দীর্ঘ ১৭ বছর বাংলাদেশে কারাবন্দী থাকার পর ভারতের আসামের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী আলফার শীর্ষ নেতা অনুপ চেতিয়াকে ঢাকার জেল থেকে ছেড়ে দেওয়ার কথা ভারত সরকার প্রাথমিকভাবে স্বীকার না করলেও দুপুরে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টুইট করে এর জন্য বাংলাদেশ সরকারকে অভিনন্দন জানান।
তিনটি মামলায় দন্ডপ্রাপ্ত অনুপ চেতিয়ার সাজার মেয়াদ ২০০৭ সালে শেষ হবার পর ভারত সরকারের তরফ থেকে অনেক চাপ এবং অনুরোধ সত্ত্বেও বাংলাদেশ তাকে এতদিন ফেরত পাঠায়নি।তবে ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও জানায় নি যে অনুপ চেতিয়াকে কোথা দিয়ে কীভাবে বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে বা তাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
তবে প্রাথমিকভাবে তাকে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
১৭ বছর পরে অনুপ চেতিয়াকে ভারতে ফেরানো হল যখন আলফার সঙ্গে ভারত সরকারের শান্তি আলোচনা একটা গুরুত্বপূর্ণ দিকে এগোচ্ছে।
অনুপ চেতিয়াকে কীভাবে হস্তান্তর করা হল?
ভারতের তরফে এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয় নি যে ঠিক কীভাবে অনুপ চেতিয়াকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। তবে দুটি গোয়েন্দা এজেন্সি পৃথকভাবে জানিয়েছে যে পেট্রাপোল স্থলবন্দরের কাছাকাছি কোনও এলাকা দিয়ে মি. চেতিয়াকে সীমান্ত পার করানো হয়েছে।
সাধারণত যেভাবে বন্দী প্রত্যর্পন হয়, সেভাবে চেক পোস্টের গেট পার করিয়ে বিএসএফের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এটা করা হয় নি। এর কারণ এখনও স্পষ্ট নয়।
আবার আনুষ্ঠানিকভাবে এটাও বলা হয় নি যে মি. চেতিয়াকে সীমান্ত পার করিয়ে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে মনে করা হচ্ছে প্রথমে দিল্লিতেই নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং পরে তাকে আসামে পাঠানো হবে।
তবে কয়েকদিন ধরেই যে মি. চেতিয়াকে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছিল, দুই দেশের কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা চলছিল, সেটা পরিস্কার। দিন দুয়েক আগে তিনি নিজেই আলফার এক ভারত নিবাসী নেতাকে জানিয়েছিলেন এই সম্ভাবনার কথা।
আর মঙ্গলবার রাতে কয়েকটি গোয়েন্দা এজেন্সি জানতে পারে যে বুধবার মি. চেতিয়াকে নিয়ে আসা হবে পেট্রাপোল দিয়ে। কিন্তু গোটা ব্যাপারটা নিয়ে যেভাবে গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়েছে, তার কারণ বোঝা যাচ্ছে না।
ভারতের প্রতিক্রিয়া কী ?
ভারত বুধবার অনেক বেলায় আনুষ্ঠানিকভাবে জানায় যে অনুপ চেতিয়াকে ফেরত আনা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করেছিলেন এবং যেভাবে সন্ত্রাসবাদের মোকাবেলায় ভারত বাংলাদেশের কাছ থেকে সাহায্য পাচ্ছে, তার জন্য ধন্যবাদ জানান তিনি – অনুপ চেতিয়ার কথাও ওঠে।
পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং-ও বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়ে টুইট করেন অনুপ চেতিয়াকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। এছাড়া আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
আলফার যে অংশটি ভারত সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনা চালাচ্ছে, তারাও খুশি যে তাদের নেতা এতবছর বাদে দেশে ফিরেছেন এবং সম্ভবত আলোচনার দিশা নির্দেশ দিতে পারবেন তিনি।
কিন্তু আলফার সামরিক শাখার প্রধান পরেশ বড়ুয়া, যার নেতৃত্বাধীন অংশটি শান্তি আলোচনার ঘোরতর বিরোধী, তিনি এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া জানান নি।
অনুপ চেতিয়াকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
অনুপ চেতিয়া ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশে গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে আলফার সরাসরি কর্মকান্ডের বাইরে রয়েছেন। তার পরে দেড় দশকেরও বেশি সময় তিনি জেলেই ছিলেন।
২০০৭ সালে জেলের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে তিন বার বাংলাদেশে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন জানিয়েছিলেন। প্রতিবারই সেটা খারিজ হয়ে যায়।
কিন্তু ২০০৯ সালে যখন আলফার চেয়ারম্যান অরবিন্দ রাজখোয়া সহ কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে আটক করে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হয় আর ভারত সরকার শান্তি আলোচনা শুরু করে, তখন থেকেই মত বদলাতে থাকেন অনুপ চেতিয়া। নিজেই দেশে ফিরতে চান তিনি।
অন্যদিকে আলফার নেতারাও দাবি করতে থাকেন মি. চেতিয়াকে ফিরিয়ে এনে আলোচনায় বসানো হোক।
আলফার বিদেশ সচিব শশধর চৌধুরী বুধবার বিবিসি বাংলাকে বলেন যে অনুপ চেতিয়ার মতো রাজনৈতিকভাবে বিচক্ষণ নেতা খুব কমই আছেন। সেজন্য মি. চেতিয়াই যাতে শান্তি আলোচনায় নেতৃত্ব দেন, সেটাই অনেক দিন থেকে চাইছিলেন তারা।
তবে শান্তি আলোচনা এখন একেবারে শেষ পর্বে। ২৪ নভেম্বর সরকারের সঙ্গে আলফার যে বৈঠক রয়েছে দিল্লিতে, সেখান থেকেই সম্ভবত অন্তিম পর্ব – অর্থাৎ শান্তি চুক্তি তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হবে।
এরকম একটা সময়েই রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত বিচক্ষণ নেতা অনুপ চেতিয়াকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হল।
এছাড়াও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশকে যেভাবে অভিনন্দন জানালেন, তার থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে মি. চেতিয়া এখনও কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভারত সরকার আর আলফা নেতৃত্বের কাছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন