বুধবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

আল-নুসরা ফ্রন্টকে বাইরে রেখেই সিরিয়াতে যুদ্ধবিরতি

syria_observersImage copyrightAFP
Image captionসিরিয়াতে যুদ্ধবিরতি মনিটর করার জন্য জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক দল
সিরিয়ায় আংশিক যুদ্ধবিরতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার মধ্যে যে বোঝাপড়া হয়েছে, বিদ্রোহীদের একটি অংশ তাতে সায় দিয়েছে। তবে বিদ্রোহীরা শর্ত দিয়েছে তাদের নিয়ন্ত্রিত বেশ কিছু শহর থেকে সরকারি সৈন্যদের অবরোধ তুলে নিতে হবে।
এই যুদ্ধবিরতি অবশ্য ইসলামিক স্টেট এবং আল কায়েদার সাথে সম্পর্কিত গোষ্ঠী আল-নুসরা ফ্রন্টের ক্ষেত্রে প্রয়োজ্য হবে না।
তবে অন্যত্রও যে এই চুক্তি কার্যকর করা যাবে, তা নিয়ে ইতোমধ্যেই যথেষ্ঠ সন্দেহ দেখা দিয়েছে। এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবার কথা শুক্রবার মাঝরাত থেকে ।
যদিও দুটি প্রধান জিহাদি গ্রুপ ইসলামিক স্টেট এবং আলনুসরা ফ্রন্ট এই যুদ্ধবিরতির বাইরে - কিন্তু সিরিয়ার সরকার এবং প্রধান বিরোধী গ্রুপ এইচএনসি এর মধ্যে আছে।
সে কারণেই অনেকে আশা করছেন কোনও মতে হলেও একটা যুদ্ধবিরতি এবার বলবৎ করা যাবে। সিরিয়ার টেলিভিশনে যুদ্ধবিরতি মেনে নেবার খবরও প্রচারিত হয়েছে।
জাতিসংঘের বিশেষ দূত স্টেফান ডি মিস্টুরা বলছেন, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে কি না এবং সব পক্ষ তা মেনে চলবে কি না তা নিশ্চিত করতে হবে ওয়াশিংটন এবং রাশিয়াকেই।
কিন্তু এই মেনে নেওয়ার সাথে বহু রকমের শর্ত জড়িত। বিদ্রোহী গ্রুপগুলো দাবি করছে - সরকারকে বন্দীদের মুক্তি দিতে হবে, বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকাগুলো থেকে সরকারি বাহিনীর অবরোধ তুলে নিতে হবে, বিমান এবং কামান থেকে বোমা ও গোলাবর্ষণও বন্ধ করতে হবে।
syria_ceasefireImage copyrightBBC World Service
Image captionসিরিয়ার টেলিভিশনে যুদ্ধবিরতি মেনে নেবার খবরও প্রচারিত হয়েছে
এ কারণেই জাতিসংঘের ডেপুটি মহাসচিব ইয়ান এলিয়াসন বলছেন, যুদ্ধবিরতি পালিত হচ্ছে কিনা তার ওপর নজরদারি করা সহজ হবে না।
যুদ্ধবিরতি যদি এমন হয় যার আওতায় দায়েশ এবং আল-নুসরার নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলো পড়বে না, তাহলে তার ওপর নজর রাখাটা বিরাট এক চ্যালেঞ্জ।
এটা খুবই জটিল এক পরিস্থিতি, তবে তা আরো বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে এ ভয়টাই এখন পর্যন্ত সব পক্ষকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছে।
সিরিয়ার সরকার বলছে তারা ইসলামিক স্টেট এবং আল নুসরা ফ্রন্টের বিরুদ্ধে হামলা বন্ধ করবে না।
বিশেষ করে যে কথাটা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো সরকার বলছে আল নুসরার সাথে সম্পর্কিত অন্য গোষ্ঠীগলোর ওপরও আক্রমণ জারি থাকবে - তাই অন্য অনেকগুলো বিদ্রোহী গ্রুপও এর আওতায় পড়ে যেতে পারে।
সে রকম কিছু হলে যুদ্ধবিরতি কতটুকু হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা অবশ্যই আরো বেড়ে যাবে।

ছাত্রছাত্রীদেরকে পুলিশের লাঠিপেটা বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে

students_beaten_at_burdwan_univImage copyrightBBC Bangla
Image captionছাত্রীদের দিকে তেড়ে যাচ্ছে পুলিশ (ছবি: প্রসেনজিৎ হোম চৌধুরী)
পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে এক ছাত্র বিক্ষোভের ওপরে পুলিশ আজ মঙ্গলবার ব্যাপক লাঠিচার্জ করেছে।
বামপন্থী সিপিআইএম দলের ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের সমর্থক ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষার ফল প্রকাশের ইস্যুতে সেখানে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্মৃতিকুমার সরকার বলছেন, “গতকালও ছাত্রদের একটি মিছিলের সময়ে কর্মচারী ও শিক্ষকদের শারীরিক হামলা চালানো হয়। আজ বিক্ষোভরত ছাত্র প্রতিনিধিদের কাছ থেকে স্মারকলিপি নেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষ তৈরী ছিলেন।’’
“তারা যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারও হামলা না চালাতে পারে, তারজন্য প্রশাসনিক ভবনের গেট বন্ধ রাখা হয়েছিল। এসএফআইয়ে সমর্থকরা শাবল, পাথর, বাঁশ নিয়ে এসেছিল। সম্পত্তি নষ্ট আর কর্মীদের ওপরে হামলা রুখতেই পুলিশ ডাকতে হয়’’, জানান উপাচার্য মি সরকার।
স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেলগুলিতেও দেখা গেছে যে ছাত্রছাত্রীরা পাথর, শাবল দিয়ে লোহার গেটের তালা ভাঙার চেষ্টা করছেন। তাঁদের ভঙ্গি স্পষ্টতই ছিল মারমুখী।
এসএফআই-য়ের স্থানীয় নেতৃত্ব বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগের কোনও যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা দিতে পারছেন না।
টিভি চ্যানেলগুলিতে সম্প্রচারিত ছবিতে এ-ও দেখা যাচ্ছে যে পুলিশ লাঠি বা এসএফআইয়ের পতাকা লাগানো লাঠি নিয়ে ছাত্রদের ধাওয়া করছে, লাঠিপেটা করছে। লাঠি পড়ছে ছাত্রীদের ওপরেও।
তবে পুলিশ আধিকারিকেরা বলছেন যে বিশ্ববিদ্যালয় চত্ত্বরে কোনও লাঠিচার্জ হয়নি। শুধু ছাত্র বিক্ষোভকারীদের দিকে লাঠি নিয়ে তেড়ে যাওয়া হয়েছিল, তাদের সরিয়ে দেওয়ার জন্য। কেউ আহতও হননি ওই ঘটনায়।।
বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ঢুকে পুলিশ এমন একটা সময়ে লাঠি চালালো, যখন দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্র ইউনিয়ন প্রেসিডেন্টকে দেশদ্রোহের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা নিয়ে ভারতের রাজনীতি উত্তাল হয়ে উঠেছে।
এছাড়াও কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মিছিলে কথিত দেশবিরোধী স্লোগান ওঠার পরেও উপাচার্য পুলিশ ডাকতে বা অভিযোগ জানাতে অস্বীকার করেন।

চীনে শুধু মেয়েদের জন্য মসজিদ শত শত বছর ধরে

china_women-only_mosqueImage copyrightGetty
গোটা ইসলামিক বিশ্ব জুড়েই সংস্কৃতি আর রীতিনীতির ভিন্নতা আছে, নানা দেশের মুসলিমদের সকলের ধর্মাচরণও ঠিক একই রকমের নয়।
এই বৈচিত্র্যেরই একটা দারুণ দৃষ্টান্ত হল চীনে শুধু মহিলাদের জন্য মসজিদ – যা সে দেশে বহু কালের এক পরম্পরা।
এমনই একটি মসজিদ আছে চীনের হেনান প্রদেশের কাইফেং শহরে, ইয়েলো রিভার বা পীত নদীর অববাহিকার ঠিক মাঝখানে।
কাইফেং ছিল সং রাজবংশের প্রাচীন রাজধানী। এক হাজার বছর আগে বিশ্বের প্রধান শহরগুলোর অন্যতম ছিল কাইফেং, আর নানা ধর্মের সমাবেশ হয়েছিল এই ঐতিহ্যশালী নগরীতে।
ইসলাম ও খ্রীষ্টধর্ম – উভয়ই কাইফেংয়ে পা রাখে সপ্তম শতাব্দীতে। ওই শহরের ওল্ড সিটির সরু গলিগুলোর মাঝে আজও আছে খ্রীষ্টানদের গীর্জা, মুসলিমদের মসজিদ, বৌদ্ধ ও দাওয়িস্টদের মন্দির।
এমন কী সেখানে চীনের হাতে গোনা কিছু ইহুদী সম্প্রদায়েরে লোকজনও আছেন, আছে তাদের উপাসনালয়ও।
তবে কাইফেংয়ের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল শুধু নারীদের জন্য মসজিদ। সে মসজিদের ইমামও একজন মহিলা।
china__women-only_mosque_islam
Image captionকাইফেং শহরে মহিলা ইমাম ও তার বন্ধুদের সঙ্গে বিবিসির মাইকেল উড
শহরে পুরুষদের জন্য যে প্রধান মসজিদটি আছে, তার উল্টোদিকের গলিতেই মেয়েদের জন্য এই মসজিদ। আশেপাশে বহু খাবারের দোকানও আছে সেখানে।
মসজিদের ইমামের নাম গুয়ো জিংফাং। তার বাবা ছিলেন পুরুষদের মসজিদের ইমাম, তার কাছেই ইমামতি শিখেছেন তিনি।
শুধুমাত্র নারীদের জন্য কাইফেংয়ে যে সব মসজিদ আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে পুরনো এই ‘ওয়াংজিয়া গলির মসজিদ’। এটি তৈরি হয়েছিল প্রায় দুশো বছর আগে, ১৮২০তে।
ইমাম গুয়ো জিংফাং বলছিলেন, নারীদের জন্য মসজিদ চীনের একটি বৈশিষ্ট্য। তবে হেনান প্রদেশেই এই ধরনের মসজিদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
কাইফেং শহরেই যেমন মেয়েদের জন্য মসজিদ আছে মোট ষোলোটি। আশেপাশের গ্রামীণ এলাকায় আরও প্রচুর। ইয়ুনান বা ঝেংজোউ-তেও আছে শুধু মেয়েদের জন্য আলাদা অনেক মসজিদ।
তবে চীনের যেটা একমাত্র মুসলিম প্রদেশ, সেই শিনজিয়াংয়ে কিন্তু এমন কোনও মসজিদ নেই। তারা সেখানে সুন্নি ইসলামেরই একটি মধ্য এশিয়া-ঘেঁষা ধারা অনুসরণ করে থাকেন।
বিবিসির গবেষক মাইকেল উড বলছেন, ষোড়শ শতাব্দীতে চীনের মুসলিম সমাজের মধ্যে এই উপলব্ধিটা ক্রমশ বাড়তে থাকে তাদের ধর্মবশ্বাসকে টিঁকিয়ে রাখতে হলে মেয়েদের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
china__women-only_mosque_islamImage copyrightGetty
চীনের মুসলিমদের মধ্যে তখন থেকেই মেয়েদের পড়াশুনো করানোর ওপরও বিশেষ জোর দেওয়া হতে থাকে।
কাইফেংয়ে গুয়ো জিংফাং ও তার বন্ধুরা বলছিলেন – প্রথমে মেয়েদের কোরান ও ধর্মশিক্ষা দেওয়ার জন্য নানা স্কুল গড়ে তোলা হয়। পরে সেগুলোই অষ্টাদশ শতাব্দীতে এসে পুরোদস্তুর মসজিদের রূপ নেয়।
এক মুসলিম মহিলা সেখানে বলছিলেন, ‘‘আমাদের মায়েরা যখন ছোট ছিলেন তখন গরিব মুসলিম মেয়েদের পড়াশুনোর একমাত্র সুযোগ ছিল এই মসজিদগুলো। মেয়েরাই তখন মেয়েদের দেখেছে’’।
‘‘আমি জানি মুসলিম দুনিয়ার অনেক জায়গাতেই মেয়েদের জন্য আলাদা মসজিদের কোনও অনুমতি নেই। কিন্তু আমাদের এখানে এটা একটা খুব ভাল ব্যাপার বলেই আমরা মনে করি’’, তিনি আরও যোগ করেন।
১৯৪৯ থেকে চীনে মুসলিম মেয়েদের মর্যাদা অনেক বেড়েছে – আর শুধু মেয়েদের জন্য এই মসজিদগুলো সেই প্রক্রিয়ারই এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলে মনে করছেন কাইফেংয়ের মুসলিম নারীরা।

পঞ্চগড়ে মঠের অধ্যক্ষকে হত্যায় তিনজন রিমান্ডে

panchagarh_hindu_templeImage copyrightFocus Bangla
Image captionরোববার দেবীগঞ্জে মঠের অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর রায়কে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা
বাংলাদেশে পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জে হিন্দু মঠের অধ্যক্ষকে হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার তিনজনকে ১৫ দিনের রিমান্ড দিয়েছে আদালত।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আইয়ুব আলী বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, পুলিশের পক্ষ থেকে দুই মামলায় মোট ২০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছিল।
কিন্তু শুনানির পর আসামিদের ১৫ দিন রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।
এর মধ্যে হত্যা মামলায় ১০দিন এবং অস্ত্র ও বিস্ফোরক মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচদিন করে রিমান্ড দেয়া হয়েছে।
সোমবার এই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
পুলিশ বলছে এদের মধ্যে দুজন জেএমবি সদস্য এবং একজন ইসলামী ছাত্রশিবিরের স্থানীয় নেতা।
জেএমবি সদস্য দুইজনের বিরুদ্ধে ২০০৫ সালের ১৭ অগাস্টের বোমা হামলার ঘটনায় মামলা ছিল।
রোববার সকালে দেবীগঞ্জে মঠের অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর রায়কে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
এই হত্যার ঘটনায় রোববার সন্ধ্যায় দুটি মামলা হয়েছে।
একটি হত্যা মামলা এবং অপরটি অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে মামলা।