দীর্ঘ পাঁচ বছরের বিচার প্রক্রিয়া শেষে রোববার প্রথম প্রহরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে তার সেই দণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
শুধু গণহত্যা নয়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে চট্টগ্রামের রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী, বোয়ালখালী ও চট্টগ্রাম শহরে লুটপাট, হিন্দুদের বাড়ি দখল এবং তাদের দেশান্তরে বাধ্য করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন সালাউদ্দিন, যিনি সাকা চৌধুরী নামেই খবরে এসেছেন বেশি।
সে সময় পুরো চট্টগ্রামজুড়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরীর ছেলে সাকা।
ফজলুল কাদের চৌধুরী ছিলেন পাকিস্তান মুসলিম লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফজলুল কাদের চৌধুরী ফকা চৌধুরী নামে পরিচিত ছিলেন। ষাটের দশকে তিনি পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের স্পিকারও হয়েছিলেন।
পিতার রাজনৈতিক আদর্শ অনুসরণ করে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীও রাজনীতি শুরু করেন মুসলিম লীগের মাধ্যমে। মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই মুসলিম লীগ সরাসরি পাকিস্তানের পক্ষে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নেয়।
সংসদ সচিবালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সাকা চৌধুরীর জন্ম ১৯৪৯ সালের ১৩ মার্চ চট্টগ্রামের রাউজান থানার গহিরা গ্রামে। তার বেড়ে ওঠাও চট্টগ্রামে।
রাজনীতি মুসলিম লীগ থেকে শুরু করলেও পরে জাতীয় পার্টি ও এনডিপি হয়ে বিএনপিতে যোগ দেন প্রচণ্ড ভারতবিদ্বেষী এই রাজনীতিক।
ট্রাইব্যুনালে মামলা চলাকালে বিচারককে তিনি বলেছিলেন, “কলকাতার জেলে পাঠাবেন না।”
প্রকাশ্যে তার মুখ থেকে কখনো ‘ভারত’ বা ‘ইন্ডিয়া’ শোনা যায়নি। তিনি সব সময়ই বলতেন ‘হিন্দুস্তান’।
একাত্তরের অপরাধের জন্য বিতর্কিত এই রাজনীতিক ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিতও হয়েছিলেন।
১৯৭৯ সালে মুসলিম লীগ থেকে রাউজানের সাংসদ হন সাকা। সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সময়ে তিনি জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে মূলধারার রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হন।
১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে নিজের এলাকা রাউজানে আবারও সাংসদ নির্বাচিত হন এই যুদ্ধাপরাধী। পরে এরশাদ তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেন।
এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালে সাকা নির্বাচন করেন নিজের গঠন করা দল এনডিপি থেকে। আবারও রাউজানের এমপি হন তিনি।
কিছুদিন পর এনডিপি বিএনপির সঙ্গে একীভূত হয় এবং ১৯৯৬ সালে সাকা বিএনপির মার্কায় নির্বাচন করে সাংসদ হন। পরের নির্বাচনে ২০০১ সালে তিনি সাংসদ নির্বাচিত হন চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থেকে।
এরশাদের শাসনামলে বিভিন্ন সময়ে ত্রাণ ও পুনর্বাসন, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন সাকা চৌধুরী।
আর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারে তাকে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
সর্বশেষ ২০০৮ সালের র্নিবাচনে রাঙ্গুনিয়া ও ফটিকছড়ি থেকে অংশ নেন সাকা। রাঙ্গুনিয়াতে হেরে গেলেও ফটিকছড়ি, অর্থাৎ চট্টগ্রাম-২ আসন থেকে বিএনপির সাংসদ হন তিনি।
ফকা চৌধুরীর চার ছেলের মধ্যে সাকা চৌধুরীই সবার বড়। তার সেজ ভাই গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি। অপর দুই ভাইয়ের মধ্যে প্রয়াত সাইফুদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামাল উদ্দিন কাদের চৌধুরী রাজনীতিতে সারসরি যুক্ত ছিলেন না।
আত্মীয়তা ও পারিবারিক রাজনৈতিক ইতিহাসের সূত্রে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার ফলে নানা নাটকীয় ঘটনার জন্ম দেয়ার পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ‘অশালীন’ মন্তব্য করে আলোচনা ও নিন্দা কুড়ান সাকা।
বিএনপিতে থেকেও দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানকে নিয়ে মন্তব্য করে সমালোচিত হন দলের ভেতরেই।
পাকিস্তানের পাঞ্জাবের সাদিক পাবলিক স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ঢাকার নটরডেম কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন সাকা।
সাকার দাবি, এরপর উচ্চশিক্ষা গ্রহণে পাকিস্তানে যান তিনি। পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বিএ (অনার্স) ডিগ্রি লাভ করেছেন বলে একটি সনদও তিনি এ মামলার বিচারের সময় উচ্চ আদালতে দাখিল করেন। তবে ওই সনদ জাল সাব্যস্ত হওয়ায় উচ্চ আদালত তার আবেদন খারিজ করে দেয়।
সাকা পরে লন্ডন ইউনিভার্সিটিতে আইনে পড়া শুরু করলেও তা শেষ না করেই দেশে ফিরে আসেন ১৯৭৩ সালে, তার বাবার মৃত্যুর পর।
নবম সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় সাকা চৌধুরী শিক্ষাগত যোগ্যতা ‘নেই’ উল্লেখ করলে ‘অসত্য তথ্য’ দেওয়ার কারণে পরে তার সদস্যপদ খারিজের উদ্যোগ নেয় নির্বাচন কমিশন। তবে ‘আইনি সীমাবদ্ধতার’ কারণে বিষয়টি আর এগোয়নি।
সাকা চৌধুরীর স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী, দুই ছেলে ফজলুল কাদের চৌধুরী ও হুম্মাম কাদের চৌধুরী এবং মেয়ে ফারজিন কাদের চৌধুরী।
হরতালে গাড়ি পোড়ানোর একটি মামলায় ২০১০ সালের বিজয় দিবসের সকালে সাকাকে আটক করা হলেও একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয় ১৯ ডিসেম্বর।
২০১২ সালের ৪ এপ্রিল ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের ২৩টি ঘটনায় অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে তখনকার এই সংসদ সদস্যের বিচার শুরু হয়।
সালাউদ্দিন কাদেরের পক্ষে মামলায় সাফাই সাক্ষ্য দেন তিনি নিজেসহ মোট চারজন। অন্য তিনজন হলেন তার কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধু নিজাম আহমেদ, এশিয়া-প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য কাইয়ুম রেজা চৌধুরী এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোমেন চৌধুরী।
ট্রাইব্যুনালের বিচারে মানবতাবিরোধী অপরাধের ২৩টি অভিযোগের মধ্যে নয়টি ঘটনায় সাকা চৌধুরীর সংশ্লিষ্টতা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়।
২০১৩ সালের ১ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালের রায়ে রাউজানে কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যা, সুলতানপুর ও ঊনসত্তরপাড়ায় হিন্দু বসতিতে গণহত্যা এবং হাটহাজারীর আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজাফফর ও তার ছেলে শেখ আলমগীরকে অপহরণ করে খুনের দায়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়।
তিনি ও তার পরিবার কীভাবে একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীকে নিয়ে হত্যা, লুটপাট চালিয়েছেন, কীভাবে তিনি মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতার পক্ষের লোকজনকে ধরে এনে নিজের গুডহিলের বাসায় আটকে রেখে নির্যাতন চালিয়েছেন- তার বিশদ বিবরণ উঠে আসে ওই রায়ে।
ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে সাকা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করলে তাতেও সাজা বদলায়নি। গত ২৯ জুলাই আপিলের রায়ে চার অভিযোগে তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে আপিল বিভাগ।
যুদ্ধাপরাধের দায়ে সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া ফাঁসির রায় রেডিওতে শুনে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী কাশিমপুর কারাগারের জেলারকে বলেছিলেন, তিনি ‘ফেলনা’ লোক নন; আইনের সর্বোচ্চ লড়াই’ তিনি লড়বেন।
দণ্ড কার্যকরের আগে এই যুদ্ধাপরাধীর রিভিউ চাওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু আপিল বিভাগ তা খারিজ করে দিলে শেষ আইনি লড়াইয়েরও পরিসমাপ্তি হয়।
এ মামলার বিচার চলাকালে সাকার চার সেকেন্ডের একটি ফুটেজ ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে তাকে স্বভাবসুলভ উদ্ধত ভঙ্গিতে বলতে শোনা যায়, “এই যুদ্ধাপরাধ? কিচ্ছু করতে পারবে না… একটা রিটে পট করে চলে যাবে।”
সেই সাকা চৌধুরীই ফাঁসিতে ঝোলার আগে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন। তবে আদালতের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে এই যুদ্ধাপরাধীকে অনুকম্পা দেখাননি রাষ্ট্রের অভিভাবক।
শুধু গণহত্যা নয়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে চট্টগ্রামের রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী, বোয়ালখালী ও চট্টগ্রাম শহরে লুটপাট, হিন্দুদের বাড়ি দখল এবং তাদের দেশান্তরে বাধ্য করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন সালাউদ্দিন, যিনি সাকা চৌধুরী নামেই খবরে এসেছেন বেশি।
সে সময় পুরো চট্টগ্রামজুড়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরীর ছেলে সাকা।
ফজলুল কাদের চৌধুরী ছিলেন পাকিস্তান মুসলিম লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফজলুল কাদের চৌধুরী ফকা চৌধুরী নামে পরিচিত ছিলেন। ষাটের দশকে তিনি পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের স্পিকারও হয়েছিলেন।
পিতার রাজনৈতিক আদর্শ অনুসরণ করে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীও রাজনীতি শুরু করেন মুসলিম লীগের মাধ্যমে। মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই মুসলিম লীগ সরাসরি পাকিস্তানের পক্ষে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নেয়।
সংসদ সচিবালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সাকা চৌধুরীর জন্ম ১৯৪৯ সালের ১৩ মার্চ চট্টগ্রামের রাউজান থানার গহিরা গ্রামে। তার বেড়ে ওঠাও চট্টগ্রামে।
রাজনীতি মুসলিম লীগ থেকে শুরু করলেও পরে জাতীয় পার্টি ও এনডিপি হয়ে বিএনপিতে যোগ দেন প্রচণ্ড ভারতবিদ্বেষী এই রাজনীতিক।
ট্রাইব্যুনালে মামলা চলাকালে বিচারককে তিনি বলেছিলেন, “কলকাতার জেলে পাঠাবেন না।”
প্রকাশ্যে তার মুখ থেকে কখনো ‘ভারত’ বা ‘ইন্ডিয়া’ শোনা যায়নি। তিনি সব সময়ই বলতেন ‘হিন্দুস্তান’।
একাত্তরের অপরাধের জন্য বিতর্কিত এই রাজনীতিক ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিতও হয়েছিলেন।
১৯৭৯ সালে মুসলিম লীগ থেকে রাউজানের সাংসদ হন সাকা। সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সময়ে তিনি জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে মূলধারার রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হন।
১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে নিজের এলাকা রাউজানে আবারও সাংসদ নির্বাচিত হন এই যুদ্ধাপরাধী। পরে এরশাদ তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেন।
এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালে সাকা নির্বাচন করেন নিজের গঠন করা দল এনডিপি থেকে। আবারও রাউজানের এমপি হন তিনি।
কিছুদিন পর এনডিপি বিএনপির সঙ্গে একীভূত হয় এবং ১৯৯৬ সালে সাকা বিএনপির মার্কায় নির্বাচন করে সাংসদ হন। পরের নির্বাচনে ২০০১ সালে তিনি সাংসদ নির্বাচিত হন চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থেকে।
এরশাদের শাসনামলে বিভিন্ন সময়ে ত্রাণ ও পুনর্বাসন, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন সাকা চৌধুরী।
আর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারে তাকে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
সর্বশেষ ২০০৮ সালের র্নিবাচনে রাঙ্গুনিয়া ও ফটিকছড়ি থেকে অংশ নেন সাকা। রাঙ্গুনিয়াতে হেরে গেলেও ফটিকছড়ি, অর্থাৎ চট্টগ্রাম-২ আসন থেকে বিএনপির সাংসদ হন তিনি।
ফকা চৌধুরীর চার ছেলের মধ্যে সাকা চৌধুরীই সবার বড়। তার সেজ ভাই গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি। অপর দুই ভাইয়ের মধ্যে প্রয়াত সাইফুদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামাল উদ্দিন কাদের চৌধুরী রাজনীতিতে সারসরি যুক্ত ছিলেন না।
আত্মীয়তা ও পারিবারিক রাজনৈতিক ইতিহাসের সূত্রে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার ফলে নানা নাটকীয় ঘটনার জন্ম দেয়ার পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ‘অশালীন’ মন্তব্য করে আলোচনা ও নিন্দা কুড়ান সাকা।
বিএনপিতে থেকেও দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানকে নিয়ে মন্তব্য করে সমালোচিত হন দলের ভেতরেই।
পাকিস্তানের পাঞ্জাবের সাদিক পাবলিক স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ঢাকার নটরডেম কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন সাকা।
সাকার দাবি, এরপর উচ্চশিক্ষা গ্রহণে পাকিস্তানে যান তিনি। পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বিএ (অনার্স) ডিগ্রি লাভ করেছেন বলে একটি সনদও তিনি এ মামলার বিচারের সময় উচ্চ আদালতে দাখিল করেন। তবে ওই সনদ জাল সাব্যস্ত হওয়ায় উচ্চ আদালত তার আবেদন খারিজ করে দেয়।
সাকা পরে লন্ডন ইউনিভার্সিটিতে আইনে পড়া শুরু করলেও তা শেষ না করেই দেশে ফিরে আসেন ১৯৭৩ সালে, তার বাবার মৃত্যুর পর।
নবম সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় সাকা চৌধুরী শিক্ষাগত যোগ্যতা ‘নেই’ উল্লেখ করলে ‘অসত্য তথ্য’ দেওয়ার কারণে পরে তার সদস্যপদ খারিজের উদ্যোগ নেয় নির্বাচন কমিশন। তবে ‘আইনি সীমাবদ্ধতার’ কারণে বিষয়টি আর এগোয়নি।
সাকা চৌধুরীর স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী, দুই ছেলে ফজলুল কাদের চৌধুরী ও হুম্মাম কাদের চৌধুরী এবং মেয়ে ফারজিন কাদের চৌধুরী।
হরতালে গাড়ি পোড়ানোর একটি মামলায় ২০১০ সালের বিজয় দিবসের সকালে সাকাকে আটক করা হলেও একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয় ১৯ ডিসেম্বর।
২০১২ সালের ৪ এপ্রিল ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের ২৩টি ঘটনায় অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে তখনকার এই সংসদ সদস্যের বিচার শুরু হয়।
ট্রাইব্যুনালের বিচারে মানবতাবিরোধী অপরাধের ২৩টি অভিযোগের মধ্যে নয়টি ঘটনায় সাকা চৌধুরীর সংশ্লিষ্টতা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়।
২০১৩ সালের ১ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালের রায়ে রাউজানে কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যা, সুলতানপুর ও ঊনসত্তরপাড়ায় হিন্দু বসতিতে গণহত্যা এবং হাটহাজারীর আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজাফফর ও তার ছেলে শেখ আলমগীরকে অপহরণ করে খুনের দায়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়।
তিনি ও তার পরিবার কীভাবে একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীকে নিয়ে হত্যা, লুটপাট চালিয়েছেন, কীভাবে তিনি মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতার পক্ষের লোকজনকে ধরে এনে নিজের গুডহিলের বাসায় আটকে রেখে নির্যাতন চালিয়েছেন- তার বিশদ বিবরণ উঠে আসে ওই রায়ে।
ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে সাকা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করলে তাতেও সাজা বদলায়নি। গত ২৯ জুলাই আপিলের রায়ে চার অভিযোগে তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে আপিল বিভাগ।
যুদ্ধাপরাধের দায়ে সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া ফাঁসির রায় রেডিওতে শুনে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী কাশিমপুর কারাগারের জেলারকে বলেছিলেন, তিনি ‘ফেলনা’ লোক নন; আইনের সর্বোচ্চ লড়াই’ তিনি লড়বেন।
দণ্ড কার্যকরের আগে এই যুদ্ধাপরাধীর রিভিউ চাওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু আপিল বিভাগ তা খারিজ করে দিলে শেষ আইনি লড়াইয়েরও পরিসমাপ্তি হয়।
এ মামলার বিচার চলাকালে সাকার চার সেকেন্ডের একটি ফুটেজ ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে তাকে স্বভাবসুলভ উদ্ধত ভঙ্গিতে বলতে শোনা যায়, “এই যুদ্ধাপরাধ? কিচ্ছু করতে পারবে না… একটা রিটে পট করে চলে যাবে।”
সেই সাকা চৌধুরীই ফাঁসিতে ঝোলার আগে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন। তবে আদালতের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে এই যুদ্ধাপরাধীকে অনুকম্পা দেখাননি রাষ্ট্রের অভিভাবক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন