রবিবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৫

মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের



 
 আন্তর্জাতিক আইন শুধু ‘সবচেয়ে মারাত্মক অপরাধের’ ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের কথা বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন। তিনি বলেছেন, এর অর্থ দাঁড়ায়, কেবল স্বেচ্ছাখুনের ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া  যেতে পারে।
একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, মৃত্যুদণ্ড মাদককংক্রান্ত অপরাধ কমাতে কোনো ভূমিকা রাখে না।
অন্যদিকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও কাউন্সিল অব ইউরোপ। তারা বলেছে, মৃত্যুদণ্ডের মাধ্যমে অপরাধ নিরুৎসাহিত করার উল্লেখযোগ্য প্রভাবের কোনো প্রমাণ নেই।
১০ অক্টোবর আন্তর্জাতিক মৃত্যুদণ্ড বিরোধী দিবস সামনে রেখে আমেরিকায় দেয়া এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন জাতিসংঘ মহাসচিব।
একইদিন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতিবিষয়ক উচ্চ প্রতিনিধি ফেডেরিকা মোঘারিন ও কাউন্সিল অব ইউরোপের মহাসচিব থোরবোর্ন জাগল্যান্ড এক যৌথ বিবৃতি দেন।
বান কি মুন তার বিবৃতিতে বলেন, সাত দশক আগে মাত্র ১৪টি দেশ মৃত্যুদণ্ডাদেশ বিলুপ্ত করে। বর্তমানে  ৮২ শতাংশ দেশ আইন করে মৃত্যুদণ্ডাদেশ বাতিল করেছে কিংবা মৃত্যুদণ্ডা না দেয়ার চর্চা করছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থাগুলো বরাবরই বলে আসছে, মৃত্যুদণ্ড মাদকসংক্রান্ত অপরাধ কমাতে পারছে না। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক মাদক নিয়ন্ত্রণ বোর্ডসহ অন্য মাদকবিরোধী সংস্থাগুলো এ সংক্রান্ত অপরাধের ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডাদেশ বাতিলের তাগিদ দিয়েছে।
বান কি মুন বলেন, মৃত্যুদণ্ড মাদকসংক্রান্ত অপরাধ কমায় না কিংবা এটি লোকজনকে মাদকের অপব্যবহার থেকে বিরতও রাখতে পারেনি। মাদক নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি বিচার ব্যবস্থার সংস্কার, গণস্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এর প্রতিরোধ ও চিকিৎসাপ্রাপ্তির সুবিধার মধ্যে নিহিত।
তিনি মৃত্যুদণ্ডের বিরেুদ্ধে অবস্থান নিতে সব দেশের প্রতি আহ্বান জানান।
অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও কাউন্সিল অব ইউরোপ তাদের বিবৃতিতে বলেছে, মৃত্যুদণ্ড একটি অমানবিক ও অবমাননাকর শাস্তি। এতে অপরাধ নিরুৎসাহিত করার উল্লেখযোগ্য প্রভাবের কোনো প্রমাণ নেই। আর এ ক্ষেত্রে বিচারিক ভুলত্রুটি পাল্টানোর কোনো সুযোগ থাকে না। 
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ইইউ সদস্যরাষ্ট্রগুলোতে ১৮ বছর ধরে কোনো মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়নি। মৃত্যুদণ্ড রদ করার লক্ষ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকার বিষয়ক চুক্তির বিধান অনুমোদন দিতে ইইউভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
বেলারুশে অব্যাহতভাবে মৃত্যুদণ্ডের ব্যবহার নিয়ে নিন্দা জানিয়ে দেশটির কর্তৃপক্ষকে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি লঘু করার জোরালো আহ্বান জানানো হয়। মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি রহিত করার লক্ষ্যে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে অবিলম্বে আনুষ্ঠানিকভাবে মৃত্যুদণ্ড স্থগিত করার আহ্বান জানানো হয় দেশটির প্রতি।
যেসব দেশগুলোতে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তির বিধান রয়েছে এমন কয়েকটি দেশে গত বছর মাদক সংক্রান্ত মামলায় কয়েকটি মৃত্যুদণ্ডের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কাউন্সিল অব ইউরোপ ও ইউরোপিয় ইউনিয়ন। এসব ক্ষেত্রে অপ্রাপ্তবয়স্কদের মৃত্যুদণ্ডের ঘটনাগুলোতে বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন তারা যা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। ২০১৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে গৃহীত মৃত্যুদণ্ডের ব্যবহার স্থগিতকরণ প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে কাউন্সির অব ইউরোপ ও ইইউ।

সংগ্রাম ডেস্ক:

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন