ভারতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, নেপাল ও বাংলাদেশ থেকেই সবচেয়ে বেশি মানুষ ভারতে পাচার হয়ে আসেন।
ভারত সরকার এই মানব পাচার রুখতে ও পাচারকারীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতেও নানা উদ্যোগ নিচ্ছে বলে তিনি জানান।তবে ভারতে যে সব এনজিও পাচার হওয়া নারী ও শিশুদের উদ্ধারের কাজ করে, তারা বলছেন বাংলাদেশ থেকে ভারতের যৌনপল্লীগুলোতে পাচারের সংখ্যা কমলেও গৃহকর্মের কাজে কিন্তু তাদের সংখ্যা আগের মতোই রয়েছে।
রাজধানী দিল্লিতে বুধবার ওই কনফারেন্সের উদ্বোধন করতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, মানব পাচার হল এমন এক সংগঠিত অপরাধ যা সীমান্তের নিষেধও মানে না।
তিনি আরও জানান, পাচারকারীদের রুখতে ও তাদের সম্পর্কে তথ্য বিনিময় করতে ভারত সম্প্রতি বাংলাদেশের সাথে একটি সমঝোতা সই করেছে, নেপালের সাথেও অনুরূপ সমঝোতার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মি সিংয়ের কথায়, ‘পাচার-হওয়া কিশোরীদের যৌন শোষণ করা হচ্ছে, বাচ্চাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে নেওয়া হচ্ছে, তাদের কেনাবেচা চলছে, বেগার খাটতে বাধ্য করা হচ্ছে। যত ধরনের অমানবিক কাজ করা সম্ভব, পাচারকারীরা তার সবই করছে – যেটা কোনও সভ্য সমাজই মেনে নিতে পারে না।’
নেপাল ও বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে আসা বহু নারীরই ঠিকানা হয় ভারতের যৌনপল্লীগুলো – এ অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কলকাতার সোনাগাছি এলাকায় যৌনকর্মীদের মধ্যে কাজ করে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা দুর্বার – ওই সংগঠনের সচিব ভারতী দে অবশ্য বলছিলেন বাংলাদেশ থেকে যারা সেখানে যান তাদের বেশির ভাগই যান স্বেচ্ছায়, পাচারের ঘটনা বরং ইদানীং কম।
পাচার হওয়া নারী ও শিশুদের উদ্ধারে দিল্লি-সহ উত্তর ভারতে খুবই সক্রিয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা শক্তিবাহিনী। ওই সংস্থার কর্ণধার নিশিকান্ত বলছিলেন, অতি সম্প্রতি পাচারের ঘটনায় বাংলাদেশকেও অনেক ছাপিয়ে গেছে নেপাল।
তার কথায়, ‘এপ্রিল মাসের ভূমিকম্পের পর থেকেই নেপাল থেকে পাচারের ঘটনা অনেক বেড়ে গেছে – ভূমিকম্পের পর সর্বস্ব হারানো মানুষকে কাজের টোপ দেখিয়ে ভারতে টেনে আনা হচ্ছে।’
নিশিকান্ত আরও জানান, ‘আর বাংলাদেশ থেকে যাদের পাচার করা হচ্ছে তাদের বেশি কাজে লাগানো হচ্ছে ঘরের কাজে, রান্নাবান্না, ঘর ধোয়ামোছা, বাসনমাজা ইত্যাদিতে। এদের অনেকেই প্রথমে বলবে তারা এসেছে মুর্শিদাবাদ বা মালদা থেকে, কিন্তু একটু অন্তরঙ্গভাবে ওদের আস্থা জিততে পারলেই ওরা বলে দেবে যে ওরা বাংলাদেশের।’
কনফারেন্সে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও দাবি করেছেন যে মানব পাচারের ঘটনা খুব শিগগিরি অনেক কমিয়ে আনা যাবে বলে সরকার আশাবাদী। তিনি জানান, তার মন্ত্রণালয়ের যে ইউনিটটি মানব-পাচার রোধে কাজ করে তাদের আরও শক্তিশালী করা হবে।
রাজনাথ সিং আরও বলেন, ‘এই কাজে সমন্বয় রেখে চলা হবে প্রতিটি রাজ্য সরকার আর বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও – যাতে এই কাজে তারা সবাই অবদান রাখতে পারে। আমাদের অগ্রাধিকার হবে পাচারকারীদের শাস্তি দেওয়া এবং সেই সঙ্গে পাচার হওয়াদের উদ্ধার ও সবচেয়ে বড় কথা, পুনর্বাসন।’
তবে ভারতে মানব পাচার রোধে যারা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন তাদের বক্তব্য বেশির ভাগ সরকারি উদ্যোগ এখনও কাগজে-কলমেই রয়ে গেছে, দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে চরম দারিদ্রের সুযোগ নিয়ে পাচারকারীরা অবাধেই তাদের কারবার চালিয়ে যাচ্ছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন