রাজধানীর দয়াগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধিকাংশ দিনই বিয়ে বা অন্য কোনো অনুষ্ঠান হতো। স্কুল কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই এসব অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া আদায় করত এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল। স্কুলের নিচতলা দখল করে কমিউনিটি সেন্টার হিসেবে ভাড়া দিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ আয় ছিল তাদের নিয়মিত কাজ।
এমন অভিযোগ পেয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে এ স্কুলে অভিযান চালায় র্যাব-১০ এর ভ্রাম্যমাণ আদালত। র্যাব-১০-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বরের নেতৃত্বে এই অভিযানে স্কুল থেকে ১৩৫টি চেয়ার, ১২টি ডেকচি, একটি লোহার কড়াই, ছয়টি অসিন টপ, ১২টি ঢাকনা, আটটি করাত, দুটি ড্রাম, দুটি ত্রিপল, ৭৪টি গ্লাস, ১৮টি কাচের জগ, দুটি স্টিলের চুলা জব্দ করা হয়। অনুষ্ঠান আয়োজনের অপরাধে ইদ্রিস আলী (৪৬), মাসুদ রানা (৪০), রাজু আহম্মেদকে ১৫ দিন বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম। সারওয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, তিন তলা ভবনের এই স্কুলের নিচতলার বড় চারটি কক্ষ দখল করে কমিউনিটি সেন্টার হিসেবে ভাড়া দেওয়া হতো। এর সঙ্গে স্কুলটির ব্যবস্থাপনা কমিটি জড়িত। প্রতিটি অনুষ্ঠানের জন্য ২০ হাজার টাকা ভাড়া নেওয়া হতো। তবে ব্যবস্থাপনা কমিটির কাউকে অভিযানের সময় পাওয়া যায়নি। ডেকোরেটরের লোকজন স্কুল ভবনের একটি অংশ প্রায় নয় বছর ধরে দখল করে রেখেছিল। তাদের তিনজনকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়। এঁদের মধ্যে ইদ্রিস আলী ডেকোরেটরের মালিক ও মাসুদ রানা ব্যবস্থাপক।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, দিনের বেলা অনুষ্ঠান থাকলে বেশ আগেই ছুটি হয়ে যেত। এ জন্য নিয়মিত ক্লাস নেওয়া হতো না এই স্কুলে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ, বিএনপির প্রভাবশালী লোকজন এর সঙ্গে জড়িত। তাঁদের লোকজনই স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির সঙ্গে জড়িত। নতুন কমিটি না করে পুরোনো কমিটির লোকজন স্কুল ভবনে এই কমিউনিটি সেন্টার বাণিজ্যিকভাবে ভাড়া দিয়ে আসছিলেন। রান্নার কারণে ভবনের শ্রেণিকক্ষগুলোতে কালো দাগ পড়েছে। এর ফলে ১১০০ শিক্ষার্থীর পড়ালেখায় অসুবিধা হতো।
দয়াগঞ্জ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বাধা দিলেও প্রভাবশালীরা কথা শুনতেন না। তাদের ইচ্ছেমতো অনুষ্ঠান আয়োজন করা হতো।’
অভিবাসনের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, এমন ১২৫জন আফগান শরণার্থীকে কাবুলে ফেরত পাঠিয়েছে জার্মানি।
আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যা কমাতে জার্মান সরকার যে শক্ত হতে শুরু করেছে, তারই নমুনা হিসাবে দেখা হচ্ছে এই ঘটনা।
জার্মানি এমন সময় শরণার্থীদের ফেরত পাঠাতে শুরু করলো যখন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা অভিবাসী সংকট নিয়ে ব্রাসেলসে আলোচনা শুরু করেছেন। কারণ একটি যৌথ উদ্যোগের অভাবে গ্রীস এবং পূর্ব ইউরোপের অনেক দেশ অভিবাসীদের নিয়ে সংকটে পড়েছে।
জার্মানিতে আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে সিরিয়ানদের পরেই রয়েছে আফগানরা। শুধুমাত্র ২০১৫ সালে দেড় লাখের বেশি আফগান জার্মানিতে এসেছে।
জার্মানির কর্মকর্তারা বলছেন, একটি বিশেষ ফ্লাইটে করে যারা জার্মানি থেকে কাবুলে ফেরত গেছেন, তারা সবাই স্বেচ্ছায় গিয়েছেন।
এর মাধ্যমে তারা তাদের দেশ পুনর্গঠনে ভূমিকা রাখবেন, বলছেন জার্মান কর্মকর্তারা।
আফগানদের জন্য ইউরোপে প্রবেশ ক্রমেই কঠোর হয়ে উঠছে।
মেসিডোনিয়াও তাদের সীমান্ত দিয়ে আফগানদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। শুধুমাত্র সিরিয়ান আর ইরাকিদের তারা প্রবেশ করতে দিচ্ছে।
বলিউড স্টার সঞ্জয় দত্ত বৃহস্পতিবার যখন পুনের কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন, তখন তাঁর ঝুলিতে ছিল কাগজের ব্যাগ তৈরি আর রেডিও ডিস্ক জকি হিসাবে কাজের অভিজ্ঞতা।
কারণ এখানে কাগজের ব্যাগ বা ঠোঙ্গা তৈরি করে তিনি আয় করেছেন প্রতিদিন ৪৫ রূপি। কারাগারের রেডিওতে একজন উপস্থাপক হিসাবেও তিনি কাজ করেছেন।
১৯৯৩ সালের মুম্বাই বোমা হামলার ঘটনার পর, হামলাকারীর কাছ থেকে অবৈধ অস্ত্র কেনার অভিযোগে ‘মুন্নাভাই’ মি. দত্তর সাজা হয়।
যদিও তার দাবি, হিন্দু মুসলিম দাঙ্গার কারণে নিজের পরিবারকে বাঁচাতেই তিনি ওই অস্ত্রটি কিনেছিলেন।
তার পাঁচবছরের সাজা হলেও, ভালো ব্যবহারের কারণে ১৪৪দিনের সাজা কমে যায়।
২০১৩ সালে তাকে পুনের ওই কারাগারে তার কারাভোগ শেষ করার জন্য পাঠানো হয়। যদিও অনেকে দাবি, সেলেব্রিটি হওয়ার কারণে তিনি অনেক বেশি প্যারোল ভোগ করেছেন।
বৃহস্পতিবার তিনি সেই সাজা ভোগ শেষে বেরিয়ে এলেন।
কিন্তু কেমন ছিল তার কারাগারের দিনগুলো?
কারাগারে মি. দত্ত সবচেয়ে নিরাপত্তার ওয়ার্ড, ‘ফ্যান্সি ওয়ার্ডে’ আট ফুট বাই দশ ফুটের একটি সেলে বাস করতেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামীদের সেলগুলো ছিল ঠিক পাশেই।
তাকে কারাবন্দীদের পোশাকই তাকে পড়তে হতো।
তার কারাগারের বাইরে একটি ছোট বাগান ছিল, নিরাপত্তা রক্ষীদের নজরবন্দি হয়ে সেখানে তিনি হাঁটাচলা করতে পারবেন।
একজন কারাবন্দী জানিয়েছেন, তাকে কারাগারে সবাই ‘বাবা’ বলে ডাকতো। কারাগারে তিনি অনেক বই পড়তেন। লাইব্রেরী থেকে প্রতি সপ্তাহে তিনি দুইটি বই আনতেন।
সকাল ৬টায় ঘুম থেকে ওঠার কিছু পর কারারক্ষীরা তার কাগজের ব্যাগ বানানোর জিনিসপত্র নিয়ে আসতো। নিউজ পেপার কেটে কেটে তিনি ব্যাগ বানাতেন। এতে প্রতিদিন তার আয় হতো ৪৫ রুপি।
দুপুরে তাকে কারাগারের অভ্যন্তরীণ রেডিও কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হতো। সেখানে তিনি রেডিও জকি হিসাবে একটি প্রোগ্রাম উপস্থাপনা করতেন। দুপুরের খাবারের পরও তিনি রেডিওকে কাজ করতেন।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রাতের খাবার খেয়ে ৮টার মধ্যে তাকে নিজের সেলে ঢুকে পড়তে হতো। পরদিন সকাল ৬টা পর্যন্ত তিনি সেখানেই তালাবন্ধ থাকতেন।
১৯৯৩ সালে মুম্বাইতে সিরিজ বোমা-হামলার সঙ্গে জড়িত একটি মামলায় দীর্ঘ কারাদন্ড ভোগ করার পর বলিউড তারকা সঞ্জয় দত্ত আজ সকালে পুনের ইয়েরওয়াডা জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
বিকেলে মুম্বাইতে নিজের বাসভবনে এক সাংবাদিক বৈঠকে তিনি দাবি করেছেন, তিনি কখনওই একজন সন্ত্রাসবাদী নন।
বলিউডের বহু পরিচালক ও সঞ্জয়ের সহ-অভিনেতারা প্রায় সবাই একবাক্যে তার মুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন, মুম্বাইয়ে তাকে আজ দেখতে জনতার ভিড়ও উপছে পড়েছে।
কিন্তু ভারতের বুকে সবচেয়ে বিধ্বংসী জঙ্গী হামলার সঙ্গে যার নাম জড়িয়ে আছে, তিনি জেল থেকে বেরোনোর পর কীভাবে এই বিপুল অভ্যর্থনা পাচ্ছেন?
আজ সকালে পুনের ইয়েরওয়াডা জেল থেকে বাইরে বেরিয়েই যেভাবে সঞ্জয় দত্ত মাটিতে হাত ছুঁইয়ে প্রণাম করেন ও তারপর দেশের জাতীয় পতাকাকে কুর্নিশ জানান, তেমন আবেগঘন দৃশ্য বলিউডেও খুব বেশি দেখা যায় না।
তারপর মিডিয়ার তুমুল দৌড়োদৌড়ি ও তাকে এক ঝলক দেখার জন্য সমর্থকদের হুড়োহুড়ির মধ্যেই তিনি ঘোষণা করেন – গত তেইশ বছর ধরে তিনি যে মুক্তির আশায় অপেক্ষা করে ছিলেন – আজ অবশেষে সেই মুক্তির দিন এসে গেছে।
তাকে জেল-গেটে নিতে এসেছিলেন স্ত্রী মান্যতা ও যমজ ছেলেমেয়ে – সঙ্গে ছিলেন সঞ্জয় দত্তের বিখ্যাত মুন্নাভাই সিরিজের ছবিগুলোর পরিচালক রাজকুমার হিরানি।
হিরানি বলেন, আজ তার জন্য ভীষণ এক খুশির দিন – সঞ্জয়ের সঙ্গে আরও লম্বা ইনিংস খেলার জন্য তিনি মুখিয়ে আছেন।
সঞ্জয়ের খলনায়ক বা বিধাতা-র মতো ছবির পরিচালক সুভাষ ঘাইও প্রায় এক সুরে বলেছেন, কারাবাসের দিনগুলো সঞ্জয় দত্তকে আগুনে পুড়িয়ে শুদ্ধ করে তুলবে।
মি ঘাইয়ের কথায়, ‘আজ সারা দেশ কেন এত খুশি সেটা বোঝার চেষ্টা করুন। কারণ সবাই জানে সঞ্জয় ভীষণ ভাল মানুষ, দারুণ এক অভিনেতা। বন্ধুর জন্য, পরিবারের জন্য সব সময় ঝাঁপিয়ে পড়ে।’
চার্টার্ড প্লেনে পুনে থেকে মুম্বাই এসেই সঞ্জয় মা নার্গিস দত্তের কবরে মাথা ঠেকাতে যান, তারপর যান শহরের বিখ্যাত সিদ্ধিবিনায়ক মন্দির দর্শনে।
সর্বত্রই তাকে দেখতে মানুষের ভিড় উপচে পড়ে।
বিকেলে নিজের বাড়িতে বসে তিনি সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন – তাকে যেন মুম্বাই বিস্ফোরণের আসামি না-বলা হয়।
সঞ্জয় বলেন, ‘আপনাদের একটাই ছোট্ট অনুরোধ – আমি কিন্তু সন্ত্রাসবাদী নই। টাডা আইনে আমার বিরুদ্ধে যতগুলো সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ আনা হয়েছিল তার সবগুলো থেকে আদালত কিন্তু আমায় অব্যাহতি দিয়েছে। আমি সাজা খেটেছি শুধু অস্ত্র আইনে – কাজেই দয়া করে মুম্বাই ব্লাস্টের সঙ্গে আমার নামটা জড়াবেন না।’
সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, তা হল মুম্বাই বিস্ফোরণে জড়িত জঙ্গীরাই তাকে একে-৫৬ রাইফেল ও পিস্তল জোগান দিয়েছিল।
কিন্তু যে ভারত এখন দেশদ্রোহ-বিতর্ক নিয়ে সরগরম বা আফজল গুরুর সমর্থকদের নিন্দায় সরব – সেখানে এই সঞ্জয় দত কীভাবে জেল থেকে বেরিয়ে এই নায়কোচিত সংবর্ধনা পাচ্ছেন?
সমাজতত্ববিদ আশিস নন্দী বলছিলেন, ‘এখানে সঞ্জয়ের সমর্থক ও বিরোধী দুরকম শিবিরই আছে। একদল তার মুক্তি নিয়ে মাতামাতি করলেও অন্যরা কিন্তু বলছে ও ভাল করে জেলই তো খাটেনি! আর দুপক্ষই দেখানোর চেষ্টা করছে অন্য পক্ষ সন্ত্রাসবাদীদের সমর্থক’।
অর্থাৎ একদল ভক্ত যেমন তাকে মাথায় করে রাখছেন, তেমনি মোট পাঁচ বছরের জেলের সাজার মধ্যেও তিনি বারবার যেভাবে পেরোলে বেরোনোর সুযোগ পেয়েছেন বা সাড়ে তিন মাস আগেই ছাড়া পেয়ে গেছেন অনেকে তারও সমালোচনা করছেন।
দ্বিতীয় এই দল বলছে, বলিউডে সঞ্জয় দত্-এর তারকার মর্যাদাই হয়তো তাকে সাহায্য করেছে।
আশিস নন্দী বলছিলেন সিনেমার জগতের অনেকেরই বাইরের দুনিয়া সম্পর্কে ধারণা খুব কম।
কাজেই সঞ্জয় দত্তও হয়তো না-বুঝে মূর্খের মতো ওই সব অস্ত্রশস্ত্র রেখেছিলেন সেটাও হতে পারে এবং অনেক মানুষ সেটা বিশ্বাসও করেন।
এই মুহুর্তে তার প্রতি সহানুভূতিশীলদেরই যে পাল্লাভারী সেটা বুঝতে অবশ্য কোনও অসুবিধা হচ্ছে না – আর এই সমর্থন আর সহানুভূতিতে ভর করেই সঞ্জয় দত্ খুব শিগগিরি ফিরে আসছেন মুন্নাভাই-থ্রি ও আরও নতুন সব ছবির শ্যুটিংয়ে।
(বিবিসি বাংলার টিভি অনুষ্ঠান ‘বিবিসি প্রবাহে’ আজ দেখবেন, বাংলাদেশে সিম নিবন্ধনে আঙ্গুলের ছাপ পদ্ধতি নিয়ে বিতর্ক বিষয়ে টিভি প্রতিবেদন এবং এ নিয়ে আলোচনা দেখতে চোখ রাখুন আজ রাত ৯:৩৫ মিনিটে চ্যানেল আই’তে।)
বায়োমেট্রিক্স পদ্ধতিতে সিম যাচাই করতে মোবাইল কোম্পানির কাছে আঙ্গুলের ছাপ দেয়াকে ঝুকিপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করে এ পদ্ধতির নিয়ে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে বাংলাদেশে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এর বিরোধিতা করছেন অনেকে।
গত ডিসেম্বর মাস থেকে আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে ১৩ কোটির বেশি সিম নিবন্ধন যাচাই শুরু হয়েছে।
বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত দেড়কোটির বেশি মানুষ বায়োমেট্রিক্স পদ্ধতিতে সিম যাচাই করে নিয়েছেন।
এপ্রিলের মধ্যেই এভাবে আরো ১১ কোটির বেশি সিম নিবন্ধন করতে হবে।
সাধারণ ব্যবহারকারীরা সরকারি এ নির্দেশনার ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাবই দেখাচ্ছেন।
সিম নিবন্ধন শেষে একটি কাস্টমার কেয়ার সেন্টার থেকে বেরিয়ে অনন্যা মুন্নী বলছিলেন, “ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে সিমটা নেয়া খুবই ভাল একটা জিনিস।
যারা আগে জানতো না তারা নিতোনা, এখন উদ্যোগটা নিয়েছে এটা ভাল কাজ”।
মিজানুর রহমান নামে আরেকজন বলছিলেন “ক্রিমিনালকে ধরতে খুব সহজ হবে। আমি মনে করি এটা ভাল জিনিস। এটা অন্য দেশে নেই, অন্য দেশে ক্রিমিনালের ধরন আর আমাদের দেশের ক্রিমিনালের ধরন এক না”।
কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার স্বার্থে আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে সিম নিবন্ধনের বিরোধিতা দেখা যাচ্ছে।
কেউ কেউ ব্লগে এমনকি অনলাইন সংবাদপত্রে মতামত লিখে উদ্বেগ জানাচ্ছেন।
বহুজাতিক কোম্পানির কাছে আঙ্গুলের ছাপ দেয়ার ঘোর বিরোধী একজন আরিফুজ্জামান।
তিনি বলেন, “আমাদের এখানে হাতের আঙ্গুলের ছাপ বাইরে চলে যেতে পারে এবং আমি আমার আঙ্গুলের ছাপ বাইরে দিবনা এরকম পরিমাণ বোধ বা অ্যাওয়ারনেস কিন্তু আমাদের অধিকাংশ মানুষের মধ্যে গড়ে ওঠে নাই। কিন্তু আমি কোনোভাবেই চাইবনা যে আমার হাতের আঙ্গুলের ছাপ আমি একটি বেসরকারি কোম্পানির কোনো কর্মকর্তার উপস্থিতিতে বা তার ডিভাইসে আঙ্গুলের ছাপ দিব। কারণ এই আঙ্গুলের ছাপ নানান ভাবেই ব্যবহার হতে পারে”।
খোঁজ নিয়ে দেখা যাচ্ছে আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে মোবাইল সিম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করেছে প্রথমে পাকিস্তান।
বাংলাদেশে এটি শুরু হয়েছে এবং সর্বশেষ সৌদি আরবেও এ নিয়ম চালুর খবর পাওয়া গেছে।
ব্যক্তিগত গোপানীয়তা এবং স্পর্ষকাতর এসব তথ্যের নিরাপত্তার কারণে উন্নত রাষ্ট্র এনং সেখানকার নাগরিক অধিকার কর্মীরা সোচ্চার থাকে।
কিন্তু বাংলাদেশে নাগরিক অধিকারের স্পর্ষকাতর এসব দিক অনেকটা উপেক্ষিত আছে বলে মনে করেন আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক।
“সংবিধানে যেটা বলা আছে আমার এই ব্যক্তিগত সবকিছুর গোপনীয়তা আছে। তবে সরকার দেশের স্বার্থে আইন করে এর ব্যতিক্রম করতে পারে। তো এইখানে তো কোনো আইন নাই। আর আমরাও আমাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন না বলে আমরাও দিয়ে যাচ্ছি। তো আমি বলবো যে চিন্তা করেন পরে হকার বা বাসে উঠতে বা দুধ কিনতে গেলে যদি ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতে হয়, তখন কিন্তু আমরা ব্যপারটা বুঝতে পারবো যে এটা কত উদ্ভট কাজ হচ্ছে।
বাংলাদেশে এখন থেকে নতুন সিম কেনা কিংবা সংযোগ বন্ধ করতেও আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে যাচাই করতে হবে।
উদ্বেগ এবং বিতর্কের সূত্র ধরে জানতে চাই বায়োমেট্রিক তথ্য যাচাই প্রক্রিয়া কিভাবে হচ্ছে।
দেশটির অন্যতম একটি বড় অপারেটর বাংলালিংকের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শিহাব আহমাদ বলেন, “যে তথ্যগুলো আসে সব তথ্যই এখানে সংরক্ষণ করা হচ্ছে যতক্ষণ পর্যন্ত এটা ভেরিফাই করা না হচ্ছে।
ভেরিফাই হওয়ার পরে বিটিআরসির নির্দেশনা অনুযায়ী এগুলো হয় সংরক্ষণ করা হবে অথবা আমরা এটা পরবর্তীতে অন্য কোনো পদ্ধতিতে ডিলিট করে দিব”।
গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা দিয়ে থাকেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংরক্ষণ না করে ভেরিফাই করা সম্ভব না।
“গ্রাহকদের সম্পূর্ণ তথ্য পরিপূর্ণভাবে সংরক্ষণ করা হয় এবং ওইটা প্রটেকশন দেয়া হয়। এবং আমাদের সার্ভার থেক এটা বাইরে যাবার কোনো সম্ভাবনা নাই”
মানুষের আঙ্গুলের ছাপ, চোখের রেটিনা এবং ডিএনএ তথ্য একান্ত ব্যক্তিগত সম্পদ।
প্রযুক্তিবিদ জাকারিয়া স্বপন বলেন, এ তথ্য রাষ্ট্র ছাড়া কারো কাছে থাকাই নিরাপদ নয়।
“রাষ্ট্র শুধু এটা প্রটেক্ট করতে পারে বা স্টোর করতে পারে।
ওই ডেটাবেজ থেকে যদি কেউ পেয়ে যায় তাহলেতো ডেফিনেটলি ক্রাইম।
এনশিওর করতে হবে যে গর্ভমেন্ট ছাড়া আর কেউ কোনো পাবলিক ইনফরমেশন স্টোর করছে না কোনো অপারেটর বা যারা এরমধ্যে কাজ করছে, ইভেন মিডলে যারা আছে।
কারণ এই ফিঙ্গার প্রিন্টের প্রসেসটা কিন্তু থার্ড পার্টিরা ইমপ্লিমেন্ট করে দিয়েছে”।
মিস্টার স্বপন বলেন, আঙ্গুলের ছাপ তৃতীয় পক্ষের কাছে চলে গেলে নানারকম অপব্যবহার হতে পারে-
“রিস্কটা হলো অন্য একটা পার্সন আমাকে ইমপার্সনেট করতে পারে সে প্রিটেন্ড করতে পারে যে আমি জাকারিয়া স্বপন।
আমার অনুমতি ছাড়াই করতে পারে।
বেসিকালি আমার যত যায়গায় ডিজিটাল ইনফরমেশন আছে স্টোর করা আছে সব অ্যাকাউন্ট চাইলে সে নিয়ে নিতে পারে।
এ রিস্ক কিন্তু শুধু আমার আপনার না সবার ক্ষেত্রে হতে পারে।
ইভেন একজন কৃষকেরও হতে পারে।
দেখা যাবে উনি লোন নিয়ে বসে আছেন উনি যানেনই না”।
এদিকে বিটিআরসির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এমদাদ উল বারী বলেন, রিটেইলার লেভেলে সংরক্ষণ করার কোনো সুযোগই রাখা হয়নি।
“টেকনিক্যালি ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংরক্ষণ করা সম্ভব না। কারণ এটা রিয়েল টাইম মিলিয়ে দেখা হয়। তবে অপারেটর লেভেলে এটা সম্ভব হতে পারে যদি আলাদা করে কেউ করে। বাট আমরা অপারেটরদেরকে নির্দেশ দিয়েছি যেন এটা তারা না করে”।
এদিকে আঙ্গুলের ছাপ বিতর্ক নিয়ে ১৯শে ফেব্রুয়ারি প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম তার ফেইসবুক পাতায় লিখেছেন মোবাইল কোম্পানির কাছে আঙ্গুলের ছাপ সংরক্ষণের কোনো প্রযুক্তিও নেই।
এদিকে মোবাইল অপারেটরদের পক্ষ থেকে জানা গেছে কোনো পর্যায়ে বায়োমেট্রিক তথ্য সংরক্ষণ করা যাবে না বিটিআরসি এই নির্দেশনা দিয়েছে ২৩ ফেব্রুয়ারি।
বুধবার এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে ভারতের কাছে হেরে যাবার পর বাংলাদেশী তারকা খেলোয়াড় সাকিব আল হাসানের একটি ক্যাচ ফেলা নিয়ে দেশটিতে বিস্তর আলোচনা চলছে।
অনেকেই মনে করছেন, টস জিতে আগে ফিল্ডিং নেয়া বাংলাদেশ প্রথমে চালকের আসনে থাকলেও প্রথম ইনিংসের মাঝামাঝি পর্যায়ে ভারতীয় ব্যাটসম্যান রোহিত শর্মার একটি ক্যাচ ফেলে দেন সাকিব। জীবন ফিরে পেয়ে ওই রোহিত শর্মাই ভারতকে বড় সংগ্রহের দিকে নিয়ে যান।
অনেকেই এই ড্রপ ক্যাচটিকেই ম্যাচটির ভাগ্য নিয়ন্তা বলে মন্তব্য করছেন।
ফেসবুকে সাকিব আল হাসানের পাতায় গিয়ে দেখা যায় শত শত কমেন্টের মাধ্যমে ক্রিকেট ভক্তরা এ নিয়ে বিতর্ক করছেন।
সাকিবের ফেসবুক পাতায় মাহমুদুল হাসান নামের একজন লিখেছেন, ''মেসি রোনালদোর মত ফুটবলাররাও ১টা পেনাল্টি গোল মিস করে বসে। সাকিব না হয় একটি কঠিন ক্যাচ মিস করেছে। আসলে তার সময়টা খারাপ যাচ্ছে। ক্যাচটা মিস করে আরো খারাপ হলো।''
কিন্তু তার এই কমেন্টের প্রতি উত্তর দিয়েছেন ৯২জন। তাদের জবাব সাকিবের পক্ষে বিপক্ষে উভয় দিকেই রয়েছে।
মেহনাজ উদ্দিন নামের একজন লিখেছেন, ''ভাই, দয়া করে আপনার নামের আগে ট্যাগ (বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডার) এর প্রতি সুবিচার করে মাঠে পারফর্মেন্স করবেন। আপনি যেখানে, যে দলের বিপক্ষেই খেলেন না কেন, ক্রিকেট বিশ্ব ও ১৬ কোটি বাংলাদেশে আপনার পারফর্মেন্সের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।''
রাজু রাজ নামের একজন লিখেছেন,''শুধু একটা ক্যাচ মিস হওয়াতে সব দোষ সাকিবের হয়ে গেলো? এটা তো খেলার একটা অংশ। তাছাড়া, বোলাররা গড়ে বেশি রান দিলো, সেটা কারো চোখেই পড়ছে না।''
গতরাতে ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনেও বেশীরভাগ সাংবাদিকেরাই এই প্রশ্নটি সামনে আনেন।
এসব প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা বলেন, ''ওই ক্যাচ ফেলাটা অবশ্যই ফলাফলে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এটা খেলারই একটি অংশ। ম্যাচে ক্যাচ পড়তেই পারে, করার কিছু নেই।''
বাংলাদেশে দলের অধিনায়ক বলছেন, ''একটি খেলায় এরকম একটি জায়গা থাকেই সবসময়, আপনি যখন লুজিং সাইডে থাকবেন, কোন না কোন ভুল বের হবে, এটা খুবই স্বাভাবিক। সর্বশেষ যে সব ম্যাচ বা প্রাকটিস ম্যাচ খেলেছি, সেখানে ১৬০ রানের বেশি করেছি। আমার কাছে মনে হয়না এটা আমাদের আওতার বাইরে ছিল, আসলে হয়তো আমরা আমাদের প্লান কার্যকর করতে পারিনি।''
বাংলাদেশের গণমাধ্যমেও বেশিরভাগ শিরোনামে এসেছে এই ক্যাচ ফেলার ঘটনাটি।
কিন্তু একটি খেলায় ক্যাচ মিস তো হতেই পারে। সেটা নিয়ে বিতর্কের অবকাশ কতটা?
জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক রাকিবুল হাসান বলছেন, ''এটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। তবে যেহেতু এটা টি টোয়েন্টি খেলা, হয়তো রোহিত শর্মাকে তখন ক্যাচটি ধরে মাত্র ২১ রানে আউট করা গেলে ভারত আরো বেশি চাপে পড়ত। হয়তো তাহলে টার্গেটটা আরো কম হতো। সে কারণেই হয়তো এই বিষয়টি এত সামনে আসছে। কিন্তু ক্রিকেট খেলাটাই কিন্তু এরকম যে এটা হলে ওটা হতো, ওটা হলে এটা হতো।''
মি. হাসান বলছেন, ''কেউ তো ইচ্ছা করে খেলায় ক্যাচ ফেলে না। সাকিব আল হাসান অনেক অসাধারণ ক্যাচ ধরেছেন। কালকের ঘটনাটি তার একটি দুর্ঘটনা বলেই আমি মনে করি। সুতরাং এটা নিয়ে এত বিতর্কের কোন দরকার আছে বলে আমার মনে হয়না।''
আরেকজন সাবেক অধিনায়ক ও উইকেট কিপার খালেদ মাসুদ পাইলট বলছেন, ''ক্যাচ তো ম্যাচের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বলা হয়, ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস। ওই ক্যাচটাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল, সেটা ধরতে পারলে খেলাটা হয়তো অন্যরকম হতো পারতো।''
কিন্তু এক ক্যাচ দিয়ে সবকিছু বিবেচনা করা ঠিক হবে না বলে তিনি মনে করেন। কারণ এরপরেও আরো ব্যাটসম্যান ছিল, হয়তো রান করে ফেলতে পারতো। এটা খেলার একটি অংশ, হয়তো মিস হতে পারে।
মি. পাইলট বলছেন, ''বরং ওভারঅল টিমের মধ্যেই অনেক ঘাটতি ছিল, যে কারণে ম্যাচটি হাতছাড়া হয়ে গেছে। বোলিং ভালো হয়নি, তারা তারা বড় রান করেছে, ব্যাটসম্যানরাও ভালো করতে পারেনি। তাই শুধু ক্যাচের দোষ দিলেই হবে না, বলছেন সাবেক এই অধিনায়ক।''
তবে সেটা যাই হোক, এই ক্যাচ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে মন্তব্য, পাল্টা মন্তব্য চলছেই।