রবিবার, ১ নভেম্বর, ২০১৫

কী খেলা খেলছে রাশিয়া?

 
মাস খানেক ধরে সিরিয়ায় যুদ্ধবিমান যোগে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। ছবি: রয়টার্স

মাস খানেক ধরে সিরিয়ায় যুদ্ধবিমান যোগে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। ছবি: রয়টার্স

মাসখানেক ধরে সিরিয়ায় যুদ্ধবিমান যোগে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। হাত-পা ঝেড়ে শক্তির মহড়া দেখাচ্ছে। সাগর থেকে এক হাজার ৫০০ কিলোমিটার দূরত্ব পাড়ি দিয়ে সিরিয়ায় গিয়ে পড়ছে তাদের বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র। এর সঙ্গে ছোট বড় বিভিন্ন ধরনের গোলার দাপট তো আছেই। রাশিয়া বলছে, তারা পরম মিত্র সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের ঘোর শুত্রুদের ঘায়েলে এ হামলা চালাচ্ছে। আর তা মূলত জঙ্গি সংগঠন আইএসকে লক্ষ্য করেই।
কিন্তু সরকারবিরোধী প্রধান বিদ্রোহী জোট ফ্রি সিরিয়ান আর্মির প্রতিও তাদের নমনীয়তা দেখা যাচ্ছে। তাঁদের সামরিক সহায়তা দিতে পিছপা নেই। এসব থেকে রাশিয়ার উদ্দেশ্য বোঝা মুশকিল। শেষ পর্যন্ত তাঁরা আসলে কী চায়?
বিবিসির বিশ্লেষণে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্লেষক মাইকেল কফম্যান এ ব্যাপারে তাঁর পর্যালোচনা তুলে ধরেছেন। তিনি সিএনএ করপোরেশন ও কেনান ইনস্টিটিউটের গবেষক। সিরিয়ায় রাশিয়ার বিমান অভিযান নিয়ে তিনি পর্যালোচনা করছেন।

অভিযানের প্রস্তুতি চলছে। ছবিটি সাম্প্রতিক। ছবি: রয়টার্সঅভিযানের প্রস্তুতি চলছে। ছবিটি সাম্প্রতিক। ছবি: রয়টার্স

কফম্যান মনে করছেন, সিরিয়ার সরকারবিরোধী বাহিনীর ওপর প্রভাব খাটাতে চায় রাশিয়া। তারা হয়তো তাদের নিজেদের হাতে রাখতে চায়। সিরিয়া ইস্যুতে ইরান, এমনকি লেবাননের শিয়াপন্থী সংগঠন হিজবুল্লাহও রাশিয়াকে সহায়তা করতে পারে। মিত্র হিসেবে পরিচিত ইরানের কাছ থেকে বাশারের সরকার বিপুল অঙ্কের আর্থিক সহায়তা পেয়েছে বলে ধারণা করা হয়। গৃহযুদ্ধে দামেস্ককে অস্ত্র সহায়তা দিয়ে থাকতে পারে তেহরান।
কফম্যান বলেন, রাশিয়া প্রায় প্রতিদিন সিরিয়ায় একাধিক বিমান হামলা চালাচ্ছে। এসব হামলায় ভারী ও আধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করছে দেশটি। সিরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা হামলা নিয়ে সতর্ক। তাঁরা বলছে, হামলার লক্ষ্যবস্তু হলো অস্ত্র আর গোলাবারুদের ভান্ডার ও বিভিন্ন স্থাপনার অবকাঠামো।
যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত জোট আল নুসরা ফ্রন্টকে লক্ষ্য করেও হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এভাবে তারা বাশারকে শক্তিশালী করতে চায়। যদিও রাশিয়া বারবার দাবি করছে, তাঁরা আইএস জঙ্গিদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, তাঁদের লক্ষ্য আসাদবিরোধী গোষ্ঠীগুলো।
কফম্যান এটাও বলছেন, বাশারকে বাঁচানো রাশিয়ার লক্ষ্য নয়। রাশিয়া চায় যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বকে নিজেদের শক্তি দেখাতে। সিরিয়া ইস্যু তাদের কাছে এখন তুরুপের তাস। তারা চায়, এই ইস্যুতে পশ্চিমা বিশ্ব যেন তাদের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে বাধ্য হয়।
রাশিয়ার অভিযানে ব্যবহৃত বিমান। ছবিটি সাম্প্রতিক। ছবি: রয়টার্সরাশিয়ার অভিযানে ব্যবহৃত বিমান। ছবিটি সাম্প্রতিক। ছবি: রয়টার্স

পরিস্থিতি বিবেচনা করে দেখা যাচ্ছে, রাশিয়ার সেই উদ্দেশ্য অনেকটা সফল হতে যাচ্ছে। যেমন—গতকাল অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক সংলাপে প্রথমবারের মতো যোগ দেয় ইরান। আলোচনায় অংশ নেয় রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, তুরস্ক, মিসর ও ইরাক। ইউরোপীয় ইউনিয়নও (ইইউ) সেখানে ছিল।
আট ঘণ্টার ওই বৈঠক শেষে বিশ্বনেতারা বলেন, সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ অবসানের বিষয়ে ‘অগ্রগতি’ হয়েছে। তবে বাশারের ভাগ্যে কী ঘটবে, এ নিয়ে সব পক্ষ একমত হতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা বাশারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতে একমত হলেও ইরান ও রাশিয়া এ ব্যাপারে এখনো সম্মত হয়নি। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে আবার সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর বৈঠকে বসার কথা।
সিরিয়ায় চার বছরের বেশি সময় ধরে চলমান গৃহযুদ্ধে আড়াই লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। রাশিয়া ও ইরান সম্প্রতি সিরীয় যুদ্ধে সামরিকভাবে জড়িয়ে পড়েছে। সেখানে মস্কো সরকারি বাহিনীর সমর্থনে বিমান হামলা চালাচ্ছে। সরকারপন্থীদের সমর্থন দিচ্ছে তেহরানও। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, সৌদি আরব ও উপসাগরীয় অন্য দেশগুলো প্রেসিডেন্ট বাশারকে উৎখাত করতে চায়। বিবিসি অবলম্বনে

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন