হাতের মোবাইল ফোনে বিপদজনক কায়দায় নিজের ছবি তুলে সঙ্গে সঙ্গে তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়ে ব্শ্বিজুড়ে আলোচনায় আসার বাসনায় আক্ষরিক অর্থেই মানুষ এখন মৃত্যুর ঝুঁকি নিচ্ছে।
ইউটিউবে ‘বিপদজনক ২৫টি সেলফির’ একটি ভিডিও এরই মধ্যে প্রায় ২ কোটি ব্যবহারকারী দেখে ফেলেছেন। সেখানে দেখা যাচ্ছে, একজন উন্মত্ত ষাঁড়ের সঙ্গে সেলফি তুলছেন, কেউ তুলছেন সিংহের সঙ্গে, কেউ গাড়ি চালানোর সময়, কেউ আবার এগিয়ে আসা ট্রেনের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের ছবি তুলছেন।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউটিউবে এই ভিডিওর দর্শক প্রতিদিনই বাড়ছে। আর যারা নিয়মিত সেলফি তুলে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে পোস্ট দেওয়ার প্রতিযোগিতায় এগিয়ে আছেন, তাদের আচরণে বেশ প্রবলভাবেই উঁকি দিচ্ছেন ‘নার্সিসাস’।
শুধু রাশিয়াতেই এ বছর বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে, যেখানে ঝুঁকি নিয়ে ‘সেলফি’ তুলতে গিয়ে বিপদ টেনে এনেছে মানুষ।
এর মধ্যে রয়েছে উরাল পর্বতের সেই ঘটনা, যেখানে গ্রেনেডের পিন খুলে সেলফি তুলতে গিয়ে দুইজন ধরাশায়ী হয়েছিলেন।
চলতি বছরের জুনে মস্কো ব্রিজ থেকে ঝুলন্ত সেলফি তুলতে গিয়ে অকালে মারা পড়ে রাশিয়ার এক যুবক।
অতি সম্প্রতি রাশিয়াতেই ১৭ বছরের এক কিশোর ছাদের উপরে দাঁড়িয়ে ‘ইনস্টাগ্রামে’ সেলফি পোস্ট করতে গিয়ে নিচে পড়ে মারা যান। এর আগেও তিনি ভোলোগদা শহরের বিভিন্ন উঁচু ভবনের ছাদে সেলফি তুলেছিলেন, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সেসব ছবি দিয়ে পেয়েছিলেন অনেক ‘লাইক’।
এভাবে মৃত্যুর ঘটনা বাড়তে থাকায় রুশ কর্তৃপক্ষ সচেতনতামূলক প্রচার শুরু করতে বাধ্য হয়েছে। তাদের একটি পোস্টারের স্লোগান- ‘অস্ত্র হাতে সেলফি হতে পারে প্রাণঘাতী’।
কেবল রাশিয়ায় নয়, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের এক নাগরিক সেলফি তোলার সময় অসাবধানবশত নিজের ঘাড়ে গুলি চালিয়ে প্রাণ দিয়েছেন।
এ বছরই কমপক্ষে ১২ জন এরকম প্রাণঘাতী ‘সেলফি দুর্ঘটনা’র শিকার হয়েছেন; এই সংখ্যা হাঙরের হামলায় মৃত্যুর চেয়েও বেশি।
প্রযুক্তি বিষয়ক সংবাদ মাধ্যম ম্যাশএবলের হিসাবে, এ বছর সব মিলিয়ে মোট আটজন হাঙরের শিকারে পরিণত হয়েছেন।
কেন মানুষ নিজের ছবি তুলতে গিয়ে এমন ঝুঁকি নেয়?
ব্রাজিলের লিও থম্পসনকে উদ্ধৃত করে বিবিসি লিখেছে, বাহাদুরি দেখানোর নেশাই হয়তো এসব দুঃসাহসিক কাজের প্রেরণা যোগায়।
ক্রাইস্ট দ্য রিডিমারের ওপর থেকে নেওয়া লিও’র সেলফি ২০১৪ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল।
“মানুষ এ ছবিগুলো দেখে মনে করে, তাদের তোলা ছবিও মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে পারে; নিয়ে যেতে পারে খ্যাতির চূড়ায়,” বলেন লিও।
পেশাদার আলোকচিত্রী লিও ক্রাইস্ট দ্য রিডিমারের উপর থেকে সেই সেলফি তুলেছিলেন নিজের ট্র্যাভেল কোম্পানির প্রচারের সুবিধার কথা ভেবেই। এজন্য তাকে ক্রুশবিদ্ধ যিশুর ভাস্কর্যের মাথায় ওঠার অনুমতিও নিতে হয়েছিল।
“আমি মোটেও সেলফি পাগল নই। ব্যবসার প্রচারের জন্যই এটা করেছি, কারণ আমি জানতাম, মানুষ সেলফি পছন্দ করে।”
এ ধরণের ‘পাগলামি’ যে ইদানিং মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে, তা স্বীকার করেন লিও।
তিনি বলেন, “ছবিতে অবশ্যই সৃজনশীলতা থাকতে হবে, তবে তা জীবনকে বিপন্ন করে নয়।”
সেলফি তোলার এই ‘মরণনেশা’ বিভিন্ন দেশে সরকারের কাজ বাড়িয়ে দিচ্ছে। গত অগাস্টে কলোরাডোর ওয়াটারটন ক্যানিয়ন পার্ক কর্তৃপক্ষ ‘সেলফির দৌরাত্মে’ পার্ক বন্ধ করার ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়।
দর্শণার্থীরা সেলফি তুলতে প্রাণিদের এত কাছে চলে যাচ্ছিলেন, যে পার্ক বন্ধ না করে উপায় ছিল না বলে জানান পার্কের বিনোদন ব্যবস্থাপক ব্র্যান্ডন র্যা নসাম।
নিজের ব্লগে তিনি লিখেছেন, “আমরা বেশ কিছু মানুষকে সেলফি স্টিক দিয়ে ছবি তুলতে দেখেছি, যারা ভালুকের এত কাছে পৌঁছে গিয়েছিল যে ভয় না পেয়ে আমাদের উপায় ছিল না।”
প্রায় একইরকম ঘটনা ঘটেছে ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্কেও। সেলফি তুলতে গিয়ে কমপক্ষে পাঁচজন বাইসনের হামলায় আহত হওয়ার পর কর্তৃপক্ষ সেখানে সেলফি নিষিদ্ধ করেছে।
‘সেলফি বিপদ’ এড়াতে অস্ট্রেলিয়ায় উঁচু একটি পাথরকে ঘিরে দিতে হয়েছে কাঁটাতার দিয়ে, কারণ বিয়ের কেকের মতো দেখতে ওই পাথরের উপরে দাঁড়িয়ে ‘বিবাহ-পূর্ব’ এবং ‘বিবাহ-পরবর্তী’ সেলফি তোলার হিড়িক পড়ে গিয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ‘সেলফি তোলা এবং ধারাবাহিকভাবে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে যাওয়ার এই প্রবণতাকে ‘মানসিক অসুস্থতা’র লক্ষণ বলে মনে করছেন।
১০০ জনের উপর চালানো এক জরিপের ফলাফল দেখিয়ে এই গবেষক দলের প্রধান জেস ফক্স বলেন, সেলফি পোস্ট করাকে অনেকেই ‘ব্যক্তিত্বের আকর্ষণীয় রূপের প্রকাশ’ বলে মনে করেন। সেলফি যত বিপদজনক, তত বেশি লাইক ও শেয়ার পাওয়ার লোভও তাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো অবশ্য সেলফি’র এই জাদু কাজে লাগাতে ভুল করছে না।
আসুস সম্প্রতি ‘জেনফোন সেলফি’ নামে একটি মোবাইল বাজারে এনেছে, যাতে সেলফি তোলার জন্য বিশেষ ক্যামেরা রয়েছে।
এ মোবাইলের প্রচারের ক্ষেত্রে ‘সেলফি দুর্ঘটনা’র কথাও মাথায় রেখেছে তারা। ফ্রান্সে আসুসের বিক্রয় কেন্দ্রের সামনে একটি পোস্টার সাঁটা হয়েছে, যাতে চলন্ত ট্রেন, গাড়ির সামনে কিংবা খাঁচায় থাকা ভালুক বা অন্যান্য প্রাণীর সঙ্গে সেলফি তোলার বিপদগুলো চিত্রিত করে ‘সাবধান’ করা হয়েছে।
bdnews24.com
ইউটিউবে ‘বিপদজনক ২৫টি সেলফির’ একটি ভিডিও এরই মধ্যে প্রায় ২ কোটি ব্যবহারকারী দেখে ফেলেছেন। সেখানে দেখা যাচ্ছে, একজন উন্মত্ত ষাঁড়ের সঙ্গে সেলফি তুলছেন, কেউ তুলছেন সিংহের সঙ্গে, কেউ গাড়ি চালানোর সময়, কেউ আবার এগিয়ে আসা ট্রেনের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের ছবি তুলছেন।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউটিউবে এই ভিডিওর দর্শক প্রতিদিনই বাড়ছে। আর যারা নিয়মিত সেলফি তুলে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে পোস্ট দেওয়ার প্রতিযোগিতায় এগিয়ে আছেন, তাদের আচরণে বেশ প্রবলভাবেই উঁকি দিচ্ছেন ‘নার্সিসাস’।
শুধু রাশিয়াতেই এ বছর বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে, যেখানে ঝুঁকি নিয়ে ‘সেলফি’ তুলতে গিয়ে বিপদ টেনে এনেছে মানুষ।
এর মধ্যে রয়েছে উরাল পর্বতের সেই ঘটনা, যেখানে গ্রেনেডের পিন খুলে সেলফি তুলতে গিয়ে দুইজন ধরাশায়ী হয়েছিলেন।
চলতি বছরের জুনে মস্কো ব্রিজ থেকে ঝুলন্ত সেলফি তুলতে গিয়ে অকালে মারা পড়ে রাশিয়ার এক যুবক।
অতি সম্প্রতি রাশিয়াতেই ১৭ বছরের এক কিশোর ছাদের উপরে দাঁড়িয়ে ‘ইনস্টাগ্রামে’ সেলফি পোস্ট করতে গিয়ে নিচে পড়ে মারা যান। এর আগেও তিনি ভোলোগদা শহরের বিভিন্ন উঁচু ভবনের ছাদে সেলফি তুলেছিলেন, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সেসব ছবি দিয়ে পেয়েছিলেন অনেক ‘লাইক’।
এভাবে মৃত্যুর ঘটনা বাড়তে থাকায় রুশ কর্তৃপক্ষ সচেতনতামূলক প্রচার শুরু করতে বাধ্য হয়েছে। তাদের একটি পোস্টারের স্লোগান- ‘অস্ত্র হাতে সেলফি হতে পারে প্রাণঘাতী’।
কেবল রাশিয়ায় নয়, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের এক নাগরিক সেলফি তোলার সময় অসাবধানবশত নিজের ঘাড়ে গুলি চালিয়ে প্রাণ দিয়েছেন।
এ বছরই কমপক্ষে ১২ জন এরকম প্রাণঘাতী ‘সেলফি দুর্ঘটনা’র শিকার হয়েছেন; এই সংখ্যা হাঙরের হামলায় মৃত্যুর চেয়েও বেশি।
প্রযুক্তি বিষয়ক সংবাদ মাধ্যম ম্যাশএবলের হিসাবে, এ বছর সব মিলিয়ে মোট আটজন হাঙরের শিকারে পরিণত হয়েছেন।
কেন মানুষ নিজের ছবি তুলতে গিয়ে এমন ঝুঁকি নেয়?
ব্রাজিলের লিও থম্পসনকে উদ্ধৃত করে বিবিসি লিখেছে, বাহাদুরি দেখানোর নেশাই হয়তো এসব দুঃসাহসিক কাজের প্রেরণা যোগায়।
ক্রাইস্ট দ্য রিডিমারের ওপর থেকে নেওয়া লিও’র সেলফি ২০১৪ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল।
“মানুষ এ ছবিগুলো দেখে মনে করে, তাদের তোলা ছবিও মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে পারে; নিয়ে যেতে পারে খ্যাতির চূড়ায়,” বলেন লিও।
পেশাদার আলোকচিত্রী লিও ক্রাইস্ট দ্য রিডিমারের উপর থেকে সেই সেলফি তুলেছিলেন নিজের ট্র্যাভেল কোম্পানির প্রচারের সুবিধার কথা ভেবেই। এজন্য তাকে ক্রুশবিদ্ধ যিশুর ভাস্কর্যের মাথায় ওঠার অনুমতিও নিতে হয়েছিল।
“আমি মোটেও সেলফি পাগল নই। ব্যবসার প্রচারের জন্যই এটা করেছি, কারণ আমি জানতাম, মানুষ সেলফি পছন্দ করে।”
এ ধরণের ‘পাগলামি’ যে ইদানিং মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে, তা স্বীকার করেন লিও।
তিনি বলেন, “ছবিতে অবশ্যই সৃজনশীলতা থাকতে হবে, তবে তা জীবনকে বিপন্ন করে নয়।”
সেলফি তোলার এই ‘মরণনেশা’ বিভিন্ন দেশে সরকারের কাজ বাড়িয়ে দিচ্ছে। গত অগাস্টে কলোরাডোর ওয়াটারটন ক্যানিয়ন পার্ক কর্তৃপক্ষ ‘সেলফির দৌরাত্মে’ পার্ক বন্ধ করার ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়।
দর্শণার্থীরা সেলফি তুলতে প্রাণিদের এত কাছে চলে যাচ্ছিলেন, যে পার্ক বন্ধ না করে উপায় ছিল না বলে জানান পার্কের বিনোদন ব্যবস্থাপক ব্র্যান্ডন র্যা নসাম।
নিজের ব্লগে তিনি লিখেছেন, “আমরা বেশ কিছু মানুষকে সেলফি স্টিক দিয়ে ছবি তুলতে দেখেছি, যারা ভালুকের এত কাছে পৌঁছে গিয়েছিল যে ভয় না পেয়ে আমাদের উপায় ছিল না।”
প্রায় একইরকম ঘটনা ঘটেছে ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্কেও। সেলফি তুলতে গিয়ে কমপক্ষে পাঁচজন বাইসনের হামলায় আহত হওয়ার পর কর্তৃপক্ষ সেখানে সেলফি নিষিদ্ধ করেছে।
‘সেলফি বিপদ’ এড়াতে অস্ট্রেলিয়ায় উঁচু একটি পাথরকে ঘিরে দিতে হয়েছে কাঁটাতার দিয়ে, কারণ বিয়ের কেকের মতো দেখতে ওই পাথরের উপরে দাঁড়িয়ে ‘বিবাহ-পূর্ব’ এবং ‘বিবাহ-পরবর্তী’ সেলফি তোলার হিড়িক পড়ে গিয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ‘সেলফি তোলা এবং ধারাবাহিকভাবে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে যাওয়ার এই প্রবণতাকে ‘মানসিক অসুস্থতা’র লক্ষণ বলে মনে করছেন।
১০০ জনের উপর চালানো এক জরিপের ফলাফল দেখিয়ে এই গবেষক দলের প্রধান জেস ফক্স বলেন, সেলফি পোস্ট করাকে অনেকেই ‘ব্যক্তিত্বের আকর্ষণীয় রূপের প্রকাশ’ বলে মনে করেন। সেলফি যত বিপদজনক, তত বেশি লাইক ও শেয়ার পাওয়ার লোভও তাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো অবশ্য সেলফি’র এই জাদু কাজে লাগাতে ভুল করছে না।
আসুস সম্প্রতি ‘জেনফোন সেলফি’ নামে একটি মোবাইল বাজারে এনেছে, যাতে সেলফি তোলার জন্য বিশেষ ক্যামেরা রয়েছে।
এ মোবাইলের প্রচারের ক্ষেত্রে ‘সেলফি দুর্ঘটনা’র কথাও মাথায় রেখেছে তারা। ফ্রান্সে আসুসের বিক্রয় কেন্দ্রের সামনে একটি পোস্টার সাঁটা হয়েছে, যাতে চলন্ত ট্রেন, গাড়ির সামনে কিংবা খাঁচায় থাকা ভালুক বা অন্যান্য প্রাণীর সঙ্গে সেলফি তোলার বিপদগুলো চিত্রিত করে ‘সাবধান’ করা হয়েছে।
bdnews24.com
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন