২০১১ সালের মে মাসের শুরুর দিকে যখন ইউরোপের প্রকৃতিতে শীতের রিক্ততা ও শীক্ততাকে বিদায় দিয়ে গ্রীষ্মের আগমনী আয়োজন চলার মাঝেও শীতল বায়ু শরীরে মাঝেমাঝে শিহরণ জাগিয়ে যাচ্ছে, এমন এক সাঁঝবেলায় চাঁদপুরের কবির ভাইয়ের সঙ্গে প্যারিসের উদ্যেশে জার্মানির বার্লিন রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে উঠে পড়েছিলাম।
দ্রুতগামী ট্রেন বন-মাঠ-পাহাড় বিদীর্ণ করা রাস্তা ভেদ করে অন্ধকার এক নৈসর্গিক প্রকৃতির মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলছে। আর শংকিত মনে অজানা আশংকা দোলা দিচ্ছে এই ভেবে যে, অচেনা প্যারিসে কোথায় উঠবো?
কবির ভাইয়ের জন্য তার কলেজ জীবনের এক বন্ধুর প্যারিসের গার দো লিস্ট স্টেশনে অপেক্ষা থাকার কথা। পঁচিশ বছর পর তাদের আবার দেখা হতে যাচ্ছে তাই তার মনে পুলকিত শিহরণও জাগছে। যদিও আমাকে মাঝে মাঝে অভয় দিচ্ছেন চিন্তা না করার জন্য। আর ‘চিরন্তন’ বাঙালি ভঙ্গীতে বলেন, একটা ব্যাবস্থা হয়েই যাবে!
আলো ঝলমলে এক সকালে এসে আমারা পৌঁছলাম প্যারিসের ট্রেন স্টেশনে। প্লাটফর্ম দিয়ে খানিকটা হাঁটতেই দেখা মিলল অপেক্ষমাণ দৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে থাকা এক বাঙালি দম্পতিকে।
কাছে গিয়ে কবির ভাই চিনতে পারলেন তার ছোট বেলার বন্ধু আশিক ভাইকে, সঙ্গে তার স্ত্রী।আমাদের জন্যই অপেক্ষা করছিলেন তারা।এই দম্পতি শুধু তাদের বন্ধু কবির ভাইকেই নয়, আমাকেও সঙ্গে নিয়ে গেলেন।
সেলিনা ভাবী রান্না করে খাওয়ালেন, কুশলাদি জানতে চাইলেন। আশিক ভাই কয়েক জায়গায় ফোন করে মাসিক ভাড়ায় একটা থাকার ব্যবস্থাও করে দিলেন।
এরপর থেকে প্রতিদিন আশিক ভাই কাজ থেকে ফিরে ফোনে আমার খোঁজ খবর নিতেন, বাসায় ভালো কিছু রান্না হলেই ডেকে পাঠাতেন।একটা কাজের বন্দোবস্ত করার জন্য তার পরিচিতদের অনুরোধ করতে লাগলেন।
ছুটির দিনে আমাদের নিয়ে ঘুরতে বেড়োতেন। প্যারিসে আমার প্রথম পরিচয়ের মানুষ আশিক ভাই ও ভাবীর অভ্যর্থনার পর থেকে কখনো মনে হয়নি যে, এদের সঙ্গে আমার পূর্বপরিচয় ছিল না। অনুভূতিতে অনেকটা পরম আত্নীয়ের মত মনে হত।
এখনো এই প্রবাসে কোন সমস্যায় পড়লে আশিক ভাই ও তার স্ত্রীর সঙ্গেই আলোচনা করি।
এর পর থেকে নতুন দেশ, নতুন মানুষ, নতুন ভাষা, নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি ও পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে টিকিয়ে রাখার এক সংগ্রামরত সময় পার করতে হয়েছে।
এই প্রতিকূল সময়ে কিছু বন্ধুর বাড়িয়ে দেওয়া হাত আমাকে প্রবাসে টিকে থাকতে সহায়তা করেছে।যাদের নাম ও সেই সময় আমার স্মৃতিতে চির অম্লান।এই প্রতিকূলতার মধ্যে ছিলো আমার ছোট্ট পরিবারের সঙ্গে দূরত্বের কষ্ট।
এই ফরাসি ভূখন্ডে স্থায়ীভাবে বসবাসের সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হবার পর চলছিল সেই দূরত্ব ঘোচাবার চেষ্টা এবং প্রতীক্ষা।আমার সেই প্রতীক্ষার যবনিকাপাত ঘটে গত বছর অক্টোবরে প্যারিসের এয়ারপোর্টে!
এখন আমার প্রবাসজীবনের সঙ্গী আমার কন্যা এবং স্ত্রী। তাদের নিয়ে প্যারিসের উঁচু পাহাড়ের উপর ছোট এক বাসায় আমাদের নতুন এক সংসারের যাত্রা শুরু হয়েছে।
আমি যখন পরবাসের উদ্দেশ্যে ঘর ছেড়ে বেড়িয়েছিলাম তখন মাতৃগর্ভে আমার মেয়ের বয়স ছিল দুই মাস, তাই পৃথিবীতে তার আগমনী আনন্দের মূহুর্তে আমার উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য হয়নি।এই প্যারিস থেকেই শুনেছিলাম তার এই ধরণীর বুকে পদার্পন বার্তা।
ভূমিষ্ঠ হবার পর থেকে স্কাইপের কল্যাণেই সাড়ে সাত হাজার কিলোমিটার দূরত্বে থেকেই ধীরে ধীরে আমার কন্যার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে উঠেছে।
স্কাইপেই দেখেছি তার এক পা দু পা করে হেঁটে চলার চেষ্টা, শুনেছি এলোমেলো শব্দের বুনোনে বাক্য বলা এবং মুধূর শব্দ ‘বাবা’ ডাক।
ভিডিও কথোপকথনের সময় কম্পিউটার পর্দায় দেখে আমার কন্যা তার জ্ঞানে আমাকে বাবা বলে মনে করতো। শুধু প্রতীক্ষা ছিল সরাসরি কন্যাকে দেখা এবং ওর মুখ থেকে বাবা ডাক শোনার।ওকে কাছে পেয়ে আমার ভেতরের পিতৃত্বের অনুভূতি আজ পরিপূর্ণ!
এখন আমার কন্যার বাবা ডাকে দ্রুত ঘরে ফিরি, ঘুরতে রেড়িয়ে যাই।
ইতোমধ্যে আমার কন্যা একটি ফরাসি স্কুলে ভর্তি হয়েছে।
প্রথম দিকে শুধুই বাংলা বলতে পারা আমার মেয়েটি ভিনদেশি ভাষার স্কুলে যেতে ভীতি, অনীহা ও সংশয় প্রকাশ করলেও এখন নিত্যদিন পাহাড়ের কোলঘেঁষা পথ বেয়ে স্কুলে যাওয়া আসা করে খুশিমনেই!
দ্রুতগামী ট্রেন বন-মাঠ-পাহাড় বিদীর্ণ করা রাস্তা ভেদ করে অন্ধকার এক নৈসর্গিক প্রকৃতির মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলছে। আর শংকিত মনে অজানা আশংকা দোলা দিচ্ছে এই ভেবে যে, অচেনা প্যারিসে কোথায় উঠবো?
কবির ভাইয়ের জন্য তার কলেজ জীবনের এক বন্ধুর প্যারিসের গার দো লিস্ট স্টেশনে অপেক্ষা থাকার কথা। পঁচিশ বছর পর তাদের আবার দেখা হতে যাচ্ছে তাই তার মনে পুলকিত শিহরণও জাগছে। যদিও আমাকে মাঝে মাঝে অভয় দিচ্ছেন চিন্তা না করার জন্য। আর ‘চিরন্তন’ বাঙালি ভঙ্গীতে বলেন, একটা ব্যাবস্থা হয়েই যাবে!
আলো ঝলমলে এক সকালে এসে আমারা পৌঁছলাম প্যারিসের ট্রেন স্টেশনে। প্লাটফর্ম দিয়ে খানিকটা হাঁটতেই দেখা মিলল অপেক্ষমাণ দৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে থাকা এক বাঙালি দম্পতিকে।
কাছে গিয়ে কবির ভাই চিনতে পারলেন তার ছোট বেলার বন্ধু আশিক ভাইকে, সঙ্গে তার স্ত্রী।আমাদের জন্যই অপেক্ষা করছিলেন তারা।এই দম্পতি শুধু তাদের বন্ধু কবির ভাইকেই নয়, আমাকেও সঙ্গে নিয়ে গেলেন।
সেলিনা ভাবী রান্না করে খাওয়ালেন, কুশলাদি জানতে চাইলেন। আশিক ভাই কয়েক জায়গায় ফোন করে মাসিক ভাড়ায় একটা থাকার ব্যবস্থাও করে দিলেন।
এরপর থেকে প্রতিদিন আশিক ভাই কাজ থেকে ফিরে ফোনে আমার খোঁজ খবর নিতেন, বাসায় ভালো কিছু রান্না হলেই ডেকে পাঠাতেন।একটা কাজের বন্দোবস্ত করার জন্য তার পরিচিতদের অনুরোধ করতে লাগলেন।
ছুটির দিনে আমাদের নিয়ে ঘুরতে বেড়োতেন। প্যারিসে আমার প্রথম পরিচয়ের মানুষ আশিক ভাই ও ভাবীর অভ্যর্থনার পর থেকে কখনো মনে হয়নি যে, এদের সঙ্গে আমার পূর্বপরিচয় ছিল না। অনুভূতিতে অনেকটা পরম আত্নীয়ের মত মনে হত।
এখনো এই প্রবাসে কোন সমস্যায় পড়লে আশিক ভাই ও তার স্ত্রীর সঙ্গেই আলোচনা করি।
এর পর থেকে নতুন দেশ, নতুন মানুষ, নতুন ভাষা, নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি ও পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে টিকিয়ে রাখার এক সংগ্রামরত সময় পার করতে হয়েছে।
এই প্রতিকূল সময়ে কিছু বন্ধুর বাড়িয়ে দেওয়া হাত আমাকে প্রবাসে টিকে থাকতে সহায়তা করেছে।যাদের নাম ও সেই সময় আমার স্মৃতিতে চির অম্লান।এই প্রতিকূলতার মধ্যে ছিলো আমার ছোট্ট পরিবারের সঙ্গে দূরত্বের কষ্ট।
এই ফরাসি ভূখন্ডে স্থায়ীভাবে বসবাসের সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হবার পর চলছিল সেই দূরত্ব ঘোচাবার চেষ্টা এবং প্রতীক্ষা।আমার সেই প্রতীক্ষার যবনিকাপাত ঘটে গত বছর অক্টোবরে প্যারিসের এয়ারপোর্টে!
এখন আমার প্রবাসজীবনের সঙ্গী আমার কন্যা এবং স্ত্রী। তাদের নিয়ে প্যারিসের উঁচু পাহাড়ের উপর ছোট এক বাসায় আমাদের নতুন এক সংসারের যাত্রা শুরু হয়েছে।
আমি যখন পরবাসের উদ্দেশ্যে ঘর ছেড়ে বেড়িয়েছিলাম তখন মাতৃগর্ভে আমার মেয়ের বয়স ছিল দুই মাস, তাই পৃথিবীতে তার আগমনী আনন্দের মূহুর্তে আমার উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য হয়নি।এই প্যারিস থেকেই শুনেছিলাম তার এই ধরণীর বুকে পদার্পন বার্তা।
ভূমিষ্ঠ হবার পর থেকে স্কাইপের কল্যাণেই সাড়ে সাত হাজার কিলোমিটার দূরত্বে থেকেই ধীরে ধীরে আমার কন্যার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে উঠেছে।
স্কাইপেই দেখেছি তার এক পা দু পা করে হেঁটে চলার চেষ্টা, শুনেছি এলোমেলো শব্দের বুনোনে বাক্য বলা এবং মুধূর শব্দ ‘বাবা’ ডাক।
ভিডিও কথোপকথনের সময় কম্পিউটার পর্দায় দেখে আমার কন্যা তার জ্ঞানে আমাকে বাবা বলে মনে করতো। শুধু প্রতীক্ষা ছিল সরাসরি কন্যাকে দেখা এবং ওর মুখ থেকে বাবা ডাক শোনার।ওকে কাছে পেয়ে আমার ভেতরের পিতৃত্বের অনুভূতি আজ পরিপূর্ণ!
এখন আমার কন্যার বাবা ডাকে দ্রুত ঘরে ফিরি, ঘুরতে রেড়িয়ে যাই।
ইতোমধ্যে আমার কন্যা একটি ফরাসি স্কুলে ভর্তি হয়েছে।
প্রথম দিকে শুধুই বাংলা বলতে পারা আমার মেয়েটি ভিনদেশি ভাষার স্কুলে যেতে ভীতি, অনীহা ও সংশয় প্রকাশ করলেও এখন নিত্যদিন পাহাড়ের কোলঘেঁষা পথ বেয়ে স্কুলে যাওয়া আসা করে খুশিমনেই!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন