বাংলাদেশে নিরাপত্তা শঙ্কায় জাপানি দাতা সংস্থা জাইকার আটচল্লিশ জন স্বেচ্ছাসেবককে গত দুদিনে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
যদিও বাংলাদেশের সরকার বিদেশীদের নিরাপত্তার ব্যাপারে ব্যাপক ভিত্তিক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে এবং শঙ্কা নেই বলে দাবী করছে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র বলছে দেশটিতে এখনো এসব হুমকির ‘বাস্তব অস্তিত্ব’ রয়ে গেছে।সন্ত্রাসী হামলার হুমকি এবং করনীয় নিয়ে আজ বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করেছে ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া এবং ক্যানাডার রাষ্ট্রদূত।
সম্প্রতি বাংলাদেশে দুটি পৃথক হামলায় দুজন বিদেশী নাগরিক নিহত হবার পর থেকেই দেশটিতে অবস্থানরত বিদেশীদের নিরাপত্তা নিয়ে এই উদ্বেগ তৈরি হয়।
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা যাচ্ছে, জাপানী সাহায্য সংস্থা জাইকায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কর্মরত আটচল্লিশ জন সদস্যকে গতকাল এবং আজ জাপানে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংস্থাটির একাধিক কর্মকর্তা বিবিসিকে এ খবর নিশ্চিত করেছেন।
তারা বলছেন, ঢাকার বাইরে কর্মরত আটষট্টি জন স্বেচ্ছাসেবককে আগেই প্রত্যাহার করে এনেছিল সংস্থাটি। এখন তাদের চার সপ্তাহ করে ছুটি দিয়ে দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে এবং নিরাপত্তা হুমকি থাকার কারণেই এটা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে সম্প্রতি পৃথক হামলায় একজন ইটালিয়ান এবং একজন জাপানি নাগরিক নিহত হবার পর বিদেশী নাগরিকদের নিরাপত্তা জোরদারে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।
বিভিন্ন স্থানে কর্মরত বিদেশী নাগরিকদের সঙ্গে সশস্ত্র প্রহরী দেখা যাচ্ছে, পুলিশের পাশাপাশি বিজিবিও মোতায়েন করা হয়েছে ঢাকার গুলশানসহ কূটনীতিক ও দূতাবাস অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে।
যদিও সরকারের এসব উদ্যোগে সন্তোষ প্রকাশ করছে দেশগুলো কিন্তু উদ্বেগ কাটছে না, আজই চারটি দেশ ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র, ক্যানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রদূতেরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে দেখা করে তাদের উদ্বেগের কথা জানান।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে রাষ্ট্রদূতদের পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকট "আমরা বিশ্বাস করি নিরাপত্তা নিয়ে যেসব হুমকি রয়েছে তা বিশ্বাসযোগ্য, এগুলোর বাস্তব অস্তিত্ব রয়েছে, ফলে আমরা সতর্ক থাকবো বলে মনস্থ করেছি। আমাদের নাগরিকদের নিরাপদে রাখার আইনি বাধ্যবাধকতা আমাদের রয়েছে, আর আমরা এটা করি পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে। এসব পরামর্শে তাদের সতর্ক থাকতে বলা হয় এবং সংশ্লিষ্ট স্থানের হুমকি গুলো সম্পর্কে সচেতন থাকতে বলা হয়। ওইসব পরামর্শে মানুষকে বাংলাদেশে আসতে নিষেধ করে না।"
তিনি আরো বলেন "আমরা চাই বাংলাদেশের সাথে আমাদের বাণিজ্য শিক্ষা এবং সফর আদান প্রদান অব্যাহত থাকুক। কিন্তু একই সময়ে আমাদেরকে আপনাদের এবং আপনাদের সরকারের সাথে কাজ করতে হবে যাতে করে আমাদের জনগণকে নিরাপদে রাখা যায় এবং বাংলাদেশী নাগরিকদেরকেও সন্ত্রাসী হামলা সহ সকল ধরণের হুমকি থেকে নিরাপদে রাখা যায়।"
দুই বিদেশী নাগরিক হত্যার পর বাংলাদেশে বিদেশীদের নিরাপত্তা প্রশ্নে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে রাষ্ট্রদূতদের এটা দ্বিতীয় দফা বৈঠক।
মিজ বার্নিকটের বক্তব্য প্রসঙ্গে বিবিসিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন হুমকি সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য চেয়েছেন তিনি রাষ্ট্রদূতদের কাছে কিন্তু তারা দেননি।
মিস্টার খান আরো বলছিলেন, তিনি রাষ্ট্রদূতদের আশ্বস্ত করেছেন, বিদেশীদের নিরাপত্তায় অতিরিক্ত যেসব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা ততদিনই বজায় থাকবে যতদিন না তারা নিরাপত্তা সম্পর্কে আশ্বস্ত হচ্ছে এবং এসব উদ্যোগের ফলে বিদেশীরা আগের মতোই অবাধে চলাচল করতে পারছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
উল্লেখ্য গত আটাশে সেপ্টেম্বর ঢাকার কূটনৈতিক পাড়ায় আততায়ীদের গুলিতে নিহত হন ইটালির নাগরিক চেজারে তাভেল্লা, আর এর কয়েকদিন পর তেসরা অক্টোবর রংপুরে জাপানি নাগরিক হোশি কোনিওকে গুলি করে হত্যা করে আরেকদল আততায়ী।
দুটি হত্যাকাণ্ডের পরই আন্তর্জাতিক ইসলামী জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসের নামে এর দায় দায়িত্ব স্বীকার করা হয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন