শনিবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০১৬

ঔষধের পরিক্ষামূলক ব্যবহার:প্রতিবন্ধী হওয়ার আশংকা

Image copyrightafp
Image captionফ্রান্সের স্বাস্থ্যমন্ত্রী এই রেন শহরে যাচ্ছেন পরিস্থিতি দেখার জন্য।
ফ্রান্সে একটি ঔষধের পরিক্ষামূলক ব্যাবহার করার পর এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় একজন কোমায় চলে গেছেন এবং পাঁচজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঘটনাটিকে নজিরবিহীন বলে বর্ননা করেছেন।
এর তদন্ত শুরু করা হয়েছে।বেদনানাশক নতুন এই ঔষধটি তৈরি করেছিল পর্তুগিজের একটি প্রতিষ্ঠান।
রেন শহরে ব্যক্তিমালিকানাধীন একটি গবেষণাগারে ঔষধটি পরিক্ষামূলকভাবে নব্বই জনের ওপর ব্যবহার করা হয়।
এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় একজনের মস্তিস্কের কার্যক্ষমতা পুরোপুরি হারিয়েছে এবং তিনি কোমায় চলে গেছেন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
আরও পাঁচজনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।তাদের মধ্যে তিনজনের প্রতিবন্ধী হয়ে যাওয়ার আশংকা করা হচ্ছে।
কিন্তু এই ৫জনকে নিয়েই চিকিৎসকরা উদ্বিগ্ন।কারণ এই ঔষধের যে পার্শপ্রতিক্রিয়া হয়েছে, তার কোনো প্রতিষেধক নেই বলেই বলা হচ্ছে।
হাসপাতালের চিকিৎসক গিলেস এডেন আশঙ্কা করছেন যে, হাসপাতালে থাকা ৫ জনের মধ্যে অন্তত তিনজন স্থায়ীভাবে হারাতে পারেন তাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা।
এই চিকিৎসক বলছিলেন, হাসপাতালে থাকা ৫ জনের মধ্যে চারজনই নানা মাত্রায় নিওরোলোজিকেল বা স্নায়োবিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। আর তিনজনের অবস্থা এমনই গুরুতর যে, তারা হয়তো প্রতিবন্ধী হয়ে যাবার আশঙ্কা আছে এবং সব ধরণের চেষ্টা বা সর্ব্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা দেবার পরও তাদের পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কম।
তবে ব্যাথানাশক এই ঔষধের মূল উপাদান গাঁজা বলে যে তথ্য বেরিয়েছে, সেটিকে নাকচ করে দিয়েছে ফ্রান্সের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়।
একইসাথে এই ঘটনার সব বিষয় তদন্তের ঘোষণা দিয়েছেন ফ্রান্সের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মারিসল টোরেইন।
তিনি বলছিলেন, যা ঘটেছে তা নজিরবিহীন এবং এই ঘটনা উন্মোচনের জন্য যে তদন্ত হবে তা সর্বোচ্চ সতর্কতার দাবী রাখে।
পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রীর রেনে শহরে যাওয়ার কথা রয়েছে।ঔষধটির পরিক্ষা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে প্যারিস প্রসিকিউটর অফিস।এবং তদন্তকারিরা ল্যাবরেটরিটির স্বেচ্ছাসেবকদের ডেকে পাঠিয়েছে।
চিকিৎসকরা বলেছেন, যে কোনো ঔষধের পরীক্ষামূলক ব্যাবহারের ক্ষেত্রে তিনটি ধাপ রয়েছে।
এই ঔষধটির পরীক্ষার প্রথম ধাপেই গুরুতর অসুস্থ হওয়ার এই ঘটনা ঘটলো।

বুরকিনা ফাসোয় সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ২০জন নিহত


Image copyrightAP
Image captionহোটেলে হামলার আগে গাড়ি বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়
বুরকিনা ফাসোর রাজধানী ওয়াগাদুগুর একটি হোটেলে সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ২০জন নিহত হয়েছে।
এখনো সেখানে অনেককে জিম্মি করে রাখা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভবনটির নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করছে সরকারি বাহিনী।
আল-কায়েদা ইন ইসলামিক মাগরেব নামের একটি জিহাদি গ্রুপ ওই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, স্প্লেনডিড হোটেলে বেশ কয়েকজন মুখোশ পড়া বন্দুকধারী হঠাৎ ঢুকে পড়ে গুলি করতে শুরু করে। এর আগে হোটেলের সামনে গাড়ি বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
তারা পাশের একটি কাপুচিনো ক্যাফেতেও হামলা করে।
হোটেলটিতে জাতিসংঘ থেকে আসা কর্মকর্তা ও পশ্চিমা দেশগুলো থেকে আসা পর্যটকরা থাকেন।
হোটেলটি থেকে অন্তত ৩০জনকে মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির মন্ত্রী রেমিস ডান্ডজিনো।
হোটেলের অভিযানে বুরকিনা ফাসোর বিশেষ বাহিনীকে সহায়তা করছে সেখানে মোতায়েন করা ফরাসি বাহিনী।

ব্যাংক কর্মকর্তাকে নির্যাতনের অভিযোগে পুলিশ কর্মকর্তা বরখাস্ত


Image copyrightunk
Image captionবাংলাদেশের পুলিশ রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে বাড়াবাড়ি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে
বাংলাদেশে এক ব্যাংক কর্মকর্তাকে নির্যাতনের ঘটনায় পুলিশের এক কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা গোলাম রাব্বিকে মিথ্যে অভিযোগে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে মারধোর করার অভিযোগ উঠেছিল পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর মাসুদ শিকদারের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই বাংলাদেশের পুলিশ তীব্র সমালোচনার মুখে রয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার জানিয়েছেন, মাসুদ শিকদারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত চলছে।
এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ অভিযোগ করেছেন সরকারের রাজনৈতিক প্রশ্রয়ের ফলেই পুলিশ এমন বাড়াবাড়ির সুযোগ পাচ্ছে।

জার্মান সুইমিং পুলে পুরুষ আশ্রয়প্রার্থীরা নিষিদ্ধ

শেয়ার করুন
Image copyrightEPA
Image captionসুইমিং পুলে পুরুষ রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের নিষিদ্ধ করেছে জার্মানির বোর্নহেইম শহর
জার্মানির একটি শহর পুরুষ রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদেরকে সুইমিং পুলে নিষিদ্ধ করেছে। মহিলারা অভিযোগ করেছেন যে সুইমিং পুলে এরা অশোভন আচরণ করছিল। তারপরই শহরের কর্তৃপক্ষ এ ব্যবস্থা নিয়েছে।
জার্মানির বোর্নহেইম শহরের সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্স বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, পাবলিক সুইমিং পুলে একদল পুরুষ মহিলাদের যৌন হয়রানি করছিল এবং গায়ে পড়ে কথা বলছিল এমন বহু অভিযোগ তারা পেয়েছেন। তারপরই তারা এই ব্যবস্থা নিয়েছেন।
উল্লেখ্য কোলন শহরে নববর্ষের অনুষ্ঠানের সময় মহিলাদের ওপর যৌন হামলার ঘটনা নিয়ে জার্মানিতে এখন তীব্র বিতর্ক চলছে। এই ঘটনার পর কট্টর ডানপন্থী দল এবং গোষ্ঠীগুলো সেখানে মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছে।
কোলনের যৌন হামলার ঘটনায় মূলত আশ্রয়প্রার্থীরাই জড়িত ছিল বলে অভিযোগ করা হচ্ছে।

প্রেমিকার সঙ্গে মিলতে ভারত থেকে সাইকেল চালিয়ে ইউরোপে

Image copyrightPK Mahanandia

Image captionপ্রথম দেখাতেই দুজনের মধ্যে প্রেম।

তাদের দুজনের প্রথম দেখা হয়েছিল দিল্লিতে শীতের এক সন্ধ্যায়। মেয়েটি অনুরোধ করলো তার ছবি এঁকে দিতে। সেই প্রথম দেখাতেই প্রেম। মেয়েটি ফিরে এল ইউরোপে। ছেলেটি কথা দিল, আবার দেখা হবে দুজনের।
সেই প্রেমের টানেই ছেলেটি একদিন পথে নামলো। প্লেনের টিকেট কাটার মত টাকা নেই। তাতে কী। সব বিক্রি করে একটা সাইকেল কিনলো। সেই সাইকেল চালাতে চালাতে নানা দেশ পাড়ি দিয়ে পৌঁছে গেল ইউরোপে তার প্রেমিকার কাছে।
অবিশ্বাস্য এই প্রেমকাহিনীর ছেলেটির নাম পি কে মহানান্দিয়া। মেয়েটির নাম শার্লোট ভন শেডভিন। তাদের প্রেম এখনো অটুট। বিয়ে করেছেন। সন্তান বড় হয়েছে। সুইডেনে তাদের সুখের সংসার।
১৯৭৫ সালে শার্লোট ভন শেডভিন প্রথম ভারতে যান। একদল বন্ধুর সঙ্গে দল বেঁধে গাড়ি চালিয়ে ইউরোপ থেকে দিল্লি। এই পথ তখন হিপি ট্রেল নামে পরিচিত। সেখানে তার দেখা পি কে মহানন্দিয়ার সঙ্গে।
মহানন্দিয়া শিল্পী। ছবি আঁকেন। দশ মিনিটে একেঁ ফেলতে পারেন যে কারও অবিকল প্রতিকৃতি।
দিল্লির কনট প্লেসে একদিন শার্লোট গেলেন মহানন্দিয়ার কাছে, অনুরোধ করলেন তার ছবি এঁকে দিতে।
শার্লোটকে দেখে মহানন্দিয়ার মনে পড়ে গেল তার মায়ের করা ভবিষ্যদ্বাণী।

Image copyrightPK Mahanandia
Image captionআফগানিস্তান তখন একেবারেই অন্যরকম এক দেশ।

মহানন্দিয়ার জন্ম ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যে। দলিত শ্রেনীর এক দরিদ্র পরিবারে। ভারতীয় সমাজের একেবারে নীচুতলার মানুষ। উঁচু জাতের লোকের কাছে অস্পৃশ্য।
মা তাকে বলেছিলেন, তার ভাগ্যফলে লেখা আছে, একদিন বৃষরাশির এক মেয়ের সঙ্গে তার বিয়ে হবে, মেয়েটি আসবে অনেক দূর দেশ থেকে, মেয়েটি সঙ্গীতানুরাগী হবে। মেয়েটি হবে অনেক ধনী, এক বিরাট বনের মালিক।
শার্লোটের জন্মরাশি বৃষ, সুইডেনের এক অভিজাত পরিবারের বংশধর, সঙ্গীতেও তার আগ্রহ আছে। আর তাদের পরিবার সত্যি এক বনাঞ্চলের মালিক।
“আমার ভেতর থেকে কেউ যেন বললো, এই সেই মেয়ে। প্রথম দর্শনেই যেন আমরা পরস্পরের দিকে আকৃষ্ট হলাম চুম্বকের মতো। এ যেন প্রথম দর্শনেই প্রেম।”
শার্লোটকে চায়ের আমন্ত্রণ জানালেন মহানন্দিয়া। অনেক সংকোচ ছিল তার। কিন্তু শার্লোট যেন এরই প্রতীক্ষায় ছিলেন।
দুজনে বেড়াতে গেলেন উড়িষ্যায়। কোনারক মন্দির দেখে মুগ্ধ শার্লোট।
শাড়ি পরে মহানন্দিয়ার বাবা-মার সঙ্গে দেখা করতে গেলেন শার্লোট। তাদের উপজাতীয় রীতি মেনে দুজনের বিয়ে হলো। এর পর শার্লোট ফিরে এলেন ইউরোপে। মহানন্দিয়ার কাছ থেকে কথা আদায় করলেন, সুইডেনের বস্ত্র শিল্প শহর বোরাসে দেখা হবে আবার দুজনের।
বছর গড়ালো। দুজনের মধ্যে কেবল চিঠিপত্রে যোগাযোগ। প্লেনের টিকেট কাটার টাকা নেই মহানন্দিয়ার। সব বিক্রি করে দিয়ে কিনলেন একটা সাইকেল। তারপর শুরু হলো প্রেমিকার কাছে যাওয়ার জন্য ইউরোপের পথে মহাযাত্রা।

Image copyrightPK Mahanandia
Image captionশার্লোটের ছবি আঁকতে গিয়ে গিয়ে মনে হলো, এই সেই মেয়ে।

১৯৭৭ সালের ২২শে জানুয়ারি মহানন্দিয়া শুরু করেছিলেন তার এই অভিযান। প্রতিদিন গড়ে ৭৭ কিলোমিটার করে পথ পাড়ি দিতেন।
সত্তরের দশকের সেই সময়টায় দুনিয়াটা ছিল একেবারেই অন্যরকম। বেশিরভাগ দেশে ঢুকতে তার কোন ভিসা পর্যন্ত লাগেনি।
“তখন আফগানিস্তান ছিল একেবারেই অন্যরকম একটা দেশ। খুবই শান্ত। আর এত সুন্দর। মানুষ শিল্প ভালোবাসতো।”
আফগানিস্তান পর্যন্ত হিন্দি দিয়ে কাজ চালিয়ে গেছেন মহানন্দিয়া। সেখানকার মানুষ মোটামুটি হিন্দি বুঝতো। কিন্তু বিপদে পড়লেন ইরানে ঢুকে।
“তখন আবার আমার শিল্পকর্মই আমাকে বাঁচালো। আমার তো মনে হয় ভালোবাসাই হচ্ছে বিশ্বজনীন ভাষা এবং মানুষ সেটা জানে।”
তার কি ক্লান্ত লাগতো না দিনের পর দিন সাইকেল চালাতে?

Image copyrightPK Mahanandia
Image captionশার্লোট এবং মহানন্দিয়া। সুইডেনে দুজনের সুখের সংসার।

“হ্যাঁ, খুবই ক্লান্ত লাগতো। আমার পা ব্যাথা করতো। কিন্তু শার্লোটের সঙ্গে দেখা হবে, সেই সম্ভাবনা আমাকে উজ্জীবীত রাখতো।”
এভাবে একদিন তুরস্ক হয়ে ভিয়েনা, তারপর সেখান থেকে ট্রেন ধরে গোথেনবার্গ পৌঁছালেন মহানন্দিয়া।
দেখা হলো শার্লোটের সঙ্গে। তবে বিয়ের ব্যাপারে শার্লোটের বাবা-মাকে রাজী করাতে বেগ পেতে হলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সুইডেনের আইন-কানুন মেনে আনুষ্ঠানিক বিয়ে হলো তাদের মধ্যে।
৬৪ বছর বয়সী মহানন্দিয়া এখনো সুইডেনেই থাকেন তার স্ত্রী শার্লোট এবং দুই সন্তানকে নিয়ে। কাজ করে শিল্পী হিসেবে।
তিনি সাইকেল চালিয়ে ইউরোপে এসেছিলেন, সেটা শুনে যখন অনেকেই অবাক হয়, সেটা ঠিক বুঝতে পারেন না মহানন্দিয়া।
“ব্যাপারটা তো খুব সহজ। আমি আসলে যা করার দরকার তাই করেছি। ওর সঙ্গে দেখা করতে আসার মতো টাকা ছিল না আমার। তাই আমি সাইকেল চালিয়েছি। প্রেমের টানে। সাইকেল চালানোর প্রতি আমার কোন আকর্ষণ ছিল না।”