দক্ষিণ কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা উত্তাল হলো আজ সোমবার। আটটি থানা এলাকা অঘোষিত কারফিউতে রূপ নিল। পুলিশের সঙ্গে জনতা জড়িয়ে পড়ল খণ্ডযুদ্ধে। জাতীয় সড়কে যান চলাচল বিঘ্নিত হলো। বাধা পেল রেল পরিষেবাও।
অশান্তির কারণ জাহিদ আহমেদের মৃত্যু, ‘গো-হত্যার’ কারণে জম্মুর উধমপুরে ১০ দিন আগে পেট্রলবোমায় যিনি মারাত্মক আহত হয়েছিলেন।
এনডিটিভি ও টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, গুরুতর আহত অবস্থায় জাহিদকে নিয়ে আসা হয়েছিল দিল্লি। গতকাল রোববার তাঁর মৃত্যু হয়। সোমবার অনন্ত নাগ জেলার বাটেনগু গ্রামে তাঁকে দাফন করা হয়। পুলিশি প্রহরায় শোকযাত্রা শান্তিপূর্ণ থাকলেও গোলমাল বাধে পরে। পুলিশ জানিয়েছে, শোকযাত্রায় পাকিস্তানি পতাকা হাতে স্থানীয় যুবকদের দেখা গিয়েছে।
পুলিশকে অবশ্য গুলি চালাতে বারণ করা হয়েছিল। উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। সাবধানতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে উপত্যকার বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের গৃহবন্দী করে রাখা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুলের পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
চলতি মাসের ৯ তারিখে জাহিদদের ট্রাকে পেট্রলবোমা ছোড়া হয়। ট্রাকটি জম্মু থেকে শ্রীনগর যাচ্ছিল। অভিযোগ, জাহিদেরা নাকি তিনটি গরু হত্যা করেছেন। এই খবর রটে যাওয়ার পরেই আট যুবক ট্রাকটি আক্রমণ করেন। পরে প্রশাসন সূত্রে বলা হয়, খাদ্যে বিষক্রিয়ার ফলেই গরুগুলো মারা গেছে । ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মোট ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপরাধীদের কঠোর সাজা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। রাজ্য মন্ত্রিসভায় ঘটনার নিন্দা করে সর্বসম্মতভাবে এক প্রস্তাব গৃহীত হয়। উপত্যকায় শান্তি বজায় রাখার জন্য জনগণকে অভিনন্দনও জানানো হয়। মুখ্যমন্ত্রী মুফতি মহম্মদ সঈদ জানিয়েছেন, নিহত জাহিদের পরিবারকে এককালীন পাঁচ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। পরিবারের একজনকে দেওয়া হবে সরকারি চাকরি।
রাজ্য বিধানসভায় বিরোধী নেতা সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা গোটা ঘটনার জন্য বিজেপি ও রাজ্যে তার দোসর পিডিপিকে দায়ী করেছেন । তিনি বলেছেন, এই মৃত্যু অবাঞ্ছিত ও অপ্রয়োজনীয়। বিজেপি তার নীতি রূপায়ণের জন্য গোটা দেশে ‘গো-হত্যার’ জিগির তুলছে।
‘গো-হত্যা’কে কেন্দ্র করে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ কিছুদিন ধরেই উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। দিল্লির অদূরে বিসাদা গ্রামে সম্প্রতি গুজবের বলি হয়েছেন প্রৌঢ় মহম্মদ ইকলাখ। জাহিদ আহমেদ দ্বিতীয় বলি। জম্মু-কাশ্মীরে গো-হত্যা নিষিদ্ধ ১৯৩৪ সাল থেকে। সেই আইন কঠোরভাবে বলবৎ করা নিয়ে গত সেপ্টেম্বর মাসে জম্মু হাইকোর্টের রায়ের পর থেকেই রাজ্যে উপত্যকায় উত্তেজনার সৃষ্টি। এই রায়ের বদলা অন্য রায় দেয় কাশ্মীর হাইকোর্ট। ফলে বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে চলে এসেছে। এর মধ্যেই এক বিধায়ক গরুর মাংস খাওয়ার অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় বিজেপি সদস্যদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন।
গরু-বিতর্ক অশান্তি ডেকে আনায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিরক্ত। সেই বিরক্তি তিনি প্রকাশও করেছেন। বলেছেন, এই অনর্থক বিতর্ক সরকারের উন্নয়নের কর্মসূচিকে ব্যাহত করছে। তাঁরই নির্দেশে দলীয় সভাপতি অমিত শাহ গতকাল রোববার হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রীসহ দলীয় সাংসদ ও বিধায়কদের ডেকে পাঠিয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন।
prothom alo
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন