ভারতের তেরোজন সীমান্তরক্ষী আজ নেপালের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে সে দেশে ঢুকে পড়ার পর নেপালি পুলিশের হাতে তাদের বেশ কয়েক ঘন্টা আটক থাকতে হয়েছে।
ভারত যদিও বলেছে চোরাকারবারিদের ধাওয়া করতে গিয়েই ওই জওয়ানরা ভুল করে সীমান্ত পেরিয়ে গিয়েছিলেন, নেপালি কর্তৃপক্ষ অবশ্য প্রকাশ্যেই এই দাবি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে।দুদেশের মধ্যে দিনভর আলোচনার পর ওই জওয়ানরা শেষ পর্যন্ত মুক্তি পেলেও গত কয়েক মাস ধরে নেপাল ও ভারতের সম্পর্কে যে ক্রমশ অবনতি ঘটছে, তা এই ঘটনায় আরও জটিল আকার নেবে বলে পর্যবেক্ষরা মনে করছেন।
নেপালের মদহেশি জনজাতির বিক্ষোভ আর অবরোধ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত প্রায় আড়াই মাস ধরে যে ভারত-নেপাল সীমান্ত উত্তেজনায় ফুটছে – ভারতের দিকে সেই সীমান্ত পাহারার দায়িত্বে আছে সশস্ত্র সীমা বল বা এসএসবি।
এদিন সকাল সাড়ে ছটা নাগাদ নেপাল লাগোয়া বিহারের কিষেণগঞ্জ জেলার ওই বাহিনীর বারো নম্বর ব্যাটেলিয়নের একদল জওয়ান ডিজেল পাচারকারীদের পিছু ধাওয়া করেন – আর তখনই তারা ভুলবশত নেপালের ভেতর ঢুকে পড়েন বলে এসএসবির বক্তব্য।
বাহিনীর আইজি (অপারেশনস) দীপক কুমার জানান, ‘‘ডিজেল স্মাগলারদের পিছু ধাওয়া করে দুজন জওয়ান নিজেদের রাইফেল সঙ্গীদের কাছে জমা রেখে তাদের ধরতে ছুট লাগান। আর তখনই তারা ভুল করে নেপালের ভেতর ঢুকে পড়লে স্থানীয় গ্রামবাসীরা ওই দুই নিরস্ত্র জওয়ানকে ঘিরে ফেলেন এবং নেপাল পুলিশের হাতে তুলে দেন।’’
‘‘এদিকে সঙ্গীদের কী হয়েছে জানতে বাকি ১১জন জওয়ানও একটু পরে সেখানে গেলে তাদেরও আটকে দেওয়া হয় – এসএসবির মোট ১৩জন সদস্যকেই নেপালের আর্মড পুলিশ ফোর্স বা এপিএফের চৌকিতে বসিয়ে রাখা হয়।’’
এদিকে ভারতের আধাসেনাদের নেপালের ভেতর আটকে রাখা হয়েছে, দিল্লিতে এই খবর আসতেই হুলুস্থূল পড়ে যায়। এসএসবি-র মহাপরিচালক বি ডি শর্মা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংকে পুরো পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেন।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও সঙ্গে সঙ্গে নেপালের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের মুক্তির দাবি জানায়।
দুদেশের মধ্যে দিনভর আলোচনার শেষে বিকেলে ১৩জন সীমান্তরক্ষী অক্ষত অবস্থায় মুক্তি পান ঠিকই – কিন্তু এসএসবি ঘটনার যে বিবরণ দিয়েছে তা নিয়ে প্রকাশ্যেই সন্দেহ প্রকাশ করে নেপাল কর্তৃপক্ষ।
দিল্লিতে নিযুক্ত নেপালের রাষ্ট্রদূত দীপ কুমার উপাধ্যায় বলেন, ‘‘এসএসবি যাদের ধাওয়া করেছিল বলে বলছে তারা চোরাকারবারি ছিল কি না তা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। তারা এলাকার গরিব লোক বা স্থানীয় কৃষকও হতে পারে – কারণ আপনারা জানেন ওই এলাকায় ডিজেল-সহ সব নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের চরম সঙ্কট চলছে।’’
‘‘আর আমাদের পুলিশ কিন্তু ওই জওয়ানদের আটতে রাখেনি – বরং গ্রামবাসীদের ক্ষোভ থেকে তাদের বাঁচাতেই উদ্ধার করে এনেছিল। অন্য সময় যেটা খুব স্বাভাবিক ঘটনা – এখন সব জিনিসপত্রের আকাল চলছে বলেই কিন্তু প্রতিটা ঘটনাই খুব স্পর্শকাতর হয়ে উঠছে।’’
নেপালের অভিযোগ, মদহেশিদের বিক্ষোভে প্রচ্ছন্ন মদত দিয়ে ভারতই আসলে কাঠমান্ডুর বিরুদ্ধে অঘোষিত অবরোধ চালাচ্ছে – আর জ্বালানি তেল থেকে নুন-চাল-গম না-পেয়ে সাধারণ নেপালিরা ভারতের বিরুদ্ধে ফুঁসছেন।
অবরোধের অভিযোগ উড়িয়ে দিলেও সংবিধানে মদহেশিদের স্বার্থরক্ষার দাবিতে ভারত অবশ্য তাদের সমর্থন আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছে।
নেপালে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত দেব মুখার্জিও বিবিসিকে বলেছেন, নেপালের সংবিধানে মদহেশিরা যেভাবে উপেক্ষিত হয়েছেন তাতে এই ধরনের প্রতিক্রিয়া প্রত্যাশিতই ছিল।
আজ নেপালের ভেতর ভারতীয় জওয়ানদের আটকে রাখার ঘটনা যে এই সংঘাতেরই জের, তা নিয়ে পর্যবেক্ষকদের মধ্যে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।
নেপালের নতুন সংবিধানকে কেন্দ্র করে এই সঙ্কট দ্রুত না-মিটলে দুদেশের মধ্যে সম্পর্কের আরও অবনতি যে অনিবার্য – সে কথাও তারা স্বীকার করে নিচ্ছেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন