বাংলাদেশে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার সব নির্বাচন দলীয়ভাবে করার জন্য আইনের সংশোধনী প্রস্তাব মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও এই সব নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন।
সরকার বলেছে, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনও অনানুষ্ঠানিকভাবে রাজনৈতিক চেহারা পেয়েছে। ফলে সরাসরি দলীয় ভিত্তিতে এই নির্বাচন ইতিবাচক হবে।তবে মাঠ পর্যায়ে যারা স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার সাথে জড়িত বা আগামীতে নির্বাচন করতে ইচ্ছুক, তাদের অনেকে মনে করছেন এতে তৃণমূল স্তরে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের চরিত্র হারাবে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে দলের মধ্যেও সরকারি এই সিদ্ধান্তে মাঠ পর্যায়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে।
এখন থেকে গ্রাম পর্যায়ের ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে পৌরসভা, সিটি করপোরেশন, উপজেলা ও জেলা পরিষদ – স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার সব নির্বাচনই হবে জাতীয় সংসদের মতো দলীয় ভিত্তিতে।
বিশ্লেষকদের অনেকে বলেছেন, ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভার মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর এত দিনের নির্দলীয় চরিত্র একটা ঐতিহ্যও হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এখন সরাসরি রাজনীতি প্রবেশ করলে প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়ন কাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
ফেনীর বানিগাও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং আওয়ামী লীগ নেতা মোজাম্মেল হক বাহার মনে করেন, দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচনে মানুষের প্রার্থী বাছাইয়ের সুযোগ কমে যাবে।
তিনি বলছিলেন, “ইউনিয়ন বা পৌরসভায় পরিবার,আত্মীয়স্বজন বা বন্ধুবান্ধবদের সমর্থনে অনেকে প্রার্থী হয়। জনগণ প্রার্থী বাছাইয়ে গ্রহণযোগ্যতাসহ অনেক বিষয় বিবেচনায় নেয়। কিন্তু দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচন হলে প্রার্থী পছন্দ না হলেও অনেক দল করে বলে ভোট দেয়। তখন ভোটারের পছন্দের সুযোগ কমে যাবে ।”
দেশে পৌরসভাগুলোতে পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষে ডিসেম্বরে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। সে জন্য পৌরসভা সম্পর্কিত সংশোধনী প্রস্তাব অধ্যাদেশ হিসেবে জারি করার কথা সরকার বলেছে।
উত্তরাঞ্চলের জেলা শহর গাইবান্ধা পৌরসভার মেয়র শামসুল আলম গতবারের মতো এবারও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মাঠে নেমেছেন।
তিনি মনে করেন, আকস্মিকভাবে দলীয়ভাবে নির্বাচনের এই সিদ্ধান্ত তাদের সামনে আনা হয়েছে এবং এতে ভোটাররা বিভ্রান্তিতে পড়বে।
তিনি বিবিসিকে বলছিলেন, “জাতীয় সংসদে একটি আসনে একজন প্রার্থী থাকে। আর স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় মেয়র ,কাউন্সিলর এবং নারী কাউন্সিলর প্রার্থী থাকে। সকলের প্রতীক একই হলে ভোটাররা বিভ্রান্ত হবে।”
স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো আগে থেকেই রাজনৈতিক চেহারা পেয়ে গেছে। ফলে সরাসরি রাজনৈতিক নির্বাচন হলে সেটা আরও ইতিবাচক হবে
মাঠ পর্যায়ে বিরোধীদল বিএনপি’র নেতারা দলীয়ভিত্তিতে স্থানীয় সংস্থার নির্বাচনের বিরোধীতা করেছেন। তাদের আশঙ্কা, এতে তৃণমূলে নির্বাচনের সহিংসতা বেড়ে যাবে।
তৃণমূলে আওয়ামী লীগের অনেকে দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচনের পক্ষে নন। আওয়ামী লীগের অনেকে আবার সরকারের যু্ক্তিই তুলে ধরে ধরছেন।
যশোর থেকে আওয়ামী লীগ নেতা কামরুজ্জামান চুন্নু যেমন বলেছেন, “বেশ কয়েকবছর ধরে দলগুলো অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী সমর্থন দেয় এবং দলীয় নেতাকর্মিরাই কাজ করে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো রাজনৈতিক চেহারা পেয়ে গেছে। ফলে সরাসরি রাজনৈতিক নির্বাচন হলে সেটা আরও ইতিবাচক হবে।”
তবে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি মাঠপর্যায়ের নেতারা এটাও মনে করেন, বিতর্ক বা আপত্তি থাকলেও সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন দলীয় ভিত্তিতেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন