শুক্রবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৫

জঙ্গি তৎপরতার মামলা কতটা নিস্পত্তি হয়

 
    জঙ্গি কার্যক্রমের বিরুদ্ধে অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছে র‍্যাব                
জঙ্গি কার্যক্রমের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে সন্দেহভাজনদের আটক করে র‍্যাব বা পুলিশের দিক থেকে প্রায়ই সংবাদ সম্মেলন করে ।
আটককৃত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মোটাদাগে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ আনা হয়েছে।
পুলিশ বা ব্যাবের তরফ থেকে বলা হয় সন্দেহভাজনরা বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সাথে জড়িত থেকে নাশকতামূলক তৎপরতার সাথে জড়িত।
এ রকম এক অভিযোগে দেড় বছর আগে আটক করা হয় শামীন মাহফুজ সুমনকে। জঙ্গি তৎপরতার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক করা হলেও বিচারের ক্ষেত্রে কোন অগ্রগতি নেই।
আটক মি: সুমনের ভাবি শামীমা বেগম মিলি জানিয়েছেন, মি: সুমনের বিরুদ্ধে এখনো কোন চার্জশীট দাখিল করা হয়নি।
জঙ্গি কার্যক্রমের সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে মি: সুমনের মতো এ রকম আরো অনেকেরই বিচারের ক্ষেত্রে কোন অগ্রগতি নেই।
গত বছর আইএস-এর সদস্য সংগ্রহের অভিযোগে আটক করা হয়েছিল ব্রিটিশ নাগরিক সামিউন রহমানকে।
                 নূর খান লিটন
এক বছর পার হলেও মি: সামিউনের বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযোগ-পত্র জমা দিয়েছে। কিন্তু বিচারকার্য এখনো শুরু হয়নি।
গত বছর তিনেকে জঙ্গিবাদের অভিযোগে যাদের আটক করা হয়েছে তাদের অনেকেরই পুলিশ কোন অভিযোগ-পত্র দেয়নি কিংবা বিচার শুরু হয়নি।
বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করেন মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নূর খান লিটন।
তিনি বলছেন চার বছরে গড়ে ১০০’র বেশি ব্যক্তিকে জঙ্গিবাদের সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আটক করা হয়েছে। কিন্তু আটককৃত ব্যক্তিদের বিষয়ে কি করা হচ্ছে?
নূর খান লিটন বলেন, “ আটক করা ব্যক্তিদের একটি অংশের বিরুদ্ধে কখনোই অভিযোগ গঠন করা হয়না। অনেকের মামলা এতো ধীর গতিতে চলে যে মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি ইদানিংকালে লক্ষ্য করিনা।”
তিনি বলেন জামাতুল মুজাহিদিন বা জেএমবি সংশ্লিষ্ট কিছু মামলার ক্ষেত্রে অগ্রগতি দেখা যায়। কিন্তু বিভিন্ন সময় অন্য আরো অনেক জঙ্গি সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগে যাদের আটক করা হয়েছে তাদের অনেকেই বিনা বিচারে কারাগারে আছে।
বাংলাদেশে গত পাঁচ বছরে জঙ্গিবাদের সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগে ঠিক কতজনকে আটক করা হয়েছে, কতগুলো মামলা হয়েছে কিংবা কতজনের জামিন হয়েছে বা বিচার শুরু হয়েছে, সে সম্পর্কে পুলিশের কাছ থেকে তাৎক্ষনিকভাবে কোন পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি।
                 স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান
কর্মকর্তারা বলেন দেশের বিভিন্ন জায়গায় এ সংক্রান্ত মামলা আছে সেজন্য এই তথ্য দেয়া সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।
অনেকে বিনা বিচারে দীর্ঘ সময় কারাগারে থাকলেও অনেকেই জামিনে কারাগার থেকে বেরিয়ে এসেছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খান বলেন, “ আমারা তাদের আটক করে আদালতে সোপর্দ করছি। বিচারকার্যের সময় যদি জামিন হয়ে যায়, তাহলে আমাদের কিছু করার নেই।” তবে সরকার এসব মামলার যাতে দ্রুত সুরাহার জন্য সরকার চেষ্টা করছে।
গবেষকদের অনেকেই মনে করেন বাংলাদেশ যে জঙ্গিবাদের হুমকির মধ্যে আছে সে বিষয়টি অস্বীকার করার কোন উপায় নেই।
কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে এমন ব্যক্তিদের আটক করা হয়েছে, জঙ্গিবাদের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক আছে কিনা সেটি নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
বিভিন্ন সময় আটকের পর র‍্যাব কিংবা পুলিশ আটককৃতদের গণমাধ্যমের সামনে আনে।
অনেক সময় বলা হয় আটককৃতদের সাথে বিস্ফোরক পাওয়া গেছে অথবা তারা কোন নাশকতার পরিকল্পনা করছে।
কিন্তু অভিযোগ রয়েছে ,পরবর্তীতে সে অনুযায়ী অনেক মামলার তদন্ত এগুচ্ছে না ।
বিভিন্ন সময় বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধারের দাবীো করা হয়।                
কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নূর খান লিটন তার বিশ্লেষণে বলেন, “ আটক করার ক্ষেত্রে যতটা আগ্রহ দেখা যায়, তদন্ত বা বিচারের ক্ষেত্রে ততটা মনোযোগ দেখা যায়না।”
বাংলাদেশে ঠিক কতগুলো জঙ্গি সংগঠন তৎপর আছে তার পরিসংখ্যান কারো কাছেই নেই। পুলিশ বলছে অনেক সংগঠন তাদের নাম বদলে আবার নতুন তৎপরতা শুরু করে।
তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খান বলেন গত কয়েক বছরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যাদের আটক করেছে তাদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে।
কিন্তু তথ্য থাকলে মামলার ক্ষেত্রে পুলিশ অগ্রগতি করতে পারছে না কেন?
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “ যদিও পুলিশ বা নিরাপত্তাবাহিনী ভুল করে কাউকে আটক করে, জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। পুলিশের দিক থেকে আইনগত প্রক্রিয়া মাঝে-মধ্যে হয়তো বিলম্বিত হয়। অপরাধীরাও বিলম্ব ঘটানোর জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করে।”
                 সন্দেহভাজনদের এভাবেই গণমাধ্যমের সামনে হাজির করা হয়।
জঙ্গি কার্যক্রমের অভিযোগে গত কয়েক যাদের আটক করা হয়েছে বিচারের মাধ্যমে তাদের অপরাধ প্রমাণিত হবে।
এ ধরনের অভিযোগে আটক শামীন মাহফুজ সুমনের ভাবী শামীমা বেগম মিলি বলছেন তারা দ্রুত মামালার নিষ্পত্তি চান ।
তিনি বলেন , “বিচারে যা হয় সেটাই হবে। কিন্তু বিচারটা তো দ্রুত করতে হবে।দেড় বছরের মধ্যে কোন অগ্রগতি হয়নি। বিচার তাড়াতাড়ি হোক এটাই আমরা চাই।”
কিন্তু সহসা এসব মামলার নিষ্পত্তি হবে কিনা সে বিষয়ে সে বিষয়ে কর্মকর্তারা কিছুই বলতে পারছেন না ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যদিও বলছেন বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য পুলিশের দিক থেকে যেসব কাজ শেষ করা দরকার সেটি দ্রততার সাথে করা চেষ্টা হচ্ছে।

bdnews24

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন