অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করছে ট্যানারি শ্রমিকরা
কামাল উদ্দিন সুমন : অসহনীয় দুর্গন্ধ এবং চামড়ায় বিভিন্ন রকম রাসায়নিক ব্যবহারে মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে হাজারীবাগ ট্যানারি শিল্পের প্রায় ৬৫ হাজার শ্রমিক বিভিন্ন দুরারোগ্য ব্যধিতে তারা আক্রান্ত হচ্ছে। কিন্তু এর প্রতিকার নেই। এই ঝুঁকির পাশাপাশি শ্রমিকদের বঞ্চনার চিত্রটিও মর্মান্তিক। সব জেনেও তারা ঝুঁকিপূর্ণ এবং মারাত্মক অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করছে। চামড়াখাত দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও, অব্যবস্থাপনার কারণে এই শিল্পই আবার দুঃখ-দুর্দশার ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সূত্র জানায়, ট্যানারি শ্রমিক প্রতিবছর প্রায় ২৫ কোটি বর্গফুট চামড়া রফতানির জন্য প্রস্তুত করে হাজারীবাগের কারখানাগুলো। যা তৈরিতে অবদান রাখেন প্রায় ৬৫ হাজার শ্রমিক। চামড়া শিল্পের উন্নয়নে কাজ করে গেলেও, ট্যানারির বিষাক্ত রাসায়নিকে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর সম্মুখীন এসব কারিগর।
সূত্র জানায়, ট্যানারিতে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে শ্রমিকরা। ক্রোম পাউডার, বেট, সোডিয়াম ফরমিক, সোডিয়াম সালফেট, সিও অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড, বিভিন্ন রকম এসিড, সোডা, লবণ, বুশান, চুন হাইপো, ইমপ্রোপাল সিও, ডাই, অপজিলিক, ব্লিচিং পাউডার আর ব্রয়লার পাউডারসহ ৮ শতাধিক কেমিক্যালের ব্যবহারে গোটা হাজারীবাগের পরিবেশ পুরোপুরি বিষাক্ত।
সূত্র জানায়, মাসিক ভিত্তিতে বেতনের চুক্তি থাকলেও দিন গুনে বেতন দেয়া হয় ট্যানারিতে। হাঁপানি, চর্মরোগ, যক্ষ্মা, জন্ডিস, জ্বর, মাথাব্যথা, চোখ জ্বালা, গ্যাস্ট্রিক, আলসারসহ জটিল এসব রোগে ভুগতে থাকলেও তাদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় মালিকপক্ষ ও সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ ট্যানারি শ্রমিকদের।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, ৬০ শতাংশ শ্রমিকের আয়ু ৫০ বছরের বেশি নয়। তাদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জীবনের শেষ বেলায় এসে দাঁড়িয়েছেন ষাট বছর বয়সী শহীদুল ইসলাম। মাত্র পাঁচটি বছর কাজ করেছেন ট্যানারি শ্রমিক হিসেবে, এই বার্ধক্যে এসে আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন ট্যানারির সেই বিষাক্ততা। শরীরের বেশিরভাগ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গই তার বেঁচে থাকার গল্পটাকে প্রতিনিয়ত করছে বিষাক্ত।
এখন আর কোনো কাজই করতে পারেন না ভারসাম্যহীন শহীদুল ইসলাম। রুজি-রোজগার ছাড়া তার ও সহধর্মিণীর বর্তমান নির্ভরতা মেয়ের উপর। হাজারীবাগের ছোট্ট একটা রুমে ঠাসাঠাসি করেই থাকেন তারা সবাই।
ট্যানারি শ্রমিক মোফাজ্জল হোসেন জানান, ‘ট্যানারি এলাকার পরিবেশ বিষাক্ত। এখানে কিছু দিন বাস করলেই কোন না কোন দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হতে হবে। এই ঝুঁকি নিয়ে আমরা এখানে থাকি। বিশেষ করে চর্ম ও শ্বাসনালির রোগ প্রায় সবারই আছে।
সূত্র জানায়, সারা দেশে মোট ২০৬টি ট্যানারির মধ্যে ১৯২টি ট্যানারি রয়েছে শুধু হাজারীবাগেই। এখানের মালিকপক্ষের শ্রমিকবিরোধী নীতি ও চামড়া শিল্পের সামগ্রিক অব্যবস্থাপনা সমস্যার কারণে বর্তমানে মাত্র ৮০টির মতো ট্যানারি চালু রয়েছে। শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্রে জানা যায়, কর্মরত শ্রমিকদের গড়ে ১৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা মাসিক বেতনে কাজ করানো হয় ট্যানারিগুলোতে। স্বল্পসংখ্যক দক্ষ শ্রমিককে ৪৫০০-৫০০০ টাকা বেতন দেয়া হয়।
বাংলাদেশ লেবার ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের (বিএলএফ) এক গবেষণা দেখা গেছে, ট্যানারি শিল্পে জড়িত ৮৬ ভাগ শ্রমিকের কোন নিয়োগ নেই ৫৯ শতাংশ ট্যানারি শ্রমিকের কোনো প্রকার পরিচয়পত্র নেই। ট্যানারিগুলোতে ৬৫ শতাংশ শ্রমিক স্থায়ী কোনো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না। ৪০ শতাংশ শ্রমিক ৩ বছরের বেশি চাকরি করতে পারে না। তাদের ন্যূনতম মজুরি পাঁচ হাজার টাকা।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ট্যানারি শিল্পে ৮৫ শতাংশ পুরুষ, ১৫ শতাংশ নারী এবং সাড়ে ৩ শতাংশ শিশু শ্রমিক কাজ করে। স্বাস্থ্য এবং পেশাগত নিরাপত্তার জন্য নেই কোনো প্রকার প্রশিক্ষণ।
ট্যানারি মালিক এসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহম্মেদ জানান, ট্যানারি শ্রমিকদের পরিবেশ ও স্বাস্থ্য দেখার দায়িত্ব সরকারের। কারণ, সরকার এখান থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পেয়ে থাকে। ট্যানারি শ্রমিকদের জন্য সরকারের ডরমেটরি নির্মাণের কথা থাকলেও তা না করায় বিপাকে পড়েছে ট্যানারি মালিকরা।
বাংলাদেশ জাতীয় পরিবেশ আইনজীবী সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, প্রতিদিন ২২ হাজার লিটার রাসানিক বর্জ্য নির্গত হয় হাজারীবাগের চামড়া কারখানা থেকে। যা পরিবেশের ক্ষতি করছে। ক্ষতি করছে জনস্বাস্থ্যের। আর কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের নেই কোনো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ফলে তারা ক্যান্সারসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
dailysangram
সূত্র জানায়, ট্যানারি শ্রমিক প্রতিবছর প্রায় ২৫ কোটি বর্গফুট চামড়া রফতানির জন্য প্রস্তুত করে হাজারীবাগের কারখানাগুলো। যা তৈরিতে অবদান রাখেন প্রায় ৬৫ হাজার শ্রমিক। চামড়া শিল্পের উন্নয়নে কাজ করে গেলেও, ট্যানারির বিষাক্ত রাসায়নিকে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর সম্মুখীন এসব কারিগর।
সূত্র জানায়, ট্যানারিতে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে শ্রমিকরা। ক্রোম পাউডার, বেট, সোডিয়াম ফরমিক, সোডিয়াম সালফেট, সিও অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড, বিভিন্ন রকম এসিড, সোডা, লবণ, বুশান, চুন হাইপো, ইমপ্রোপাল সিও, ডাই, অপজিলিক, ব্লিচিং পাউডার আর ব্রয়লার পাউডারসহ ৮ শতাধিক কেমিক্যালের ব্যবহারে গোটা হাজারীবাগের পরিবেশ পুরোপুরি বিষাক্ত।
সূত্র জানায়, মাসিক ভিত্তিতে বেতনের চুক্তি থাকলেও দিন গুনে বেতন দেয়া হয় ট্যানারিতে। হাঁপানি, চর্মরোগ, যক্ষ্মা, জন্ডিস, জ্বর, মাথাব্যথা, চোখ জ্বালা, গ্যাস্ট্রিক, আলসারসহ জটিল এসব রোগে ভুগতে থাকলেও তাদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় মালিকপক্ষ ও সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ ট্যানারি শ্রমিকদের।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, ৬০ শতাংশ শ্রমিকের আয়ু ৫০ বছরের বেশি নয়। তাদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জীবনের শেষ বেলায় এসে দাঁড়িয়েছেন ষাট বছর বয়সী শহীদুল ইসলাম। মাত্র পাঁচটি বছর কাজ করেছেন ট্যানারি শ্রমিক হিসেবে, এই বার্ধক্যে এসে আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন ট্যানারির সেই বিষাক্ততা। শরীরের বেশিরভাগ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গই তার বেঁচে থাকার গল্পটাকে প্রতিনিয়ত করছে বিষাক্ত।
এখন আর কোনো কাজই করতে পারেন না ভারসাম্যহীন শহীদুল ইসলাম। রুজি-রোজগার ছাড়া তার ও সহধর্মিণীর বর্তমান নির্ভরতা মেয়ের উপর। হাজারীবাগের ছোট্ট একটা রুমে ঠাসাঠাসি করেই থাকেন তারা সবাই।
ট্যানারি শ্রমিক মোফাজ্জল হোসেন জানান, ‘ট্যানারি এলাকার পরিবেশ বিষাক্ত। এখানে কিছু দিন বাস করলেই কোন না কোন দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হতে হবে। এই ঝুঁকি নিয়ে আমরা এখানে থাকি। বিশেষ করে চর্ম ও শ্বাসনালির রোগ প্রায় সবারই আছে।
সূত্র জানায়, সারা দেশে মোট ২০৬টি ট্যানারির মধ্যে ১৯২টি ট্যানারি রয়েছে শুধু হাজারীবাগেই। এখানের মালিকপক্ষের শ্রমিকবিরোধী নীতি ও চামড়া শিল্পের সামগ্রিক অব্যবস্থাপনা সমস্যার কারণে বর্তমানে মাত্র ৮০টির মতো ট্যানারি চালু রয়েছে। শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্রে জানা যায়, কর্মরত শ্রমিকদের গড়ে ১৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা মাসিক বেতনে কাজ করানো হয় ট্যানারিগুলোতে। স্বল্পসংখ্যক দক্ষ শ্রমিককে ৪৫০০-৫০০০ টাকা বেতন দেয়া হয়।
বাংলাদেশ লেবার ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের (বিএলএফ) এক গবেষণা দেখা গেছে, ট্যানারি শিল্পে জড়িত ৮৬ ভাগ শ্রমিকের কোন নিয়োগ নেই ৫৯ শতাংশ ট্যানারি শ্রমিকের কোনো প্রকার পরিচয়পত্র নেই। ট্যানারিগুলোতে ৬৫ শতাংশ শ্রমিক স্থায়ী কোনো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না। ৪০ শতাংশ শ্রমিক ৩ বছরের বেশি চাকরি করতে পারে না। তাদের ন্যূনতম মজুরি পাঁচ হাজার টাকা।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ট্যানারি শিল্পে ৮৫ শতাংশ পুরুষ, ১৫ শতাংশ নারী এবং সাড়ে ৩ শতাংশ শিশু শ্রমিক কাজ করে। স্বাস্থ্য এবং পেশাগত নিরাপত্তার জন্য নেই কোনো প্রকার প্রশিক্ষণ।
ট্যানারি মালিক এসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহম্মেদ জানান, ট্যানারি শ্রমিকদের পরিবেশ ও স্বাস্থ্য দেখার দায়িত্ব সরকারের। কারণ, সরকার এখান থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পেয়ে থাকে। ট্যানারি শ্রমিকদের জন্য সরকারের ডরমেটরি নির্মাণের কথা থাকলেও তা না করায় বিপাকে পড়েছে ট্যানারি মালিকরা।
বাংলাদেশ জাতীয় পরিবেশ আইনজীবী সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, প্রতিদিন ২২ হাজার লিটার রাসানিক বর্জ্য নির্গত হয় হাজারীবাগের চামড়া কারখানা থেকে। যা পরিবেশের ক্ষতি করছে। ক্ষতি করছে জনস্বাস্থ্যের। আর কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের নেই কোনো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ফলে তারা ক্যান্সারসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
dailysangram
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন