শনিবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৫

ব্রাজিল–আর্জেন্টিনার ‘আসল’ সমস্যা যেখানে

সমস্যার নাম দুঙ্গা-মার্টিনো! ছবি: এএফপিসমস্যার নাম দুঙ্গা-মার্টিনো! ছবি: এএফপিবিশ্বকাপ বাছাইপর্ব শুরু হয়েছে দক্ষিণ আমেরিকায়। প্রথম ম্যাচেই ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার পা হড়কেছে। বাছাইপর্বের ইতিহাসে এই প্রথম একই দিনে পরাজয়ের স্বাদ পেল ফুটবলের দু্ই পরাশক্তি। ফুটবলের দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর নানা বৈপরীত্য থাকলেও এ মুহূর্তে ভুগছে একই সমস্যায়। সমস্যাটা আসলে ‘মাথা’য় অর্থাৎ কোচদের নিয়ে! কার্লোস দুঙ্গা ও জেরার্ডো মার্টিনোর দল নির্বাচন, কোচিং পদ্ধতি ও রণকৌশলই দুদলের মাথাব্যথা!
প্রথম দফায় দায়িত্ব পেয়েই সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন দুঙ্গা। এর আগে পেশাদার কোনো দলকে কোচিংয়ের অভিজ্ঞতা নেই, এমন একজনের হাতে ব্রাজিল দলের দায়িত্ব তুলে দেওয়া নিয়ে প্রশ্নও উঠেছিল। তবে সেবার ব্রাজিলকে বেশ কিছু সাফল্য এনে আলোচনা থামিয়ে দিয়েছিলেন দুঙ্গা। ২০০৭ সালে কোপা আমেরিকা ও ২০০৯ সালের কনফেডারেশনস কাপ জয় ব্রাজিল দলের কোচ হিসেবে দুঙ্গার অন্তর্ভুক্তিকে যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত করেছিল। তবে তাঁর দল পরিচালনা, রণকৌশল, দল নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সব সময়ই। ২০১০ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ব্রাজিলের বিদায়ের পর দুঙ্গারও বিদায় ঘণ্টা বেজে যায়।
২০১৪ বিশ্বকাপে নিজেদের মাটিতে জার্মানির বিপক্ষে সেমিফাইনালে বিধ্বস্তের পর আবারও সেলেসাওদের দুঙ্গা-শরণ। আবারও প্রশ্নবিদ্ধ দুঙ্গার দল নির্বাচন ও রণকৌশল। তবে টানা ১১ ম্যাচে জিতে সমালোচকদের মুখ বন্ধ করেছিলেন। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার কারণে নেইমার দলে না থাকার পর দুঙ্গার রণকৌশল আবারও প্রশ্নবিদ্ধ। টানা ১১ ম্যাচ জয়ের পর সর্বশেষ ছয় ম্যাচে তিনটিতে হার, ১টা ড্র ও ২টিতে জয়। নেইমারবিহীন তিন ম্যাচে জিতেছে একটি, একটি হার ও একটি ড্র। এর মধ্যে রয়েছে কোপা আমেরিকায় দ্বিতীয় পর্বে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে টাইব্রেকারে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায়।
দুঙ্গা রণকৌশল সাজান মূলত নেইমারকে কেন্দ্র করেই। ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ড গোল এনে দিতে পারলেই দুঙ্গা চলে যান অতিরিক্ত রক্ষণাত্মক মানসিকতায়। এমন খেলায় ব্রাজিলের চিরায়ত ‘জোগো বোনিতো’ বা ‘সুন্দর ফুটবল’ খুঁজতে গিয়ে হতাশ ফুটবল-রোমান্টিকরা।
মার্টিনোর সমস্যাটা পুরো উল্টো। আর্জেন্টাইন কোচের ভাবনা, দল গঠন ও রণকৌশলে থাকে আক্রমণাত্মক ফুটবলের ছোঁয়া। এ বছর প্রীতি, বিশ্বকাপ বাছাই ও কোপা আমেরিকায় মোট ১২ ম্যাচে আট গোল হজমের বিপরীতে ২৮ গোল করা সেটাই প্রমাণ করে। তবে রক্ষণভাগের দুর্বলতা বেড়িয়ে পড়ে খেলার গুরুত্বপূর্ণ সময়ে। আর্জেন্টিনার দায়িত্ব নেওয়ার আগে প্যারাগুয়ে জাতীয় দল ও বার্সেলোনাতেও একই সমস্যা দেখা দিয়েছিল। পুরো দলকে একটু ওপরে উঠে খেলানোর প্রবণতায় রক্ষণভাগে বড়-সড় ফাঁকফোকর বেড়িয়ে পড়ে। এর সুবিধা আদায় করে প্রতিপক্ষের দলগুলো। লিওনেল মেসির উপস্থিতিতে ব্যাপারটি হয়তো সেভাবে চোখে পড়ে না। কারণ, আর্জেন্টিনা অধিনায়ককে নিয়েই ত্রস্ত থাকে প্রতিপক্ষের রক্ষণ। তবে মেসি না থাকলেই যেন দুর্বলতাগুলো স্পষ্ট হয়ে ওঠে আকাশি-সাদাদের।
ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার মতো ঐতিহ্যবাহী জনপ্রিয় দুটি দল যেন অতি নেইমার-মেসি নির্ভর হয়ে পড়েছে। দুটি দলে অবশ্য তারকার অভাব নেই। তবুও কেবল এক তারকানির্ভর হয়েই খেলছে। মেসি-নেইমারে অতিরিক্ত নির্ভরতার কারণেই দুজনের অনুপস্থিতি ভীষণ ভোগাচ্ছে দুই পরাশক্তিকে। বাছাই পর্বে দুই দলেরই অপ্রত্যাশিত হার দিয়ে শুরুর পর আবারও শোরগোল উঠেছে দুই দেশেই। আর্জেন্টিনা বলছে মার্টিনো হঠাও। দুঙ্গা হঠাও স্লোগানটা ব্রাজিলে অবশ্য পুরোনোই!

অনলাইন ডেস্ক
 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন