আন্তর্জাতিক ডেস্ক- ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের কয়েকটি জায়গায় একই সময়ে চালানো পৃথক সন্ত্রাসী হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ১৫৩ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যায় স্মরণকালের অন্যতম ভয়াবহ এই সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। হামলার পর পুরো ফ্রান্সে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোয়া ওলাদঁ; বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সীমান্ত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথমবার পুরো দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে এবং বন্ধ করা হয়েছে সীমান্ত।
হামলার সময় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ স্টেড ডি ফ্রান্স স্টেডিয়ামে বসে ফ্রান্স-জার্মানির মধ্যকার আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ দেখছিলেন। স্টেডিয়ামের কাছাকাছি এলাকায় দুইটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। সে সময় দেশটির প্রধানমন্ত্রী ম্যানুয়াল ভলসও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। হামলার পর তাৎক্ষণিকভাবে হেলিকপ্টারে করে তাদের উদ্ধার করা হয়।
এদিকে, প্যারিস হামলার ঘটনার পরপরই বেলজিয়াম ও প্রতিবেশী দেশগুলোতে নিরাপত্তা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ফ্রান্স সংলগ্ন সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন ও তল্লাশি অভিযান জোরদার করেছে বেলজিয়াম।
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে বাটাক্লঁ হলসহ একাধিক স্থানে সিরিজ হামলায় কমপক্ষে ১৫৩ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মরকেলসহ বিশ্বনেতারা।
হামলার পর বাটাক্লঁ কনসার্ট হলের কাছাকাছি নিরাপত্তা বাহিনীর একটি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাদ বলেন, হামলাকারী সন্ত্রাসীরা সবাই নিহত হয়েছেন। যারা হামলা চালিয়েছে তাদের প্রতি কোনো দয়া দেখানো হবে না। তবে ভয় পাওয়ার অনেক কারণ আছে এখন। কিন্তু আমাদের এই ভয়কে এমন জাতি হিসেবে মোকাবেলা করতে হবে যারা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সমস্ত শক্তি নিয়ে লড়াই করতে পারে।
এ হামলাকে ‘জঘন্য’ উল্লেখ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, নিরপরাধ বেসামরিক লোকজনকে ভীতসন্ত্রস্ত করার জন্য আরেকটি জঘন্য চেষ্টা আমরা ফ্রান্সে দেখলাম। ফ্রান্সের সরকার ও জনগণের যেকোনো প্রয়োজনে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি। আমরা এসব সন্ত্রাসীর বিচারের সম্মুখীন করতে এবং যেকোনো সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ককে শায়েস্তা করার জন্য প্রস্তুত।
এদিকে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, ফ্রান্সে হামলায় তিনি ‘হতভম্ব ও ব্যথিত’ হয়েছেন।
এক টুইটার বার্তায় তিনি লেখেন, ফ্রান্সের জনগণের জন্য আমাদের সহমর্মিতা ও প্রার্থনা রইল। তাদের সাহায্য করার জন্য যা যা করণীয়, আমরা তা-ই করব।
জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মরকেল জানিয়েছেন, ফ্রান্সে সন্ত্রাসীদের হামলায় তিনি পুরোপুরি ‘হতভম্ব’।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে সন্ত্রাসী হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিবর্গ, তাদের পরিবার ও প্যারিসের সব জনগণের জন্য আমার সহমর্মিতা রইল। জার্মানি তাদের পাশে থাকবে।
এছাড়া এ ঘটনায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম জিয়া শোক ও নিন্দা জানিয়েছেন। সন্ত্রাসী হামলায় কোনো বাংলাদেশি হতাহত হয়নি এবং আট হামলাকারী নিহত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন প্যারিস বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন