সপ্তাহদুয়েক আগেই যে আলফা নেতা অনুপ চেতিয়াকে বাংলাদেশ ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে, তাকে কেন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার শান্তি আলোচনায় সামিল করল না সে ব্যাপারে আলফার মধ্যেই তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
আসামের এই বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর নেতারা বিবিসিকে জানিয়েছেন, যতক্ষণ না মি চেতিয়াকে আলোচনায় যুক্ত করা হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত তারা সরকারের সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক বিষয়ে কথাই বলবেন না।গত বছরকয়েক ধরে দিল্লিও ঢাকাকে বারবার বলে এসেছে শান্তি আলোচনায় গতি আনার জন্যই মি চেতিয়াকে তাদের হাতে পাওয়া প্রয়োজন – কিন্তু এখন সেই দাবি মিটে যাওয়ার পর মি চেতিয়াকে আলোচনায় সামিল করার ব্যাপারে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এখন আর স্পষ্ট করে কিছু বলছে না।
প্রায় আঠারো বছর বাংলাদেশের জেলে কাটানোর পর আসামের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী আলফার সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেতিয়াকে ভারতে ফিরিয়ে আনা হয় গত ১১ নভেম্বর সকালে।
এদিকে চেয়ারম্যান অরবিন্দ রাজখোয়া-সহ আলফার অন্য যে নেতারা সরকারের সঙ্গে শান্তি-আলোচনা চালাচ্ছেন ২৪ নভেম্বর তাদের মধ্যে দিল্লিতে বৈঠক হবে সেটাও আগে থেকেই স্থির ছিল – ফলে সেই বৈঠকে মি চেতিয়াও যোগ দিতে পারবেন বলে তার সতীর্থরা আশা করেছিলেন।
কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল, প্রথমে ছদিনের ট্রানজিট রিমান্ড, তারপর পাঁচদিনের সিবিআই হেফাজতের পর এখন ১৯৮৬ সালের পুরনো একটি হত্যা মামলার জেরে মি চেতিয়া বিচারবিভাগীয় হেফাজতে কাটাচ্ছেন – আর তাঁকে ছাড়াই দিল্লি এসে সরকারের সঙ্গে বৈঠক করতে হচ্ছে আলফার অন্য নেতাদের।
সংগঠনের পররাষ্ট্র সচিব শশধর চৌধুরী বিবিসিকে বলছিলেন, ‘‘আমাদের বিশ্বাস উনি শান্তি-প্রক্রিয়ায় সমর্থন দেবেন। উনি আমাদের সাধারণ সম্পাদক আছেন ও থাকবেন – আর এখন যেহেতু উনি আসামে পৌঁছে গেছেন তাই ওনাকে বাইরে রেখে আমাদের কোনও রাজনৈতিক আলোচনায় অংশ নেওয়াটা ঠিক হবে না।’’
আলফা-র যে অন্য নেতারা আলোচনা প্রক্রিয়ায় যুক্ত আছেন, তাদেরও প্রায় সবাই জামিনে মুক্ত – কোনও কোনও মামলায় তারা অব্যাহতিও পেয়েছেন।
কিন্তু অনুপ চেতিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতার জামিনের ব্যবস্থা করে কেন তাকে আলোচনায় বসার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে না? ভারতের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু এ প্রশ্নের কোনও সরাসরি জবাব দিচ্ছেন না।
মি রিজিজু বলছেন, ‘‘এখন মি চেতিয়াকে নিয়ে তদন্তকারী সংস্থাগুলো তাদের কাজ করছে। যখন সেই জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তের কাজ শেষ হবে তখনই জানা যাবে তিনি আলোচনার প্রক্রিয়ায় আসতে পারবেন কি না। তবে আলফার সঙ্গে আলোচনা খুব ভালভাবে এগোচ্ছে, খুব তাড়াতাড়ি এই আলোচনায় ভাল ফল মিলবে বলেও আমরা আশা করছি।’’
সরকারের বক্তব্যে এই ইঙ্গিত আছে – মি চেতিয়া যোগ দিন বা না-দিন, আলোচনা সফল হওয়ার দিকেই এগোচ্ছে বলে তাদের ধারণা। আগামী বছরের গোড়ায় আসামে নির্বাচনের আগেই কেন্দ্র আলফার সঙ্গে শান্তিচুক্তি সই করতে আগ্রহী, সরকার সেটাও আগেই জানিয়েছে।
কিন্তু শশধর চৌধুরী বলছেন – তারা বৈঠক বয়কট করেননি ঠিকই, কিন্তু সরকার যদি ভেবে থাকে ‘চেতিয়া-স্যার’কে ছাড়াও আলফা আলোচনা চালিয়ে যাবে তাহলে তারা ভুল ভাবছে।
তিনি বলছিলেন, ‘‘এই বৈঠকটা যেহেতু চেতিয়া-স্যার ভারতে আসার আগে থেকেই ঠিক ছিল তাই সরকারের আমন্ত্রণকে সম্মান জানাতে আমরা বৈঠক বর্জন করিনি। কিন্তু পাশাপাশি আমরা কিন্তু বৈঠকে এলেও রাজনৈতিক বিষয়ে একটাও কথা বলিনি। এখন সরকার আমাদের বলেছে স্যার-কে নিয়েই ডিসেম্বরের ভেতরেই আবার বৈঠক আয়োজন করা হবে।’’
ডিসেম্বরে পরের দফার বৈঠকে অনুপ চেতিয়াকে যোগ দিতে দেখা যাবে কি না – সে প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর অবশ্য কারও কাছেই নেই।
মি চেতিয়ার স্ত্রী ও পুত্র তাঁর আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ করেছেন বিজন মহাজনকে – যিনি আসামে বিজেপির মুখপাত্রও বটে। কিন্তু কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দলের এই প্রভাবশালী নেতাও নিশ্চিত হতে পারছেন না তাঁর মক্কেল শান্তি আলোচনায় যোগ দিতে পারবেন কি না।
তিনি বিবিসিকে বলছিলেন, ‘‘সত্যি কথা বলতে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে থাকাকালীন কেউ এমন আলোচনায় যোগ দিয়েছেন, এমন নজির কিন্তু একেবারেই নেই। তবে সরকারের তরফে সিবিআই যদি সেই মর্মে আবেদন করে তবে আদালত তা বিবেচনা করে দেখতে পারেন।’’
এর মধ্যে মি চেতিয়া জামিন পেয়ে গেলে অবশ্য অন্য কথা – কিন্তু তার বিরুদ্ধে আসামেও বহু বকেয়া মামলা আছে, সেগুলোতে রাজ্য সরকার কী অবস্থান নেবে সেটাও স্পষ্ট করেনি।
শুধু একটা ব্যাপারই স্পষ্ট – যে যুক্তি দেখিয়ে ভারত এত বছর ধরে বাংলাদেশের কাছ থেকে মি চেতিয়ার প্রত্যর্পণ দাবি করে এসেছে, সরকারের দিক থেকে সেই যুক্তিকে মর্যাদা দেওয়ার কোনও চেষ্টা এখনও অবধি চোখে পড়েনি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন