কৌশিক বসু
কৌশিক বসু
একজন বাঙালি হিসেবে বাংলাদেশের এ অর্জনে অভিনন্দন জানিয়েছেন তিনি।
তবে তুষ্টিতে ভোগার কোনো সুযোগ নেই মন্তব্য করে অর্থনীতির এই প্রথিতযশা অধ্যাপক চলমান ধারা অব্যাহত রাখতে নীতি-নির্ধারকদের সদা জাগ্রত থাকার পরামর্শও দিয়েছেন।
গত ৭ অক্টোবর লাতিন আমেরিকান দেশ পেরুর রাজধানী লিমায় বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সভা চলাকালে বিশ্বব্যাংক দপ্তরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ও একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের অধীনে পিএইচডিধারী ডক্টর বসু।
কৌশিক বসুর জন্ম ১৯৫২ সালে কলকাতায়। অর্থনীতি পড়েছেন দিল্লির বিখ্যাত সেইন্ট স্টিফেনস কলেজ ও বিলেতের লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্সে। নোবেল বিজয়ী প্রথম ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের ‘সোশ্যাল চয়েস’ নিয়ে তারই অধীনে পিএইচডি করেছেন। জাতিসংঘের অধীন বিভিন্ন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
অর্থনীতির জন্য সুবিখ্যাত ভারত ও আমেরিকার স্কুলগুলোতে অধ্যাপনার অভিজ্ঞতা রয়েছে কৌশিক বসুর। অর্থনীতি নিয়ে অনেকগুলো গ্রন্থ রয়েছে তার, বিশ্বব্যাংকে যোগ দেওয়ার আগে হিন্দুস্তান টাইমস ও বিবিসিতে নিয়মিত কলাম লিখতেন তিনি।
কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির এই অধ্যাপক ছুটি নিয়ে যোগ দেন মনমোহন সিং এর সরকারে। ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালনের পর প্রথম ভারতীয় হিসেবে যোগ দেন বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হিসেবে। ডক্টর বসু বিশ্বব্যাপী অর্থনীতির শিক্ষার্থীদের সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ইকোনোমিক অ্যসোসিয়েশনের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।
সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ নিয়ে উচ্চাশার কথা শুনিয়েছেন বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ।
সামষ্টিক অর্থনীতিতো বটেই সামাজিক খাত বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং মানব উন্নয়নে বাংলাদেশের অর্জনে খুশি এই বাঙালি এক সময় বাংলাদেশি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসেও কাজ করেছেন। ডিসেম্বরে তিনি বাংলাদেশ সফর করবেন বলেও এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আমন্ত্রণে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক, এই অঞ্চলের অর্থনীতি, রাজনীতি নিয়ে গণবক্তৃতা করবেন তিনি।
১৫ থেকে ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় এই অনুষ্ঠান হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করবেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে নিয়ে এখন বেশ প্রশংসা করা হয়। বিশ্বমন্দার মধ্যেও বাংলোদেশে ৬ শতাংশের বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। আপনার চোখে কেমন চলছে বাংলাদেশের অর্থনীতি?
কৌশিক বসু: ঠিকই বলেছেন, বিশ্ব অর্থনীতির কঠিন অবস্থার মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি খুব ভালোভাবেই অগ্রসর হচ্ছে….। অনেকেই এখন বাংলাদেশের প্রশংসা করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সে আলোচনার বাইরেও আমি বলতে পারি যে, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের যে অর্থনৈতিক বৃদ্ধি অর্থ্যাৎ ইকোনোমিক গ্রোথ যে হারে হচ্ছে এখন পৃথিবীতে খুব একটা জায়গায় গ্রোথ সেভাবে হচ্ছে না।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: আইএমএফ পূর্বাভাস দিয়েছে বাংলাদেশে চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। আপনার বিবেচনায় সেটা কি সম্ভব?
কৌসিক বসু: দেখেন, বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে ৬ শতাংশের বেশি হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। গত বছরেও ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। এবার ৭ শতাংশ বা তার কাছাকাছি হবে বলে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো পূর্বাভাস দিয়েছে। আমরাও (বিশ্বব্যাংক) করছি…। আর আমি মনে করি, বাংলাদেশে সেটা অসম্ভব নয়।
তুমি যদি এখন সারা পৃথিবীর একটা গ্রোথ চার্ট তৈরি কর তাহলে ইট উইল বি এ্যাট দ্যা টপ এন্ড। এবং একজন বাঙালি হিসেবে এটা বলতে পারি যে, ১০ বছর আগেও যদি ভাবা হত যে এ রকম বাংলাদেশ এখানে আসতে পারে কি না মনে হতো যে, খুবই আনলাইকলি যে বাংলাদেশ এখানে এসে পৌঁছাবে।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: সামাজিক ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ অনেক উন্নতি করেছে। সে বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?
কৌশিক বসু: হ্যাঁ, এক্ষেত্রেও বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনেক প্রশংসা কুড়িয়েছে। সোশ্যাল ইন্ডিকেটরস বলে আমরা যেটাকে বলি, এ্যাট বার্থ মানুষ কতটুকু লাইফ এক্সপেকটেন্সি, ইনফেন্ট মরটালিটি-এসব ইন্ডিকেটরে বাংলাদেশের অনেক উন্নতি হয়েছে। আর এসব ইন্ডিকেটরে উন্নতি হওয়ায় লং রানে ইফেক্টটা ইকোনোমিক গ্রোথের উপর পড়বে।
অমর্ত্য সেন, আমার শিক্ষক- যেটা নিয়ে বারবার বলেছেন, এসব উন্নতিগুলোর একটি ইমিডিয়েট বেনিফিট পাওয়া যায় এবং লং রান গ্রোথ বেনিফিট পাওয়া যায় হুইচ ইজ ভেরি লার্জ। যেমনটা আমরা চায়নাতে দেখেছি। অতএব অন দ্যা হোল দ্যা স্টোরি ইজ ভেরি ভেরি পজিটিভ।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: আরও উন্নতির জন্য বাংলাদেশের কী করা উচিৎ বলে আপনি মনে করেন?
কৌশিক বসু: ইকোনোমি ভয়ঙ্কর কঠিন ম্যানেজমেন্ট। সো এ্যাট এভরি স্টেইজ গুড নিউজ বলে বসে থাকলে চলবে না, আরাম করলে হবে না। ইউ হ্যাভ টু রিমেইন এনগেজড। সেন্ট্রাল ব্যাংক, মিনিস্ট্রি অব ফিন্যান্স অ্যাট এভরি লেভেল ইটস আ ভেরি হার্ড টাসল এহেড। এবং গ্লোবাল সিনারিও খুব একটা পজিটিভ নয়।
আমরা লাতিন আমেরিকাতে বসে আলোচনা করছি। এবছর লাতিন আমেরিকার গ্রোথ নেগেটিভ হবে মোস্ট প্রোবাবলি। এর মধ্যে ব্রাজিলের গ্রোথ নেগেটিভ হয়ে গেল, বিশাল একটা কান্ট্রি। ভেনেজুয়েলার গ্রোথ নেগেটিভ হল। অতএব দ্যা গ্লোবাল সিচুয়েশন ইজ ভেরি ডিফিকাল্ট। তার মধ্যে ইউ হ্যাভ টু কিপ ইট আপ।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেশ স্বস্তিদায়ক অবস্থায় পৌঁছেছে। এটা অর্থনীতিতে কী ধরনের প্রভাব ফেলছে বলে আপনি মনে করেন?
কৌশিক বসু: খুবই ভালো…। বাংলাদেশের রিজার্ভ এখন ২৬/২৭ বিলিয়ন ডলার হয়ে গেল। আমি একটু ফিরে যাচ্ছি,…. অনেক দিনের আগের কথায়। আর্লি নাইনটিজ নাইনটি (১৯৯০) এর কথা, ৭ বিলিয়ন ডলার হলে বলা হত খুব ভালো সময় যাচ্ছে। তারপর ইন্ডিয়ার রিফর্মের পর রিজার্ভ বাড়তে শুরু করল চড়চড় করে…।
বাংলাদেশেও সেটা দেখা যাচ্ছে। ২৭ বিলিয়ন ইজ অ্যা ভেরি হ্যান্ডসাম ফিগার। তাতে কারেন্সি ফ্ল্যাকচুয়েশন……….. স্পেকুলেটররা ভয় পায়। বিকজ (কারণ) ওরা জানে সেন্ট্রাল ব্যাংকের হাতে একটা পাওয়ার আছে, একটা বিরাট অ্যামুনিশন আছে। সো ইটস আ ভেরি গুড নিউজ।
এখানে একটি বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে, ওয়ার্ল্ড মানি মানেই ভলাটাইল। সেটাকে ম্যানেজ করা, সেন্ট্রাল ব্যাংক হ্যাজ টু হ্যান্ডেল ইট উইথ গ্রেট কৌশন (সতর্কতা)। বাট এটা সেন্ট্রাল ব্যাংকেরই এই রেজিমে হয়েছে, ইউ হ্যাভ রিচড ২৬ বিলিয়ন ডলার। সো আশা করা যায় যে, দিস ইজ আ প্রোগ্রেস, দ্যাট ইট উইল কনটিনিউ…। বাংলাদেশ এর মাধ্যমে এক্সপোর্ট-ইমপোর্টে অনেক বেনিফিট পাবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন