর্মসূচির বিপরীতে তহবিল বরাদ্দ করা হয়নি।
অবস্থানপত্রে বলা হয়, বাংলাদেশে অভিযোজন কার্যক্রমের জন্য ২০১৫-২০৩০ সাল সময়ে প্রাক্কলিত সর্বমোট ৪০ বিলিয়ন ডলারের (গড়ে প্রতি বছর ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার) বিপরীতে ২০১০ অর্থবছর হতে ২০১৫ এর আগস্ট পর্যন্ত মাত্র ১ দশমিক শূন্য ৭৪ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। অন্যদিকে ২০১০ সালে বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড (বিসিসিটিএফ) এবং শিল্পোন্নত দেশসমূহের অর্থে বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ রেজিলিয়েন্স ফান্ড (বিসিসিআরএফ) গঠিত হলেও দু’টি তহবিলেই বরাদ্দ ক্রমেই আশংকাজনকহারে কমায় অভিযোজনের লক্ষ্যে অর্থ সরবরাহে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। শুধু তাই নয়, বিসিসিটিএফ হতে গত ৬ বছরে অনুমোদিত ২৩৬টি সরকারি প্রকল্পের মধ্যে মাত্র ৮৪টির কার্যক্রম (৩৬ শতাংশ) সমাপ্ত হয়েছে, ৮৫টি প্রকল্প ২০০৯ সালের ৩০ জুন শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এসব প্রকল্পের মাত্র ২০ শতাংশ কাজ বাস্তবায়িত হয়েছে, অথচ এরই মধ্যে ৭০-৮০ শতাংশ তহবিল উত্তোলিত হয়েছে। বিসিসিআরএফে বরাদ্দকৃত প্রায় ৬০ মিলিয়ন ডলারও সরকার ব্যবহার করতে পারছেন না বলে জানা যায়। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় স্বচ্ছতা, আর্থিক, পরিবেশগত ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক মানদ- নিশ্চিত না করায় জিসিএফ হতে সরাসরি তহবিল সংগ্রহ করতে সক্ষম হচ্ছে না।
অনুষ্ঠানে টিআইবির পক্ষ থেকে দশ দফা দাবি জানানো হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দাবিগুলো হলো বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় শিল্পোন্নত ও উদীয়মান অর্থনীতির দেশসমূহ প্রাক-শিল্পায়ন সময়ের তুলনায় বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির গড় হার সর্বোচ্চ ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখতে আইনী বাধ্যতামূলক চুক্তি বাস্তবায়ন করা, প্যারিস চুক্তিতে আইনী বাধ্যতার আওতায় ‘দূষণকারী কর্তৃক ক্ষতিপূরণ’ নীতি মেনে কোনো অবস্থাতেই ঋণ নয়, উন্নয়ন সহায়তার ‘অতিরিক্ত’ ও ‘নতুন’ শুধুমাত্র অনুদানকে স্বীকৃতি দিয়ে জলবায়ু অর্থায়নের সর্বসম্মত সংজ্ঞা নির্ধারণ এবং শিল্পোন্নত দেশসমূহ কর্তৃক ২০১৬ থেকে ২০৩০ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহকে দীর্ঘ মেয়াদে যথার্থ এবং চাহিদাভিত্তিক অর্থায়নের পথ নকশা প্রণয়ন করা।

daily sangram

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন