প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে হামলার ঝুঁকিতে থাকা নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।
বাংলাদেশে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশে বাধা দিতে দীপনকে হত্যা এবং প্রকাশক আহমেদুর রশিদ টুটুল, ব্লগার তারেক রহিম ও লেখক রনদীপন বসুর ওপর হামলা হয়েছে মন্তব্য করে এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ বলেছে, এ ধরনের হামলা গ্রহণযোগ্য নয়।
জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি রবার্ট ডি. ওয়াটকিনস বলেন, “ভবিষ্যতে এ ধরনের হামলা রুখতে সব পর্যায়ের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতৃত্ব থেকে এসব হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানাতে হবে।”
অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
এক বিবৃতিতে প্রকাশকদের উপর হামলার নিন্দা জানিয়েছে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস।
নিহতের পরিবার ও স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “চলতি বছরের শুরু থেকে অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান বাবু, অনন্ত বিজয় দাশ এবং নীলয় চক্রবর্তী হত্যাকাণ্ডের মতো এই ধরনের ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডগুলো সহিংস চরমপন্থা রুখতে আমাদের উভয় সরকারের যৌথ প্রচেষ্টার গুরুত্বের ওপর জোর দেয়।”
বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র কাজ করে যাবে বলে এতে বলা হয়েছে।
এদিকে ওয়াশিংটন ডিসিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র হোয়াইট হেলিনা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নীলয় চট্টোপাধ্যায়, ওয়াশিকুর রহমান, অনন্ত বিজয় দাশ এবং অভিজিত রায়ের মত মুক্তমনা ব্লগারদের হত্যার পর আমরা যেভাবে বাংলাদেশের মানুষের পক্ষে ছিলাম, এখনও রয়েছি। চরম উগ্রপন্থা দমনে যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশ সরকারের চলমান যৌথ উদ্যোগকে এহেন অপকর্ম কোনভাবেই থমকে দিতে পারবে না।”
প্রকাশকদের উপর হামলার নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশে স্বাধীন মত প্রকাশের সুযোগ ‘সংকুচিত’ হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছে জার্মানি।
এক বিবৃতিতে জার্মান রাষ্ট্রদূত থমাস প্রিঞ্জ বলেন, “এসব হামলা এদেশে ভীতিকর আবহ তৈরি করছে।
“মুক্তমনাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সব পদক্ষেপ নিতে আমি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”
শিয়া সমাবেশে হামলা ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর হামলারও সুষ্ঠু তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন জার্মান রাষ্ট্রদূত।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে মুক্তমনাদের উপর সাম্প্রতিক হামলাগুলো অত্যন্ত উদ্বেগের। ধর্মনিরপেক্ষতা এদেশের অন্যতম মূল্যবোধ। বিভিন্ন ধর্ম ও মতের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য বাংলাদেশের পরিচিতি রয়েছে। সাম্প্রতিক হামলাগুলো শুধু ব্যক্তির উপর হামলা নয়, মতপ্রকাশের মৌলিক অধিকারের উপর হামলা।”
প্রকাশকদের উপর হামলার নিন্দা জানিয়ে দোষীদের বিচারের আওতায় আহ্বান জানিয়েছে ফ্রান্সও।
নিহত প্রকাশক দীপনের বাবার বক্তব্যের সমালোচনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নিজের বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা মাহাবুব-উল আলম হানিফ।
অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হককে নিয়ে মন্তব্যের ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তিনি।
শাহবাগে নিজের কার্যালয়ে ছেলে ফয়সাল আরেফিন দীপন খুন হওয়ার পর ক্ষোভ প্রকাশ করে আবুল কাসেম বলেন, ছেলে হত্যার বিচার তিনি চান না।
যারা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ও রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে ‘রাজনীতি’ করছেন তাদের শুভবুদ্ধি উদয়ের প্রত্যাশাই করছেন তিনি।
এই বক্তব্যের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রবীণ অধ্যাপক-লেখককে হত্যাকারীদের আদর্শে বিশ্বাসী বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হানিফ।
তিনি বলেন, “হত্যাকারীদের আদর্শে বিশ্বাসী বলেই পুত্র দীপন হত্যার বিচার চাননি বাবা আবুল কাসেম ফজলুল হক।”
হানিফের এ বক্তব্য বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হলে ফেইসবুকে সোচ্চার প্রতিবাদ করতে দেখা যায় অনেককেই।
এ বিষয়ে হানিফের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে মাহবুব-উল আলম হানিফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিজের বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি আরও বলেন, “আসলে আমি এটা বলতে চাইনি। আমি বলতে চেয়েছিলাম, উনি যদি বিচার না চান, তাহলে ওই মতাদর্শের লোকেরা এতে উৎসাহিত হবে।”
শনিবার সন্ধ্যায় শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় জাগৃতি প্রকাশনীর কার্যালয়ে এর কর্ণধার ফয়সল আরেফিন দীপনের রক্তাক্ত লাশ পাওয়া যায়।
এই প্রকাশনী থেকে বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অভিজিৎ রায়ের ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ বইটি প্রকাশিত হয়েছিল, যিনি নিজেও গত ফেব্রুয়ারিতে একই কায়দায় হামলায় নিহত হন।
বাংলােদশের ঢাকায় গতকাল ধারালো অস্ত্রধারীদের আক্রমণে নিহত প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনের পিতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবুল কাশেম ফজলুল হক হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই বলে আসছেন তিনি তার সন্তানের হত্যাকারীদের বিচার চান না।
আজ ফয়সাল আরেফিন দীপনের মৃতদেহ কবর দিয়ে আসার পর বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় জীবনের সমস্যা এত গভীর যে সাধারণ জেল-ফাঁসির বিচারে কিছু হবে না।
বিবিসি বাংলার মিজানুর রহমান খানকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মি. হক ব্ বলেন তার মতে বিপরীতমুখী দুই রাজনীীতই দেশকে 'সর্বনাশের দিকে' ঠেলে দিচ্ছে।
কেন তিনি এই হত্যার বিচার চান না - এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন এক পক্ষ ধর্মনিরপেক্ষতার দাবীদার - আরেক পক্ষ রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের দাবীদার। দুই পক্ষের রাজনীতিই দেশকে সর্বনাশের দিকে নিচ্ছে।
"এ ক্ষেত্রে শুভবুদ্ধির উদয় দরকার। এবং তা যদি হয় তাহলেই আমার ছেলেও হত্যাকান্ডের বিচার হবে।
তিনি তার ছেলের হত্যাকান্ডের বিচারের ব্যাপারে বলেন, আদালতে ফাঁসি বা জেল দিয়ে যে বিচার - তার ওপর তার আস্থা নেই।
"আমাদের জাতীয় জীবনের সমস্যা এত গভীর যে শুধু জেল-জুলুম বিচার-ফাঁসি এগুলো দিয়ে কিছু হবে না।"
"অল্প কিছু লোক প্রধমে শুভবুদ্ধি-বিবেক নিয়ে দাঁড়ান, সব প্রতিকুলতা, রাজনৈতিক প্রতিকুলতা - মোকাবিলা করেন, ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে দাঁড়ান। তার থেকে পরে গণজাগরণ ঘটে।"
মি. হক বলেন, বাংলাদেশে এবং অনেক দেশে যে রাজনীতি চলছে তা ক্ষমতার রাজনীতি, ভোটের রাজনীতি। "নতুন রাজনীতি দেখা না দেয়া পর্যন্ত যেরকম চলছে তেমনি চলবে।"
মিশরের সিনাই উপদ্বীপে রুশ বিমানটি বিধ্বস্ত হয় শনিবার
মিশরের সিনাই উপদ্বীপে একটি রুশ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ২২৪ জনের মৃত্যুর ঘটনায় একটি তদন্ত এখন চলছে।
মিশরের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিমানটি বিধ্বস্ত হবার সম্ভাবনা খুব বেশি এবং দুর্ঘটনার দায়িত্ব স্বীকার করে ইসলামিক স্টেট জঙ্গিদের একটি দাবীও তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
তবে আরো তথ্য পাওয়ার আগ পর্যন্ত এমিরেটস, এয়ার ফ্রান্স এবং লুফতহানসা সিনাই উপদ্বীপের ওপর দিয়ে উড্ডয়ন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিমানটির ব্ল্যাক বক্স তারা খুঁজে পেয়েছেন এবং বিশ্লেষণের জন্য বিশেষজ্ঞদের কাছে সেটি পাঠানো হয়েছে।
শনিবার অবকাশযাপন কেন্দ্র শার্ম এল-শেখ থেকে রাশিয়ার সেন্ট পিটাসবার্গের উদ্দেশ্যে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরেই এয়ারবাস এ-৩২১ বিমানটি বিধ্বস্ত হয়।
মিশরের বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রী হোসাম কামাল বলেছেন, বিধ্বস্ত হবার আগে বিমানটিতে কোন সমস্যার ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। তবে এর আগে কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল বিমানটির পাইলট জরুরী অবতরণের অনুরোধ করেছিলেন। bbc
বাংলাদেশে গতকাল দুটি প্রকাশনা সংস্থায় হামলা চালিয়ে একজনকে হত্যা এবং আরো তিনজনকে আহত হবার ঘটনার পর দেশটির প্রকাশক ও বুদ্ধিজীবী মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
একদিকে তারা যেমন ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন, অন্যদিকে আতঙ্কিতও হয়ে পড়েছেন।
জাগৃতি প্রকাশনির কর্নধার নিহত ফয়সাল আরেফিন দীপনের মৃতদেহ ময়না তদন্তের পর আজ দুপুরেই তার পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। দুপুরের পরপরই অনুষ্ঠিত হয়েছে তার শেষকৃত্য। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন বলছে, দীপনকে উপুড় করে ভারী ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার ঘাড় ও মাথায় কোপানো হয়।
এই হামলার প্রতিবাদে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করছেন পেশাজীবী, প্রকাশক এবং শাহবাগের আন্দোলনকারীরা।
আজ আরো একজন প্রকাশককে হত্যার হুমকি দিয়ে বার্তা পাঠানোর ঘটনা ঘটেছে। সময় প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ফরিদ আহমেদ পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করে বলছেন, আল-আহরার ইউকে নামের একটি যুক্তরাজ্যভিত্তিক সঙ্ঘঠনের নামে তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে তার মোবাইল ফোনে আজ সকালে একটি ক্ষুদে বার্তা এসেছে।
এসব ঘটনা পরম্পরায় অনেককেই আতঙ্কিত হয়ে পড়তে দেখা গেছে। সকালে টিএসসির বিক্ষোভে ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন একজন অধ্যাপকের বক্তব্য জানতে বিকেলে বিবিসির তরফ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তিনি এখন আতঙ্কিত বোধ করছেন এবং বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানান।
আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন প্রকাশকেরাও। বলছেন বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল পুস্তক প্রকাশক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মেজবাহউদ্দিন আহমেদ পাশা, তারা আতংক বোধ করছেন এবং এর প্রভাব প্রকাশনা শিল্পের ওপর পড়বে।
পুলিশ বলছে, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত যে কজন ব্লগার নিহত হয়েছেন তাদের হামলাকারীরা এবং গতকাল প্রকাশকদের উপর যারা হামলা চালিয়েছে তারা একই সংগঠনের সদস্য এবং তারা একই রকম প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত।
পুলিশ বলছে দীপনের হত্যাকারী এবং শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর প্রকাশক সহ আরো তিনজনকে যারা হামলা করেছে তাদের হামলার ধরণের সাথে ২০১৩ সাল থেকে শুরু করে গত অগাস্ট মাস পর্যন্ত যে ৫জন ব্লগার খুন হয়েছেন তাদের উপর চালানো হামলার ধরণ মিলে যায়।
পুলিশের মুখপাত্র মনিরুল ইসলাম বলছিলেন আনসারউল্লাহ বাংলা টিম বা এই 'আমব্রেলার নিচে' যারা কাজ করে তাদের দিকেই তাদের সন্দেহের তীর। এমনকি কোপানোর ধরণও এক, তাই নেপথ্যের ব্যক্তিরা এক বলেই তাদের প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে।
অবশ্য আনসার আল-ইসলাম নামে একটি টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে এরই মধ্যে গতকালের হামলা দুটির দায় স্বীকার করা হয়েছে। তাদের পোস্ট করা টুইটে তারা নিজেদেরকে আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা বলে উল্লেখ করেছে।
তবে পুলিশী তদন্ত এখন পর্যন্ত খুব বেশীদূর এগোয় নি বলে জানা যাচ্ছে।
নিহত দীপনের বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক সন্তান হত্যার বিচার চান না উল্লেখ করে থানায় কোনও অভিযোগও করেন নি। তবে নানা মহল থেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া আসছে।
শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ বিকেলে একটি বিক্ষোভ সমাবেশ করে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের জন্য চব্বিশ ঘন্টা সময় বেঁধে দিয়েছে, অন্যথায় মঙ্গলবার সারা বাংলাদেশে আধাবেলা হরতাল পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
সোমবার সারাদেশে অর্ধদিবস সব ধরণের প্রকাশনা ও বিক্রয় কার্যক্রম বন্ধ রাখার কর্মসূচী পালনের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশের পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতারা। আজ সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে একটি বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে শিক্ষক, ছাত্র, পেশাজীবী, বুদ্ধিজীবী ও পুস্তক প্রকাশকেরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, সভার বক্তারা আগেকার হত্যাকান্ডগুলোর বিচার ও শাস্তি না হওয়াতেই এটা বারবার ঘটছে - এ কথা উল্লেখ করে সরকারের ব্যর্থতার তীব্র সমালোচনা করেছেন।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, গতকাল বিকেলে শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের কার্যালয় থেকে জাগৃতি প্রকাশনীর সত্বাধিকারী ফয়সাল আরেফিন দীপনের জবাই করা মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এর আগে দুপুরে লালমাটিয়ায় আরো একটি প্রকাশনা সংস্থা শুদ্ধস্বরের কার্যালয়ে ঢুকে হামলা চালিয়ে প্রকাশক ও ব্লগার আহমেদুর রশীদ টুটুলসহ তিনজনকে আহত করে হামলাকারীরা।
এ দুটো প্রকাশনা থেকেই ইতিপূর্বে নিহত যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ব্লগার ও লেকক অভিজিৎ রায়ের পুস্তক প্রকাশিত হয়েছিল।
এসব হামলার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসঙ্ঘ। হামলায় নিন্দা জানিয়ে এবং হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানিয়ে টুইট করেছেন ঢাকার ব্রিটিশ হাইকমিশনারও। আহরার হোসেনবিবিসি বাংলা, ঢাকা
বাংলাদেশ ও ভারতসহ চারটি দেশের মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে আজ যান চলাচল শুরু হয়েছে।
এর আওতায় ভারতের পণ্যবাহী যান - কলকাতা থেকে বেনাপোল বর্ডার দিয়ে ঢাকা বাইপাস হয়ে নরসিংদী হয়ে আগরতলা দিয়ে আবার ভারতে ঢুকবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভূটানের মধ্যে সড়কপথে পণ্য ও যাত্রীবাহী যান চলাচল চুক্তি অনুযায়ী এই চারটি দেশের মধ্যে তিন ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারবে।
এর মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে সড়কপথে পণ্য পরিবহনের জন্য কার্যত ট্রানজিট সুবিধা পাচ্ছে ভারত। কিন্তু প্রশ্ন রয়েছে যে বাংলাদেশের মহাসড়কগুলো কি অন্য দেশের ভারী পণ্যবাহী যান চলাচলের উপযুক্ত?
এমনিতেই বাংলাদেশের মহাসড়কগুলোর বেহাল অবস্থা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই নানা অভিযোগ রয়েছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে দিয়ে নিয়মিত চলাচল করেন সীমা হোসেন। তিনি বিবিসিকে বলছিলেন, রাস্তা এত খারাপ যে সব সময় আতংকে থাকতে হয়, এই বুঝি বাসটি কাত হয়ে পড়ে গেল।
ঢাকা যশোর মহাসড়ক দিয়ে যাতায়াত করেন মি. সৈকত। তিনি বলছিলেন, পাটুরিয়ার পর থেকে যশোর যাবার পথ পুরোটাই খারাপ।
বাংলাদেশের বিভিন্ন মহাসড়কে দীর্ঘদিন ধরে বাস চালাচ্ছেন আবুল কালাম। তার কথায়, মহাসড়কগুলোর ভাঙাচোরা অবস্থা, যানজট, বিশৃঙ্খলভাবে গাড়ি চলাচল - এসব কারণে রাস্তাগুলোতে যানবাহন চালানো ঝুঁকিপূর্ণ।
আর এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতেই প্রশ্ন উঠছে - বাইরের দেশ থেকে আসা যানবাহনগুলোর চাপ কতটা নিতে পারবে বাংলাদেশের মহাসড়কগুলো?
যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ আবদুল মালেক বলছিলেন, মহাসড়কগুলোর যেসব জায়গায় মেরামতের কাজ চলছে, সেগুলো দু-তিন মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।
"এশিয়ান হাইওয়েতে যেভাবে সড়ক দিকনির্দেশিকা থাকা দরকার - সেগুলো নির্বাচিত রুটগুলোয় বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই এ কাজ শেষ হবে।"
তবে সাধারণ যাত্রীদের অনেকেরই ধারণা, বাংলাদেশের মহাসড়কগুলো বাইরের দেশ থেকে আসা যানবাহনের চাপ সামলানোর জন্য উপযুক্ত নয়। আফরোজা নীলাবিবিসি বাংলা, ঢাকা
বাংলাদেশে বইয়ের প্রকাশকদের ওপর দুটো হামলার ঘটনার পেছনেই ইসলামপন্থী জঙ্গী গোষ্ঠী রয়েছে বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে।
এর আগে একের পর এক ব্লগার খুন হয়েছেন, কিন্তু কোন ঘটনায় এখন পর্যন্ত কারো শাস্তি হয়নি।
অনেকেই মনে করেন, ধর্মকে ব্যবহার করে যারা অপরাধ করছে, তাদের ব্যাপারে সরকার যথেষ্ট কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছে না - 'বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্ম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান' - এই বিবেচনায়।
কিন্তু জঙ্গী কর্মকাণ্ড দমনে একটি রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তুলতে বাধা কোথায়?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্মকে ব্যবহার করার অভিযোগ নতুন কিছু নয়। কিন্তু ইসলাম-পন্থী জঙ্গীদের উত্থান, একের পর হামলার ঘটনায় তাদের সন্দেহ করা এবং এদের দমনের ব্যাপারে দৃশ্যমান বড় সাফল্য না থাকার কারণে এখন প্রশ্ন উঠেছে যে শুধু শক্তি দিয়ে এদের থামানো সম্ভব কিনা।
বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, বিষয়টি রাজনৈতিক ও আদর্শিক, আর এর জন্যে বড় রাজনৈতিক দলগুলোকে এক হয়ে লড়াই শুরু করতে হবে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন এ ব্যাপারে একমত যে জঙ্গী দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যবহার একমাত্র পথ নয়।
তিনি বলেণ, ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার বন্ধ করে একটি প্রকৃত অসাম্প্রাদয়িক গণতান্ত্রিক সমাজ গড়ে তোলার কাজ এখন অতীতের যে কোন সময়ের চাইতে এখন বেশি কঠিন।
কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার জঙ্গী দমনের দাবী করলেও বাস্তবে একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটছে। সমালোচকরা মনে করেন, বাস্তবে সরকার জঙ্গী দমনে বড় কোন পদক্ষেপ নিতে পারেনি রাজনীতিতে ধর্মের গুরুত্বের কথা চিন্তা করে। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী লেখক অভিজিৎ রায় ঢাকায় বই মেলা প্রাঙ্গণে খুন হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে জঙ্গীদের বিরুদ্ধে সরকার শক্ত পদক্ষেপ নিতে পারছে না, কারণ বিরোধীরা তাদের বিরুদ্ধে ধর্মের কার্ড ব্যবহার করে। তাঁর ইঙ্গিত ছিল বিএনপি’র দিকে।
কিন্তু বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান পাল্টা প্রশ্ন করেন যে ধর্মের কার্ড রাজনীতিতে কে ব্যবহার করে না?
"এত বড় সংবিধান সংশোধন করা হলো তার পরও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রাখা হলো - এটা কি ধর্মের কার্ড ব্যবহার নয়? নির্বাচনের সময় মোনাজাতে ছবি দিয়ে পোস্টার করাটা কি ধর্মের কার্ড ব্যবহার নয়?" - বলেন তিনি।
মি. খান বলেণ, "কিন্তু প্রশ্ন হলো, সেই ধর্মই কি এটা অনুমোদন করে যে আপনি মানুষ খুন করবেন? তাই এখানে ধর্ম বা রাজনীতি নিয়ে আসার কোন প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না।"
ব্লগারদের ওপর হামলার ব্যাপারে সজীব ওয়াজেদ জয় তাঁর সাক্ষাৎকারে আরো বলেছিলেন যে সরকার একটি সূক্ষ্ম রেখার ওপর হাটছে এবং তাঁরা চান না কেউ তাদের নাস্তিক হিসেবে দেখুক।
মি. লেনিন বলছেন, ইসলামের বিষয়টি বাংলাদেশে একটি স্পর্শকাতর ব্যাপার, আর তাই সজীব ওয়াজেদ জয় বাস্তব অবস্থার কথাই তুলে ধরেছেন।
"আমাদের প্রতিপক্ষ বিএনপি-জামাত আওয়ামী লীগকে ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ধর্মের বিরুদ্ধে ইসলামের বিরুদ্ধে বলে চিহ্নিত করতে চায়। এতে যে কেউ বিভ্রান্ত হচ্ছে না তাও নয়। তাই মানুষ যেন আমাদের ভুল না বোঝে সেজন্যেই এ কথা বলা।"
তবে বামপন্থীরা রাজনীতিতে ধর্মের কার্ড ব্যবহারের বিষয়ে বড় দুটো দলকেই দায়ী করছে এবং এই বিষয়টি জঙ্গীবাদ উত্থানে সহায়তা করছে বলে এঁরা মনে করেন।
কমিউনিস্ট পার্টি অব বাংলাদেশ বা সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলছেন, ভোটের রাজনীতির জন্যে এটা করা হচ্ছে।
মি. সেলিম বলেন, তারা এই ইসলাম কার্ড ব্যবহারের জন্য পরস্পরের সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হচ্ছে। সব পক্ষই নিজেদের অন্যের চেয়ে বেশি ইসলাম-পসন্দ বলে প্রমাণের চেষ্টা করছে। ব্যাপারটা এখন আর উগ্র জঙ্গীবাদী গোষ্ঠীর তৎপরতায় সীমিত নেই। এখন সাম্প্রদায়িকতাকে সামাজিকীকরণের জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার বন্ধে বড় দুটো দলের সদিচ্ছা দেখতে পাচ্ছেন না মি. সেলিম।
তবে নজরুল ইসলাম খান মনে করেন, এক্ষেত্রে একটি রাজনৈতিক ঐক্য হতে পারে।
মি. খানের কথায়, "যদি সদিচ্ছা-আন্তরিকতা নিয়ে সব পক্ষ আলোচনা করে তাহলে একমত হয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে যে কি করলে এটা বন্ধ হবে। কিন্তু আলোচনাটা তো হতে হবে। এক পক্ষ অপরকে অভিযুক্ত করলে তো সে সুযোগ থাকে না। জনগণ এ ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ, তাহলে জনগেণের নামে যারা রাজনীীত করে তাদের ঐক্যবদ্ধ হতে অসুবিধা কোথায়? কিন্তু উদ্যোগটা সরকারেরই নিতে হবে।"
জঙ্গী দমনের ইস্যুতে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য হতে পারে বলে মনে করেন মি. লেনিনও। তবে তিনি বলেন যে এক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামীকে বাদ দিয়ে বিএনপিকে এগিয়ে আসতে হবে।