এখানকার বাসিন্দাদের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ উদ্বোধনসহ একগুচ্ছ উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে বৃহস্পতিবার দাশিয়ারছড়ায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা; বিলুপ্ত ছিটমহল এলাকায় যা হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের সরকার প্রধানের প্রথম সফর।
প্রধানমন্ত্রী আসছেন-এটা ভেবেই বিস্ময়ের সীমা নেই দাশিয়ারছড়ার অনেক বাসিন্দার। তাদেরই একজন প্রবীণ ফজলুল হক।
“জীবনে কখনোই কল্পনা করিনি আমাদের এলাকায় প্রধানমন্ত্রী আসবেন।”
৬২ বছর দাশিয়ারছড়াতেই কাটানো এই কৃষক দুই মাস আগেও বাস করতেন ছিটমহলের বন্দি জীবনে; যেখানে নাগরিক পরিচয় বা রাষ্ট্রীয় মৌলিক অধিকারের প্রায় সবকিছুই ছিল অনুপস্থিত।
নাগরিকত্বের স্বীকৃতি দিয়ে ৩১ জুলাই মধ্যরাত থেকে স্থল সীমান্ত চুক্তি কার্যকরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ছিটমহলের বিলুপ্তি ঘটে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকত্বের পাশাপাশি সরকারি সেবার অধিকারপ্রাপ্ত হয় ছিটবাসী।
দাশিয়ারছড়ার কালিরহাট বাজারের একটি চায়ের দোকানে বসে ফজলুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের এতদিনের জীবন ছিল একরকম বন্দি জীবন। সেখান থেকে আমরা মুক্ত হয়েছি। সামনে আমাদের নতুন জীবনের হাতছানি।”
প্রধানমন্ত্রীর সফর এবং এখান থেকে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের সূচনা নিয়ে তিনি বলেন, “মা যেমন হারানো সন্তান ফিরে পেলে তার জন্য কতকিছু করে, আমরাও যেন হারানো সন্তান ছিলাম এতদিন, মা আমাদের ফিরে পেয়েছেন তাই অনেক কিছুই হচ্ছে।”
এই দাশিয়ারছড়ার কালিরহাট বাজারেই বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয়দের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুধী সমাবেশে যোগ দেবেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন তার উপ-প্রেস সচিব মামুন-অর-রশিদ।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী দাশিয়ারছড়ার ৬৪৩টি পরিবারে বিদ্যুৎ সংযোগ উদ্বোধন করবেন।
বিদ্যুতের মতো অন্যান্য সব নাগরিক সেবা বঞ্চিত ছিলেন ছিটবাসী। ছিল না কোনও স্কুল কিংবা হাসপাতাল, ভূমি বিনিময়েরও কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থা ছিল না।
৩৭ হাজার বাসিন্দাসহ নিজেদের সীমানায় ভারতের এ ধরনের ১১১টি ছিটমহল পেয়েছে বাংলাদেশ। একইভাবে ১৪ হাজার বাসিন্দাসহ ভারতের ভেতর বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল পেয়েছে প্রতিবেশী দেশটি।
ভারতের কাছ থেকে বাংলাদেশের পাওয়া ছিটমহলগুলোর মধ্যে কুড়িগ্রামে রয়েছে ১২টি। এ ছিটমহলগুলোর মোট বাসিন্দা ৮ হাজার ১৩২ জন। এরমধ্যে দাশিয়ারছড়াতেই বাস করেন ৬ হাজার ৬০৮ জন।
প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব বলেন, ছিটমহল বিলুপ্তির সময় দাশিয়ারছড়া থেকে ৩০৫ জন ভারতের নাগিরকত্ব নেওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন পরিকল্পনার কথা শুনে তারা এখন বাংলাদেশেই থেকে যেতে চাচ্ছেন।
“কিন্তু তাদের আবেদন মঞ্জুর হওয়ায় পুরো বিষয়টিই নির্ভর করছে ভারত সরকারের মর্জির উপর।”
প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে দাশিয়ারছড়াসহ কুড়িগ্রাম শহর ও এর আশপাশে চলছে ব্যাপক সাজসজ্জা। ফুলবাড়ী উপজেলা সদরের হেলিপ্যাড থেকে কালিরহাট পর্যন্ত রাস্তায় অসংখ্য তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। তোরণ দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয়েছে কুড়িগ্রাম শহর ও আশপাশের রাস্তাগুলো।
মামুন-অর-রশিদ বলেন, দীর্ঘদিনের সুবিধাবঞ্চিত কুড়িগ্রামের অধুনাবিলুপ্ত ছিটমহলবাসীর জীবন-মান উন্নয়নের জন্য ৩৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ের ২০টি সেবা ও উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
এগুলোর মধ্যে রয়েছে-স্বাস্থ্যকেন্দ্রসহ নতুন একটি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স নির্মাণ, ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্র নির্মাণ, ৫২ কিলোমিটার বিদ্যুৎ সরবরাহ ও বিতরণ লাইন নির্মাণ, তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, তিনটি কমিউনিটি ক্লিনিক ও একটি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র নির্মাণ।
বয়স্ক ভাতা, দুস্থ ভাতা, টিআর, কাবিখাসহ সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিও বিলুপ্ত ছিটমহল এলাকায় বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প বাস্তবায়ন, কম্পিউটার শিক্ষা, সমিতি গঠন করানো এবং কৃষি বিষয়ক সাতটি প্রকল্পও হাতে নেওয়া হয়েছে।
ছিটমহল বিলুপ্তির পর নতুন নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়নেরও কাজ শুরু হয়ে গেছে।
সার্বিক পরিস্থিতিতে সন্তুষ্ট তরুণ হাফিজুর। ছিটমহলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোতে পারেননি ৩২ বছরের এই যুবক।
তবে সরকারের নানা প্রকল্প নেওয়ার খবরে নিজের ও উত্তরাধিকারীর ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী তিনি।
“বন্দি হয়ে থেকে আমাদের এক রকমভাবে এতদিন কেটেছে। তবে সরকার যদি উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন করে তাহলে আমাদের বাকি জীবন ও ভবিষ্যৎ ভালোই কাটবে।”
প্রধানমন্ত্রী দাশিয়ারছড়া থেকে ফিরে দুপুর আড়াইটায় কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে এক জনসভায় বক্তব্য দেবেন। একইসঙ্গে তিনি কুড়িগ্রাম জেলায় ১৬টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ১৫টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
উদ্বোধন করবেন এমন উন্নয়ন প্রকল্পগুলো হল- সদর উপজেলার ত্রিমোহনী এলাকায় নির্মিত সমন্বিত বীজ হিমাগার, রাজারহাট কৃষি-আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ সেন্টার, কুড়িগ্রাম টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার, রাজীবপুর ও নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নবনির্মিত ৫০ শয্যার হাসপাতাল ভবন ইত্যাদি।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (রংপুর বিভাগ) খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, তিস্তা সেতু, ধরলা সেতুসহ কুড়িগ্রামে যত উন্নয়ন তার সিংহভাগই হয়েছে শেখ হাসিনার সরকারের সময়। এখন কুড়িগ্রামে একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপন ও নদীগুলো খননের দাবি করছে এলাকাবাসী।
bdnews24
প্রধানমন্ত্রী আসছেন-এটা ভেবেই বিস্ময়ের সীমা নেই দাশিয়ারছড়ার অনেক বাসিন্দার। তাদেরই একজন প্রবীণ ফজলুল হক।
“জীবনে কখনোই কল্পনা করিনি আমাদের এলাকায় প্রধানমন্ত্রী আসবেন।”
৬২ বছর দাশিয়ারছড়াতেই কাটানো এই কৃষক দুই মাস আগেও বাস করতেন ছিটমহলের বন্দি জীবনে; যেখানে নাগরিক পরিচয় বা রাষ্ট্রীয় মৌলিক অধিকারের প্রায় সবকিছুই ছিল অনুপস্থিত।
নাগরিকত্বের স্বীকৃতি দিয়ে ৩১ জুলাই মধ্যরাত থেকে স্থল সীমান্ত চুক্তি কার্যকরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ছিটমহলের বিলুপ্তি ঘটে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকত্বের পাশাপাশি সরকারি সেবার অধিকারপ্রাপ্ত হয় ছিটবাসী।
তোরণে তোরণে সেজেছে দাশিয়ারছড়া।
প্রধানমন্ত্রীর সফর এবং এখান থেকে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের সূচনা নিয়ে তিনি বলেন, “মা যেমন হারানো সন্তান ফিরে পেলে তার জন্য কতকিছু করে, আমরাও যেন হারানো সন্তান ছিলাম এতদিন, মা আমাদের ফিরে পেয়েছেন তাই অনেক কিছুই হচ্ছে।”
এই দাশিয়ারছড়ার কালিরহাট বাজারেই বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয়দের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুধী সমাবেশে যোগ দেবেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন তার উপ-প্রেস সচিব মামুন-অর-রশিদ।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী দাশিয়ারছড়ার ৬৪৩টি পরিবারে বিদ্যুৎ সংযোগ উদ্বোধন করবেন।
বিদ্যুতের মতো অন্যান্য সব নাগরিক সেবা বঞ্চিত ছিলেন ছিটবাসী। ছিল না কোনও স্কুল কিংবা হাসপাতাল, ভূমি বিনিময়েরও কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থা ছিল না।
৩৭ হাজার বাসিন্দাসহ নিজেদের সীমানায় ভারতের এ ধরনের ১১১টি ছিটমহল পেয়েছে বাংলাদেশ। একইভাবে ১৪ হাজার বাসিন্দাসহ ভারতের ভেতর বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল পেয়েছে প্রতিবেশী দেশটি।
ভারতের কাছ থেকে বাংলাদেশের পাওয়া ছিটমহলগুলোর মধ্যে কুড়িগ্রামে রয়েছে ১২টি। এ ছিটমহলগুলোর মোট বাসিন্দা ৮ হাজার ১৩২ জন। এরমধ্যে দাশিয়ারছড়াতেই বাস করেন ৬ হাজার ৬০৮ জন।
প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব বলেন, ছিটমহল বিলুপ্তির সময় দাশিয়ারছড়া থেকে ৩০৫ জন ভারতের নাগিরকত্ব নেওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন পরিকল্পনার কথা শুনে তারা এখন বাংলাদেশেই থেকে যেতে চাচ্ছেন।
“কিন্তু তাদের আবেদন মঞ্জুর হওয়ায় পুরো বিষয়টিই নির্ভর করছে ভারত সরকারের মর্জির উপর।”
দাশিয়ারছড়ার বাসাবাড়িতে গেছে বিদ্যুতের তার, বসেছে মিটার। বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ সংযোগের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
মামুন-অর-রশিদ বলেন, দীর্ঘদিনের সুবিধাবঞ্চিত কুড়িগ্রামের অধুনাবিলুপ্ত ছিটমহলবাসীর জীবন-মান উন্নয়নের জন্য ৩৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ের ২০টি সেবা ও উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
এগুলোর মধ্যে রয়েছে-স্বাস্থ্যকেন্দ্রসহ নতুন একটি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স নির্মাণ, ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্র নির্মাণ, ৫২ কিলোমিটার বিদ্যুৎ সরবরাহ ও বিতরণ লাইন নির্মাণ, তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, তিনটি কমিউনিটি ক্লিনিক ও একটি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র নির্মাণ।
বয়স্ক ভাতা, দুস্থ ভাতা, টিআর, কাবিখাসহ সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিও বিলুপ্ত ছিটমহল এলাকায় বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প বাস্তবায়ন, কম্পিউটার শিক্ষা, সমিতি গঠন করানো এবং কৃষি বিষয়ক সাতটি প্রকল্পও হাতে নেওয়া হয়েছে।
ছিটমহল বিলুপ্তির পর নতুন নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়নেরও কাজ শুরু হয়ে গেছে।
সার্বিক পরিস্থিতিতে সন্তুষ্ট তরুণ হাফিজুর। ছিটমহলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোতে পারেননি ৩২ বছরের এই যুবক।
প্রধানমন্ত্রীর সফর উপলক্ষে কুড়িগ্রামেও তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে।
“বন্দি হয়ে থেকে আমাদের এক রকমভাবে এতদিন কেটেছে। তবে সরকার যদি উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন করে তাহলে আমাদের বাকি জীবন ও ভবিষ্যৎ ভালোই কাটবে।”
প্রধানমন্ত্রী দাশিয়ারছড়া থেকে ফিরে দুপুর আড়াইটায় কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে এক জনসভায় বক্তব্য দেবেন। একইসঙ্গে তিনি কুড়িগ্রাম জেলায় ১৬টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ১৫টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
উদ্বোধন করবেন এমন উন্নয়ন প্রকল্পগুলো হল- সদর উপজেলার ত্রিমোহনী এলাকায় নির্মিত সমন্বিত বীজ হিমাগার, রাজারহাট কৃষি-আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ সেন্টার, কুড়িগ্রাম টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার, রাজীবপুর ও নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নবনির্মিত ৫০ শয্যার হাসপাতাল ভবন ইত্যাদি।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (রংপুর বিভাগ) খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, তিস্তা সেতু, ধরলা সেতুসহ কুড়িগ্রামে যত উন্নয়ন তার সিংহভাগই হয়েছে শেখ হাসিনার সরকারের সময়। এখন কুড়িগ্রামে একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপন ও নদীগুলো খননের দাবি করছে এলাকাবাসী।
bdnews24
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন