নতুন বছরের শুরু থেকে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের মধ্যে সড়কপথে যাত্রী ও পণ্যবাহী যান চলাচল শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে প্রতিবেশী এই চার দেশে যানবাহন চলাচলের অগ্রগতি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, “আগামী জানুয়ারি থেকে চার দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে যান চলাচল শুরু হবে। রুট সার্ভে শেষ হওয়ার পর জানুয়ারি মাসে একটি দিন ঠিক করা হবে উদ্বোধনের জন্য।”
আনুষ্ঠানিকভাবে যান চলাচল শুরুর আগে নভেম্বরের মধ্যে যানবাহনের পরীক্ষামূলক চলাচল হবে বলে জানান তিনি।
নেপাল ছাড়া তিনটি দেশ ইতিমধ্যে এবিষয়ে চূড়ান্ত অনুমতি দিয়েছে জানিয়ে নেপাল সরকারও শিগগিরই অনুমোদন দেবে বলে আশা প্রকাশ করেন মন্ত্রী।
চুক্তির আওতায় যান চলাচলের জন্য সংশ্লিষ্ট দেশ নিজেদের নির্ধারিত হারে ‘ট্রানজিট ফি’ আদায় করবে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, “বাংলাদেশ কি হারে এই ফি আদায় করবে তা খুব দ্রুত নির্ধারণ করা হবে।”
মন্ত্রী জানান, চার দেশের ‘ফ্রেন্ডশিপ মোটর র্যালি’ আগামী ১৪ নভেম্বর ভারতের উড়িষ্যা প্রদেশের ভুবনেশ্বর থেকে শুরু হয়ে বিহারের রাঁচি, পাটনা, নেপালের কাঠমান্ডু, বিরাটনগর, ভুটানের ফুয়েন্টসোলিং, থিম্পু, ভুমথাং, মঙ্গার, ভারতের আসামের গৌহাটি, শিলচর, ত্রিপুরার আগরতলা হয়ে ২৮ নভেম্বর আখাউড়া অথবা ফেনীর বিলোনিয়া সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে ঢুকবে।
মোটার শোভাযাত্রাটি চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকায় আসবে। ২৯ নভেম্বর ঢাকায় একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। পরদিন ঢাকা থেকে ভারতের কোলকাতার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে শোভাযাত্রা বেনাপোল সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের কোলকাতায় গিয়ে শেষ হবে।
এসময় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এমএএন ছিদ্দিকসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
গত ১৫ জুন ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে চার দেশের মধ্যে সড়কপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে একটি চুক্তিতে সই করেন পরিবহন মন্ত্রীরা।
এর আগে ৮ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের মধ্যে যানবাহন চলাচলে ‘বিবিআইএন মোটর ভেহিকল অ্যাগ্রিমেন্ট (এমভিএ)’ সইয়ের প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়।
চারদেশের সম্ভাব্য রুটগুলো হচ্ছে, ভারতের কলকাতা থেকে পেট্রোপোল হয়ে বাংলাদেশের বেনাপোল-যশোর-ঢাকা-চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা-হাটিকুমরুল-বগুড়া-রংপুর-বুড়িমারি হয়ে ভারতের চেংড়াবান্দা-শিলিগুড়ি এবং ঢাকা থেকে হাটিকুমরুল-বগুড়া-রংপুর-বুড়িমারি হয়ে ভারতের চেংড়াবান্দা-জায়াগন হয়ে ভুটানের ফুয়েন্টসুলিং হয়ে থিম্পু পর্যন্ত এই তিনটি রুট।এছাড়া ঢাকা থেকে হাটিকুমরুল-বগুড়া-রংপুর-বাংলাবান্দা হয়ে ভারতের ফুলবাড়ি-পানিটাঙ্কি দিয়ে নেপালের কাকড়ভিটা হয়ে কাঠমান্ডু, ভারতের কলকাতা থেকে বাংলাদেশের ঢাকা-সরাইল-সিলেট-তামাবিল হয়ে ভারতের ডাউকি-শিলং-গুয়াহাটি হয়ে ভুটানের সামদ্রুপ ঝংকার এবং খুলনা থেকে যশোর-বেনাপোল হয়ে ভারতের পেট্রোপোল দিয়ে কলকাতা পর্যন্ত।
চুক্তির প্রস্তাবে চার দেশের সম্মতিতে ভবিষ্যতে এই সড়কপথে অন্য যেকোনো দেশের যুক্ত হওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, চার দেশের মধ্যে চলাচলে রুট পারমিট নিতে হবে। এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাওয়ার সময় মাঝপথে কোনো যাত্রী বা মালামাল তোলা যাবে না।
যে দেশের উপর দিয়ে যানবাহন যাবে, সে দেশের কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করলে তা তল্লাসি ও পরিদর্শন করতে পারবে। কোনো দেশে নিষিদ্ধ থাকা পণ্য সে দেশের উপর দিয়ে পরিবহন করা যাবে না বলেও চুক্তির খসড়ায় রয়েছে।
তিন বছর পর পর এই চুক্তি নবায়ন হবে এবং কোনো দেশ চাইলে ছয় মাসের নোটিসে চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করে নিতে পারবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন