বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৫

৩ কোটি বাংলাদেশি তিন বেলা খাবার পায় না -মার্কিন রাষ্ট্রদূত



 
কূটনৈতিক রিপোর্টার : বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাট বলেছেন, বাংলাদেশ গত দুই দশকে নাগরিকদের সুবিধার জন্য প্রাকৃতিক সম্পদ উন্নয়নে অসাধারণ অগ্রগতি করেছে। তবে এখনো বাংলাদেশের তিন কোটি মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করে এবং বেশিরভাগ সময়েই তারা তিন বেলা খাবার অথবা পুষ্টিকর খাবার পায় না। তিনি বলেন, দুর্বল ওই পরিবারগুলো শিক্ষা বা স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ পায় না, উল্টো লগ্নি ব্যবসায়ী এবং ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও ভূমির ক্ষয়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দ্বারা ক্ষতির ঝুঁকিতে থাকে।
গতকাল বুধবার সকালে ইউএসএআইডির বাংলাদেশের উপকূলীয় মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধি’ শীর্ষক প্রকল্প উদ্বোধন (২০১৪-২০১৯) অনুষ্ঠানে তিনি এমন মন্তব্য করেন। ঢাকার একটি অভিজাত হোটেলে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মোহাম্মেদ ছায়েদুল হক।
রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাট বলেন, গত দুই দশকে বাংলাদেশ তার নাগরিকদের সুবিধার জন্য প্রাকৃতিক সম্পদ উন্নয়নে অসাধারণ অগ্রগতি করেছে। ১৯৯৭ সাল থেকে বন, জলাভূমি, সুন্দরবন ম্যানগ্রোভ বন রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ সরকার অংশীদার হয়ে কাজ করছে। এই মানুষকেন্দ্রিক জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ উদ্যোগগুলো নিয়ে আমি গর্ব করে বলতে চাই, সংরক্ষণই হচ্ছে উন্নয়ন।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের এই পরিবর্তন ও নিম্ন মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়াতে ইলিশ উৎপাদন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। পুষ্টি, বংশপরম্পরায় পাঁচ লাখ জেলের কর্মসংস্থান এবং পুরো প্রক্রিয়ায় আরও ২০ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে কাজ করে বাংলাদেশের জাতীয় মাছ। আসলে এর অর্থনৈতিক মূল্য বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও ভারতে ২০০ কোটি ডলার। বাংলাদেশে ইলিশ মাছ উৎপাদন মোট দেশজ আয়ের ১ দশমিক ৫ শতাংশ, যা কিনা প্রচুর মাছ!’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে এখনো তিন কোটি মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করে এবং প্রতিদিন ১ দশমিক ২৫ ডলারের চেয়ে কম আয় করে। এই পরিবারগুলো সবচেয়ে হুমকির সম্মুখীন ও ধকলের মধ্যে থাকে। বেশিরভাগই দিনে তিন বেলা খাবার অথবা পুষ্টিকর খাবার পায় না। মেঘনা নদীর পাড়ে থাকা ছোট ছোট যে সব গ্রামে মাছ ধরা হয় সেখানে চরম দারিদ্র্যসীমার হার ৮৫-৯০ শতাংশ। এই দুর্বল পরিবারগুলো শিক্ষা বা স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ পায় না, উল্টো তারা লগ্নি ব্যবসায়ী এবং ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও ভূমির ক্ষয়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের দ্বারা ঝুঁকিতে থাকেন।এ জন্য বাংলাদেশের স্বাধীনতার শুরু থেকে চরম দারিদ্র্য নির্মূল করার জন্য এবং একটি গণতান্ত্রিক, সহিষ্ণু সম্প্রদায়ের প্রসারে যুক্তরাষ্ট্র সরকার কাজ করে যাচ্ছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত বলেন, প্রোটিনের চাহিদা পূরণের জন্য সারাবিশ্বের ৩০০ কোটি মানুষ উপকূলীয় ও সামুদ্রিক মাছের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু মহাসাগরগুলো আজ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন। যেমনÑ অধিক মৎস্য শিকার, দুষণ ও সামুদ্রিক অম্লকরণ। এই সমস্যাগুলো সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। এ জন্য সেক্রেটারি জন কেরি জুন ২০১৪ সালে ‘আওয়ার ওশেন্স কনফারেন্স’ আহ্বান করেছিলেন এবং এ মাসে চিলিতে অনুষ্ঠিত ‘আওয়ার ওশেন্স ২০১৫’-তে অংশ নিয়েছিলেন। মহাসাগর, নদী ও জলাভূমী সংরক্ষণ কেবল জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি মানুষের আয়ের এবং পুষ্টির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উৎস। এ কথা বাংলাদেশে যেমন সত্য তেমনি পুরো পৃথিবীতেও সত্য।’
তিনি বলেন, আজ আমরা এখানে সমবেত হয়েছি আনুষ্ঠানিকভাবে ‘এনহ্যান্সড কোস্টাল ফিশারিজ ইন বাংলাদেশ (ইকোফিশ)’ শীর্ষক প্রজেক্ট উদ্বোধন করতে। যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) ১ দশমিক ৫ কোটি ইউএস ডলার আর্থিক সহায়তায় পাঁচ বছর মেয়াদী এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করবে ওয়ার্ল্ড ফিশ ও বাংলাদেশ মৎস্য অধিদফতর। ইকোফিশ মেঘনা নদীর বাস্তুসংস্থানের এবং উপকূলীয় মৎস্যজীবী কমিউনিটির সহিষ্ণুতা উন্নয়নে কাজ করবে। ইকোফিশ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে মৎস্যচাষ বিজ্ঞানের উন্নয়ন সাধন করবে, এটি মৎস্যচাষের পরিবর্তনশীল সহ-ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করবে এবং ইলিশ মাছ শিকারি জেলে কমিউনিটির সহিষ্ণুতা বৃদ্ধি করবে।
বাংলাদেশ সরকারের ইলিশ সংরক্ষণ কর্মসূচির সাফল্যের ওপর গড়ে উঠবে এই ইকোফিশ প্রকল্প, যার লক্ষ্য হচ্ছে মা ইলিশ ও বাচ্চা ইলিশ রক্ষা করা এবং যে সময়ে ইলিশ ধরা নিষেধ সেই সময়ে মৎস্যচাষীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া। কীভাবে নির্দিষ্ট মৎস্য অভয়াশ্রম এবং সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকার ব্যবস্থাপনা করতে হয় সে বিষয়ে ইকোফিশ বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে একত্রিত হয়ে স্থানীয় সম্প্রদায়কে উপদেশ দেবে। ইকোফিশ মৎস্যচাষী সম্প্রদায়ের আর্থসামাজিক দুর্বলতাকেও চিহ্নিত করবে, অতিদরিদ্র নারীদের জন্য সঞ্চয়ী হিসাব স্থাপন, নারীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী বিকল্প আয়ের সুযোগ এবং মূল্য সংযোজন কৌশল ও প্রযুক্তি প্রদানের মাধ্যমে যেন প্রত্যেক মাছের জন্য সর্বোচ্চ সাম্ভব্য মূল্য তারা পায় এবং নিশ্চিত করা যে অতিরিক্ত মূল্য যেন ওই সম্প্রদায়ের কাছেই থাকে।’
মার্শা ব্লুম বার্নিকাট বলেন, এটি আমাদের একান্ত আশাবাদ যে একটি ইলিশ সংরক্ষণ তহবিল স্থাপনে ইকোফিশ সাহায্য করবে, যা বাস্তুসংস্থান সেবার জন্য বাজারভিত্তিক দাম নির্ধারণ করবে, ধরে রাখবে এবং এই প্রকল্প শেষ হওয়ার পরও যেন এই তহবিল স্বচ্ছ ও ন্যায্যভাবে মৎস্য ব্যবস্থাপনা ও মৎস্যজীবী সহিষ্ণু গোষ্ঠীর কাজে হস্তান্তর নিশ্চিত করবে। এটি বেশ উচ্চাভিলাষী কর্মসূচি। কিন্তু এই কক্ষে অবস্থারত সম্মানিত সরকারি কর্মকর্তা, বিজ্ঞানী ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দকে দেখে আমি আত্মবিশ্বাসী যে, ইকোফিশ নানামুখী সফলতা অর্জন করবে।

dailysangram

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন